prabandho-aztecder-mexico

আজতেকদের কেতসালকুয়াত্‌ল ও ফুয়েন্তেসের মেক্সিকো
জয়া চৌধুরী


কেতসালকুয়াত্‌ল নামটি প্রথমবার শুনি ২০১০ সালে একটি উপকথার গল্প অনুবাদ করতে গিয়ে। “সবাই বলে যে কেতসালকুয়াত্‌ল আসার আগে আজতেকরা শুধু বীজ আর শিকার করা পশুমাংস খেত। তাদের ভুট্টাই ছিল না। এই ভুট্টা খাদ্য হিসাবে তাদের কাছে খুবই পুষ্টিকর ছিল। অথচ এগুলো পাহাড়ের ওপারে জন্মাত। প্রাচীন দেবতারা তাদের প্রবল শক্তি দিয়ে পাহাড়গুলো দু ভাগে ভাগ করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সফল হননি। তাই অবশেষে তারা দেবতা কেতসালকুয়াত্‌লের কাছে এই সমস্যা নিয়ে হাজির হল।

তিনি কথা দিলেন- আমি সেগুলোকে আনার চেষ্টা করব।

অমিতশক্তিধর দেবতা কেতসালকুয়াতল পাহাড় ভাঙবার বৃথা চেষ্টা করে শক্তিক্ষয় করলেন না, পরিবর্তে এক চতুর চাল চাললেন। তিনি কালো পিঁপড়ের রূপ ধারণ করে এক লাল পিঁপড়ের সঙ্গী হয়ে পাহাড়ের দিকে চললেন। বিপদসংকুল সে পথ তিনি প্রজাদের কথা আর তাদের খাদ্য সমস্যার কথা ভাবতে ভাবতে চলেছিলেন। কোন ক্লান্তি কোন সমস্যা তাঁর কাছে বাধা হতে পারল না। সর্বশক্তি দিয়ে এগিয়ে চললেন। অবশেষে সেই ভুট্টার স্থানে তিনি এসে পৌঁছলেন। পিঁপড়েরূপী দেবতা দাঁতের দু পাটিতে একটি বীজ চেপে ফিরে এলেন। অসংখ্য ক্ষুধার্ত আজতেকদের হাতে সেই বীজ তিনি তুলে দিলেন…”

নাহ সে লেখা এখানে আর দেব না। কিন্তু পড়ে টরে জানা গেল কেতসালকুয়াতল হিস্পানিক-পূর্ব যুগের মেক্সিকোর দেবতা যাকে পালক লাগানো সর্পদেবতা বলা হয়। আমাদের দেশের পুরাণের গল্পে তো কতই দেবদেবীর কথা জেনেছি। জলের দেবতা বরুণ, হাওয়ার দেবতা মলয়কে নিয়ে কতই না আখ্যান আছে। সাপের দেবতা বললে তো মা মনসা স্বয়ং এসে হাজির হবেন। এবং তিনি কোন বিলুপ্ত দেবী নন। খুব ভালরকম ভাবে প্রচলিত। এই শ্রাবণ সংক্রান্তিতেই তিনি সদ্য দুধ কলাটলা নিয়ে ভূরিভোজ খেয়ে গেছেন। আমার কৌতূহল ছিল অন্য জায়গায়। সুদূর মেক্সিকোর দেবতার সঙ্গে আমাদের বাংলার দেবীর এরকম মিল কী সত্যিই কাকতালীয়!

আধুনিক মেক্সিকো মানেই বাঙালির ভুবনে ওক্তাভিও পাস, কার্লোস ফুয়েন্তেস, খাইমে সাবিনেস এবং সত্যি বলতে কী অজস্র খ্যাতনামা নাম আমি লিখে দিতে পারি। কিন্তু তাদের কারো সঙ্গে সুদূরতম কল্পনাতেও মেলাতে পারি না পালক লাগানো সর্পদেবতা কেতসালকুয়াতলকে। কিন্তু আজকের মেক্সিকো আর স্পেনীয় সাম্রাজ্যবাদীদের আগ্রাসন ও তার কয়েকশো বছর পরে মুক্তি পাবার পরের মেক্সিকো দুটো অনেকখানিই আলাদা। সেখানে অনেক কিছুই প্রাচীনের চিহ্ন মিলে মিশে গুলিয়ে গেছে। বিশেষ করে স্পেনীয় সেনা এর্নান্দো কোর্তেস আজতেকদের ওপর জঘন্য নৃশংস অত্যাচারের মাধ্যমে মেক্সিকো দখল করার পরে যেন সব প্রাচীনেরই অবলুপ্তির চেষ্টা চলেছিল। কিন্তু একটু পিছনের ইতিহাস ঘাটলে জানা যায় খ্রিষ্টপূর্ব ১৬০০ থেকে ৪০০ শতাব্দী পর্যন্ত মেক্সিকোয় অনেক তোলপাড় ও বদল ঘটেছিল। মূলতঃ উৎকর্ষতায় পৌঁছনো শুরু হয় ওলমেক সভ্যতা থেকে। সে দেশের ইতিহাস ভাবলে একে মাতৃসংস্কৃতি বলতে পারি। ওলমেক শব্দটি নাউয়াটল শব্দ। এর অর্থ রাবার মানুষ। সম্ভবত এরাই প্রথম আবিষ্কার করেছিল গাছ থেকে রজন সংগ্রহ করে কীভাবে রাবার বানানো যায়। এই ওলমেকরা থাকত এখনকার ভেরাক্রুস আর তাবাস্কো শহরের কাছে। তাদের ক্যালেন্ডার ছিল, লেখার পদ্ধতি ছিল। ঠিক এরকম সময়েই ভারতে তখন জন্ম নিয়েছেন শাক্যমুনি বুদ্ধ। এখন মেক্সিকোতে যত পর্যটক যান। তাদের বেশির ভাগই গন্তব্যে রাখেন তেওতিউয়াকান শহর। কলম্বাস পূর্ব যুগের সবচেয়ে চোখ ধাঁধানো শহর এটি। কী আমাদের কাশী শহরের কথা মনে পড়ল নাকী? তখন কিন্তু বারাণসীর পত্তন হয়ে গিয়েছিল এই ভারতে। সে যাক যা বলছিলাম। তোতোনাকরা দাবী করে তারা এই তেওতিউয়াকান শহর বানিয়েছিল। অবশ্য আজতেকরাও একই দাবী করে। কিন্তু সেখানে যে সব মূর্তি স্থাপত্য পাওয়া গেছে, প্রায় তিরিশ টন ওজনের ব্যাসাল্ট পাথরে কোঁদা মূর্তি, তার গঠন শৈলী কিন্তু ওলমেকদের হাতের গুণের কথাই বলে। কেননা ওলমেকরা বিশেষত ব্যাসল্ট পাথরে কুঁদে মানুষের মুখ বানাত। তাদের মাথায় আবার বিশেষ বিশেষ শিরোভূষণ থাকত। এই শব্দ বেছে নিলাম এই কারণে যে মাথার উপর বিভিন্ন ধরনের টুপি বা মুকুট যাই বলি না কেন সেও পাথরে খোদাই হত। আবার এ শহরেই পিরামিড রাখা আছে কী না। ওহ আপনারা বুঝি ভাবছেন স্রেফ মিশরেই পিরামিড থাকে! আজ্ঞে না গুয়াতেমালা মেক্সিকো ইত্যাদি দেশেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছোটবড় পিরামিড পাওয়া যায়। তো যা বলছিলাম এ শহরে পিরামিড ছাড়াও যা পাওয়া যায় তা হল এই কেতসালকুয়াতল সর্পদেবতার মন্দির। সেকী! এই যে উপকথা পড়লাম কেতসালকুয়াতল বাবা নাকী ভুট্টা এনেছেন মেক্সিকোয়। সেই ভুট্টা যা সে দেশের উপকথা, সংস্কৃতিতে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে। এই যেমন পিঁপড়ের রূপ ধরে তিনি ভুট্টা এনেছেন!

তো এই কেতসাল বাবার গল্পটা হচ্ছে। উনি ও তাঁর ভাই দুজনেই দেবতা ঠিকই। কিন্তু কেতসাল হলেন পৃথিবী ও উদ্ভিদ অর্থাৎ উৎপাদন শক্তির দেবতা। এবং বিপুল জনপ্রিয়। ওদিকে তিনি ভুট্টা টুট্টা আবিষ্কার করে জনগণকে ফসল চেনাচ্ছেন, জনতার আর উপায় কি ওঁকে ভাল না বেসে! কিন্তু ভাই তেজকাতলিপোকার তা সহ্য হবে কেন! চালাকি করে সে এক উপায় বের করল, ষড় করে কেতসাল দেবতাকে নেশাগ্রস্ত করিয়ে ফেলল। এবং নেশার ঘোরে তিনি নিজের বোনের সঙ্গে সহবাসে লিপ্ত হয়ে পড়েন। তারপর সম্বিত ফিরলে মনের দুঃখে দেশান্তরী হয়ে হুই গালফ কোস্টে চলে যান। এ কাহিনী আজতেক উপজাতির। তার মানে কেতসাল ঠাকুরের সৃষ্টির ঢের যুগ পরের গল্প। নাহলে ওই একই বয়ান একটু উল্টেপাল্টে তো আজতেকদের পুরাণে জমজ ভাই ক্সোলোতির নাম নিয়েও একই রকম গপ্পো শোনা যায়। তবে ওলমেকদের এই সর্পদেবতা যুগ যুগ ধরে নানান গুণ যোগ করে আবির্ভূত হয়েছেন। তোতোনাক উপজাতিরা ওলমেকদের পরে ক্ষমতা দখল করেছিল। তারাও মন্দির বানিয়ে দেয় কেতসালকুয়াতলের।

মেক্সিকোয় যত উপজাতি সে সময় বিভিন্ন পর্বে সভ্যতার অগ্রগতি ঘটিয়েছিল তাদের মধ্যে তোতোনাক, তোলতেক, মিক্সতেক, জাপোতেক, মায়া, আজতেক ইত্যাদি বেশ কটি নাম জানা যায়। কিন্তু ক্রোনোলজি বানানোর যদি চেষ্টা করা যায় তাহলে দেখা যাবে ওলমেক উপজাতি থেকে মায়া উপজাতি পর্যন্ত ক্ষমতা বিস্তারের মাঝে বিভিন্ন স্তরে এই তোতোনাক, মিক্সতেক, জাপোতেক ইত্যাদিদের তুলনায় স্বল্প সময়ের সভ্যতা বিস্তার ঘটেছিল। তোলতেকদের দারুণ প্রভাব পড়েছিল মায়া উপজাতির উপর। কেতসালকুয়াতল দেবতার রূপ ও শক্তির ধারণাও সেভাবে যুগ যুগ ধরে বর্ধিত হয়ে চলেছিল। আর এই তোলতেকদের সময়েই এই পালক লাগানো সর্প দেবতাকে মানুষ হিসাবেও কল্পনা করা শুরু হয়। যে কারণে তোলতেক রাজারা নিজেদের নামের সঙ্গে কেতসালকুয়াতল উপাধি জুড়ে নিতেন। মায়া সভ্যতায় এই কেতসালকুয়াতল দেবতা কুকুলকান দেবতা নামে পূজিত হত। মায়া সভ্যতায় এই দেবতা কেবল ভুট্টা দেবতা নন তিনি ছিলেন ঈশ্বরকে মর্ত্যে এনে দেবার মাধ্যম দেবতাও বটে। এর পরবর্তী সময়ে আজতেকরা কেতসালকুয়াতল ঠাকুরকে “সাদা তেজকাতলিপোকা” বলে পূজা করতে শুরু করে। অর্থাৎ ওলমেকদের সময়ে যে সহোদর ভাই শুধু তেজকাতলিপোকা ছিল যার সঙ্গে এই সর্প দেবের লাভ-হেট রিলেশনশিপ ছিল সেটাকেই আরো একটু মসৃণ ও নিশ্চিত করে কালোর বিপরীত “সাদা তেজকাতলিপোকা” দেবতা বলে ডাকা হতে লাগল।

এ পর্যন্ত পড়ে পাঠকের মাথা ঘুরতে শুরু করছে দিব্যি বোঝা যাচ্ছে। বিশেষ করে বাঙালি পাঠক তো মায়া সভ্যতা ও ভারতীয় সভ্যতার মিল বিষয়ে এতটাই নিশ্চিত যে সে আবেগ অতিক্রম করে তলিয়ে আর কিছু জানতেও চান না। তা তাদের দোষ দিই কী করে! যখন এটা জানি “মায়া” শব্দটিই সংস্কৃত শব্দ। আর আধুনিক ঐতিহাসিকরা বলছেন মেক্সিকোয় ওলমেকদের সময়ে এশিয়া মাইনর থেকে নাকি মানুষের বিপুল অভিবাসন হয়েছিল। মোদ্দা কথাটা হল ১৫০২ সালে স্পেনীয় সাম্রাজ্যবাদ ঝাঁপিয়ে না পড়া পর্যন্ত সবকটি সভ্যতাতেই কেতসালকুয়াতল দেবতা বিভিন্ন নামে পূজিত হয়েছেন। এর পরে এর্নান্দো কোর্তেস তার সহযোগী সেনাদের নিয়ে যে বিপুল নিষ্ঠুরতায় এবং স্বল্প সময়ে সম্পূর্ণ সেন্ট্রাল আমেরিকান দেশগুলির উপর স্পেনীয় সাম্রাজ্যসীমা বিস্তার করে ফেলেছিল তার পরে শুরু হয়েছিল এই কেতসালকুয়াতল দেবতাকে মানুষ কোর্তেসের ভাবমূর্তি মিশিয়ে এর্নান্দো কোর্তেসকেই কেতসালকুয়াতলের অবতার বলে প্রচার করা। এর পেছনের সম্ভাব্য গল্পটা হল তখন আজতেকদের প্রবল প্রতাপশালী সম্রাট ছিলেন সম্রাট দ্বিতীয় মোন্তেসুমা। কিউবা থেকে ৭০০ স্পেনীয় সেনা নিয়ে মেক্সিকোর পূর্ব দিকের উপকূলে যখন কোর্তেস বাহিনী নেমেছিল তখন যদি সম্রাট মোন্তেসুমা প্রথম থেকেই দ্রুত এই রবাহুতদের উপর যুদ্ধ ঘোষণা করতেন তাহলে হয়ত স্পেনীয়রা হেরে যেত। কিন্তু সম্রাট মোন্তেসুমা সিদ্ধান্ত নিতে দেরী করে ফেলেন কয়েকটি দিন। এবং দুর্দান্ত অত্যাচারী এর্নান্দো কোর্তেস বাহিনী সে সময়টুকুর সদ্ব্যবহার করে সম্রাটকে অতর্কিতে আক্রমণ করে। আজতেক সেনারাও বেশ কিছু স্পেনীয়দের মেরে ফেলেছিল। কিন্তু তবুও যথাযথ প্রস্তুতি ছিল না বলে শেষ পর্যন্ত আজতেকদের পরাজয় মেনে নিতে হয়। সম্রাটের সেনারা নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে -দেবতা ছাড়া এ কাজ কারো পক্ষে করা সম্ভব নয় এমন একটি প্রচার ছড়িয়ে দেবার উদ্দেশ্যে এর্নান্দো কোর্তেস আসলে স্বয়ং দেবতা কেতসালকুয়াতল এমনটাই প্রচার করবার চেষ্টা করে। আসলে সম্রাট মোন্তেসুমার ভাবনায় প্রথমে ভুল ছিল। তিনি স্পেনীয়দের আক্রমণকারী নয় বরং বন্ধু হিসাবে ভেবে নিয়েছিলেন। সে কারণেই সুউচ্চ আজতেক সভ্যতার অন্তিমকাল নেমে এসেছিল। এমনকী খৃষ্টানদের একটি শাখা মোরমোন, তারাও সে সময় বিশ্বাস করত স্বয়ং যীশুখৃষ্ট পুনরুত্থানের পরে নতুন পৃথিবীর এই দেবতাকে দেখা দিয়েছিলেন অথবা কেতসালকুয়াতলই স্বয়ং পুনরুত্থিত যীশুখৃষ্ট।

কিন্তু সে যাই হোক কেতসালকুয়াতল গত কয়েক হাজার বছর ধরে মেক্সিকো সহ মায়া সভ্যতার ধাত্রীভূমি গুয়াতেমালা, এল সালভাদোর, হন্ডুরাস, নিকারাগুয়া ইত্যাদি সেন্ট্রাল আমেরিকার দেশগুলিতে পালকওয়ালা সর্পদেবতা হিসাবেই পূজিত হয়েছেন। আধুনিক সময়েও মেক্সিকোর প্রত্যন্ত গ্রামে উইচোল আর কোরা ইন্ডিয়ান উপজাতির লোকেরা বিশ্বাস করে কেতসালকুয়াতল দেবতা জীবন্ত এবং তারা পূজা করে আজও।

কিন্তু বিষয়টি ঠিক অশিক্ষিত ইন্ডিয়ান উপজাতির মানুষই বিশ্বাস করত এত সরল নয়। বিংশ শতকের মেক্সিকোর প্রবাদপ্রতিম সাহিত্যিকদের নানান রচনায় এই সভ্যতাগুলির শিকড় বারবার দেখা গিয়েছে।

“আমাকে খুঁজতে গিয়ে, কবিতা, তোমার ভেতরে
           নিজেকে খুঁজে পেলাম-
এলোমেলো হওয়া জলের নক্ষত্র,
আমার আমিত্বকে সে অস্বীকার করেছে।
তোমাকে খুঁজতে গিয়ে, কবিতা,
           ডুবেছি নিজের ভিতর।
তারপর, নিজের কাছ থেকে পালাতে
   তোমাকেই খুঁজেছি স্রেফ কবিতা-
পুরু প্রতিবিম্বের ভেতর
   হারিয়েছি নিজেকে ওই ওখানে!
কতবার ফিরে ফিরে আসার পরে
   আরো একবার দেখলাম;
একই নগ্নতার ভিতর
   সেই এক প্রত্যাখ্যাত মুখ;
আয়নার সেই এক জলরাশি
   অপেয় সে পানীয়;
আর আয়নার প্রান্তরেখায়,
   সেই এক মরণ তৃষা।”

ওক্তাভিও পাসের সবচেয়ে মহৎ কীর্তি, বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ পিয়েদ্রা দে সলের থেকে নেয়া উপরের কটি লাইন। আসলে পিয়েদ্রা দে সল সম্ভবত মেক্সিকোর সবেচেয়ে বিখ্যাত স্থাপত্য। মানে সূর্য পাথর। আজতেকদের ক্যালেন্ডার এটি। কিন্তু তার আবেদন বিংশ শতকেও কতখানি এ কবিতা তারই নমুনা। অন্য লেখকদের মধ্যে বিশেষ করে কার্লোস গুয়েন্তেস বোধহয় আজতেক ও ওলমেকদের সমস্ত মিথ ও পুরাণকে নিয়ে এসেছেন সৃষ্টিতে। La región más transparent বা সবচেয়ে স্বচ্ছ যে এলাকা উপন্যাসটি কিংবা প্রবাদ প্রতিম উপন্যাস la muerte de artemio cruz বা আরতেমিও ক্রুসের মৃত্যু … এইসব উপন্যাসগুলিতে বারবার ফুয়েন্তেস Chingon অর্থাৎ মন্দের কথা তুলে এনেছেন। ভাল ও মন্দের দ্বৈরথ এক বিশেষ গুরুত্বের জায়গা পেয়েছে তার লেখালিখিতে। এই মন্দ হল কেতসালকুয়াতলের সেই আদি পাপ কীর্তি (ভগিনীগমন) কিংবা হিংসুক ভাই তেজকাতলিপোকারসঙ্গে সেই বৈরিতার প্রতিফলনই মাত্র। আমাদের দেশের সাহিত্য ভাবলে কুরুপাণ্ডবের সেই চির দ্বৈরথের সম্পর্কের কথা মনে পড়ে যায় না? ফুয়েন্তেসেরই আরেক উপন্যাস Terra Nostra বা আমাদের পৃথিবী উপন্যাসটিকে মহা উপন্যাস বলাও ভুল হবে না। এখানে ওই ওলমেক তোতোনাক আজতেক ও মায়া সভ্যতার শিকড় বলা যায় তুলে এনেছেন ফুয়েন্তেস তার রচনায়। গুয়াতেমালার নোবেলজয়ী সাহিত্যিক মিগেল আঙ্খেল আস্তুরিয়াস নোবেল পাওয়ার ঢের আগে তার যে মহৎ কীর্তি লিখেছিলেন ২৭ বছর ধরে, সে বইটির নাম গুয়াতেমালার উপকথা। সেখানেও এই দেবতা কেতসালকুয়াতলের কথা বারবার পাই বিভিন্ন উপকথায়। এসবই চিনিয়ে দেয় মেক্সিকোর সংস্কৃতির গভীরে প্রোথিত ধনী ঐতিহ্যের কথা। কেতসালকুয়াতল দেবতা তাই আজও আলোচনার মধ্যেই থাকেন।
সত্যি বল কী শিকড় ছাড়া মানব সমাজের পায়ের তলায় কিছুই যে আর পড়ে থাকে না।

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *