prabandho-korea-porichalok-bong

কোরিয়ো পরিচালক বং জুন-হোর শ্রেণী বিচার

বিধান রিবেরু

দুই-তিনটি ছবি দেখে একজন পরিচালক সম্পর্কে শেষ কথা বলে দেওয়া যায় না। তাই এই রচনার বক্তব্যও কোনো শেষ কথা নয়। এ নিয়ে তর্ক চলতে পারে। দক্ষিণ কোরিয়ার সাম্প্রতিক চমক বং জুন-হো, যিনি বিশ্ব চলচ্চিত্রের উৎসব ও আসরগুলো একের পর এক মাত করে চলেছেন, তাঁকে নিয়েই এই নাতিদীর্ঘ রচনা। কান চলচ্চিত্র উৎসবে গতবছর (২০১৯) স্বর্ণপত্র বিজয় ও ৭৭তম গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ডে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কার পাওয়া জুনহোর ‘প্যারাসাইট’ (২০১৯) এখন চোখ রাখছে ৯২তম অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডের দিকে। কারণ অস্কার দৌড়ে এরইমধ্যে ছবিটি ছয়টি শাখায় মনোনয়ন পেয়েছে। গোটা দুনিয়ায় যখন জুনহোর প্যারাসাইট নিয়ে জয়জয়কার তখন আমি এই ছবিটি পাঠ করেছি একটু ভিন্নভাবেই। অন্যরা যখন ছবির নির্মাণ, কারিগরী দিক ও কাহিনীর বয়ান নিয়ে বাহবা দিতে দিতে অজ্ঞান দশায় চলে যাচ্ছে, তখন আমি ছবিটিকে বিচার করেছি পাখির দৃষ্টিতে, সমাজবিজ্ঞানের আলোকে। বোঝার চেষ্টা করেছি ছবির বক্তব্য আসলে কি, কার পক্ষে এই ছবি দাঁড়াচ্ছে।
ছবিটির কাহিনী সবিস্তারে বলার প্রয়োজন নেই। শুধু এটুকু বলা যায়, কোরিয়ার দরিদ্র কিম পরিবার ও ধনী পার্ক পরিবারের গল্প এটি। দরিদ্র পরিবারে আছে বাবা কিম কিতায়েক, মা চুংসুক, ছেলে কিয়ু ও মেয়ে কিজিয়ং।এরা সূঁচ হয়ে ধনী পরিবারটিতে ঢোকে, এরপর ফাল হয়ে বেড়োয়। ধনী পার্ক পরিবারে রয়েছে বাবা পার্ক দংয়িক, মা ইয়নগিয়ো, কিশোরী মেয়ে দাহাই ও নাবালক দাসং। এই পরিবারে গৃহকর্মী হিসেবে রয়েছে মুনগুয়াং।
ছবিতে দেখা যায় কিম পরিবারটি ছলে-বলে-কৌশলে পার্ক পরিবারে গৃহশিক্ষক, গাড়িচালক ও গৃহকর্মী হিসেবে ঢুকে যায়। বলা বাহুল্য, পুরনো গৃহকর্মী মুনগুয়াং ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে বিতাড়িত হয়। পার্ক পরিবারের কেউ জানে না, তাদের গাড়িচালক, গৃহশিক্ষক,গৃহপরিচারিকা সকলেই একই পরিবারের সদস্য। শুধু নাবালক দাসং কিছুটা আন্দাজ করতে পারে তাদের গায়ের গন্ধ দিয়ে। গরীবের গায়ের গন্ধ বলে কথা! ছবিতে মোচড় শুরু হয় যখন পুরনো গৃহকর্মী মুনগুয়াং ফিরে আসে এবং কিম পরিবারের কাছে আবিষ্কৃত হয় মুনগুয়াংয়ের স্বামী গিয়ুনসাই পাতালঘরে বহু বছর ধরে লুকিয়ে আছে, পাওনাদারদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। এই খবর পার্ক পরিবারও জানে না। তো দুই গরীব পরিবার তখন মুখোমুখি। মুনগুয়াংও জেনে গেছে, এরা একটি পরিবার। পার্ক পরিবারের কাছে দুই দরিদ্র পরিবারই তথ্য সরবরাহ করে, নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার রক্তাক্ত লড়াই শুরু করে। এরই এক পর্যায়ে এক পার্টি চলাকালে মুনগুয়াংয়ের স্বামী গিয়ুনসাইয়ের হাতে খুন হয় কিম কন্যা কিজিয়ং। এটা সহ্য করতে না পেরে মেয়ের মা চুংসুক মেরে ফেলে খুনী গিয়ুনসাইকে। নিজের পরিবারকে রক্ষার জন্য তখন তৎক্ষণাৎ ওই পার্টিতেই গাড়িচালক কিম কিতায়েক খুন করে ফেলে তার মালিক পার্ক দংয়িককে। খুন করে সে লাপাত্তা হয়ে যায়। পরে তার ছেলে আবিষ্কার করে খুনী, পলাতক বাবা আশ্রয় নিয়েছে সেই পাতালের ঘরটিতে। এই হচ্ছে কাহিনী সংক্ষেপ।
ছবিতে বিষাদমাখা হাস্যরস রয়েছে, ইংরেজিতে যাকে বলে ডার্ক কমেডি। এর মাধ্যমে পরিচালক দুই গরীব পরিবারকে শুধু পরজীবী আখ্যা দিয়েই ক্ষান্ত হননি, তিনি দেখিয়েছেন স্বার্থের জন্য তারা শুধু নিজেদের মধ্যে খুনোখুনি করে, এমনকি যাদের বদান্যতায় তারা বেঁচে থাকে, তাদের হত্যা করতেও হাত কাঁপে না। পরিচালক স্পষ্টই এই ধরনের লোকেদের পরজীবী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, যেন উকুন। যাদের উপর খেয়েপরে বাঁচে, তাদেরকেই রক্তাক্ত করে এরা।
দুনিয়া আজ যে জায়াগায় দাঁড়িয়ে আছে, তাতে কেউ স্বীকার করুক আর না করুক, শ্রেণী বেশ প্রকটভাবেই বিদ্যমান। এজন্য কাউকে মার্কসবাদ বা লেনিনবাদ বুঝতে হবে না। বিশ্বের বেশিরভাগ অর্থ মুষ্টিমেয় লোকের হাতেই পুঞ্জীভূত। বাকিরা অর্থ ও সম্পদের সুষম বন্টন থেকে বঞ্চিত। এই বঞ্চিতরা থাকে শহরের প্রান্তে, তারা প্রান্তিক, অনেকে তাদের নিচুতলার বাসিন্দাও বলে। বং জুন-হোর গরীব পরিবারটিও শহরের এক প্রান্তে মাটির নীচেই থাকতো। অতিবর্ষণে তাদের ঘর ভেসে যায়। তেলাপোকার মতো তাদের মাটি ফুঁড়ে তখন বেরিয়ে আসতে হয় উপরে। বড়লোক পার্কের বাড়িতে থাকা বাঙ্কারে পলাতক গিয়ুনসাইও ছিল গরীব। নিচু তলার মানুষ, অন্যের আশ্রয়ে তারা বাঁচে, তাদের নিজেদের কোন সক্ষমতা নেই। তারা পরাশ্রয়ী।
অথচ কে না জানে, নিজের শরীরের শক্তি বেঁচেই গরীব মানুষ বেঁচে থাকে। বড়লোকের মতো নিচুতলার মানুষের শ্রম কম দামে কিনে তারা বাঁচে না। তারা শোষক নয়, অথচ জুন-হো তাদেরকেই পরজীবী ওরফে শোষক হিসেবে চিহ্নিত করেছে। পার্কের পরিবারে কি কিতায়েক গাড়ি চালায় না? চুংসুক কি বাড়ির লোকেদের জন্য খাবার বানিয়ে দেয় না? হতে পারে কাজটি পেতে তারা ছলের আশ্রয় নিয়েছে, কিন্তু তারা তো হাত গুটিয়ে রাখে না। অথচ তাদেরকেই কিনা উল্টো পরজীবী বা শোষকের ভূমিকায় দেখাচ্ছেন পরিচালক। এটি ইতিহাসের ভুল পাঠ। ভুল না বলে বরং বলা ভালো বিকৃত পাঠ। এই বিকৃতির কারণ পরিচালকের শ্রেণী অবস্থান।
আমাদের নিশ্চয় মনে আছে ১৯২৭ সালে মুক্তি পাওয়া ফ্রিৎস ল্যাংয়ের ছবি ‘মেট্রোপলিসে’র কথা। সেখানেও উঁচু ও নিচু তলার মানুষদের ধরা আছে চালচ্চৈত্রিক উপায়ে। শ্রেণীর কথা বলা আছে, বলা আছে শোষণের কথা। এই একবিংশ শতাব্দীতে এসে নতুন করে উঁচু-নিচু দেখালেন জুন-হো। অনেকটা অনুকরণ করলেন ‘মেট্রোপলিসকে’। তবে অবস্থান নিলেন সুবিধেজনক শ্রেণীতে। তাঁর ছবিতেও মাটির উপরের ঘর ও পাতালের ঘর রয়েছে। সমাজের উঁচু-নিচু বোঝাতে এটি ভালো মেটাফোর। পরিচালক সেই মেটাফোরের পক্ষ নিয়েছেন উপরের বাসিন্দাদের, যারা ধনী। আর নিচুতলার লোকেদের তিনি ঠগ, লোভী, অকৃতজ্ঞ ও খুনী হিসেবে দেগে দিলেন। বড়লোকের টাকা উপার্জন কোন উপায়ে হয়, আর কোন পথে পার্ক এত বিত্তবান, সেই প্রশ্নের অনুসন্ধান এই ছবিতে দেখা যায় না। পরিচালকের মনোযোগ ঐ গরীব দুই পরিবারের দিকে। তারা কি করে পরজীবী হয়ে নিজেদের সর্বনাশ ডেকে আনে, সেদিকে।
ছবি মুক্তির পর পরিচালক সাক্ষাৎকারে বলার চেষ্টা করেছেন, তরুণ অবস্থায় তিনিও বড়লোকের বাড়িতে গিয়েছেন গৃহশিক্ষক হয়ে, নিজেকে তখন তার গোয়েন্দা মনে হতো। তবে এখন যতই তিনি ছবির গরীব চরিত্রদের সাথে নিজেকে মেলানোর চেষ্টা করুন না কেন, তার শ্রেণী অবস্থান এই ছবিতে স্পষ্ট। যদি আরো প্রমাণ দরকার হয়, তো তারই আরেকটি ছবি ‘স্নোপিয়ার্সার’ (২০১৩) দেখা যেতে পারে।
‘স্নোপিয়ার্সার’ জুন-হোর প্রথম ইংরেজি ভাষায় নির্মিত চলচ্চিত্র। এর কাহিনী ফরাসি দেশের জাক লব ও জঁ মার্ক রসেত রচিত পোস্ট অ্যাপোক্যালিপটিক বা মহাধ্বংসোত্তর চিত্রিত-উপন্যাস (গ্রাফিক নভেল) ‘লো ট্র্যাসপেখসনেজ’ থেকে নেয়া। ছবিতে দেখা যায় বিশ্বের উষ্ণতা থামাতে গিয়ে জলবায়ুর উপর যে ছুরিচিকিৎসা চালানো হয়, তাতে উল্টো ফল হয়, পৃথিবীতে সৃষ্টি হয় নতুন বরফযুগের। দুনিয়ায় মানবসভ্যতা বলতে গেলে ধুয়েমুছে গেছে। যারা অবশিষ্ট ছিল তারা ঠাঁই পেয়েছে উইলফোর্ডের এক অত্যাধুনিক রেলগাড়িতে। সেখানে আবার শ্রেণী ভিত্তিক বগি রয়েছে। রেলগাড়ির শুরুর দিকে এলিট ও বুর্জোয়ারা, তারা সুপেয় পানি পায়, সুস্বাদু খাবার পায়, এমনকি বাচ্চাদের জন্য উন্নত শিক্ষাও পায়। আর গাড়ির লেজের দিকে স্থান পেয়েছে গরীব মানুষেরা। তারা ইঁদুরের মতো জীবনযাপন করে। রেলগাড়িটি যেন সমাজেরই এক রূপকচিত্র। তো পেছনে থাকা গরীবেরা খেতে পায় গাড়িতে জন্ম নেওয়া তালতাল তেলাপোকা দিয়ে বানানো পুডিং। আর সম্মুখভাগে বড়লোকেরা খায় দামী দামী খাবার। তারা বাইরের আলোবাতাসও দেখতে পায়। উন্নত সমাজের সব সুবিধাই তারা ভোগ করে। এমন বঞ্চনার হাত থেকে রক্ষা পেতে লেজের দরিদ্ররা বিদ্রোহ করার পরিকল্পনা করে। এ পর্যন্ত ছবির বক্তব্য আপনার কাছে বেশ লাগবে। মনে হবে, আহা এই মানুষগুলোরও তো সমানভাবে বেঁচে থাকার অধিকার আছে। বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক!
দরিদ্র গোষ্ঠীর ভেতর বিপ্লবের নেতা হয়ে ওঠে কার্টিস। আর তার তাত্ত্বিক গুরু হয় গিলিয়াম। তাদের উদ্দেশ্য এই ট্রেনের মালিক উইলফোর্ডকে উৎখাত করা। বাধা ডিঙিয়ে ট্রেনের সামনে এগুতে পারলেই দেখা মিলবে ভগবান বনে যাওয়া উইলফোর্ডের। পরিকল্পনা মতো গিলিয়ামের পরামর্শ ও সহায়তায় কার্টিস যখন ট্রেনের সম্মুখভাগে পৌঁছায়, ততক্ষণে সে হারিয়ে ফেলে অনেক কমরেডদের। এমনকি গিলিয়ামও মারা যায়। অনেক লড়াইয়ের পর কার্টিস মুখোমুখি হয় প্রভু উইলফোর্ডের। এবং তখনই বিদ্রোহী কার্টিস মুখোমুখি হয় করুণ সত্যের। উইলফোর্ড তাকে জানায়, তার তাত্ত্বিক নেতা গিলিয়ামের সাথে পরামর্শ করেই এই সাজানো বিপ্লব ঘটানো হয়েছে। যাতে লেজের দিককার মানুষ মারা যায়। কারণ ট্রেনে পর্যাপ্ত খাবারের সরবরাহ নেই। যা আছে সেটা দিয়ে চলতে গেলে কিছু খানেওলার মুখ বন্ধ করতে হবে। তাই এই বিপ্লবের নাটক। কার্টিস বুঝতে পারে, এই লড়াই শুরুর আগে থেকেই বিপ্লব বেহাত হয়েছিল।
এরপর যখন উইলফোর্ড তাকে ক্ষমতা গ্রহণ করতে বলে, কার্টিস রাজিও হয়ে যায়। তবে সে যখন আবিষ্কার করে দরিদ্র পরিবারগুলো থেকে ছিনিয়ে আনা বাচ্চাদের দিয়ে ট্রেনের ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করানো হচ্ছে, তখন সে আবারো বিদ্রোহী হয়ে ওঠে এবং ট্রেনে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দেয়। এতে বেঁচে যায় কয়েকজন। ছবির শেষ প্রান্তে দেখা যায়, দূরে এক শ্বেতভল্লুক। মানে পুরোপুরি নিষ্প্রাণ হয়ে যায়নি ধরণী।
শেষতক প্রাণের জয়গান গাইলেও, পরিচালক দেখালেন, ট্রেনের সম্মুখভাগে যিনি থাকেন, প্রভু বলি, বা বুর্জোয়া এলিট, কিংবা শাসক, তিনি মহৎ উদ্দেশ্যেই সবকিছু করতে চান। আর বিপ্লবের তাত্ত্বিকগুরুরা তলে তলে তাদের সাথেই আঁতাত করে। মাঝখানে কতিপয় লোক নেতা হওয়ার বাসনায় নিজের জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলে। অন্যদের প্রাণও অকালে ঝরে যায়। এই ছবির বক্তব্য অনেকটা এমন দাঁড়ায়, কি লাভ হলো তাহলে এই অযথা বিপ্লবে? ট্রেন চলছিল, খাবার পাচ্ছিলে, অনর্থক প্রাণ খোয়ালে, সুখশান্তি বিনষ্ট করলে, এখন বোঝো! বিপ্লব হলো ফাঁদ। এতে পা না দিয়ে যেমন চলছে, তেমনই চলতে দাও। এক সময় মারা যাবে, তখন খেল খতম।
অনেকেই হয় তো বলবেন, না না, পরিচালক তো বলার চেষ্টা করেছেন মানুষের নিষ্ঠুরতা আর বোকামির গল্প। যেখানে মানুষের কৃতকর্মের কারণে মানবসভ্যতাই হুমকির মুখে পড়ে যায় এবং তাদের নতুন করে শুরু করতে হয়। বেশ পরিবেশবাদী বক্তব্য আছে এতে। ঠিক আছে, আপনি দেখতে পাচ্ছেন গ্লাসে অর্ধেক পানি। আমি কিন্তু দেখতে পাচ্ছি গ্লাসের অর্ধেক খালি। পার্থক্য ওখানেই। আর ছবিতে পরিবেশ নিয়ে কিন্তু তেমন কোন কথাই নেই, নিরানব্বই ভাগ ছবিতেই রয়েছে বিদ্রোহ ও আপোসকামী তাত্ত্বিক গুরুর কথা।
পরিচালক জুন-হোর আরেকটি আলোচিত ছবি ‘ওকজা’ (২০১৭)। ছবিতে দেখা যায় বিশ্বে ক্রমবর্ধমান চাহিদার কথা মাথায় রেখে, অতি মুনাফালোভী মিরান্ডো করপোরেশনের লুসি মিরান্ডো পরিকল্পনা করে তারা শুকোরের শরীরে জিনের পরিবর্তন এনে বিশালাকায় শুকোরের জন্ম দেবে। এতে করে লাভ হবে কয়েকগুণ বেশি। এই চাষাবাদ আবার হবে পৃথিবীর নানা প্রান্তে, গোপনে। তো দক্ষিণ কোরিয়ায় পাঠানো নতুন প্রজাতির শুকোরটি গিয়ে পড়ে এক দরিদ্র কৃষকের পরিবারে। কৃষকটির পরিবারে একটি ছোট্ট মেয়ে মিজা শুকোরটিকে পেলেপুষে বড় করে। নাম দেয় ওকজা। ওকজা বড় হওয়ার পর যখন কর্পোরেশনের লোকজন তাকে নিতে আসে, তখন মিজা তাকে ছাড়তে চায় না। জোর করে ওকজাকে নিয়ে যাওয়া হয়। তাকে মুক্ত করার অভিযান নিয়েই এই ছবির কাহিনী।
দেখা যায় ছবির খলচরিত্র মিরান্ডোর একজন যমজ বোন আছে। তার নাম ন্যান্সি। সে আবার খুবই সৎ ও ভালো। একেবারেই মিরান্ডোর উল্টো চরিত্র। আর ছবির শেষে দেখা যায় মিজা একটি স্বর্ণের ছোট্ট শুকোর দিয়ে ওকজাকে ছাড়িয়ে নিয়ে সেই গ্রামে চলে যায়। এর মানে হলো করপোরেশন খারাপ হলেও অতোটা খারাপ নয়। একটি ছোট মেয়ের আবেগ তারা বোঝে। তাছাড়া সব বড়লোক তো খারাপ নয়। মিরান্ডোর বোন ন্যান্সি যেমন! এই ছবিতেও বেশ কৌশলে পরিচালক বড়লোকদের পক্ষপাতিত্ব করেছে। অথচ এমন এক বাতাবরণ তৈরির চেষ্টা করা হয়েছে এতে, যেন পরিচালক পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় মুনাফালোভীদের বিপরীতে পশু অধিকার নিয়ে কথা বলছেন। ভালো করে দেখলে বোঝা যাবে তিনি বলছেন, এক, সব ধনী লোভী নয়, আর খারাপ ধনী যে সেও বাচ্চাদের প্রতি সংবেদনশীল এবং অতোটা লোভী নয় যে, স্বর্ণশুকোর ও আসল শুকোর দুটোই রেখে দেবে।
জুন-হো গল্প বলতে পারেন গুছিয়ে। তাঁর নির্মাণ নদীর জলের মতোই স্বতস্ফূর্তভাবে বেগবান। কোন জটিল গল্প তিনি বলেন না। দর্শকের কাছে তাঁর কাহিনী জলবৎতরলং। বং জুন-হো আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত হন তাঁর দ্বিতীয় কাহিনীচিত্র ‘মেমোরিস অব মার্ডার’ (২০০৩) ছবির মাধ্যমে। এরপর তাঁর ‘দ্য হোস্ট’ (২০০৬) ছবিটি ব্যবসা সফল হয়। দক্ষিণ কোরিয়ায় জুন-হো এই মুহূর্তে বাণিজ্যিকভাবে সফল পরিচালক। শুধু কোরিয়াতে নয়, বলতে গেলে দুনিয়ার অন্যান্য প্রেক্ষাগৃহেও তাঁর ছবি পয়সার মুখ দেখছে। উল্লিখিত ছবিগুলো তো আন্তর্জাতিকভাবেও সমাদৃত হচ্ছে। তিনি আরো ছবি বানাবেন ভবিষ্যতে। সেগুলোতেও তিনি তাঁর শ্রেণীর প্রশ্নে অনড় থাকবেন বলেই মনে হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *