prabandho-projuktir-mukut

প্রযুক্তির মুকুট ও টোপর পরা সভ্যতা
শুভশ্রী নন্দী


শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত কী? এই প্রশ্নের উত্তরের কাঁটা নির্দেশ করে একটি শব্দের দিকে। যার নাম ‘প্রযুক্তি’। প্রযুক্তির আবির্ভাবে ‘ক্লাসিকাল সাইন্স’-এর মাহাত্ম বা ‘গর্ব’ সেখানে খানিকটা হলেও, ‘খর্ব’ হচ্ছে, কাজের পদ্ধতি অনেক সুষম ও সুগম হয়ে গেলেও। ফলত মৌলিক শিক্ষাপদ্ধতির যে একটি সূক্ষ্ম সুকোমল ধারা ও সুকুমার অবয়ব রয়েছে, তার হত্যা হচ্ছে ও তা ক্রমশঃ হারিয়ে যাচ্ছে। তবু সময়ের দাবীতে ‘প্রযুক্তি’-কে আমন্ত্রণ জানানো ছাড়া উপায় নেই। সে ‘গলতি’ ও ‘খামতিকে’ ঢেকে দেয় চাদরে, তার অপার ‘দ্রুতগামীতা’ ও অগাধ ‘স্মৃতিভান্ডার’-এর কাছে নতজানু হয়ে আত্মসমর্পণ করেছে মানুষ।

যেমন হাতে আঁকা ছবির জায়গা নিয়েছে আজ গ্রাফিক্সের ছবি। অনেক কম খাটুনি ও ভাবনাচিন্তার জায়গা দখল করেছে চটজলদি রংবাজীর চাক্ষুষ দৃষ্টিনান্দিকতা। গ্র্যান্ড পিয়ানোর জায়গা দখল করেছে আজ ডিজিট্যাল সাউন্ড। অনেক মেইক-আপ ও প্রসাধনে, ‘প্রযুক্তি’ যেমন ঢেকে দিতে পারে কন্ঠসুরের অসামঞ্জস্যতা, অসংলগ্নতা, মুড়ি মিছড়ির করে দিতে পারে এক দর। সেভাবেই ‘সেরা পরিসংখ্যানবিদ’ এবং ‘দক্ষ টেক স্যাভি কোডিং ও কম্পিউটিং বিশেষজ্ঞ’-এর বাজারমূল্য এক করে গুলিয়ে দিচ্ছে হালের পরিসংখ্যাবিজ্ঞান। মামুলী অঙ্ক জেনেও, একজন ‘উল্লেখ্য পরিসংখ্যানবিদ’ হতে পারেন আজ। সেখানে বই পত্তর ঘেঁটে ম্যানুয়েলি মালমশলা জোগাড় নয়, ‘ডাটা’-ই যোগান দেবে সব। একজন দক্ষ গণিতজ্ঞের, ‘বিমূর্ততা’ নিয়ে যে চিন্তনশক্তির অবাধ আকাশে, ‘মেধা ও মনন’-এর যে ঘুড়ি ওড়ানোর ক্ষমতা, তার মূল সুতোটি কেটে দেবার নামই আধুনিক শিক্ষা। এক্ষেত্রে কত কম সময়ে, কতটি পাক দিয়ে কত রঙের সূতো জড়ো করে লাটাইটি তৈরী হল, তার পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসেব রাখবে ডাটা ও যোগান দেবে চাহিদা অনুযায়ী। তড়িৎগতি, তৎপরতা ও তাৎক্ষণিকতায় সময়ের সদ্ব্যবহার হচ্ছে নিঃসন্দেহে।

তাই শিক্ষার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তটি অবশ্যই ‘টেকসুরে’ বাঁধা। ‘বিগ ডাটা’ হালের এক চমক দেয়া শব্দ। এদ্দিন এত ডাটা সামলে সুমলে প্রসেস করতে হিমশিম খেত মানুষ, কম্পিউটিং এর ‘অপার প্রসেসিং ক্ষমতা ‘জলভাত’ করে দিল সব সমস্যা।

মূলত ‘পরিসংখ্যান বিজ্ঞান’ আজ ‘ডাটা ড্রিভেন’। এই ডাটা হচ্ছে আজ ‘হীরের খনি’ সমপ্রায়। অনেক কয়লা ঘেঁটে ‘পাইলেও পাইতে পার অমূল্য রতন।’ সেই রতন আবিষ্কারের মূল্য দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষের ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তাকে সর্বসমক্ষে ‘বাজারি’ করে। আমি সুপারমার্কেটের কোন লাইন দিয়ে ঢুকেছি, তাও নথিবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে আমার অজান্তে। সেই অনুযায়ী বিজ্ঞাপন চলে আসছে ই-মেইলে, কুপন চলে আসছে ডাকবাক্সে। দিনের ২৪ ঘন্টা এভাবেই ‘ক্রমানুযায়ী মনিটরড্’ বা ‘সরজমিনে নজরদারি’ চলছে মানুষের ওপর, তাঁর ব্যক্তিগত স্বাধীনতা খর্ব করে। এই ‘ডাটা’ দিয়েই মডেল ফিট করছে পরিসংখ্যানবিদেরা। এর ভবিষ্যত কী? এ প্রশ্নের উত্তরে বলা যেতে পারে পরবর্তী পর্যায়ে আরো ‘রবোটিক’ হয়ে যাবে এই প্রক্রিয়া।

ডাটা স্টোরেজ বা সংগ্রহের ভয়াবহতা প্রসঙ্গে এও উল্লেখ্য যে, হালে আরেকটি গবেষণা চলতি এই পাশ্চাত্যে, যখন ‘হাত’-ই হয়ে উঠবে গাড়ী ও বাড়ীর চাবি। হাতের তালুতে ছোট্ট একটি মাইক্রোচিপ বসিয়ে দিয়ে ব্রিটিশ একজন বিজ্ঞানী স্টিফেন নরথ্যাম এই প্রযুক্তিটি উদ্ভাবন করেছেন। এটা অনেকটা নাক ও কান ফুটানোর মতো। ওই চিপের মধ্যে থাকবে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যগত মৌলিক কিছু তথ্য—যা ব্যাঙ্ক কার্ড-এর মত। তবে সেই চিপ কতটা সরকারি নিয়ন্ত্রণে থাকবে আর কতটা স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ পাবে, এ ‘প্রযুক্তি’ ও ‘নীতিবিজ্ঞানের’ বাকবিতণ্ডার প্রশ্ন। ডাটা সংরক্ষণের এই পদ্ধতিতে বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে উটকো সমস্যাও কিছু গজাবে বৈকি। এত সীমাহীন ডাটা-প্রতুলতা যে সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে ‘স্টোরেজ ক্রাইসিস’ হতেই পারে ভবিষ্যতের সমস্যা।

আরেকটি সমস্যা যে ক্রমাগত রানিং কমেন্টারির ধকলে অনেকসময়ই ‘ডাটা মার্জ’ করে যাওয়ায়, ‘অরিজিনাল’ বা ‘মূল ডাটা’-টির ‘অটুট-অস্তিত্ব’ অক্ষুণ্ণ রাখা যাচ্ছে না। সব ‘ডিভাইস’ একে অপরের সঙ্গে শিকলের মত জুড়ে আছে, তাই রেস্টুরেন্টের বাফে চেখে দেখা থেকে, পায়ে ফোস্কার জন্য জুতো কেনা …. দোকান থেকে বেরুনোর আগেই আপনার পছন্দের তালিকা নথিভুক্ত হয়ে গেল আপনার অজান্তে। এথিক্সের দিক থেকে, ‘প্রাইভেসি ভায়োলেটড’ হলে তবু ‘ল’ স্যুট’ করার একটা স্বাধীনতা আছে পাশ্চাত্যে। দেশে সেটি সম্ভব কিনা বা ‘মানবিক স্বাধীনতা’-র মূল্য দেওয়ার কোন অবকাশ রয়েছে কিনা, তা সরজমিনে তদন্ত করা আবশ্যক।

আমেরিকার একটি স্বনামধন্য আটলান্টা অবস্থিত টেক্ কলেজ ‘জর্জিয়া টেক’, যার কম্পিউটার ডিপার্টমেন্ট বিখ্যাত। ২০২১-শের মে মাসে সেই ‘কলেজ অব কম্পিউটার সায়েন্স’ একটি নতুন বিভাগ খুলছে, ‘স্কুল অব সাইবার সিকিউরিটি’ নামে।

টেক নির্ভরতার সাথে সাথে প্রযুক্তিকে লাগাম দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চলছে সমানভাবে। সেদিকেও সমান দৃষ্টি রাখার চেষ্টা করছে পাশ্চাত্যের শিক্ষাব্যবস্থা। ডাটার কল্যাণে বা কৃপায় এত ‘ইনফরমেশন বিষ্ফোরণ’, ‘ফেইক নিউজ’, ‘পিয়ার্ড রিভিউড জার্নেল’, ‘প্লেজারিজম’ এই সব ‘সাইবার ক্রাইম’ রুখতে ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স’-এর সাহায্য নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। কিভাবে? উদাহরণ দেয়া যাক। ইলেকট্রনিকেলি জমা দেয়া সব উত্তরপত্র দেখার সময় ‘প্লেগারিজম চেক সফ্টওয়্যার’ অন রাখছেন অধ্যক্ষরা। যা বলে দিচ্ছে শতকরা কত ভাগ মিল রয়েছে অন্য ছাত্রছাত্রীদের উত্তর কিংবা কোন ‘বই’ এর বয়ান বা ‘ওয়েবসাইটের’ পাতার লেখার সঙ্গে। সেই অনুযায়ী কলেজের ‘অনার কোড’ অনুযায়ী ছাত্রটিকে বহিস্কৃত করা হবে কিনা, নির্ধারিত হয়। এভাবেই রক্ষা করা হয় প্রযুক্তির ‘চেকস্ এন্ড বেলেন্স’।

সংখ্যাতত্বের প্রযুক্তি বিমুগ্ধতা থেকে মুখ ফেরানো যাক জীববিজ্ঞানে। বিজ্ঞানের এই শাখাটিও প্রযুক্তির থাবামুক্ত নয়। জীববিজ্ঞানীদের মধ্যে এখন শীর্ষে, ‘ইকোসিস্টেম’-কে আঘাত না করেও, ‘জিন এডিটিং’ করে রোগ প্রতিরোধ বা উপশম এর কাজ চলছে

প্রভূত। সেভাবেই ফলফুল ও এখন ‘জেনেটিকেলি ইঞ্জিনিয়ার্ড’। সেই একই কারণে

কলার মধ্যে যে বীজ দেখা যেত, তা আজ উধাও। তার উপর গাছের অসুখ রুখতে ‘জিন এডিটিং’ করে গাছকে ‘ন্যাচারেলি রেসিস্টেন্ট’ করে রাখা হচ্ছে। দেখা গেল যে কোন

ফাঙ্গাস গাছটির জন্য বিপজ্জনক। গাছেদের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার মধ্যে সেই

ছত্রাক হননের জিন ঢুকিয়ে দেয়া হল। কিন্তু এই জিন এডিটিং-এর ক্ষেত্রে ‘ভ্রুণ’ নিয়ে খেলার সময় একটা ‘নীতিবোধে’-এর প্রশ্ন এসেই যায়। ম্যেরিল্যন্ড বেতেস্দাতে অবস্থিত ‘ন্যাশনাল ইন্স্টিটিউট অব হেল্থ’এর গাইডলাইনের ‘ডিজিজ মডেল’ মেনে কাজ তার নিজের পথে এগোয়, তৎসত্বেও, ডাটা অফুরান নয়, জ্ঞানের পরিধিও অগাধ নয়, ‘জিন এডিটিং’ যে প্রকৃতিবিরুদ্ধ অনধিকার চর্চা নয়, তা হলফ করে কে বলবে? কোন কোন অসুখ কার কার সঙ্গে ‘ইনটারেক্ট’ করে তার ‘পাথওয়েজ’গুলো সম্পূর্ণ না জেনে, এই ‘টার্গেট অভিযান’ হিতেবিপরীতে কি

ঘটাবে, কে বলতে পারে? এই অনিচ্ছাকৃত ‘ভুল’ -এর দায়িত্ব সর্বান্তকরণে নিয়ে উচ্চাভিলাষী মানুষ কিভাবে মুখোমুখী হবে নীতিবিবেকের? এই প্রশ্নগুলো খাড়ার ঘা-এর মত ঝুলছে, বৈজ্ঞানিকদের এই সবকটি অজানাকে জয়ের অদম্য ইচ্ছের অভিসারে— যেমন, ‘ক্রিসপার টেকনোলজি’ জড়িত বিষয়াবলীতে। যে পাঁচটি উপায়ে ক্রিসপার আমাদের পৃথিবীকে আমূলে বদলে দিতে পারে সেই দিকগুলো হল:

১. হারিয়ে যাওয়া প্রজাতির পুনরাবির্ভাব ঘটানো (হার্ভার্ডের জিনতত্ত্ববিদ জর্জ চার্চ ‘অ্যামেরিকান অ্যাসোসিয়েশনফর অ্যাডভান্সমেন্ট অব সায়েন্স’-এর দল মনে করছেন যে ক্রিসপার ব্যবহারের মাধ্যমে তাঁরা এশিয়ান হাতি এবং লোমশ ম্যামথের জেনেটিক বস্তুর মিলন ঘটাতে সক্ষম হবেন।)

২. রোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী জিনকে সঠিকভাবে বদলে দেয়া।

৩. রোগসৃষ্টিকারী সকল অণুজীবকে চিরতরে সরিয়ে দেয়া।

৪. নতুন প্রজাতির স্বাস্থ্যকর খাবার উৎপাদন করা। (কৃষি গবেষণার ক্ষেত্রে ক্রিস্পার জিন সম্পাদন প্রযুক্তিতে নিউ ইয়র্কের কোল্ড স্প্রিং হারবর ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানীরা এই প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে টমেটোর উৎপাদন বৃদ্ধিতে কাজ করেছেন, যাতে ক্ষুধার্ত পৃথিবীর মুখে অন্ন তুলে দেওয়া যায়।)

৫. এই পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর এবং ক্ষতিকর পোকাকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া, যেমন ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া উৎপাদনকারী মশা। কেসপার ৯ কে বলা হয় ‘বিগেস্ট বায়োটেক ডিসকভারি অব দ্য সেঞ্চুরি’ – যদিও ক্লিনিক পর্যন্ত পৌঁছুতে এখনো দেরি আছে।

ডি.এন.এ-তে বিভিন্ন রকম জিন থাকে-রিপিটেটিভ সিকোয়েন্স থাকে, যাকে মনে হয় ‘জাঙ্ক ডি.এন.এ.’-। কিন্তু তারও একটা ভূমিকা রয়েছে, যেখানে একটা প্রোটিন রয়েছে। ‘কেসপার ৯’ বা ‘কেস-9’—-ডি.এন.এ.-র অপ্রয়োজনীয় জায়গাটি কেটে দিতে পারে। আবার ডি.এন.এ.-তে প্রতি মূহূর্তে ন্যাচারাল এডিটিং হয়। ডি.এন.এ. সিন্থেসিস হবার সময় কখনো ‘মিসম্যাচ’ হয়। এই মিসম্যাচ রিকভারিং কখনো বা ব্যর্থ হয়, যখন জিনের মধ্যেই নতুন ‘ভেরিয়েশন’ তৈরী হয়।

যাকে ‘ক্রিসপর ইন্টারফেরেন্স’ বলা হয়। এই জটিল এক ক্রমপরিবর্তমান জিনজগতে কাঁচি চালানো এখনো আজও সম্পূর্ণভাবে নীতিবিজ্ঞানসম্মত বা অনুমোদিত নয়।

তবু ভাবা হচ্ছে যে নিখুঁত জিনোম সম্পাদনায়, এইচ-আইভি-এইডস ভাইরাস, ক্যান্সার সহ জন্মসূত্রে পাওয়া বিভিন্ন রোগ নিরাময়ের সুযোগ থাকবে। যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল হিউম্যান জেনোম রিসার্চ ইন্সটিটিউট’ জানায় এর কাজ, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ডি-এন-এ অণুর ভেতর বেইসগুলোর জীবন নকশা বের করা। এবং সেই জিনোমে বা ডিএনএ-তে পরিবর্তন এনে রোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারা যাবে। যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিনের’ তথ্য অনুযায়ী, এপদ্ধতি দ্রুত, কম খরচের, অনেক বেশি নির্ভুল।

“এ যেন ঠিক কম্পিউটার থেকে ফাইল ডিলিট করা”-এ দাবি করেছেন ‘টেম্পল ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিন’-এর বিজ্ঞানীরা।

জিনোম সম্পাদনা নিয়ে তবু বিতর্ক আছে যে এ স্বাভাবিকতা বিরুদ্ধ ও প্রমাণসাপেক্ষ যা ভবিষ্যতে ক্ষতিকর প্রভাব আনতে পারে। এ নিয়ে গবেষণা এতটাই প্রাথমিক পর্যায়ে, তাই বিশ্বের অনেক দেশেই এখনো ‘জিনোম সম্পাদনা’ নিষিদ্ধ। তবু এবিষয়ের গবেষণা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এক মাইলফলক, অন্যদিকে নীতিবিরুদ্ধও। কারণ ‘ডিজাইনার বেবি’ কার্যতঃ ভবিষ্যত প্রজন্মের জিনও বদলে দিচ্ছে। যা মানুষের মধ্যে ‘জিনগত বৈষম্য’ তৈরী করবে। তাই, যুক্তরাজ্যে পরিত্যক্ত ‘আইভিএফ’ কোষের ওপরই শুধু ‘জিন সম্পাদনার’ কাজ করা যায়। কিন্তু তা ভ্রূণে পরিণত হলেই বিজ্ঞানীরা এর ওপর আর কোন জিনগত পরিবর্তন করতে পারেন না।

সেই অনুযায়ী আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, বায়োরিয়েক্টার, ন্যানো মেটিরিয়েল, পাওয়ার অব কম্পিউটিং এবং থিংকিং, একযোগে মাঠে নেমে পড়ল। সবটুকুই হল, প্রায়োগিক ও প্রযুক্তির হাত ধরাধরি করে। সাফল্যের ভাবনাকে ভর করেই নতুন প্রযুক্তির উদ্ভব হচ্ছে। এগুলো সবই ‘কোলাবোরেটিভ এফোর্ট। এ যেন অর্কেস্ট্রা জমাতে প্রাযুক্তিক সিম্ফনির আয়োজন।

বিজনেস ইন্ডাস্ট্রির ক্ষেত্রে ‘অটোমোবাইল’ থেকে ‘সফ্টওয়্যার’-সবই আজ ডিজিটালাইজড। যাকে বলা যেতে পারে ‘ডিজিটাল রিভলিউশন’।

অত্যাধুনিক ইন্ডাস্ট্রিয়েল কনসেপ্ট বা বিপ্লব হচ্ছে, ‘ইন্ডাস্ট্রি ৪.০’ অর্থাৎ ‘মিকানিক্যাল ডিভাইস’-এর সঙ্গে ‘ইন্টারনেট’-এর সংযোগ বা যোগসাযুজ্য।

প্রথম শিল্পবিপ্লব উদ্ভুত ‘স্টিম ইংঞ্জিন’ টিঁকেছিল শতাধিক বছর। এরপরের ধাপে এল ‘বিদ্যুৎ’। এরপর ‘কম্পিউটারাইজেশন অব মেনিফেকচারিং’, যার অপর নাম ‘ইন্ডাস্ট্রি 4.0’। যা এককথায় ইন্টারনেটের সূত্রে বিজনেসের ওপর ডিজটাল প্রভাব।

বিষয় হিসেবে ‘অঙ্ক’-এর কদর কমে হালআমলের সব ‘চার্ম’ জড়ো হয়েছে ‘আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স’-কেন্দ্রিক ‘মেশিন লার্নিং’-এ। তবে উন্নতির ক্ষেত্রে যে অঙ্কবিদরা এলগোরিদম করতেন, সেই জায়গা নিয়েছে আজ সফট্ওয়্যার কর্মীর ‘কোডিং’। তবে যেকোন যন্ত্রের যন্ত্রণার মতই, আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্সের ‘গুণন’ সর্বাবস্থায়- না নির্ভুল, না সঠিক সিদ্ধান্তদায়ক। প্রযুক্তি অন্যতম ডান হাত ‘ডাটা’। তবে এও অনস্বীকার্য যে এই ‘ডাটা’ হাতে ছিল বলেই তো এত তাড়াতাড়ি ‘ভেকসিন’ দেখতে পেয়েছে সূর্যের মুখ।

এক সময় রচনা লেখার প্রিয় বিষয় ছিলঃ ‘বিজ্ঞান আশীর্বাদ, না অভিশাপ’। বিজ্ঞানের অভিশাপের গর্ভেই হয়তো কচিৎ কদাচিৎ ভুমিষ্ঠ হয় আশীর্বাদ।



এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *