prabandho-tobu-ananta-jaagey

তবু অনন্ত জাগে
সুমনা সাহা


অন্ধকার রাত্রি। ছুটছে রেলের গাড়ি অযোধ্যা থেকে বৃন্দাবন অভিমুখে। সদ্য স্বামীহারা তরুণী বধূ সারদা শুয়েছেন জানলার ধারে, হাতের সোনার ইষ্টকবচটি তাঁর স্বামীর স্মৃতি। বিরহাতুর স্ত্রীকে দর্শন দিলেন শ্রীরামকৃষ্ণ, রেলগাড়ির জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে বললেন, “কবচটি যে সঙ্গে সঙ্গে রয়েছে, দেখো যেন না হারায়।” সেই প্রত্যক্ষ নির্দেশ পেয়ে চমকিত সারদা তৎক্ষণাৎ সেটি খুলে টিনের বাক্সে রামকৃষ্ণের নিত্যপূজিত ফটোর সঙ্গে রেখে দিলেন। এমন একবার নয়, বারবার পেয়েছেন তাঁর দর্শন। যখন শোকে অধীর হয়েছেন, দেখা দিয়ে বলেছেন, “হ্যাঁ গা, তোমরা এত কাঁদছ কেন? এই তো আমি রয়েছি, গেছি কোথায়? এই যেমন এঘর আর ওঘর।”১

‘এঘর আর ওঘর’ কথাটি তাৎপর্যপূর্ণ। এই যে চলমান জীবন, হাসি-খেলা-সুখ-দুঃখ, সব কিছুর উপর মৃত্যু যেন এক কালো যবনিকা ফেলে দেয়। মানুষ চলে যায়, এমনকি অসময়েও তাকে যেতে হয় যখন ওপারের ডাক আসে, পিছনে পড়ে থাকে শোকাহত আত্মীয়-পরিজন।

২০১৮ সালের শেষভাগ থেকে বিশ্ব এক নতুন মারক-ভাইরাসের কবলে বিপদাক্রান্ত। মহামারী হয়ে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি প্রান্তে ছেয়ে যাওয়া এই ‘করোনা ভাইরাস’ বিগত আড়াই বছরে অকালে কেড়ে নিয়েছে অনেক প্রাণ! স্বজন-হারানো ব্যথায় মর্মান্তিক যন্ত্রণা ভোগ করে চলেছেন বহু মানুষ। অত্যন্ত সংক্রামক এই ব্যাধি-আক্রান্ত মুমূর্ষু-ব্যক্তির অন্তিম সময়েও উপস্থিত থাকতে পারেননি তাঁদের আপনজন। এতদিনের সাথী যে মানুষটি কাল পর্যন্ত ছিলেন, আজ আর নেই! তাঁর সমস্ত অস্তিত্ব যেন এক মুহূর্তে শূন্যে মিলিয়ে গেল। জানতে ইচ্ছে করে, সত্যিই কি তিনি একেবারে মুছে গেলেন? নাকি এই মহাবিশ্বের কোথাও অন্যরূপে তিনি রইলেন? কোথায় গেলেন? কেমন আছেন সেই নতুন লোকে? এ-প্রশ্ন মানুষের চিরন্তন।

শাস্ত্র বলেন, যা অধুনা বিজ্ঞানেও প্রমাণিত, আমাদের এই শরীর পঞ্চকোষ দ্বারা আবৃত। খাদ্য বা অন্ন দ্বারা পুষ্ট যে দৃশ্যমান স্থূল দেহ, তা হল অন্নময় কোষ। মানস-লোক অর্থাৎ বুদ্ধি ও আবেগ-অনুভূতি মনোময় কোষ। প্রাণশক্তি, যার দ্বারা চালিত হয় দেহ ও মন, তা প্রাণময় কোষ। এর পরেও আছে আরও দুটি কোষ, একটি বিজ্ঞানময়, যা ‘ট্রান্সিটরি বডি’ বা কারণ শরীর, তা স্থূল ও সূক্ষ্ম কোনটাই নয়, দুই-এর মধ্যবর্তী এক অস্তিত্ব এবং সর্বশেষ আনন্দময় কোষ, যা সম্পূর্ণ ইন্দ্রিয়াতীত, স্থূল, সূক্ষ্ম বা মধ্যবর্তী কোনও অবস্থায় নয়, বিশুদ্ধ আনন্দেই তার স্থিতি। ‘ঈশা ফাউন্ডেশন’-এর প্রতিষ্ঠাতা, সদগুরু জাজ্ঞি বাসুদেব বলেন, “মৃত ব্যক্তি সম্বন্ধে আমরা বলি, ‘উনি আর আমাদের মধ্যে নেই’; এর অর্থ, আমরা যেভাবে তাঁকে আমাদের মধ্যে পেতাম, সেভাবে তিনি নেই, কিন্তু তার মানে এই নয় যে তাঁর অস্তিত্ব লুপ্ত হয়েছে। তিনি থাকেন, অন্য এক অবস্থায়, যা আমাদের স্থূল পঞ্চেন্দ্রিয় ও মন-বুদ্ধির অগোচর।”২

সাধারণ মানুষ মৃত্যুকে দুঃখের এবং ভয়াবহ বলে মনে করে, কিন্তু যাঁরা চিন্তাশীল, তাঁরা জানেন, মৃত্যু শান্তি ও স্বাধীনতার এক আনন্দময় অভিজ্ঞতা। মৃত্যুর পর আমরা স্থূল দেহের সমস্ত সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্ত হই, প্রথম কয়েকমুহূর্ত চেতনা এক অপরিচিত ও নতুন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়ে অজানা ভয় অনুভব করে। কিন্তু তারপর আত্মা এক অপূর্ব আনন্দের অনুভূতি লাভ করে। আমাদের সকলকেই কোন না কোনও একদিন মরলোক ছেড়ে যেতেই হবে। আমরা ঘুমের মধ্যে দেহবোধ হারিয়ে ফেলার ভয় করি না, বরং শান্তি অনুভব করি। মৃত্যুও এমনই এক বিশ্রামের অবস্থা। আত্মা অবিনশ্বর। আত্মার নাশ বা মরণ নেই। আমরা ‘অস্তি’ স্বরূপ এবং এই অস্তিত্ব শাশ্বত। সমুদ্রের ঢেউ বেলাভূমিতে আছড়ে পড়ে। আবার ফিরে যায় সাগরের বুকে। ঢেউ ফুরিয়ে যায় না। সে সাগর হয়ে যায়। আবার অন্য ঢেউ হয়ে ফিরে আসে। উত্থিত যে-কোনও শক্তি-তরঙ্গকে, পদার্থের একটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণাকেও ধ্বংস করা যায় না, একথা বিজ্ঞান স্বীকার করে। আমাদের দেহ নষ্ট হতে পারে, কিন্তু দেহাতীত সত্তা অজর, অমর। এই দেহ আত্মার পোশাকমাত্র। জীবনে কতবার আমরা পোশাক পরিবর্তন করি। মৃত্যুতে এই দেহরূপ পোশাকটি বিসর্জিত হয়, আধ্যাত্মিক সত্তা অবিনাশী।

বর্তমান দেহধারণের উদ্দেশ্য যখন পূর্ণ হয়, ভোগায়তন দেহের কর্মফল ভূক্ত হয়ে যায়, আত্মার পক্ষে তখন দেহের ভার বহন সম্ভব হয় না। সাধু ও পাপী উভয়েই মৃত্যুরূপ মুক্তি ও শান্তি পুরস্কার সমান ভাবে লাভ করে। তাই কারো মৃত্যুতে শোক করা উচিৎ নয়। মৃত্যুর পর সাধারণত ব্যক্তির চেতনা দৈহিক ভার, নিশ্বাস নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা, কোনওপ্রকার শারীরিক বেদনা অনুভবের দায় থেকে আকস্মিক মুক্তি লাভ করে। জীবাত্মা এক ধোঁয়াশাপূর্ণ, আবছা আলোকিত শান্ত সুরঙ্গপথে অগ্রসর হয়। এরপর সে এক গভীর সুষুপ্তিতে প্রবেশ করে, যা স্থূল দেহের গভীর নিদ্রার চেয়েও লক্ষগুণ গভীর ও উপভোগ্য। তবে মৃত্যু পরবর্তী অভিজ্ঞতা জীবের দেহে বাসকালীন জীবনযাপন ও সৎ-অসৎ কর্মের উপর নির্ভরশীল। নক্ষত্রলোকে (astral world) জীবাত্মাকে হাড়মাংসের খাঁচায় বন্দী হয়ে থাকতে হয় না। ইহলোকে যারা সুকৃতিবান, সেই পুণ্যবলে এক গভীর অসচেতন বিশ্রামের পর তাঁরা নক্ষত্রলোকে জীবনের এক নতুন মাত্রায় জেগে উঠে দেখেন, “In my Father’s house are many mansions.”

প্রিয়জন-বিয়োগের আঘাত

যত বড় ব্যক্তিই হোন, মৃত্যুর সামনে সকলেই অসহায়। সামান্য ব্যক্তিদের আর কী কথা, উন্নত ও মহৎ ব্যক্তিকেও প্রিয়জন হারানোর বেদনায় দগ্ধ হতে দেখা যায়। রবীন্দ্রনাথের জীবনে এ-আঘাত বেজেছে বারবার। আঘাত তাঁকে মনেপ্রাণে ক্ষতবিক্ষত করেছে অজস্রবার। আদরের কন্যা রানী বা রেণুকার মৃত্যুর পর বলেছিলেন, “… কিছুই তো করতে পারতুম না। অনেকদিন ধরেই জানতুম যে ও চলে যাবে। তবু রোজ সকালে গিয়ে ওর হাতখানা ধরে বসে থাকতুম।” মৃত্যুপথযাত্রী রাণী বলেছিল, “সব অন্ধকার হয়ে আসছে। কিছু যে দেখতে পাচ্ছি না। বাবা তুমি ‘পিতা নোহ সি’ মন্ত্র পড়ে শোনাও।” মেজো-মেয়ে বেলার অভিমান ছিল পিতার ওপরে, কিন্তু মৃত্যুর আগে সেও গল্প শোনানোর আবদার করত। বেলার মৃত্যুর আগে পুত্র রথীন্দ্রকে লিখলেন, “জানি বেলার যাবার সময় হয়েছে। আমি গিয়ে তার মুখের দিকে তাকাতে পারি এমন শক্তি আমার নেই।” আঘাতের পরে আঘাত, দুই মেয়ে এবং শেষে প্রাণাধিক প্রিয় ছোটছেলে শমীন্দ্রনাথের মৃত্যু! অসহনীয় সেই সন্তানশোকের আঘাত কবিকে মানসলোকে বারবার ছুঁড়ে ফেলেছে ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ উত্তাল সমুদ্রে, কিন্তু সবশেষে তিনি উত্তীর্ণ হয়েছেন সৃজনশীলতার বেলাভূমিতে!

নজরুলের প্রাণাধিক প্রিয় পুত্র বুলবুলের বসন্ত হয়েছিল। বিদ্রোহী-কবি ডাক্তার, কবিরাজ, বদ্যি কোনকিছু করতেই বাকি রাখেননি। অবশেষে দমদমের কাছে এক সাধু বসন্ত রোগীদের সুস্থ করে তুলছেন সংবাদ পেয়ে সাধুকে নিয়ে আসতে কবি তাঁর বিশ্বস্ত দুই সঙ্গী মৈনুদ্দিন আর শান্তিপদ সিংহকে পাঠালেন। মৈনুদ্দিন তাঁর ‘যুগ স্রষ্টা নজরুল’ গ্রন্থে লিখেছেন, “কবির বাড়িতে যখন সাধুকে নিয়ে এলাম, তখন বেশ রাত হয়েছে। আমাদের সাড়া পেয়ে কবি ছুটে এলেন। বুকে জড়িয়ে কাঁদতে লাগলেন। বললেন, ওরে মৈনুদ্দিন, সাধু কি মরদেহে প্রাণ ফিরিয়ে আনতে পারে? কবি আমার কাঁধ বারবার ঝাঁকাতে লাগলেন, আর একই কথা বারবার বলতে লাগলেন।” ঠিক দশ মিনিট আগে মারা গিয়েছিল বুলবুল। বন্ধু নলিনী সরকার পুত্রহারা নজরুল সম্পর্কে লিখেছেন, “আমাকে দেখে অতবড় দুর্দম বিদ্রোহী নজরুল ‘আমার বুলবুল উড়ে গেছে নলিনীদা’ বলে আমার সামনে আছড়ে পড়ল।” প্রাণচঞ্চল নজরুল বুলবুলের মৃত্যুর পর মানসিক শান্তির সন্ধানে ঝুঁকেছিলেন অধ্যাত্ম্যসাধনার দিকে।

নয়ন ছেড়ে চলে গেলে

যারা আমাদের ছেড়ে, ইহলোকের মায়া কাটিয়ে চলে যান, তাঁরা কোথায় যান? মৃত্যুলোক এক রহস্যময় দেশ, অজানা, তাই রহস্যময়। সে-দেশে সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্র নেই; স্থূল কোনকিছুই নেই। স্বপ্নলোকের মত সূক্ষ্ম সে জগৎ। মাণ্ডুক্য উপনিষদ বলেছেন, “বিশ্বে হি স্থূলভূংনিত্যং তৈজসং প্রবিবিক্তভুক্। /স্থূলং তর্পয়তে বিশ্বং প্রবিবিক্তন্তু তৈজসম্।” সকল প্রাণি ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে শব্দ স্পর্শ রূপ রস ও গন্ধ ইত্যাদি স্থূল বিষয় ভোগ করে। কিন্তু মৃত্যুর পর স্থূল দেহ থাকে না। তাই সেখানে ভোগ সূক্ষ্ম দেহে। পরলোকে জীবাত্মা মানসিক সংস্কারের জগতে অধিষ্ঠান করে।

ধন-সম্পদের মোহে পতিত ও প্রমাদগ্রস্ত মানুষ পরলোকের ধারণা করতে অক্ষম। অহঙ্কারের বশবর্তী হয়ে তারা এই ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জগতের অতীত অন্য কোনও অস্তিত্বে বিশ্বাস করে না। “ন সাম্পরায়ঃ প্রতিভাতি বালং প্রমাদ্যন্তঃ বিত্তমোহেন মূঢ়ম্।/অয়ং লোকো নাস্তি পরা ইতি মানী, পুনঃ পুনর্বশমাপদ্যতে মে।।”৩

কিন্তু যিশুখ্রিস্টের আবির্ভাবের হাজার বছর আগেই ভারতীয় ঋষিগণ আত্মার অমরত্ব ঘোষণা করেছিলেন। শুক্ল যজুর্বেদের অন্তর্গত ঈশোপনিষদ-এ পাই—“অগ্নে নয়া সুপথা রায়ে অস্মান্, বিশ্বানি দেব বয়ুনানি বিদ্বান্, যুয্যোধ্যন্মজ্জঽরাণমেনো ভূয়িষ্ঠাং তে নম উক্তিম্ বিধেম।।”(১/১৮)। “হে ঈশ্বর! আমায় বিশ্বের সেই অক্ষয় আলোকের উৎস স্থানে নিয়ে গিয়ে অমর কর।” একটি অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া মন্ত্রে আছে, “যাও যাও, সেই পথে যাও—যে প্রাচীন পথে গেছেন আমাদের পিতৃপুরুষেরা; সকল পাপ দূরে ফেলে জ্যোতির্ময় দেহে ফিরে গিয়ে তাদের সঙ্গে মিলিত হও।” “প্রেহি প্রেহি পথিভিঃ পূর্বোভিঃ যত্রা নঃ পূর্বে পিতরঃ পরেষুঃ উভা রাজান স্বধরা মদন্তা যমন পশ্যাসি বরুণম্ চ দেবম্।”৪

হিন্দুরা একটিই স্বর্গে বিশ্বাস করেন, তা হল ব্রহ্মলোক। সৎকর্ম করলে স্বর্গে গিয়ে সাত্বিক সুখ ভোগান্তে পুনরায় সংসারে জন্ম নিতে হয় আপন কর্ম-সংস্কার অনুসারে। তাঁরা বিশ্বাস করতেন, পিতৃপুরুষদের আত্মা চন্দ্রলোকে থাকেন। চাঁদ থেকেই পৃথিবীতে প্রাণের বীজ ঝরে পড়ে। প্রেতাত্মারা যে পথে চন্দ্রলোকে গিয়ে পুণ্যকর্মের ফলস্বরূপ আনন্দ ভোগ করেন, সেই পথকে বলা হয় পিতৃযান। “সম্বৎসরো বৈ প্রজাপতিস্তস্যায়ণে দক্ষিণঞ্চোত্তরঞ্চ; তদ্ যে হ বৈ তদিষতাপূর্তে কৃতনিত্যুপাসতেঃ তে চান্দ্রমসমেষ লোকং অভিজায়ন্তে। তে এব পুনরাবর্তন্তে।”৫ যারা ইহলোকে নিষ্কাম কর্মের দ্বারা শুদ্ধচিত্ত হন, সৎ ও পবিত্র জীবনযাপন করেন, তাঁরা ব্রহ্মলোকে যান। এটিই হিরণ্যগর্ভ বা সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মার লোক বা ব্রহ্মলোক। কল্পান্ত অবধি সেখানেই থাকেন। এই যাত্রাপথকে বলা হয় দেবযান। ব্রহ্মলোকের অধিপতি প্রজাপতি ব্রহ্মা। একটি কল্প বা সৃষ্টি অবসান হলে তিনিও মুক্ত হয়ে যান। নতুন সৃষ্টির আরম্ভে আসেন নতুন ব্রহ্মা। এই আবর্তন অনন্তকাল চলতে থাকে। ব্রহ্মলোক থেকে কোনও কোনও পুণ্যাত্মা আত্মজ্ঞান লাভ করে সত্যলোকে চলে যান। তাঁর মোক্ষ বা ব্রহ্মত্ব লাভ হয়। সেখান থেকে তিনি আর পুনরাগমন করেন না। জীবাত্মা দেবযান ও পিতৃযান মার্গ অবলম্বন করে কিভাবে দেবলোকে ও পিতৃলোকে গমন করেন, উপনিষদে সেসমস্ত বর্ণনা রয়েছে। জীবাত্মা ভিন্ন ভিন্ন স্তর বা লোক অতিক্রম করে এবং ভিন্ন ভিন্ন অভিজ্ঞতাও লাভ করতে থাকে। ব্রহ্মের সঙ্গে অভেদানুভূতিতে প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত পুনঃ পুনঃ সংসারে যাতায়াত চলতে থাকে। দেবলোকে গতি হলেও যাদের ব্রহ্মানুভূতি হয় না, তারা সংসারে মহামানব রূপে জন্মগ্রহণ করেন ও আত্মজ্ঞানলাভের জন্য সাধনা করেন। এই সাধন-পন্থাই দেবযান। ‘দেবযান’, অর্থাৎ দেবতাদের পথ বা দেবত্ব লাভের পথ।

ইহলোকের ধার্মিক ব্যক্তিরা পিতৃযানে গমন করেন। মৃত্যুর পর তাঁদের আত্মা প্রথমে ধূম্রজালের ভিতর দিয়ে, তারপর রাত্রির মধ্য দিয়ে, পনের দিন আঁধারের ভিতর ও ছ’মাস দক্ষিণায়ণের পথে যান। সেই সময় সূর্য দক্ষিণ দিকে গমন করে। সেখান থেকে জীবাত্মা পিতৃলোকে এবং এখান থেকে চন্দ্রলোকে যায়।

প্রত্যেক লোকেই অধিদেবতা আছেন, যিনি নবাগত আত্মাদের সব কিছুর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়-এর ‘দেবযান’ উপন্যাসে পরলোকের একটি সুন্দর বর্ণনা রয়েছে—

“অল্প পরেই ওরা এক বিস্তীর্ণ মরুপ্রান্তরের ন্যায় ঊষর স্থানে এসে পড়লো। তার চতুর্দিকের চক্রবাল-রেখা ধূমবাষ্পে সমাচ্ছন্ন—যেন মনে হয় কাঁচা বনে লতাপাতা পুড়িয়ে অজস্র ধূম সৃষ্টি করে দাবানল জ্বলছে। অথচ অগ্নিশিখা দৃশ্যমান নয়—শুধুই মরুময় ধূ ধূ প্রান্তর, মাঝে মাঝে বৃক্ষলতাহীন প্রস্তরস্তূপ। ওরা সেই জনহীন মরুদেশের ওপর দিয়ে শূন্যপথে ধীরগতিতে যেতে যেতে দেখলে সে রাজ্য সম্পূর্ণরূপে জনহীন, বৃক্ষলতাহীন। সেখানকার আকাশ নীল নয়, ঘোলাটে ঘোলাটে শুভ্র লঘু বাষ্পে ঢাকা। পুষ্পের মনে হোল ভাদ্র মাসের গুমটের দিনে পৃথিবীর আকাশে যেমন সাদা মেঘ জমে থাকে—অনেকটা তেমনি।

পুষ্প বল্লে—এই জায়গাটা যেন কেমন বিশ্রী—

রঘুনাথদাস বল্লেন—এই সব ভুবর্লোকের নীচু স্তর, পৃথিবীতে যাকে নরক বলে। এ অনেক দূর ব্যেপে রয়েচে—হাজার হাজার ক্রোশ চলে যাও, পৃথিবীর চারিপাশ ঘিরে এ রাজ্য বর্তমান। অথচ পৃথিবীর লোকের কাছে সম্পূর্ণ অদৃশ্য। এখানকার বাসিন্দারা আবার ভুবর্লোকের কোনো উচ্চ স্তর দেখতে পায় না।
—হাজার হাজার ক্রোশ! এমন জনহীন!
—তারও বেশি। যতদূর চলে যাও, এ অদ্ভুত লোকের আদি পাবে না। বহু হাজার ক্রোশ চলে যাও, এমনি। এ কোনো বাইরের অবস্থা নয়। এখানকার বাসিন্দাদের মানসিক-অবস্থা-প্রসূত। এরাও অনেকসময় যতদূর যায়—এ জনহীন মরু-পাথরের দেশের আদি-অন্ত পায় না খুঁজে, অন্য কোনো প্রাণীকেও দেখতে পায় না। চন্দ্র নেই, সূর্য নেই, তারা নেই—এই রকম চাপা আলো—কখনো কালো হয়ে আসে, ঘোর কালো, পৃথিবীর অমাবস্যার মত। উপনিষদে এ লোকের কথা বলে গিয়েচে—‘অসূর্যা নাম তে লোকা অন্ধেন তমসাবৃতা’—এই সে ভীষণ অন্ধতমিস্রা লোক—একশো বছর পর্যন্ত হয়তো টিঁকে যায় সেই অন্ধকার কোনো কোনো পাপী আত্মার কাছে। সে হতভাগ্য আশ্রয় ও আলো খুঁজে, সঙ্গী খুঁজে হয়রান হয়ে পড়ে।

পুষ্প শিউরে উঠলো। অস্পষ্ট স্বরে বল্লে—একশো বছর ধরে অমাবস্যা!”

পরলোকগত আত্মাদের সঙ্গে জীবাত্মাদের দেখা হয় পিতৃলোকে। কর্মফলভোগ শেষ হলে তারা অদৃশ্য সূক্ষ্মদেহ নিয়ে আকাশের মধ্যে দিয়ে বায়ুতে প্রবেশ করে, বায়ু থেকে মেঘ, সেখান থেকে বৃষ্টি বিন্দুর সঙ্গে ধরণীতে পড়ে এবং কোন খাদ্যশস্যের সঙ্গে মানবদেহে প্রবেশ করে আবার জন্ম নেয়। জীবাত্মা এমন দেহ আশ্রয় করে যার মাধ্যমে তার সঞ্চিত বাসনা চরিতার্থ করবার অনুকূল পরিবেশ পায়। এসময় সমস্ত মানস-সত্তার এতদূর সংকোচন হয় যে তার পূর্বস্মৃতি লুপ্ত হয়। নিষ্কাম ভক্ত দেবযান মার্গে স্বর্গলোকে যায়। উপনিষদে আছে, “তারা প্রথমে যায় আলোকে, সেখান থেকে দিনে, বর্ধমান অর্ধচন্দ্রে, তারপর দু’মাসে উত্তরায়ণের পথে, সেখান থেকে দেবলোকে, তারপর সূর্যে, তারপর তড়িৎলোকে এবং সেখান থেকে এক উচ্চস্তরের জীব এসে তাদের নিয়ে যান ব্রহ্মলোকে এবং কল্পান্ত পর্যন্ত তাঁরা সেখানেই থাকেন।”৬

সনাতন হিন্দুধর্মে আত্মতত্ত্ব৭

সনাতন হিন্দুধর্ম আত্মার অমরত্বে বিশ্বাসী। “জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে? চিরস্থির কবে নীর হায় রে জীবন নদে?” মধুকবির কবিতায় যে চিরন্তন বাণীর অনুরণন, তা হিন্দুর সর্বশ্রেষ্ঠ স্মৃতিশাস্ত্র ভগবদ্গীতায় ধ্বনিত—“জাতস্য হি ধ্রুবো মৃত্যুর্ধ্রুবং জন্ম মৃতস্য চ।/তস্মাদপরিহার্যেঽর্থে ন ত্বং শোচিতুমর্হসি।। (২/২৭); অর্থ, যেহেতু জাতব্যক্তির মৃত্যু নিশ্চিত, মৃতের জন্মও নিশ্চিত, অতএব অপরিহার্য বিষয়ে তোমার শোক করা উচিৎ নয়।

আত্মা যদি অমর হয়, তাহলে মৃত্যু হয় কার? মৃত্যু হয় জীবের স্থূল দেহের। এবিষয়েও গীতায় স্পষ্ট উল্লেখ আছে—“অব্যক্তাদীনি ভূতানি ব্যক্তমধ্যানি ভারত।/অব্যক্তনিধনান্যেব তত্র কা পরিদেবনা।।” (২/২৮); অর্থ, হে ভারত! প্রাণিগণ আদিতে অব্যক্ত, মধ্যে ব্যক্ত (এবং) নিধনে অব্যক্ত। তাহাতে শোক কেন?

জগতের সকল সৃষ্ট পদার্থের বিনাশ অবশ্যম্ভাবী। কিন্তু আত্মা অবিনশ্বর। “ন জায়তে ম্রিয়তে বা কদাচিৎ নায়ং ভূত্বা ভবিতা বা ন ভূয়ঃ।/অজো নিত্যঃ শাশ্বতোঽয়ং পুরাণো ন হন্যতে হন্যমানে শরীরে।।” (২/২০)। “বাসাংসি জীর্ণানি যথা বিহায় নবানি গৃহ্ণাতি নরোঽপরাণি।/তথা শরীরাণি বিহায় জীর্ণান্যন্যানি সংযাতি নবানি দেহী।।” (২/২২)। এই আত্মা জন্মান না, এঁর মৃত্যুও হয় না, কেউ এঁকে হত্যা করতে পারে না। পরিধেয় বস্ত্র জীর্ণ হয়ে গেলে মানুষ যেমন তা ত্যাগ করে নতুন বস্ত্র ধারণ করে, সেভাবেই আত্মা এক দেহ পরিত্যাগ করে অন্য দেহে প্রবিষ্ট হয়।

সাংখ্যাচার্য মহর্ষি কপিলের মতে ‘নাশ’ অর্থে কার্যের কারণাবস্থায় ফিরে যাওয়া। কার্য থাকলে তার কারণ থাকবে এবং কারণ থাকলে কার্যও থাকবে। এই কার্য-কারণ সম্বন্ধ মায়িক জগতের, মায়াতীত স্তরে একথা খাটবে না। জ্ঞানস্বরূপ আত্মা কার্যকারণাতীত নিত্যবস্তু। আপাত দৃষ্টিতে মনে হয়, যেন মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে জীবের অস্তিত্ব ফুরিয়ে গেল। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সকল প্রাণিই তার নিজস্ব কর্মফলানুসারে নির্দিষ্ট সংস্কার নিয়ে জন্মগ্রহণ করে, ভোগায়তন দেহের সাহায্যে সেই কর্মফল ভোগ করে, এই করতে গিয়ে পুনরায় সৃষ্টি করে নতুন কর্মফল ও সংস্কার। ভোগাবসানে সংসার থেকে বিদায় নেয়। কিন্তু তা চিরবিদায় নয়। প্রবৃত্তি মার্গে থাকলে জীবের এই যাতায়াত ফুরায় না। কিন্তু নিবৃত্তির পথে গেলে সংসারে এই পুনঃ পুনঃ আসাযাওয়া শেষ হয়, তখন আত্মা ব্রাহ্মীস্থিতি লাভ করে। জন্ম-মৃত্যুহীন সর্বানুস্যূত শাশ্বত এক পরমসত্তায় প্রতিষ্ঠিত থাকে। দেশ-কাল-নিমিত্ত মুছে যায় তখন। অজাতবাদ প্রবক্তা আচার্য গৌরপাদ বলেছেন, “তত্ত্বমাধ্যাত্মিকং দৃষ্ট্বা তত্তং নৃষ্ট্বা তু বাহ্যতঃ।/তত্ত্বীভূতস্তদারামস্তত্ত্বাদপ্রচ্যূতো ভবেৎ।।”


পরলোক-গবেষণায় বিজ্ঞানীমহল৮

মৃত্যু পরবর্তী জীবনের প্রশ্নে নিউরোসায়েন্টিস্ট, দার্শনিক বিজ্ঞানীরা সম্পূর্ণ অবিশ্বাসী না হলেও সংশয়বাদী। তাঁদের মতে, “ব্রেইন ডেথ’’ অর্থাৎ, মস্তিষ্কের মৃত্যু মানেই চেতনার সমাপ্তি ও মৃত্যু। তবে বিজ্ঞানীমহলের (প্যারাসাইকোলজিস্ট) বিশ্বাস, মৃত্যুকে ছুঁয়ে ফিরে এসেছেন, এমন ব্যক্তিদের কাছ থেকে মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের হদিশ পাওয়া সম্ভব। তিব্বতী লামাদের কোন কোনও শিষ্য মৃত্যুকালীন অভিজ্ঞতা লিখে রেখেছেন—(১) দেহে চাপের অনুভব, (২) ভেজা ভেজা ঠাণ্ডা ভাব ও পরে জ্বর জ্বর ভাব, (৩) শরীর বিশ্লিষ্ট হয়ে যাচ্ছে, এমন অনুভূতি।

ডাক্তারি পরিভাষায় ‘মৃত’ ঘোষিত, কিন্তু শেষ পর্যন্ত বেঁচে গেছেন, এমন ১০০ জনেরও বেশি ব্যক্তিকে নিয়ে গবেষণা করে ডাক্তার রেমন্ড এ. মুডি প্রাপ্ত তথ্যগুলোকে লাইফ আফটার লাইফ (১৯৭৫) নামক রচনায় প্রকাশ করেন। এই গবেষণার ফলাফল থেকে মৃত্যু সম্পর্কিত অভিজ্ঞতার কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য উদ্ঘাটিত হয়। এঁরা দেহ-বহির্ভূত যে ধরনের অভিজ্ঞতার কথা বলেন, সেখানে দেহ ও আত্মা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং তাঁরা জগৎকে তাঁদের ‘এস্ট্রাল বডি’-র মাধ্যমে দেখেন। কার্ডিওলজিস্ট ফ্রেড স্কুনমেকার ১৯৭৯ সালে মুডির এই ফলাফলগুলোকে তার একটি গবেষণায় যাচাই করেন মৃত্যুর চৌকাঠ থেকে বেঁচে ফেরা ২,৩০০ জন রোগীকে নিয়ে। সুপরিচিত পদার্থবিদ এবং প্যারাসাইকোলজিস্ট স্যার উইলিয়াম ব্যারেট এধরনের ঘটনা নিয়ে লেখেন ‘ডেথ বেড ভিশন’। তাঁর রচনায় সদ্যোমৃত ব্যক্তি গান শোনেন এবং তাঁর ভালবাসার মৃত ব্যক্তিকেও দেখতে পান। প্রাচীন গবেষণা পদ্ধতি এবং একান্তভাবে ব্যক্তির সততার উপর নির্ভরশীল এই কেস-স্টাডিগুলি ‘দেহ-বহির্ভূত অভিজ্ঞতা’ ক্ষয় হতে থাকা মস্তিষ্কের তৈরি হ্যালুসিনেশন বলে সমালোচিত হয়েছে।

দেহ থেকে প্রাণ নিষ্ক্রান্ত হওয়ার পরেও চেতনা অবশিষ্ট থাকে কি না, এবং মৃত্যু পরবর্তী জীবনের অভিজ্ঞতাভিত্তিক বিশ্বাসের উৎপত্তি দার্শনিক চিন্তাপ্রসূত বিচার, কোনও দেশ ও জাতির সভ্যতা ও সাংস্কৃতিক ধ্যান-ধারণা ও আধ্যাত্মিক স্বজ্ঞা (Intuit) জাত। ২০০৮ সালে Human Consciousness Project আয়োজিত ‘The AWARE Study’ (Awareness during Resuscitation) নামে বিশ্ববিখ্যাত ডঃ স্যাম পার্নিয়ার নেতৃত্বে একটি প্রোজেক্টে ও University of Southampton থেকে ডঃ পিটার ফেনউয়িক, অধ্যাপক স্টিফেন হলগেট ও রবার্ট পেভেলার-এর সহযোগিতায় একটি টিমের অধীনে UK, USA, Austria-র ১৫ টি হাসপাতালে প্রায় মৃত্যুর কবল থেকে পুনর্জীবন লাভ করেছেন, এমন ২০৬০ রোগীর উপর একটি পরীক্ষা চালানো হয় এবং মৃত্যু-পরবর্তী সচেতন অনুভূতির সত্যতা (হ্যালুসিনেশন-এর সঙ্গে পার্থক্য) প্রমাণ করবার জন্য প্রথমবার ‘অবজেক্টিভ মার্কার’ ব্যবহার করা হয়। পরীক্ষায় প্রমাণিত হয় যে, হৃদরোগে (কার্ডিয়াক-অ্যারেস্ট) ‘ক্লিনিকালি ডেড’ চিহ্নিত ৪০% ব্যক্তিদের মধ্যে হৃৎস্পন্দন পুনরায় ফিরে আসার আগেও চেতনার (সূক্ষ্ম-অনুভূতি বা মন) মৃত্যু হয়নি। প্রায় ৮০% ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রাণ ফিরে পাওয়ার পরেও অত্যন্ত দুর্বলতার জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করা যায়নি কিম্বা অধিকাংশই হৃদযন্ত্র স্তব্ধ হওয়ার পরে আর জীবন ফিরে পাননি। ইন্টারভিউ নেওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে ডঃ স্যাম পার্নিয়া বলেন, “মৃত্যুর কিছুক্ষণ পরেও অনুভূতি সজাগ থাকে, আভ্যন্তরীণ চেতনা সম্পূর্ণ লোপ পায় না।”

তারও আগে প্রায় চার বছর ধরে (১৯৮৮-৯২) একইরকম পরীক্ষানিরীক্ষা করেন নেদারল্যান্ডের একটি হাসপাতালের কার্ডিওলজি বিভাগের ডঃ পিম ভ্যান লোমেল ১০ টি ডাচ হাসপাতালের বিভিন্ন বয়সের প্রায় ৩৪৪ জন রোগীর উপর (NDE=near death experience), যাদের কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের সময় ওষুধের প্রতিক্রিয়া, মৃত্যুভয়, বা ধীরে ধীরে চেতনা লোপ পেয়ে সংজ্ঞা হারানো ইত্যাদি বিষয়গুলি নেপথ্যে কাজ করেনি। সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীকে ২ বছর পরে ইন্টারভিউ করা হয়, আবার ৮ বছর পরে ইন্টারভিউ করা হয় সেই স্মৃতি সম্পর্কে। NDE থেকে বেঁচে ফেরা ব্যক্তিদের অনেকেই বলেছেন, তাঁরা উজ্জ্বল আলো কিম্বা অন্ধকার সুড়ঙ্গ দেখেছেন, মৃত আত্মীয় দর্শন করেছেন, কেউ কেউ অন্যরকম কিছু দেখেছেন ও শুনেছেন যা তাঁদের পরবর্তী জীবনযাপন ও মৃত্যু সংক্রান্ত ধারণার আমূল পরিবর্তন ঘটিয়েছে। অত্যন্ত সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় পতিত ব্যক্তিদের, যাদের পক্ষে বেঁচে ফেরত আসা অসম্ভব ছিল, যেমন দুর্ঘটনা-আক্রান্ত পর্বত আরোহী, জাহাজ-ডুবি থেকে বেঁচে যাওয়া ও প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গে ক্রমাগত লড়াই করতে করতে প্রতিদিন সাক্ষাৎ মৃত্যুর সম্মুখীন হওয়া ব্যক্তি, দুরারোগ্য ব্যাধি-আক্রান্ত অন্তিম শয্যায় শায়িত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও একইরকম অনুভূতির কথা শোনা গেছে।

৩৪৪ জনের মধ্যে ২৮২ জনের (৮২%) ক্ষেত্রে ডাক্তারি পরিভাষায় মৃত সাব্যস্ত করার পরবর্তী (কোমা) অবস্থার অনুভূতির স্মৃতি পুনর্জীবন লাভ করার পর মুছে গেছে। অবশিষ্ট ১৮%-এর দশ প্রকার অভিজ্ঞতার ফলাফল এরকম—
(১) ‘আমি মারা গেছি’—এটি ধারণা করতে পেরেছেন—৫০%
(২) ইতিবাচক আবেগ অনুভব করেছেন—৫৬%
(৩) নিজের সত্তাকে দেহের বাইরে বোধ করেছেন—২৪%
(৪) ‘একটি সুড়ঙ্গ-পথে চলেছি’, এমন বোধ করেছেন—৩১%
(৫) জ্যোতির্ময়-অস্তিত্বের সঙ্গে ভাব-বিনিময় করেছেন—২৩%
(৬) বিভিন্ন প্রকার রঙ দেখতে পেয়েছেন—২৩%
(৭) মহাজাগতিক দৃশ্যপট আবছা দেখেছেন—২৯%
(৮) অসুস্থ ও রোগাক্রান্ত ব্যক্তিদের দেখা পেয়েছেন—৩২%
(৯) নিজের সমগ্র জীবনের ঘটনা ছবির মত ফুটে উঠতে দেখেছেন—১৩%
(১০) জীবন ও মৃত্যুর মধ্যবর্তী সীমারেখা অনুভব করতে পেরেছেন—৮%

পরীক্ষা চলাকালীন একটি হাসপাতালে একদিন রাত্রে ৪৪ বছরের এক ‘কোমা’ রোগীকে করোনারি কেয়ার ইউনিট-এ ভর্তি করা হয়। পথচারীরা তাঁকে একটি মাঠের ধারে মৃতবৎ পড়ে থাকতে দেখে এ্যাম্বুলেন্সে তুলে দেয়। ঐ ইউনিটের এক নার্স বলেন, “আমরা তাঁর কৃত্রিম শ্বাসক্রিয়া চালু করার চেষ্টা করছিলাম, অক্সিজেন নল লাগানোর সময় মুখের ভিতর বাঁধানো দাঁতের পাটি দেখে তা বের করে আবর্জনার বাক্সে ফেলে দিই। প্রায় দেড় ঘণ্টা পড়ে তাঁর রক্ত চলাচল প্রক্রিয়া ও হৃৎপিণ্ডের স্বাভাবিক ছন্দ শুরু হলেও তখনও সেই ব্যক্তি কোমাচ্ছন্ন ছিল এবং তাঁকে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট-এ স্থানান্তরিত করা হয়। তাঁর কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা চালু ছিল। এর প্রায় এক সপ্তাহ পরে ঐ ব্যক্তিকে সাধারণ ওয়ার্ডে দেওয়া হল। আমি তাঁকে ওষুধ দেওয়ার দায়িত্বে ছিলাম। তিনি আমাকে দেখেই চিনতে পারলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, ‘আমার দাঁত কোথায় গেল?’ আমি সেকথা ভুলে গিয়েছিলাম। তিনি বললেন, ‘আপনিই তো আমার দাঁত খুলে ঐ ক্র্যাশ-কার-এ ফেলে দিয়েছেন! ওর ওপরে অনেক খালি বোতল চাপানো আছে। নিচে একটা স্লাইডিং ড্রয়ার আছে, সেখানে আমার দাঁত রেখেছেন।’ আমি আশ্চর্য হয়ে গেলাম, কারণ উনি যেসমস্ত কথা বলছেন, সেই সময় গভীর কোমায় ছিলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপনি তখন এসমস্ত দেখলেন কিভাবে?’ উনি বললেন, আমি এই ঘরের মধ্যেই ছিলাম, আমি আমাকে বিছানায় শোয়া দেখছিলাম, আপনাদের সবাইকে আমার শরীরে নানারকম যন্ত্রপাতি লাগাতে ব্যস্ত দেখছিলাম।’ ওনার বর্ণনা অনুসারে সেদিন সেই ঘরে উপস্থিত সকল ব্যক্তি ও সমস্ত ঘটনা হুবহু মিলে গিয়েছিল!”

বিখ্যাত পদার্থবিদ ডানকান ম্যাকডুগাল (১৯০১) মৃত্যুর আগে এবং প্রাণ নির্গত হওয়ার অব্যবহিত পরে মৃতদেহের ওজন নিয়ে আত্মার (সূক্ষ্ম দেহ/অ্যাস্ট্রাল বডি) ওজন বের করবার পরীক্ষা করেছিলেন। যদিও তাঁর উদ্দেশ্য ছিল সূক্ষ্মদেহের ভর আছে এবং তা পরিমাপযোগ্য এটি প্রমাণ করা, বিজ্ঞান তাঁর মতবাদের সমর্থনে দাঁড়ালেও অধ্যাত্মবাদীরা আত্মার ভৌতিক বা স্থূল অস্তিত্বে বিশ্বাসী নন। তাঁর পরীক্ষার ফলাফল অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ‘২১ গ্রাম’, যেটি অন্যান্য দেশের বিজ্ঞানীদের অনুরূপ পরীক্ষার ফলাফলের সঙ্গে মিলে গেছে। তাঁর পরবর্তী পরীক্ষানিরীক্ষা ছিল আত্মার (departing soul) ছবি তোলা। ম্যাকডুগাল-এর গবেষণার বিষয়বস্তু নিয়ে ২০০৩ সালে তৈরি হয় সিনেমা—‘21 Grams’।

বিভিন্ন ধর্মে পরলোক ও পুনর্জন্মবাদ সংক্রান্ত ধারণা ও বিশ্বাস

হিন্দুধর্মশাস্ত্র (বেদ) ছাড়া বাইবেল, কোর-আন, তালমুদ, ত্রিপিটক প্রভৃতি ধর্মগ্রন্থেও রয়েছে পরলোক ও পুনর্জন্মবাদ সংক্রান্ত ধারণা ও বিশ্বাস।

প্রাচীন মিশরীয় বিশ্বাস, মৃত্যুর পরে জীবদেহ ‘কা’ ও ‘বা’ নামের দুটি সূক্ষ্মদেহে বিভক্ত হয়ে চলে যায় মৃত্যুপুরী ‘আরু’-তে যেখানে অরিসিস-এর রাজত্ব। তিনি বিদেহীর সুরক্ষা দান করেন, বিনিময়ে কাজ করিয়ে নেন। অসুস্থ ব্যক্তির মৃত্যু হলে তার হয়ে পরলোকে গিয়ে কাজ করে দেওয়ার জন্য মৃতের কবরের পাশে ‘দাস’-এর মূর্তি তৈরি করিয়ে রাখে। পবিত্রহৃদয় ব্যক্তির মৃত্যু হলে তাঁকে পরলোকে গিয়ে ‘Book of the Dead’ থেকে বিশেষ মন্ত্র পাঠ করতে হয় ও কিছু রহস্যময় মন্ত্রের অর্থ বলতে হয়। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে পুরস্কারস্বরূপ সঙ্গে সঙ্গে স্বর্গে পাঠানো হয়। অসুস্থ ব্যক্তির ক্ষেত্রে তাঁর হৃদয় ওজন করা হয়, যদি তা কর্মফলদাত্রী ও সত্যের দেবী ‘মাত’ এর মুকুট-পালক ‘শু’-এর চেয়ে হালকা হয়, সে রেহাই পাবে, তা না হলে ‘আম্মিত’ দানব তাকে খেয়ে ফেলবে।

খ্রিস্টজন্মের প্রায় ১০০০ বছর আগে ইরানে বসবাসকারী জোরাস্ট্রিয়ান ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করতেন, মৃতব্যক্তি ‘ভয়’ দ্বারা গ্রসিত হবে এবং সময় হলে পুনরায় সংশুদ্ধ হয়ে স্থূল জগতে প্রত্যাবর্তন করবে।

বাইবেল-এর ওল্ড-টেস্টামেন্ট, তালমুদ ও ৯০০ খ্রিস্টাব্দের ‘দাদেস্তান-ই-দানিগ’ অনুসারে মৃত্যুর পর প্রত্যেক জীবকে ‘শেষ-বিচার’-এর (জাজমেন্ট ডে) জন্য অপেক্ষা করতে হয় এবং পরে কর্মানুসারে সে যাবে ‘হেভেন’, ‘হেল’ অথবা ‘হামিস্তাগান’ (নিউট্রাল)।

জুডাইজম-এ ‘Book of Enoch’ অনুসারে ‘Sheol’ বর্ণীত চার-প্রকার ব্যবস্থা আছে; পুণ্যবান বা সুকৃতিবানদের জন্য স্বর্গবাস, পাপীদের জন্য নরক, মাঝারি পুণ্যবান ও মাঝারি পাপীদের জন্য যথাক্রমে শুদ্ধিকরণ কিম্বা শাস্তিভোগের পরে পুরস্কার এবং যারা ইহলোকে পাপের ফল ভোগ করেছে, তাদের ‘জাজমেন্ট ডে’-র দিন পুনরুত্থান (রেসারেকশন) হবে না।

ইসলাম ধর্মবিশ্বাস অনুসারে মৃত্যুর পর আত্মা তাঁর পুণ্য ও পাপ কর্মানুসারে ‘জান্নাত’ বা ‘জাহান্নম’-এ যাবে, কিন্তু অবশ্যই শেষ বিচারের পর। এই জান্নাত-এর সাতটি ও জাহান্নম-এর আছে পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন স্তর এবং আত্মাও স্তরভেদে ভিন্ন ভিন্ন সুখ ও দুঃখ ভোগ করে।

২য় ও ৩য় শতাব্দির চার্চ-এর মতে (non-canonical Act of Paul & Thecla) মৃত-এর জন্য প্রার্থনা অত্যন্ত ফলপ্রদ, তাতে তাঁরা একটি সুখাবহ অবস্থায় পৌঁছাতে সক্ষম হন। দাহ করবার পূর্বে হিন্দুরাও মৃতের শিয়রে বসে পাঠ করেন পবিত্র গীতা ও উপনিষদ, মূলত ‘কঠোপনিষদ’, যম-নচিকেতা সংবাদ।

যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে

মহাভারতের ‘আশ্রমিক পর্ব’-এ পাই, কুরুক্ষেত্র যুদ্ধে নিহত আত্মীয়-পরিজন-পতি-পুত্রদের শোকে ব্যাকুল ধৃতরাষ্ট্র ও গান্ধারী, কুন্তী, যুধিষ্ঠির প্রমুখ-এর মিনতিতে ব্যাসদেব তাঁর আশ্চর্য তপোবলে গঙ্গাগর্ভ থেকে মৃতব্যক্তিদের উত্থিত করালেন। মৃত পতির দর্শন পেলেন পত্নী, মৃত সন্তানকে আলিঙ্গন করলেন পিতামাতা। শুধু তাই নয়, এক রাত্রি তাঁরা সকলে আশ্রমে বাস করে প্রিয়জনদের মিলনাকাঙ্ক্ষা পূরণ করলেন। পরদিন প্রভাতে আবার ব্যাসদেব তাঁদের নিজ নিজ লোকে প্রেরণ করলেন।

এ কি কেবলই পৌরাণিক কল্পনা? বাস্তবে কি এ সম্ভব? পরমহংস যোগানন্দ বলেছেন, “যখন প্রিয়জন আমাদের ছেড়ে চলে যায়, অকারণে শোক না করে এটি উপলব্ধি করতে হবে যে সে ঈশ্বরের ইচ্ছায় আরও উচ্চতর লোকে গিয়েছে, ঈশ্বর জানেন তার জন্য কোনটি শ্রেয়। সে মুক্তি পেয়েছে জেনে আনন্দ করা উচিৎ। তার পরবর্তী পথে অগ্রসর হওয়ার সহায়ক হবে আমাদের শুভ প্রার্থনা, ভালবাসা ও সদিচ্ছার বার্তা। তাদের প্রতি আমাদের আসক্তি তাদেরকে মর্ত্যলোকের মায়া অতিক্রম করতে বাধা দেয়। প্রিয়বিয়োগের গভীর বেদনাবোধ মৃত ব্যক্তির আত্মাকে উচ্চতর শান্তি ও মুক্তির পথে অগ্রসর হতে দেয় না। আমরা সত্যিই যদি মৃত প্রিয়জনের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে চাই, আমাদের ভালবাসা অর্পণ করতে চাই, শান্তভাবে নিজের ঘরে একান্তে বসে ধ্যান করতে হবে। ধীরে ধীরে মন শান্ত হয়ে এলে দুই ভ্রূর মাঝে, যেটি আমাদের ইচ্ছাশক্তির কেন্দ্র, সেখানে, অর্থাৎ আজ্ঞাচক্রে তার রূপ ধ্যান করতে করতে হৃদয়ের আকুল ভালবাসার নীরব স্পন্দন তার উদ্দেশ্যে নিঃশব্দে ঢেলে দিতে হবে। তাকে যোগাতে হবে শক্তি ও সাহস। যদি প্রিয়জনের প্রতি আমাদের মমত্ববোধ তীব্র থাকে, তাহলে একটানা এরকম চেষ্টা চালাতে থাকলে সেই চিন্তাতরঙ্গ বিদেহী আত্মার কাছে অবশ্যই পৌঁছাবে এবং সে শান্তি ও সুরক্ষা অনুভব করবে।”

এ হল একপ্রকার মানসিক তর্পণ। তার জীবনের বিশেষ দিনে অন্তত বছরে একবারও যদি এভাবে তাকে ভালবাসার অর্ঘ্য নিবেদন করতে পারি, মনে মনে বলতে পারি, “আবার হবে তো দেখা, এ দেখাই শেষ দেখা নয় তো”, তখন গড়ে ওঠে ঐশ্বরিক প্রেমের এক অটুট সেতু—অনুভব হয় “জীবন-মরণ সীমানা ছাড়ায়ে বন্ধু হে আমার রয়েছ দাঁড়ায়ে!” জীবন-মৃত্যু উভয়ই একই মুদ্রার দুটি পিঠ, তাই উভয়কে স্বীকার করে নিয়ে কবির ভাষায় বলতে পারি—“আছে দুঃখ আছে মৃত্যু, বিরহ-দহন লাগে/তবুও শান্তি তবু আনন্দ তবু অনন্ত জাগে!”

তথ্য সহায়িকা:
(১) শ্রীমা সারদা দেবী; স্বামী গম্ভীরানন্দ; উদ্বোধন কার্যালয়, কলকাতা; প্রথম প্রকাশ- জুন, ১৯৯৭; অধ্যায়-‘চিরসীমন্তিনী’, পৃষ্ঠা-১১১, ১১২।
(২) Death: An Inside Story by Sadhguru (Chapter: Life After Death: What Happaens After Death).
(৩) কঠোপনিষদ, ১/২/৬।
(৪) ঋগ্বেদ, ১০.১৪.৭.৮।
(৫) প্রশ্ন উপনিষদ, ১/৯।
(৬) বৃহদারণ্যক উপনিষদ-৬/২/১৫; ছান্দোগ্য উপনিষদ-৫/১০/১; ভগবদ্গীতা-৮/২৪।
(৭) মরণের পারে; স্বামী অভেদানন্দ; শ্রীরামকৃষ্ণ বেদান্ত মঠ, কলকাতা; প্রথম প্রকাশ-সেপ্টেম্বর, ১৯৫৩
(৮) Philosophical, Psychological & Spiritual Perspectives on Death & Dying; David San Filippo (Ph.D.); National Louis University; January 2006 (Journal available in internet search).
(a) The New York Times. “Soul Has Weight, Physician Thinks.” 11 March 1907 (p. 5).
(b) MacDougall, Duncan. “The Soul: Hypothesis Concerning Soul Substance Together with Experimental Evidence of The Existence of Such Substance.” American Medicine. April 1907.
The New York Times. “The Human Aura Has at Last Been Photographed.” 5th February 1911 (p. SM8).
The New York Times. “As to Picturing the Soul.” 24 July 1911 (p. 1).
The New York Times. “Aura and Soul.” 28 August 1911 (p. 6).
The New York Times. “He ‘Weighed Human Soul.’” 16 October 1920 (p. 13).
Immortality of the Soul as an Intuitive Idea: Towards a Psychological Explanation of the Origins of Afterlife Beliefs; Journal of Cognition and Culture 12 (2012) 112-127.
Results of the AWARE Study paper published in the Journal Resuscitation
Understanding Death and Loss: Excerpts from the writings of Sri Sri Paramahansa Yogananda

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

13 thoughts on “prabandho-tobu-ananta-jaagey

  1. অসাধারণ লেখনী —– বাস্তবের আলোকে এনে চিন্তা করতে হবে নিজেদের কে আবেগে নয় বরং বেগে! মুগ্ধ লেখাটি পড়ে।।

    1. অনেক ধন্যবাদ সুমনা দি! লেখাটা বড়, ধৈর্য ধরে পড়েছ জেনে ভালো লাগছে! এই লেখাটার জন্য প্রায় তিন মাস ধরে এই বিষয়ে পড়াশুনা করেছি, আমি নিজেও অনেক উত্তর খুঁজে পেয়েছিl

  2. অসাধারণ !
    সংগ্রহ করে রাখার মতো প্রতিবেদন ৷
    কত অমূল্য সব বইয়ের নির্যাস নিয়ে অপূর্ব উপস্থাপনা ৷

    1. অনেক ধন্যবাদ ও ভালোবাসা অলি দি! বিদগ্ধ পাঠিকার কাছে রইল লেখিকার ঋণ💓

  3. অতি উচ্চমানের তথ্য সমৃদ্ধ রচনা …. মনে গভীর ছাপ ফেলে যায় ….অনেক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা জানাই ❤️❤️🙏🏻🙏🏻🙏🏻👍👍👌🏻👌🏻💐💐🌹

    1. অনেক ধন্যবাদ! ঈশ্বরের কাছে সকল বিদেহী আত্মার জন্য শান্তি প্রার্থনা করি🙏

    1. অনেক ধন্যবাদ ও শারদীয় শুভেচ্ছা জানাই তোমাকে💓

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *