short-story-azadi-o-phulmotia

আজাদী ও ফুলমোতিয়া
নলিনী বেরা


বাসদেও-এর একটাই মেয়ে। ফুলমতী। লোকে তো বলে ফুলমোতিয়া।

বাপ খেতি-বাড়িতে কাজ করে। ফুলমতী ভঁইশ চরায়।

শুধু কী ভঁইশ, কটা ছাগল, গরু-ভেড়াও আছে। আর আছে বিন্দিয়া। প্রাণের সখী, সহেলি। সেও ছাগল-চরানী। একই গাঁয়ের।

প্রাইমারি ইস্কুলের মষ্টরজী একদিন দুজনকেই ধরে নিয়ে গিয়ে ভরতি করে দিল ইস্কুলে। বলল, শুধু ভঁইশ চরালেই হবে? পঢ়হাই-লিখহাইও করতে হবে। কা রে মোতিয়া?

হাঁ জী। ঘাড় নাড়ল ফুলমোতিয়া।

ঐ ঘাড় নাড়াই সার হল। প্রাইমারি ইস্কুলের গুলঞ্চ ঝোপের পাশ দিয়ে রোজ এটা-ওটা খাওয়াতে খাওয়াতে তাদের গরু-ছাগল ভেড়া-ভঁইশ চরাতে ডুংরিতে নিয়ে যেত ফুলমতী আর বিন্ধি।

আসলে ঐ পথ ধরে গো-চারণে যাওয়াও হত, আবার প্রাইমারি ইস্কুলের কাঠের জানলার ভাঙাচোরা বাতার ভিতর দিয়ে দুদণ্ড মাথা গলিয়ে গাঁওয়ালি সহেলিদের দেখাও হত।

ফুলমণি ঝুপা-ঝুমরি-কুন্তাদের সঙ্গে—

তা নয়, ভর্তি! একেবারে পাকাপাকি ব্যবস্থা! “হায় রে বিটিয়নকে ভাগ!” তাজ্জব কী বাত!

রাস্তাটাই পরিহার করল তারা। বাবা বাসুদেব বলল, কা রে বিটিয়া, তু ইস্কুল যাতে নহী?

না হৈ বাপু। ইস্কুল যানে সে হমনিকে কা ফায়দা?

তবে হাঁ বৎসরান্তে একটা দিন সে ইস্কুলে যেত, যেতই। পনেরই আগস্ট, আজাদি কা দিবসে। ইস্কুলে ছুটি থাকলেও সেদিন খানাপিনা হত। নাচা-গানা। রামধূণ—

“রঘুপতি রাঘব রাজারাম, পতিত পাবন সীতারাম।

জয় রঘুনন্দন জয় ঘনশ্যাম, জানকীবল্লভ সীতারাম।।“

সব লিখহাই-পঢ়হাইকারীদের বলা হত—ইস্কুলে আসতে। আজাদি কা জুলুস বেরুবে। প্রভাতফেরি।

জুলুস বলতে জুলুস! অনেক গাঁও টোলা-টুলি পরিক্রমা করে মিছিল যখন টিলার শিউমঞ্জিলের উপরতক উঠে যেত, উপর থেকে নীচের চারধারটা দেখা যেত, তখনও জুলুসের মাথাটা হয়তো মঞ্জিলের সিঁড়িতে আর ল্যাজটা কোনও গাঁও কী অন্দরমে।

ফুলমতী হিসেব রেখেছিল গেল বরষ এমনি সময়ে জুলুসের কোথায় কোন ভাগে সে ছিল। আর চলতি সনে—

আসলে জুলুসের পিছনে থাকলে পঙক্তি-ভোজনেও পিছনে পড়তে হত। তারজন্যই প্রভাতফেরিতে যোগ দিতে এতটা হুড়োহুড়ি! সারাবছর ইস্কুলে না গেলেও আজাদির দিন ইস্কুলে যেতে ফুলমোতিয়া-বিন্ধিয়াদের এতটা ঝটাপটি!

আর ভোজন? সেটাই তো লাখ কথার এককথা, তার লোভেই তো বিন্দিয়া-ফুলমোতিয়াদের ‘জুলুস-চর্চা’।

মণ্ডা-মিঠাই তো থাকেই, সেই সঙ্গে থাকে ঘিয়ে ভাজা পরৌটা আর ‘ক্ষীরি-পরসাদ’। পায়সান্ন।

শিউমঞ্জিলের পুরোহিত ভগবতীপ্রসাদ পায়সান্ন যা রাঁধে না! ‘বাংগালী-বামভন’-কেও হার মানায়।

সেবারটা ভারি দেরি করে ফেলেছিল ফুলমোতিয়া। এমনকি বিন্দিয়াও তার আগেই জুলুসে হাজির।

কদিন ধরেই ছাড়া ছাড়া বারিষ হচ্ছিল। সকালে হয় তো বিকালে ফাঁকা। তা বাদে সূরজদেও-য়েরও তেজ ততটা প্রখর ছিল না।

শুকোয় নি সোড়ামাটিতে কাচা মোতিয়ার ফ্যান্সি জামাটা। নৌরঙ্গিলালের দুকান থেকে বাপু নতুন একটা কিনে আনল—তবেই না!

‘সাপলুডো’ খেলার মতোই ফুলমোতিয়া একেবারে নেমে গেল জুলুসের ল্যাজের দিকে! তা হোক, তবু তো নতুন জামা! মোতিয়া কে দুখ না হী বা।

মিছিল এগোচ্ছে, এগোচ্ছে। আশমানও কখন হাসছে, কখন মুখের উপর কাপড় ঢেকে দিচ্ছে নওটংকির পারা।

দেখতে দেখতে জুলুসের মাথাটা শিউমঞ্জিলের চাতালে উঠে গেল। তখনও জুলুসের ল্যাজটা তাঁতিয়াটোলিতে ঘষটাচ্ছে। ফুলমোতিয়া শিউমঞ্জিলের আগের গাঁওটায় ঢুকে পড়ল।

অবশেষে তারা যখন মঞ্জিল চাতালে পৌঁছাল, ততক্ষণে শুরু হয়ে গেছে পঙক্তি ভোজন। হরিজন চামার মুসহর দুসাদ ভূমিহার রাজপুত—সব এক পঙক্তিতেই! কোঈ ভেদাভেদ নাহি। আজাদি কা দিবস বা—অ্যায়সা মিলজুল্ হতেই—

তখনও পঙক্তির শেষজনের পাতে, শালপাতার থালিতে মণ্ডা মিঠাই, পুরি-পরৌটা পড়ে নি। ক্ষীরিভোগ তো শেষ দফায়—তখনই কীনা পঙক্তির প্রথম জন শুরু করে দিয়েছে হাপুস-হুপুস!

মষ্টরজীরা চেঁচাচ্ছে—সামহালকে! সামহালকে! বি ডিসিপ্লিনড্! শৃঙ্খলা রক্সা কিজিয়ে। পহলে তো সব্ থালিমেঁ খানা দেনাই পড়ে গা—তব্ না—

কে শোনে কার কথা! ‘ভলন্টিয়র’রা এন. সি. সি’র খাঁকি ড্রেস পরে গলায় রুমালের ‘টাই’ বেঁধে মুখে হুইশিল বাজিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছে, ধমকাচ্ছে।

আর ওদিকে পশ্চিমের আশমানে মেঘ ‘ঘুনাচ্ছে।‘ ‘অঁধেরে’ হয়ে আসছে। ফুলমোতিয়ার পাতে তখনও একটা দানাও পড়ে নি! হা-পিত্যেশ করে বসে আছে সে।

ভলান্টিয়ারবাবু ফুঃ ফুঃ করে বাঁশি বাজিয়ে তার পাশ দিয়ে দৌড়ে গেলে সে তার হাফ-পেন্টুলের কানাচ টেনে ধরে বলছে, এঃ ফুঃ ফুঃ বাবু, জলদি করো। হমনিকো কব্ মিলে গা? তু কা ইধর-উধর ঘুমতা! মালুম নাহি—বারিষ আ রহা?

বৃষ্টি আসার আগেই অবশ্য থালিতে খাবার জুটল। লাড্ডু মিঠাই। ভেঙে ভেঙে মউজে খেতে থাকল ফুলমোতিয়া। শুধু কী ফুলমোতিয়া, ঐ তো আগে এসেও বসে আছে বিন্দিয়া।

সাবাড় করে ফেলেছে লাড্ডু। পুরি-পরৌটার জন্য হাত গুটিয়ে বসে আছে বিন্দিয়া। -কা রে, খুব তো খাবার লোভে আগে আগে এলি?

পুরি-পরৌটাও পড়ল। ফুলকা, মগর ঠাণ্ডী। ড়হর ডাল, ডালটা কিন্তু গরম। চেটে পুটে খাচ্ছে ফুলমতী। আর আড়ি আড়ি ভাব করে দেখছে বিন্দিয়াকে।

-কা রে, তোহর ঝাণ্ডা নাই কে বা? হা দেখ্ হমর-

মাঝে মাঝে পাশে রাখা জাতীয় পতাকাটাকে তুলে ধরে দেখাচ্ছে ফুলমোতিয়া। ইস্কুলে লিখাপড়া না করুক, তবু তো সে একটা অশোকচক্র আঁকা সবুজ-গেরুয়া ঝাণ্ডা পেয়েছে!

পাতে এবার এসে গেল ক্ষীরিভোগ। ক্ষীরি-পরসাদ! আর কোনও দিকে তাকাতাকি নেই। বিন্দিয়া এবার যা পারে করুক! যা পায় খাক!

দু-এক মুঠো খেয়েছে কী খায় নি, পশ্চিমের মষীকৃষ্ণ মেঘ হুড়ঝুড়িয়ে এসে গেল! ঢালছে গদগদিয়ে। থালিমেঁ পানি চুহত! পানি—

ফুলমোতিয়া দু-হাতের কনুই জড়ো করে আটকাচ্ছে পায়সান্ন। দুগ্ধমিশ্রিত সফেদ অন্ন বৃষ্টির ধারার সঙ্গে মিশে বেরিয়ে যাচ্ছে ‘দুধ’ হয়ে।

মষ্টরজীরা মঞ্জিলের অন্দরে নিরাপদে, নির্জলা দাঁড়িয়ে হাঁক পাড়ছে—

-কা রে বিটিয়া, ভিজতা কাহে? থালি ছোড় কর তু আ যা!

ফুলমোতিয়ার নওটংকি-মার্কা নতুন ফ্রকটা ভিজে একশা হচ্ছে। তবু ছোড়ে গা নাহি। বলে বছরে এই একটা দিন তো এই খেতেই ইস্কুলে আসা!

বৃষ্টির ফোঁটা যতই বড়্ বড়্ করে আসছে, পায়সান্নের উপর তার ধারাস্রোত যতই প্রবল হচ্ছে, জলের ধারাবেগে ক্ষীরিভোগের দুধ সাদা ক্ষীর যতই ধুয়ে যাচ্ছে, ততই আগ্রাসী ফুলমোতিয়া তার দুহাত চেপে ধরে শালপাতার থালি আটকে রাখছে!

আশপাশে আর কেউই নেই, বৃষ্টির তোড়ে পঙক্তি ভেঙে যে-যার উঠে গিয়েছে মন্দিরে। এমনকি সোহেলি বিন্দিয়াও আর নেই। পড়ে থাকা পায়সান্ন নিয়ে শালপাতার থালিগুলো ঝড়বৃষ্টির ঝাপটায় সর্ সর্ করে চাতালময় চরকির মতো ঘুরছে।

দালানের পৈঠায় দাঁড়িয়ে পাত থেকে উঠে যাওয়া বাকি ছাত্রছাত্রীরা তার কিত্তিকাণ্ড দেখে তারদিকেই হাত বাড়িয়ে হাসাহাসি করছে। আর বলছে—

-লে লে ফুলমোতিয়া খা লে -হাপুস হুপুস—পানি অইল ত কা হৈ! পানি সে মাখ লো!

যে যাই বলুক, যতই হাত নাড়ানাড়ি করুক, পাত্ ছোড় কর ভাগে গা নেহি! হম একমুঠি মিঠাই-অন্ন আভিতক খা নেহি সকতা!

মাথা ঝুঁকিয়ে খাবার চেষ্টা করে ফুলমোতিয়া। কিন্তু হাত ছাড়ালেই শালপাতার থালি ঝড়ের তাড়সে উড়ে যাবার জোগাড়!

বেশ বেশ, হমনিকে খানা ন হৈ, পায়সান্ন পরসাদের সুরক্ষাকে লিয়ে মগর হাত-চাপা তো দিই!

দুহাতের আঙুলের খাঁজে খাঁজে আঙুল ঢুকিয়ে আচ্ছাদন তৈরি করে ক্ষীরিভোগের উপর হাতচাপা দিল মোতিয়া। বৃষ্টির বেগ বাড়ছে বৈ কমছে না।

মাথার চুল ভিজে জল গড়াচ্ছে টপা টপা। তার ভিতরেই এক খাবলা দু খাবলা খাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ফুলমোতিয়া।

মাস্টারজীরাও শুকনো শিবমন্দিরের অন্দরে দাঁড়িয়ে থেকে হাসাহাসি করছে আর বলছে—

-অ্যায়সা মৎ করো মোতিয়া! হমারা আজাদি ঝুটা হো যায়ে গা! তুরন্ত মঞ্জিলসে আ যাও বিটিয়া! আ যাও! ইতনা বারিষমেঁ তুমি কা ভিজতেই—

কিন্তু তারা আর বলতে পারছে না, এখানে উঠে আয়, উঠে এলেই তোকে আরেক হাতা গরম ক্ষীরিভোগ দেওয়া হবে।

কেন না, তাকে দিতে গেলে দিতে হবে সবাইকে। কারোরই তো খাওয়া হয় নি ‘ফুল’

পেট নাহোক আধপেটাও। ভাঁড়ারে অত কী আর আছে?

আর সেটা ভালো মতোই বুঝতে পেরেছে ছাগলচরানী বুদ্ধিমতী ফুলমতীও। তাই পানি গিরুক আর পানি চুহুক, কোঈ খাতির নাহি—হাতের পাঁচ শেষ সম্বলটুকু সে হাতছাড়া করবে না কিছুতেই।

আচ্ছাদন হীন ফাঁকা চাতালটায় বৃষ্টির ধারা গড়াতে গড়াতে জমা জল ধীরে ধীরে ছোটোখাটো বন্যার আকার নিল।

আপাত গড়ান দিয়ে স্রোতের ধারা গড়গড়িয়ে নামতে লাগল। কয়েকটা তো কিলবিলিয়ে ধেয়ে আসছে মোতিয়ার দিকে!

কাহে রে, কাহে—

বিড় বিড় করে উঠল ফুলমোতিয়া। -হমনিকো দুগোই হাত, হমনি তো দশভুজা নাহি বা! ইধরসে হট্ যা! হট্! ভাগ্!

ভাগ্ বললেই কী স্রোতের ধারা ভেগে যাবে! সে তো ক্রমশ এগিয়ে আসছে। এগিয়ে আসছে, এগিয়ে আসছে।

ফুলমোতিয়া সত্যি সত্যিই পড়ে গেল মুস্কিলে। দুটো হাতের চেটো দিয়ে উপরের বৃষ্টির ছাট থেকে কোনও মতে বাঁচিয়ে রেখেছে পায়সান্ন মহাভোগকে! আর দুটো হাত কোথায় যে চাতালের আগ্রাসী জলধারাকেও আটকে দেবে?

দুটো হাতের একটা হাত দিয়ে পায়সান্ন আগলে রেখে আরেকটা হাতে জল ছিটাবে—তারও যে উপায় নেই! সেই হাত দিয়ে জলকাদা ঘেঁটে ফের পায়সান্ন মহাভোগে হাত রাখবে কী করে?

অগত্যা দু-পা ছড়িয়ে বসল ফুলমোতিয়া। দুহাতের চেটোয় ঠেকনো দিয়ে শালপাতার থালিসহ চূড়া চূড় মহাভোগ তুলে আনল কোলের উপর। শালপাতার ফাঁক-ফোকরদিয়ে কতক ঝরে পড়ল নীচে।

পড়ুক! ঝরে পড়ামাত্রই ধুয়ে গেল। ধুয়ে যাক! তবু তো—

চক চক করে উঠল ফুলমোতিয়ার চোখ। নাকে শুঁকে দেখল—কা সুবাস মহকাতেই!

ওদিকে শিবমন্দিরের ভিতর সোরগোল তুঙ্গে উঠেছে।

কেউ বলছে, কা ছৌ দেখল বা মোতিয়া। কেউ বলছে, ব্যস জ্যাদা হো গিয়া, অব ছোড় কর আ যা বিটিয়া!

তার মধ্যেই দু-এক মুঠো খাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করছে ফুলমোতিয়া।

আরোই বেড়ে চলেছে বৃষ্টি। তারসঙ্গে ঝড়ের ঝাপটা। ঠাস ঠাস করে ঝড়ো হাওয়া আর জলের ছাট একবার ডানদিক থেকে, পরক্ষণেই বামদিক থেকে এসে শালপাতার থালির উপর চড়চাপড় মেরেই চলেছে।

মেরেই চলেছে, মেরেই চলেছে।

কতক্ষণ আর জুঝবে ফুলমতী। একসময় উপর-নীচ ডাইনে বাঁয়ের ঝড়জল পায়সান্ন মহাভোগের প্রায় সবটাই খুবলে ধুয়ে সাফ করে দিল! যেটুকু তখনও অবশিষ্ট ছিল, তাও থালি উপুড় করে আছড়ে ফেলে দিল ফুলমোতিয়া।

বৃষ্টি থামে নি। বৃষ্টির মধ্যেই জুলুসে যোগ দিয়ে বাড়ি ফিরে এলে, বাপু বাসদেও যখন গামছা দিয়ে তার মাথা মুছিয়ে দিচ্ছিল, তখন ফুলমতী বলল—

-বাপু!

-কা রে?

-হমনি কভী ভী জুলুসমেঁ ফিন না হি যাতেই।

-কাহে রে?

-কাহে কি, বাপু! ইয়ে ঝুটা জুলুসমেঁ হমনি কো কা ফায়দা?


এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

1 thought on “short-story-azadi-o-phulmotia

  1. এও এক লড়াই। শেষে জিততে না পারার দুঃখে জুলুসটাই তার কাছে মূল্য হারাল। চমৎকার গল্প।

Leave a Reply to Tanuja Chakraborty Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *