নন্দিতা মিশ্র চক্রবর্তী
বহুদিন ধরে পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছেন আচার্য বশিষ্ঠদেব। পথ চলার জন্য তিনি বেছে নিয়েছেন বনভূমি। এই সময় বিশেষত কোনও মানুষের মুখ তিনি দেখতে চাইছেন না। প্রকৃতপক্ষে এ এক রকম পলায়নবৃত্তি, পৃথিবী ছেড়ে বিদায় নিতে চাইছেন তিনি। অসহ্য মানসিক যন্ত্রণায় তিনি বেছে নিয়েছেন আত্মহননের পথ। অরণ্যের দান যেমন বনৌষধি, যা নিরাময় করে তেমন এই বনভূমিতেই উদ্ভিদের রাজ্যে লুকিয়ে আছে বিষাক্ত সব বিষধর বৃক্ষরাজি। সেইসব গরল আহরণ করেছেন তিনি। এবার নিশ্চিন্তে পুণ্য তীর্থক্ষেত্রে বনভূমির ছায়াশীতলতায় সেই বিষ কন্ঠে ধারণ করলেই তাঁর সব যন্ত্রণা থেকে মুক্তি। বশিষ্ঠের হাতে একটি তামার কমণ্ডলু, একখানি পরনের কাপড় ও উর্ধ্ববাস, এ ছাড়া তাঁর আর কোনও সম্বল নেই। বিষ শেকড়ের নির্যাস কমণ্ডলুর জলেই মেশানো আছে।
কমণ্ডলু থেকে জল নিঃশেষে পান করে নিলেন বশিষ্ঠ। এসো সুশীতল মৃত্যু এসো। তাপিত প্রাণে এনে দাও শান্তির পরশ। এই অপমান, দুঃখের কশাঘাত সহ্য করার জন্যই কি এতকাল জপতপ, বেদপাঠ, পৌরোহিত্য করেছেন? শিক্ষাদান করেছেন শত শত ছাত্রদের? আশ্রমিক জীবন কাটিয়েছেন চিরকাল। বনের ছায়ায় গড়ে তুলেছিলেন শান্তির নীড়। নিজের জীবন দিয়ে গার্হস্থ্য জীবন কেমন হওয়া উচিত সেই শিক্ষা দিয়ে গেছেন জগতবাসীদের। সতী অরুন্ধতীও কি এই অবমাননা ও যন্ত্রণা পাওয়ার যোগ্য? কিন্তু এ কী আশ্চর্য! তীব্র বিষ হলাহলের প্রভাব কেন হচ্ছে না তাঁর শরীরে? মৃত্যু কোথায়? দীর্ঘকাল না ঘুমিয়ে তাঁর চোখদুটি এখন কোটরাগত। চোখে আজ আর তাঁর জল নেই। শোকের পরিবর্তে মৃত্যুর অন্বেষণই এখন তাঁর লক্ষ্য জীবনের।
বশিষ্ঠ আবার পথ চলতে লাগলেন, এবার অন্য তীর্থে। বিষ যখন কাজ করছে না, তখন অন্য কোনও পন্থা অবলম্বন করতে হবে তাঁকে। বিষ কেনই বা কাজ করবে! বনভূমির প্রতিটি বৃক্ষের যে সাধ্যমত সেবা করে এসেছেন এতকাল ধরে! বৃক্ষদেবতার পুজো করেছেন। গাছেদের বিবাহ দিয়েছেন সাড়ম্বরে আর তারপর তাদের বীজ নিয়ে দূরে দূরে প্রোথিত করেছেন। তাই বুঝি বিষের কোনও ক্রিয়া হল না তাঁর শরীরে। এবার তবে মরণ ঝাঁপ দিতে হবে পর্বতশিখর থেকে। নদীর জল তাঁকে ফিরিয়ে দিয়েছে আগেই, তিনি শরীরে পাথর বেঁধে জলে ঝাঁপ দিয়েছিলেন, তবে নাহ্! সলিল তাঁর আত্মাহুতি গ্রহণ করেনি। এবার মাটি যদি তাঁর দেহটি পর্বতের পাদদেশে গ্রহণ করে, তবেই সবদিক রক্ষা হবে।
পথ চলতে চলতে কাশ্মীর রাজ্যে পৌঁছালেন বশিষ্ঠ। চারিদিকে মোহন পুষ্পরাশির মেলা। দূরে দূরে স্বচ্ছ সলিলা হ্রদে ঘেরা বনভূমি। উন্মুক্ত নীলাকাশ আদিগন্ত বিস্তৃত হয়ে আছে। বনভূমিগুলি থেকে হোমের অগ্মিকুণ্ড দেখা যাচ্ছে, শোনা যাচ্ছে বেদপাঠ ধ্বনি। এক সময় মিত্রাবরুণের পুত্র বশিষ্ঠ, পতিগতপ্রাণা ধর্ম-পত্নী অরুন্ধতীকে নিয়ে এমনই এক বনভূমির বুকে গড়ে তুলেছিলেন একটি রমণীয় আশ্রম। সেখানে কত ছাত্ররা শিক্ষালাভ করতে আসত, তাঁর কাছে। অরুন্ধতী তাদের মায়ের স্নেহ দিয়ে পালন করতেন। কারও কোনও অভাব রাখতেন না। বশিষ্ঠ তাদের শেখাতেন বেদপাঠ। বেদের পাঠ করতেন তিনি সঙ্গীতের মাধ্যমে। ভোররাত থেকে শুরু হত বেদধ্বনি আর হোম। ছাত্ররা যজ্ঞের কাঠ এনে দিত। একদল ছাত্র বেদপাঠ শেষ করলেই শুরু করত অপরদল। নিরবচ্ছিন্ন সেই সঙ্গীত আবেশের মত লেগে থাকত সমস্ত আশ্রমের বায়ুমণ্ডলে। বাতাস শুদ্ধ হত। সূর্যের আলোয় আশ্রমের গাভী নন্দিনী পরিষ্কার জায়গায় এসে স্থির হয়ে দাঁড়াত। অরুন্ধতী তখন পাত্র সামনে আনলেই তা সফেন দুধে ভরে উঠত। দিনে যখন যতবার দুধ দরকার হত, কেবল পাত্র হাতে নন্দিনীর সামনে এসে দাঁড়ালেই হত। নন্দিনী ছিল আশ্রমের সকল ছাত্রের মাতৃস্বরূপিনী। মায়ের মত সে সবাইকে অমৃতসুধা দিয়ে পালন করত। অফুরন্ত দুধের যোগান পেয়ে অরুন্ধতী নানা রকম সুখাদ্য প্রস্তুত করত। ঘি, ননী, ক্ষীর, মিষ্টান্ন কিছুরই অভাব হত না কখনও। এভাবেই সুখে শান্তিতে জীবন কেটে যাচ্ছিল বশিষ্ঠর। তাঁদের পুত্র শক্তির বিবাহ হল অদৃশ্যন্তীর সঙ্গে। অরুন্ধতী বধূমাতাকে বুকে টেনে নিলেন। কিছুদিনের মধ্যেই সমস্ত কর্মে তাকে পটু করে তুললেন তিনি। দিন বসে থাকে না। সুখের দিনও আর সমান রইল না। একবার বিশ্বামিত্র মৃগয়া করতে সেই বনে এলেন। তিনি হলেন ক্ষত্রিয় রাজার কুমার। কিন্তু তাঁর রাজত্বে মতি নেই। বনে বনে মৃগয়া করতে গিয়ে বিভিন্ন ঋষিদের আশ্রমে গিয়ে তাঁদের কাছে ধর্মকথা শুনতেই তিনি ভালবাসেন। আশ্রমের শান্ত পরিবেশ বিশ্বামিত্রকে বড় আকর্ষণ করে। এই নিয়ে বিশ্বামিত্রকে কেউ নিষেধ করেন না। অনেক আগেই বিশ্বামিত্রের কোষ্ঠী বিচার করে রাজজ্যোতিষীগণ বলে গেছেন, রাজকুমার ছোট থেকেই ভয়ানক জেদি হলেও সেই ভবিষ্যতে বংশের নাম উজ্জ্বল করবে। অতএব তাঁকে কেউ কোনও কাজে নিরস্ত করেন না। বিশ্বামিত্র বশিষ্ঠের আশ্রমে সঙ্গীসাথীদের নিয়ে এসে উপস্থিত হলেন। আশ্রমের সুন্দর পরিবেশ ও সমৃদ্ধি দেখেই তিনি মুগ্ধ হয়ে গেলেন। তারপর অরুন্ধতী নানা রকম ক্ষীর, ঘি, ছানা ও ননীর সুখাদ্য পরিবেশন করলেন সবাইকে। খেয়ে সবাই ধন্য ধন্য করতে লাগল। এরকম সুমিষ্ট ও সুস্বাদু দুধ তারা কেউ আগে খায়নি। খাওয়া দাওয়ার পর গল্পে গল্পে বিশ্বামিত্র শুনলেন বশিষ্ঠর নন্দিনী গাভীটির কথা। তিনি তক্ষুণি জেদ ধরে বসলেন গাভীটি তাঁর চাই। এমন গরু আশ্রমে নয়, রাজার বাড়িতেই মানায় ভাল। বশিষ্ঠ বললেন,
“হে মাননীয় অতিথি, এই গাভীটি আমাদের সকলের মাতৃস্বরূপিনী, একে ছাড়া আর যা কিছু আছে আপনি নিয়ে যান। কেবল এটি আমি দিতে অপারগ। এটি আমাদের পরিবারের ও শিষ্য-ছাত্রদের পরম আদরের ধন।”
বিশ্বামিত্র দেখলেন মুখের কথায় হচ্ছে না। তখন তিনি তাঁর সঙ্গীদের সাহায্যে আশ্রমের বাইরে নন্দিনীকে দড়ি দিয়ে বেঁধে নিয়ে চললেন। বশিষ্ঠ ক্রুদ্ধ হলেন। তিনি একবার নন্দিনী বলে ডাকলেন। অমনি দড়ি ছিঁড়ে গরুটি আশ্রমের ভেতর ঢুকে কোথায় যেন অদৃশ্য হয়ে গেল! বিশ্বামিত্র তখন তরবারি বের করে বশিষ্ঠর দিকে ছুটে এলেন। বশিষ্ঠ তাঁর ব্রহ্মদণ্ডটি তুলে বিড়বিড় করে মন্ত্র পড়লেন। অমনি বিশ্বামিত্রের হাতের তরবারিটি খসে পড়ল। তিনি হাতটিও আর তুলতে পারলেন না। তাঁর সঙ্গীসাথীরা ভয় পেয়ে পালিয়ে গেল। তা দেখে আশ্রমের ছাত্ররা হো হো করে হেসে উঠল। বশিষ্ঠের আশ্রম থেকে অপমানিত ও পরাজিত হয়ে বিশ্বামিত্রকে ফিরে যেতে হল। ফেরার পথটুকু তিনি মাথা নিচু করে ভাবতে লাগলেন, সব থেকে বড় বিদ্যা হল সাধনশক্তি। যা বশিষ্ঠের আছে, কিন্তু তাঁর নেই। বিশ্বামিত্র প্রতিহিংসায় জ্বলতে লাগলেন।
ফিরে গিয়েই তিনি একটি পার্বত্য গুহায় বসে সাধনা করতে লাগলেন। গভীর মনোযোগ দিয়ে সাধনার ফল ফলল।
মহাদেব অবশেষে তাঁকে দেখা দিয়ে বললেন, “কী চাও?”
“আমি চাই অসীম সাধনশক্তি ও বিভূতি। এমন শক্তি আমাকে দিন যেন ঋষি বশিষ্ঠ আমার কাছে পরাজিত হতে পারে।”
মহাদেব বিরক্ত হয়ে বললেন, “এমন হওয়ার নয়। বশিষ্ঠর চেয়ে বেশি শক্তিশালী হওয়া তোমার আধারে সম্ভব নয়, তবে তাঁর প্রায় সমকক্ষ শক্তিলাভ সম্ভব।”
হতাশ হয়ে বিশ্বামিত্র বললেন, “বেশ তবে তাই করুন।”
শক্তিলাভ করেও বিশ্বামিত্র বশিষ্ঠর বিরুদ্ধে নানাপক্ষের সহযোগিতা প্রত্যাশিত হয়ে অন্বেষণ করতে লাগলেন। তিনি প্রথমেই গেলেন সেই রাজ্যের রাজা কল্মাষপাদকে নিজের দলে টানতে। গিয়েই শুনলেন রাজা হলেন বশিষ্ঠের শিষ্য। তিনি নিয়মিত বশিষ্ঠের আশ্রমে যাতায়াত করেন। রাজাকে বিশ্বামিত্র বশিষ্ঠের বিরুদ্ধে নানা কথা বললেন। বললেন বশিষ্ঠদেব অহঙ্কারী। তিনি রাজাকে অসম্মান করেন। নিজেকেই ঈশ্বর মনে করেন ইত্যাদি। কল্মাষপাদ প্রথমে বিশ্বামিত্রের কথা মেনে নেননি। কিন্তু বিশ্বামিত্রের প্ররোচনায় এক সময় তিনি বশিষ্ঠের প্রতি বিরক্ত হলেন।
বিশ্বামিত্র বললেন, “বশিষ্ঠের অসাধারণ একটি গাভী আছে। সেটি আপনার আশ্রয়েই মানায় ভাল। কিন্তু উদ্ধত বশিষ্ঠকে সেই অনুরোধ জানালে তিনি তা মানলেন না। বরং ক্রুদ্ধ হয়ে আমাকে অভিশাপ দিলেন।”
রাজা রেগে গিয়ে বললেন, “বটে! এত বড় স্পর্ধা!”
তিনি দূত পাঠিয়ে বশিষ্ঠের গাভীটি দাবী করলেন। যথারীতি বশিষ্ঠ বিনীতভাবে তা দিতে চাইলেন না। এতে রাজা আরও ক্রুদ্ধ হয়ে বশিষ্ঠকে পুরোহিতের পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে বিশ্বামিত্রকে সেখানে বসালেন। বশিষ্ঠ শঙ্কিত হলেন। বুঝলেন দেশের রাজা তাঁর বিরুদ্ধ হয়েছেন। এদিকে বিশ্বামিত্র সমানে রাজাকে উত্যক্ত করতে লাগলেন, বশিষ্ঠ ও তাঁর পুত্রের ঔদ্ধত্যের কথা বলে বলে।
একদিন সত্যি সত্যিই আশ্রমে ঘটে গেল বিনা মেঘে বজ্রপাত। আশ্রমের সামনে ছিল একটা নদী। তার পাড় ছিল বড় সংকীর্ণ। সেখানে রাজা একদিন রথে চেপে এসে উপস্থিত হলেন। শক্তি তখন বনের ভেতর থেকে ফুল সংগ্রহ করে সেখান থেকে যাচ্ছিল।
সে রাজাকে রথে চেপে পথ দিয়ে যেতে দেখে বলল, “একটু দূরেই আশ্রম। এখানে রথারোহণ নিষিদ্ধ। আপনি পায়ে হেঁটে পথটুকু পেরিয়ে যান।”
রাজা তখন রথ থেকে নেমে শক্তির গালে একটা কশাঘাত করে বললেন,
“তোমার এত বড় সাহস! তুমি আমাকে নির্দেশ দাও?”
ক্রুদ্ধ শক্তি হতবাক হয়ে বলল, “রাজা যখন তাঁর কর্তব্য বিস্মৃত হয়, তখনই সে হয়ে ওঠে একজন রাক্ষস!” রাজা আর সহ্য করতে পারলেন না, তরবারির এক কোপে শক্তিকে তিনি হত্যা করলেন। কিন্তু তাতেও তাঁর ক্রোধ প্রশমিত হল না। তিনি বশিষ্ঠের আশ্রমে ঢুকে পড়লেন এবং সমস্ত আশ্রমটি অগ্নিদহনে ধ্বংস করলেন।
পোড়া গৃহদ্বারে দাঁড়িয়ে বশিষ্ঠ বললেন, “আপনি যদি এ দেশের রাজা না হতেন, আমি আপনাকে অবশ্যই প্রতিহত করতাম। কিন্তু হায়! এ সবই আমার দুর্ভাগ্য।”
আশ্রম ছেড়ে রাজা এবার অন্দরমহলে প্রবেশ করলেন। অন্দরমহলে তখন কেউ নেই। মৃতপুত্রের শব কোলে করে নিষ্প্রাণদেহে বসেছিলেন অরুন্ধতী। পুত্রশোকে তাঁর মৃত্যু হয়েছিল। পুত্রবধূ অদৃশ্যন্তী তখন সেই গোলযোগে কোথায় যে অদৃশ্য হয়েছিল তা কেউই দেখেনি। নন্দিনী গাভীটিও নিখোঁজ হয়েছিল। কয়েক প্রহরের মধ্যেই বশিষ্ঠের আশ্রমটি যেন শ্মশান হয়ে গেল। বশিষ্ঠ হারালেন তাঁর সমস্ত প্রিয়জনদের।
এই ঘটনার পর থেকেই বশিষ্ঠ আত্মহত্যা করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু দৈব তাঁর সহায় হচ্ছে না। অবশেষে তিনি এসেছেন ঋষি কাশ্যপের সাধনক্ষেত্র কাশ্মীর রাজ্যে। বশিষ্ঠ ধীরে ধীরে পাহাড়ের চূড়ায় উঠলেন, তারপর সেখান থেকে চারপাশে তাকালেন। নিচে পার্বত্য নদীটিকে দেখাচ্ছে একটা নীল সরু ফিতের মত। প্রবল হাওয়া যেন উড়িয়ে নিয়ে চলেছে। তিনি ঈশ্বরকে স্মরণ করে পাহাড়ের চূড়া থেকে নিচে লাফিয়ে পড়লেন। দু’চোখ বুজেই ছিলেন। কিন্তু এ কী! মাটিতে শত সহস্র ফুল কে বিছিয়ে রেখেছে? তিনি যেন সুগন্ধী ও কোমল ফুলের পাহাড়ের ভেতর প্রবেশ করেছেন। এ কেমন করে হল? তখন তিনি নিজের অন্তরাত্মার ভেতর শুনলেন কার যেন অমোঘবাণী।
“কেন আত্মহনন করতে চাইছো? এভাবে সমাধান পাবে না। পরিস্থিতি যত কঠিন এবং তা যেমনই হোক না কেন, তাকে মেনে নাও। এগিয়ে চলো। ধরিত্রী তোমার দেহ ধ্বংস করতে চায়নি, কারণ এখনও তোমার কর্ম বাকি আছে। জগতের তোমাকে প্রয়োজন।”
বশিষ্ঠ চমকে উঠলেন। সত্যিই তাঁর ভুল হচ্ছিল। এভাবে পরাজয় মেনে নেওয়া তাঁর উচিত নয়। মনের জোর ফিরে পেলেন তিনি। তখন তাঁর মনে হল একবার নিজের পুরনো আশ্রমে ফিরে যাবেন। সেখানে তাঁর পরিবারের অনেক স্মৃতি পড়ে আছে। বহুদিন পর কোটরাগত শুকনো চোখদুটি জলে ভরে উঠল বশিষ্ঠর। তিনি ফিরে এলেন আশ্রমে। কিন্তু পরিত্যক্ত দগ্ধ ঘর থেকে যেন কার বেদপাঠের ধ্বনি শোনা যাচ্ছে! আশ্চর্য! এ যে তাঁরই শেখানো বেদসঙ্গীত! কে গাইছে? বশিষ্ঠ ছুটে গেলেন। দেখলেন ভোরের নরম আলো মেখে একটি বালক বেদপাঠ করছে। একটুদূরে প্রেতের মত বসে আছে একটি নারী। এরা কারা?
সেই শীর্ণা নারীটি ছুটে এসে বশিষ্ঠকে এবার প্রণাম করে কান্নায় ভেঙে পড়ল।
“তুমি কে?”
“আমি আপনার পুত্রবধূ অদৃশ্যন্তী, আর ওটি আপনার পৌত্র পরাশর। রাজার আক্রমণের ভয়ে নন্দিনীকে নিয়ে আমি পালিয়ে গেছিলাম অরণ্যে। তখন আমি গর্ভবতী ছিলাম। এই কয়েক বছর ধরে বহুকষ্টে পরাশরকে আমি বড় করেছি। বেদপাঠও কিছুটা শিখিয়েছি, যা আমি আপনার আশ্রম থেকে শিখেছিলাম।”
বশিষ্ঠ পরাশরকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। আছে! এখনও তবে আশা আছে বেঁচে থাকার! লালন করার মত স্বপ্ন এবার ফিরে পেয়েছেন বশিষ্ঠ। বিষাদের কালোছায়াকে এবার চিরতরে তাঁকে বিদায় দিতে হবে। এরপর দগ্ধ আশ্রমটিকে সংস্কার করে বিষাদ বেদনাকে দূরে ফেলে বশিষ্ঠ নিয়োজিত হলেন পৌত্র পরাশরকে শিক্ষা দেওয়ার কাজে।
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন