রেহান কৌশিক
“মেঘের গতরে যতই দ্যাখনদারি থাক, জল ঝরানোর মুরাদ ন থাইকল্যে তার কনহ দাম নাই। পুরাটাই মিছা।” স্পষ্ট কথা সরস্বতীর।
তিনদিনে অন্তত তিরিশবার এই একই কথা বলেছে সরস্বতী! ননদের কথায় চুপ করে থেকেছে বিলাসীবালা। এই ইঙ্গিতপূর্ণ কথার কী জবাব দেবে ভেবে পায়নি। কাজলগাঙের পাড়ে দাঁড়িয়ে সরস্বতী শেষবারের মতো যখন আবার একই কথা তুলল তখন বিলাসীবালা খুব শান্ত ভঙ্গিতে ঠোঁটে মৃদু হাসি ফুটিয়ে বলল, “মেঘের গতর থিক্যে জল কী আর শুদুমুদুই খঁসে! মাটি ডাক পাঁঠায়, সোহাগের গান ধর্যে তবেই ন মেঘ জল খঁসায়!”
এমন জবাবে একটু হকচকিয়ে গেল সরস্বতী। ভাবে, তবে কী তিলকচাঁদের দোষ আছে! কিন্তু নিজের ভাইকে দোষী সাব্যস্ত করতে মন চায় না। মুহূর্তে নিজেকে সামলে নিয়ে সতর্কভঙ্গীতে বলল, “ই কথ্যাটা মুখে আনিস ন। এই সংসারে বিট্যাছেল্যার সাতখুন মাফ। জগতটি তাদেঁর হাথ্যের মুঠায় বঠে! বিটিছেল্যার ছলাকলা শুঁকাই গ্যেলে, কন পুরুষ আর গা ঘেঁসে বল ন!”
“তুঁ কী আমাকে দষ দিছিস? তুঁর ভাইট্য শিকল ছিঁড়্যা পাখি বঠে। কনহ বাঁধনেই মান্যে ন।”
“দষ-গুণের ব্যাপার ন। উঠানে ফুল নাই ফুইটল্যে, সংসারের ডাঙাট শুখ্যা শুখ্যা লাগ্যে। কথা হল্য ইট্য। আর কিছ্যু ন। তঁকে দষ দিছ্যি ন।”
বিলাসীবালা আর তর্ক বাড়ায় না। সুর-পাগল এই সংসারে বউ হয়ে আসার দিন থেকে ননদ সরস্বতীই তার সুখদুঃখের সহচরী। অন্তরের গোপন আশ্রয়ও। তাই সরস্বতী তাকে দোষ দিচ্ছে না বুঝলেও এই প্রসঙ্গটি তার কাছে যে কতখানি কষ্টের তা কি সরস্বতী নিজেও জানে! মেয়েমানুষের স্বাভাবিক প্রবণতা থেকেই সে হয়তো সন্তানের জন্য আবদার করছে! কিন্তু এই তিনদিন ধরে একই কথা বিলাসীবালার বুকে যেন বিষ-ছোবল হয়ে জ্বালা ধরিয়েছে। সে ভিতরে ভিতরে যন্ত্রণায় ছটপট করেছে। শেষে সহ্য করতে না পেরে সরস্বতী যাওয়ার আগে মুখ খুলতে বাধ্য হয়েছে।
সরস্বতী মাসে অন্তত একবার বাপের বাড়িতে ঢুঁ দিয়ে যায়। বুড়ো বাপ আর ভাইয়ের বউটির জন্যই ছুটে ছুটে আসা। খেতের শাকসবজি, চাল-গম-পুঁটুলি বেঁধে নিয়ে আসে। বিলাসীবালা নিষেধ করে, কিন্তু সে বারণকে তোয়াক্কা করে না সরস্বতী। কারণ ভাই তো নামেই সংসারী! মাসের পর মাস হাটে-মাঠে-ঘাটে ঘুরে বেড়ায়। যাত্রাদলে বাঁশি বাজায়। সব সময় যে যাত্রার বায়না থাকে এমনও নয়, আসলে বাউন্ডুলে মানুষের ঘরটাই যেন খাঁচা। মন ছুটে বেড়ায় পথে পথে। সরস্বতী ভাবছিল বিলাসীবালার কোল আলো করে যদি একটা বাচ্চা আসে, বাউন্ডুলে ভাইটা হয়তো সংসারে থিতু হবে।
তিনদিন থাকার পর আজ বাড়ি ফিরছে সরস্বতী। প্রতিবারের মতো এবারেও গাঙের পাড় অব্দি ননদকে এগিয়ে দিতে এসেছে বিলাসীবালা। কাজলগাঙের বুকে প্রায় ঢলে পড়েছে সূর্য। পড়ন্ত রোদের দিকে তাকিয়ে সরস্বতী বলল, “যাই, টুকুন পা ন চইল্যে আন্ধার গিইলত্যে আইসব্যে।”
গাঙের পাড় ধরে এগিয়ে চলে সরস্বতী। পিছনে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে বিলাসীবালা। রসিকপুর ডিঙোলে কুসুমডিহা। সরস্বতীর শ্বশুরবাড়ি। গাঙের পাড় থেকে রসিকপুরের দিকে বেঁকে যাওয়া রাস্তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়া গাছগাছালির ছায়ায় সরস্বতী ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে।
দূর পথের বাঁকে সরস্বতী অদৃশ্য হয়ে গেলে বিলাসীবালা ভাবে গাঙের জলে ডুব দিয়ে বাড়ি ফিরবে। গাঙের জলে ঝুঁকে পড়া অশ্বত্থের ডালে জোড়া ফিঙে দোল খাচ্ছে। ডালপালার ফাঁক গলে হলুদ রোদের টুকরো গাঙের জলে আলপনা আঁকছে। বিলাসীবালা জলে নেমে শরীর ডুবিয়ে বসে থাকে। পাথুরে গাঙের শীতল জল যেন খুব নিকটজন, মুছে দিতে চায় ভিতরের গোপন কষ্ট। খানিক আরাম লাগে বিলাসীবালার। ভাবে, জমিনের বুক কি শুধুই রসস্থ হলে চলে? চাই লাঙল। চাই মেহনত। চাই ভালবাসা। ফলার মুখ মাটি চিরে টেনে বার করবে রস, শক্ত মাটি হবে আদুরে। সঙ্গে চাই পুরুষ্টু বীজও। তবেই না খেত সুফলা হয়ে উঠবে! সেয়ানা মেয়ে হয়ে সরস্বতী কি এসব জানে না! জানে। জেনেও হয়তো নিজের ভুবনচরা ভাইকে আড়াল করতেই তাকে দু-কথা শুনিয়ে গেল!
বাড়ি ফেরার রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে বিলাসীবালা আনমনা হয়ে পড়ে। এতক্ষণ ধরে নিজের মনের ভিতর গেঁথে তোলা যুক্তির বিপক্ষে সওয়াল সাজায়। নিজেকে শোনায়, তার অপূর্ণতা আসলে তারই করুণ ভবিতব্য। সরস্বতী তো উপলক্ষ মাত্র।
শিমের মাচা ছুঁয়ে সন্ধে নেমেছে অনেকক্ষণ। উনুনে কাঠ ঠেসে দেয় বিলাসীবালা। আগুনের ঝাঁঝ বাড়ে। ফুটন্ত হাঁড়ির ঢাকনা ঠেলে শিস দেয় ফ্যানভাত। বিলাসীবালারও বুকের খোঁদল থেকে বার হয়ে আসে দীর্ঘশ্বাস। ঝিঁঝিঁডাকা অন্ধকার ক্রমশ দখল করে নিয়েছে ঘর ও উঠোন, উঠোন ছাড়িয়ে ছড়িয়ে থাকা পাথরচাটান। অদূরে কাজলগাঙের জল।
কফের ঘড়ঘড়ে আওয়াজে সম্বিত ফেরে। দশরথ গলা সাফ করে। বিলাসীবালা এই আওয়াজের অর্থ বোঝে। বুড়ো মানুষটার খিদে পেয়েছে। বিলাসীবালা তড়িঘড়ি ভাতের হাঁড়ি উপুড় দেয়।
খাওয়া শেষ হলে দশরথ উঠোনের খাটিয়ায় গিয়ে বসে। বিলাসীবালা খুব যত্ন করে কলকেতে আগুন দিয়ে ফুঁ দেয়। কলকে গনগনে হলে হুঁকোটি শ্বশুরের দিকে এগিয়ে দেয়। রুগ্ন পাঁজর হুঁকোর ধোঁয়া টেনে কাঁপে। তারপর পুব আকাশের দিকে তাকিয়ে ইশারা করে। বিলাসীবালা বুড়োর এই ইশারার মানে বোঝে। পুব আকাশে শুকনো শালপাতার মতো ক্ষয়াটে চাঁদ। বুড়োর ইশারা সেদিকেই। বিলাসীবালা বলল, “তুঁমার ছেল্যা কি ফিরার কথ্যা বল্যে যাঁয়? তাঁর হঁদিশ সেই জান্যে।”
এ উত্তর অনেকবার দিয়েছে। তবু আকাশে চাঁদ দেখলেই দশরথ ছেলের জন্য উতলা হয়ে ওঠে। বিলাসীবালা বুঝতে পারে এমন উত্তর শুনে দশরথের চোখের মণিতে বিষণ্ণতার কুয়াশা ওড়ে।
বিলাসীবালার উত্তরে দশরথ মাথা নীচু করে। নিজের চেয়েও এই সর্বংসহা মেয়েটির বুকে জমে থাকা দুঃখ জল তার আক্ষেপ বাড়িয়ে দেয়। তবু সে তিলকচাঁদকে দোষ দিতে পারে না। বরঞ্চ দোষী সাব্যস্ত করে তার ছন্নছাড়া রক্তবীজকে। বংশ পরম্পরায় তারা সুর বুকে নিয়ে পথে পথে ঘুরেছে। গান সুর এবং অচেনা রাস্তার মোহ পারিবারিক সব সম্পর্ক সব টানকে ভুলিয়ে দিয়েছে। তিলকচাঁদের ভিতর দিয়ে নিজেকেই যেন নতুন করে দেখতে পায় দশরথ। এবং এও জানে এই যাওয়া-আসার খেলা খেলতে খেলতে হঠাৎ করে তিলকচাঁদ একদিন আর নাও ফিরতে পারে। যেমন তার বাবা পীতাম্বর আসরে গান গাইতে বেরিয়ে আর ফিরে আসেনি।
দশরথ নিজের শিরাওঠা হাতখানি রাখে বিলাসীবালার মাথায়। কোনো শব্দ উচ্চারণ না-করেও এই সচল হাতটি যে কত কথা বলছে তা টের পেল বিলাসীবালা। আর তৎক্ষণাৎ বুকের গভীরে থাকা যন্ত্রণাটি চোখে ঝাঁপিয়ে নামে। হলদে জ্যোৎস্নায় দশরথ দেখে বিলাসীবালার দু-গালে চিক চিক করছে দু-টি নিঃশব্দ জলধারা। দশরথের ঘোলাটে চোখের মণিও চিড়বিড় করে। ভেজা চোখের পাতা টুপিয়ে নামে উষ্ণজলের ফোঁটা। দু-জন অসমবয়সী নারী-পুরুষের অশ্রুবিন্দুগুলি মিলেমিশে এই রাত্রি নামা স্তব্ধ চরাচরের মাঝে যেন আশ্চর্য এক বিষাদভূমি রচনা করে দিল!
দুই
“ইচ্ছা যাঁয় তুঁমার বাঁশিগুলান আগুনে ঢুকাই দিই। আঙরা হঁয়ে গেল্যে যদ্যি লেশা ঘুচে!” বিলাসীবালার গলায় যত না আগুনের উত্তাপ, তার চেয়ে বেশি অভিমানের ঝাঁঝ।
বউয়ের কথা শুনে ফিকফিক করে হাসে তিলকচাঁদ। তারপর বিলাসীবালার কাছে এসে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে, “আগুন কি আঁর সব কিছুকে আঙরা করইত্যে পার্যে রে! আগুনের সে মুরাদ নাই। সুরের কাছ্যে আগুন কাবু হঁই যাঁয়। এই দ্যাখনা কেন্যে তুঁর মতন অগ্ন্যিটিও আমার কিছ্যুই কইরত্যে পার্যে নাই।”
“ছাড়্য, আর সোহাগ লাইগব্যেক ন। উটি গুছাই রাখ্য অন্য কনহ বিটিছেল্যার লেগ্যে।”
“বিট্যাছেল্যার তাগদ থাইকল্যে বিটিছেল্যার কমতি নাই। অ্যাকটি গেল্যে আর অ্যাকটি জুটে যাঁয়। তব্যে মঁর চখে তুঁ আর বাঁশিটিই সব। আর কনহ বিটিছেল্যার শখ নাই।”
“হঁ, অ্যামন কথ্যা সব মরদই বল্যে! আগুনের মতো আগুন হল্যে মুখের সব ফুটানিই ছাই হঁয়ে যাঁয়।”
“কাঠ ছাই হঁয়, মানুষ ছাই হঁয়, যৌবন ছাই হঁয়। কিন্তুক সুর ছাই হঁয় ন। জমিন আশমান জুড়্যে সুর ভাস্যে। বাতাস্যের গতরে সুর পাক দেয়, আগুনের মুরাদ নাই সেই সুরকে আঙরা কর্যে। ইসব তুঁর বুঝার কথ্যা লয়।”
“সুরই তুমাকে বিবাগী কইরছ্যে। বাঁশিট তুমাকে ঘরে টিকতে দেঁয় ন।”
“ইট তুঁ ঠিকই বল্যেছিস। তব্যে অ্যাকটি কথ্যা বলি শুন, ই সংসার কাকপাখির জইন্যে। কোকিলপাখির জইন্য ন। কোকিল শিল্পী পাখি বঠে। কুনঅ শিল্পীই সংসার পার্যে ন। দেখ্যিস ন, কোকিলপাখি উয়ার ডিমগুলান কাকপাখির বাসায় পাইলত্যে দেঁয়!”
“হঁ, তাইল্যে ইখ্যানে কাকপাখিট কে আর কোকিলপাখিট্যই বা কে? পাইলত্যে নাই পারুক, কোকিলপাখি ডিমট্য পাড়্যে, তুঁমার ত…”
কথা শেষ করার আগেই বিলাসীবালা দেখে বাঁশির ঝোলাটা কাঁধে ফেলে তিলকচাঁদ উঠোন ছেড়ে রাস্তায় পা বাড়াচ্ছে। বিলাসীবালা তড়িঘড়ি পথ আটকানোর জন্য বেরোতে যায় ঘর থেকে।
ঘুম ভেঙে যায় বিলাসীবালার। ধড়মড় করে উঠে বসে বিছানায়। জানালার ফাঁক গলে ভোরের আলো ঢুকে পড়েছে ঘরের ভিতর। বিলাসীবালা ভাবে কী অদ্ভুত স্বপ্ন।
উঠোন ঝাঁট দিতে দিতে আজ চোখ পড়ল কৃষ্ণচূড়া গাছটির দিকে। অদ্ভুত স্বপ্নটার জন্য এমনিতেই মেজাজ বিগড়ে ছিল। সবসময় মনে হচ্ছে তিলকচাঁদ যেন তাকে হারিয়ে দিয়ে চলে গেছে। আর সে পরাজিত এক নারীর মতো সংসারের ধুলো মেখে শুয়ে আছে একা! তার ওপর গাছটার দিকে এখন নজর পড়তেই বুকের ভিতর রাগ ঘন হতে থাকে।
বিলাসীবালা দেখল, হাজারটা ডাল জুড়ে রাশি রাশি লালহলুদ ফুল আকাশের গায়ে যেন আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। কয়েক বছর হল এই অতিকায় কৃষ্ণচূড়া গাছটিকে আর সহ্য করতে পারছে না সে। বিশেষ করে এই ফুল ফোটার সময় এলে।
কাজলগাঙের পুব-দক্ষিণ জুড়ে কানাইশোল পাহাড়ের ঢেউ খোলানো দেহ আকাশ ছুঁয়েছে। তার গায়ে জড়ানো শাল-পলাশ, শিমুল আর মহুয়ার জঙ্গল যেন নকশাদার সবুজ গয়না। লাল রুক্ষ্ম পাথুরে মাটির এ অঞ্চলে সেই যেন জিয়নকাঠি। আর গাঙের পুব-পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে কৃষ্ণচূড়া। এই অতিকায় গাছটির কথা কে না জানে! শতাব্দী প্রাচীন গাছটিকে দূর-দূরান্ত থেকে দেখা যায়। মস্ত গুঁড়ি থেকে হাজার শাখা-প্রশাখা ছড়িয়ে দিয়েছে শূন্যের দিকে। চৈত্রের দিনে সমস্ত আকাশে যেন একাই আগুনের রঙ ছড়িয়ে দেয়।
প্রায় জনবসতিহীন এই এলাকায় কত যে গল্পকথা হাওয়ায় ঘূর্ণিপাক দেয় তার হদিশ ক-জন রাখে! রাখে একজন, সে দশরথ। গাঙ-পাড়ের ওই কৃষ্ণচূড়ার মতো দশরথ জানে এ তল্লাটের রং-বেরং নানা বৃত্তান্ত। শরীর প্রায় অশক্ত হয়ে পরলেও মনটি তার এখনো সতেজ। সময়ের ঘুনপোকারা এখন তার স্মৃতিকে তছনছ করতে পারেনি। প্রথম প্রথম গাছটির দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকত বিলাসীবালা। অথবা সংসারবন্দি একাকিত্বের বিষাদে ডুবে থাকা মেয়েটিকে সম্মোহিত করত ওই কৃষ্ণচূড়াই। সেই সন্মোহনের ভিতর সহমর্মিতা, করুণা নাকি আত্মপ্রদর্শনের সূক্ষ্ম খেলা চলে তা আজও অনাবিস্কৃত। দশরথের কাছে এই গাছের কথা তুললে দশরথ বলত, “ই গাছ তো গাছ লয়, গল্ফে শুন্যা মহাপাখি, উয়ার মহা দুটা ডানা দিঁয়ে কাজলগাঙ পাহারা দেঁয়।”
কত কত দিন সামনের পাথরচাটান পেরিয়ে গাছের ছায়ায় গিয়ে বসেছে, শাড়ির আঁচলে ঝরে পড়া ফুলের পাপড়ি কুড়িয়েছে। কিন্তু কয়েকবছর হল, গাছটির শরীরময় লাল-হলুদ আগুনের শিখা জ্বলে উঠলেই বিলাসীবালার শিরায়-ধমনিতে ক্রোধের আগুন জেগে ওঠে। বিশেষত কচি সবুজ কুঁড়ি ফেটে বেরিয়ে আসা লাল-হলুদ আগুন যখন পোড়াতে থাকে দিগন্তের দেহ। সব শুনে সরস্বতী ঠেস মেরে বলেছিল, ‘ইট লোতুন কথ্যা কী! ফুলফুটা গাছ দেইখল্যে অফুল-ফুটা গাছের ত জ্বলন হবেক্যেই।’
বিগত দিনে বলা সরস্বতীর কথাগুলো আবার মনে পড়ে গেল বিলাসীবালার। খেয়ালই করেনি এবছর কখন যেন কৃষ্ণচূড়ার ডালে ডালে আগুন উৎসব শুরু হয়ে গেছে!
মনের তিতকুটে ভাব নিয়ে বিলাসীবালা চলে গেল কাজলগাঙের দিকে। ক-দিন ধরেই লক্ষ্য করেছে বুড়ো মানুষটার খাওয়া কমে গেছে। ভাবল, কিছু গুগলি কুড়িয়ে আনলে বোধহয় মানুষটার মুখে স্বাদ ফিরবে।
বিলাসীবালা গাঙের জল ঘেঁটে সারা দুপুর গুগলি তুলে পেটকাপড়ে ভরেছে। ঝুঁকে গুগলি কুড়োতে কুড়োতে কোমর ব্যাথা হয়ে গেছে। জল থেকে মুখ তুলে দেখল বিকেল নামছে পাহাড়ের বাঁকে। জল থেকে উঁচু পাড় ধরে উঠে এল কৃষ্ণচূড়ার কাছে। ভালো করে তাকাল মহাবৃক্ষটির দিকে। সত্যিই সমীহ না করে উপায় নেই। আকাশ ঢেকে ফেলা মস্ত চাঁদোয়ার মতো ডালপালা নিয়ে সগর্বে দাঁড়িয়ে রয়েছে। প্রাচীন কালো বাকলে লক্ষ রেখার আঁকিবুঁকিতে যেন হাজার গল্পকথা মুদ্রিত হয়ে আছে! যেন সে এক আশ্চর্য দ্রাবিড় কন্যা যার শৈশবের হদিশ কেউ জানে না, যার সুডৌল যৌবন রয়েছে কিন্তু বার্ধক্য নেই।
বিলাসীবালা গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে কোমর সোজা করল। টানটান করল পিঠ। শিরদাঁড়ায় আরাম বোধ হল। তারপর পেটকাপড়ের গুগলিগুলোকে গুছিয়ে নিয়ে পা বাড়াতেই কৃষ্ণচূড়ার শিকড়ে হোঁচট খেল সে। হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেল মাটিতে। ছড়িয়ে গেল গুগলিগুলো। অমনি ধাঁ করে মাথা গরম হয়ে গেল বিলাসীবালার। কষ্টি পাথরের মতো চিকন-কালো বিলাসীবালার সফেদ চোখ দু-টি রক্তাভ হয়ে ওঠে। এতদিনের চাপা আক্রোশ বিষাক্ত আগুনের শিখা হয়ে লকলক করে জিভে। বলে ওঠে, ‘শাল্যি, বড দেমাগ তুঁর! তুঁর মুখ্যে আগুন জ্বইলব্যে, শাল্যি। পুঁড়্যে খাক হব্যেক তুঁর তেঁজ, দেইখব্যি।’
রাগে গরগর করতে করতে উঠে দাঁড়ায় বিলাসীবালা। ধুলোমাখা কাপড় ঝাড়ে। তারপর মাটি থেকে গুগলিগুলো তুলতে তুলতে বলে, ‘অ্যাকটি বজ্জাঘাতেই তুঁর গতর ছাঁই হঁয়ে যাবেক, কথ্যাট মিলাইলিস, হঁ।’
শেষের বাক্যটি বিলাসীবালার কন্ঠে যেন হাহাকার হয়ে ঝরে পড়ে। সুপ্রাচীন গাছটির প্রতি বিলাসীবালার ছুঁড়ে দেওয়া শাপ-শাপান্তগুলি নিঃশব্দে শোনে নির্জন বিকেল ছুঁয়ে থাকা পাহাড়-মাটি-জল-জঙ্গল। কিন্তু ঠিক কী কারণে বিলাসীবালার কাছে অপরাধী হয়ে উঠল এমন একটি নিরীহ ফুলগাছ – সেকথা যেন বোধগম্য হলনা কারও। বোধকরি তীব্র বিস্ময়ে তারা শুধু সাক্ষ্য হল একক সংলাপে শেষ হওয়া নাটকের একটি দৃশ্যের।
তিন
বগলে মোরগ আর ঝোলায় মহুয়ার বোতল নিয়ে শীতলকুমার এসেছে। তাই সন্ধেবেলা দশরথের মেজাজটি বেশ ফুরফুরে। মাংস আর মহুয়ার লোভে জিভে জল টসকাচ্ছে। শ্বশুরের মুখচোখ দেখেই বুঝেছে বিলাসীবালা।
দশরথের সাদা ভ্রুয়ের নীচে ঘোলাটে চোখের মণিতে খুশির আলো দেখে মন ভালো হয়ে গেল বিলাসীবালার। অভাবের সংসারে এমন দিন তো চট করে আসে না। শাকপাতা খেয়েই বছর ঘুরে যায়। খুব বেশি হলে গেঁড়িগুগলি। শীতলকুমার করিতকর্মা পুরুষ। পাথরখাদানে কাজ করে। শহরের মহাজনদেরও নাকি ফাইফরমাস খাটে। ভালোই দু-পয়সা আয় করে। সেজন্য সরস্বতীরও খানিক অহংকার আছে, তার কথাতেই বোঝা যায়। তার মরদ বাপ-ভাইয়ের মতো জগতচরা পুরুষ নয়। খাটে, খায়, আয়েস করে।
শীতলকুমার এসেই মোরগ মেরে শুকনো পাতায় ঝলসাচ্ছে। দশরথ দড়ির খাটিয়ায় বসে মোরগ ঝলসানো দেখতে দেখতে বলল, ‘মহুয়ার সাঁথ্যে রামপাখির সঙ্গতট্য যদ্যি যুতসই নাই হঁয়, ফূর্তিট মিছা হঁয়ে যাঁয়।’
বুড়োর কথা শুনে খ্যাঁক খ্যাঁক করে কালচে মাড়ি বের করে হাসে শীতলকুমার। শীতলকুমারের এই হঠাৎ আগমন সন্ধেটাকে যেন এক ঝটকায় রঙিন করে দিয়েছে। নাহলে উঠোনে মহানিম গাছের নীচে পেতে রাখা দড়ির খাটিয়ায় বসেই তো দিন কেটে যায় দশরথের। মোরগডাকা ভোর থেকে দশরথ বসে বসে দেখে পুবে কানাইশোলের অজানা গুহা থেকে সূর্যটা বালিহাঁসের মতো ডানা ঝাপটে শুন্যে ওঠে, তারপর আকাশময় উড়ে ক্লান্ত হয়ে গেলে কাজলগাঙের জলে নেমে সাঁতার কাটতে কাটতে অন্ধকারে উধাও হয়ে যায়। খাটিয়ায় বসে দশরথ ভাবে সূর্যের কথা- কোথা থেকে আসে আর কোথায় চলে যায়! আকাশপাতাল ভাবতে থাকে সে। দুষ্টু চিলের মতো তার মন অতীত আর বর্তমানের সময়-স্মৃতি ছুঁয়ে ছুঁয়ে ওড়ে। হাড়সার বুকের খাঁচায় খেলা করে সুখ-দুঃখের জোয়ারভাটা। পুরোনো অভ্যাসে আজও মুখে মুখে তৈরি হয়ে যায় গানের কলি। আখরে লেগে যায় সুর। ভাঙা গলায় সেই গান গুনগুনিয়ে ওঠে। লোকের কানে গেলে তারা বলাবলি করে, ‘খুড়াট্য সাইক্ষ্যাত মা সরস্বতীর ছা।’
এমনকী এই লাল রুক্ষ্ম পাথুরে মাটির দেশে যারা এখনো পালাগানের দল নামায় তারাও এসে দশরথের পায়ের ধুলো নিয়ে যায়। এককথায় সে এই তাবৎ অঞ্চলের গানবাজনার রাজা। বয়স বেড়েছে ঠিকই কিন্তু সম্মানটি কমেনি।
আকাশে মরা চাঁদ। তার হলদে জ্যোৎস্নার দাপটও তাই কম। ফিনফিনে জ্যোৎস্নার নীচে খাটিয়ায় বসেছে দশরথ। সামনে খেজুরপাতার তালাইয়ে শীতলকুমার ও বিলাসীবালা। তিনজনেরই নেশা বেশ খর হয়ে উঠেছে। বেশ কিছুক্ষণ ধরে দশরথ শব্দ নিয়ে খেলার পর এক চুমুকে গ্লাসের বাকি মহুয়া শেষ করে ভাঙা গলায় গেয়ে ওঠে – সুখ্যেরও স্বপন দেঁখে বেলা গেল্য চল্যে / নিশ্যি লিঁয়ে বাঁকা চাঁদ ভাস্যে লদী জল্যে / বুক্যের লদী গো সই কাঁদে অভ্যিমানে / বুঁঝিত্যে ন পার্যি আজ যাব্য কুনঠানে!
ঘড়ঘড়ে গলায় গেয়ে চলে দশরথ। সেই সুরে মাথা দোলাতে দোলাতে শীতলকুমার খালি গ্লাস ভরে দিতে থাকে মহুয়ায়। দশরথের নতুন আখর শুনে বুকের ভিতর কাঁপন ধরে বিলাসীবালার।
রাত্রি গাঢ় হয়। কোথাও যেন রাতচরা পাখি ডেকে উঠল। দশরথ ক্রমশ বেহুঁশ হয়ে খাটিয়ায় শরীর এলিয়ে দেয়। মাথা বেশ ভার হয়েছে বিলাসীবালারও। হঠাৎ খেয়াল করে দশরথের কলিগুলো আওড়াতে আওড়াতে শীতলকুমার তার পায়ে হাত বোলাচ্ছে। বিলাসীবালা ঝটকা মেরে শীতলকুমারের হাত সরিয়ে দিয়ে টলমল পায়ে উঠে দাঁড়ায়। গান থামিয়ে নিঃশব্দে বিচ্ছিরি মাড়ি বার করে হাসতে থাকে শীতলকুমার। সে হাসি খুব আদিম, শরীরী।
নেশায় চুর হয়েও বিলাসীবালা বুঝতে পারে শীতলকুমারের অভিসন্ধি সুবিধের নয়। সে এই ঘরে নিজেকে নিরাপদ মনে করে না। টলতে টলতে উঠোনের আগড় খুলে বাইরে বেরিয়ে যায়। বাইরের ফাঁকা পাথরচাটানে ঘেঁসে থাকা শিরীষগাছের কাছে গিয়ে ঠেস দিয়ে দাঁড়ায়।
পরক্ষণেই তার কাঁধে দু-হাত দিয়ে বাঘের মত খামচে ধরে শীতলকুমার। কখন যে পা টিপে টিপে পিছু নিয়েছে শীতলকুমার বুঝতে পারেনি সে। গায়ের সব শক্তি দিয়ে হাত দুটো সরিয়ে দিতে চায় বিলাসীবালা। শীতলকুমার এক ঝটকায় মাটিতে ফেলে দিয়ে বিলাসীবালার উপর চেপে বসে। বিলাসীবালার চোখেমুখে পাথুরে ধুলোর ঝাঁঝ। শীতলকুমার দাঁতে দাঁত ঘষে বলে, ‘বিটিছেল্যার ইত ত্যাঁজ ভাল্য নয় রে, বিলাসী।’
‘নিঁলজ্জ, বেহায়া পুরুষ…’
বিলাসীবালাকে কথা শেষ না করতে দিয়েই শীতলকুমার বলে, ‘নিঁলজ্জ, বেহায়া পুরুষই ত পিঁরিতট ভাল্য বুঝে রে, বিলাসী। হাওয়ায় খঁয়ে যাওয়া কলিজা লিঁয়ে তুঁর মরদ কি আর পার্যে! পাইরল্যে অ্যাঁত দিন্যে এক গণ্ডা বিয়াই দিঁয়ে চর্যে বুইলত্যি।’
নারীহৃদয়ের সবচেয়ে স্পর্শকাতর জায়গায় তার বিষবাক্যগুলি ছুঁড়ে দিয়ে বিলাসীবালার মুখের কাছে মুখ এনে হাসতে থাকে শীতলকুমার। ক্রমশ অস্থির হয়ে ওঠে শীতলকুমার। বিলাসীবালা বুঝতে পারে তার শরীরের কোমল স্থানগুলোয় কী যেন তন্নতন্ন করে খুঁজছে শীতলকুমারের কর্কশ আঙুল। ব্যথায় চড়চড় করছে কোমর। পাথরের চাঙড়ের মতো ভারী শীতলকুমারের নীচে পিষ্ট হতে হতে নিজেকে মুক্ত করার জন্য নেশাজর্জর জড়ানো গলায় মোক্ষম বাক্যটি প্রয়োগ করে বিলাসীবালা, ‘সরস্বতী জাইনল্যে তুঁর গদ্দান থিক্যে মাথাট খসাই দিব্যে হে।’
শীতলকুমার হাঁফাতে হাঁফাতে বলল, ‘উ শাল্যি সবট জান্যে। ঘঁরের গাইকে বাঁইরের ষাঁড় গাভিন করার চেঁয়ে নিজ্যের ষাঁড় দিয়ে পাল ধরানো ভাল্য। উটায় সংসারের টানট্য বঁজায় থাক্যে।’
শীতলকুমারের জবাবে স্তব্ধ হয়ে গেল বিলাসীবালা। শরীরের সমস্ত প্রতিরোধ ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। বুকের ভিতর থেকে শুধু দমকে দমকে কান্না উঠে এসে তার কণ্ঠনালী রুদ্ধ করে দিল।
কিছুক্ষণ পরে বিলাসীবালার শরীর ছেড়ে উঠে দাঁড়াল শীতলকুমার। ঠোঁটের কোণে লেগে আছে তৃপ্তির লালা। তারপর ধীরে ধীরে ধুলোয় পড়ে থাকা বিলাসীবালাকে ছেড়ে অন্ধকারে মিলিয়ে গেল সে।
চার
ভোরের আলোয় ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে চতুর্পাশ। অর্ধনগ্ন বিলাসীবালা ধুলোর বিছানা ছেড়ে উঠে বসে। শরীরময় পুরুষের জান্তব নখ আর লালাচিহ্নগুলো যেন দগদগে ঘায়ের মতো জেগে আছে। দেহজুড়ে বিষব্যথা। তবে এসবের চেয়েও গভীরতর ব্যথাটি মনের ভিতর ভাসছে। ভাবে সংসারে বিশ্বাস করে কার হাতে ভালোবাসার হাতটি রাখা যায়? অন্তরের গোপন দুঃখগুলি কার হাতে সমর্পণ করে নিশ্চিন্ত হওয়া যায়? দশরথ শীতলকুমার সরস্বতী তিলকচাঁদদের সব মুখগুলির রেখা ভেঙেচুরে যে মুখের জন্ম হচ্ছে তাতে ভালোবাসার কোনো চিহ্ন নেই। সে মুখ যেন এক প্রগাঢ় অবিশ্বাসের, নিপুণ বিশ্বাসঘাতকতার।
বিলাসীবালা নিজের শরীরটিকে পাথরচাটানের ওপর দিয়ে টানতে টানতে কৃষ্ণচূড়া গাছটির কাছে নিয়ে যায়। গাছের গুঁড়িতে মাথা ঠুকতে ঠুকতে ভেঙে পড়ে কান্নায়। এই মুহূর্তে মনে হয় মানুষ নয়, এই বৃক্ষটিই যেন তার সবচেয়ে আপনজন। তার শত ঈর্ষা আর শাপ-শাপান্তের পরেও যে ভুল বুঝে দূরে সরে যায়নি। চির-প্রশান্তির ছায়াময় দু-হাত যে সরিয়ে নেয়নি কখনো।
সেই কৃষ্ণচূড়ার শিকড়ে মাথা রেখে শুয়ে থাকে ক্লান্ত বিলাসীবালা। দেখে, কৃষ্ণচূড়া ভোরের আলতো হাওয়ায় খসিয়ে দিচ্ছে লাল-হলুদ পাপড়ি। সেই পাপড়িতে ঢেকে যাচ্ছে তার অপমানহত দেহ।
খুব ভালো লাগলো গল্পটি। একটু অন্য আঙ্গিকে লেখা। আঞ্চলিকতার ব্যবহার সুন্দর। কবিকে নতুন রূপে পেলাম এখানে। শুভেচ্ছা।
অনেক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা জানাই। শুভেচ্ছা জানাই অপারবাংলাকেও।
Osombhob sundor
গল্পটা সত্যিই খুব ভালো লাগলো। কবিতাই সাধারণত পড়ে থাকি ওনার, কিন্তু গল্প এই প্রথম। গল্প আরো পড়তে চাই।
ভাল লাগল।
ভাল লাগল।
খুব
ভালো লিখেছেন ,
আপনার লেখা যতই পড়ছি ততই
মুগ্ধ
হয়ে চলেছি
এ গল্প নারী পুরুষের চিরন্তন রূপকথা । নারী পুরুষের যে বিচিত্র রসায়ন আমরা প্রতি নিয়ত প্রত্যক্ষ করি সমাজ জীবনে ,তার ই এক চিত্ররূপ এই উপাখ্যান । কখনও কখনও নারী এই পুরুষ তান্ত্রিক সমাজে ভারী অসহায় , দিনের পর দিন রক্তাক্ত হওয়াটাই যেন তার বিধিলিপি । সমাজ সংসারের বিবিধ সম্পর্কের সূক্ষ্ম তন্তুগুলোর গভীর বুনোটে কবি এক নক্সীকাঁথা তৈরী ক’রেছেন । রেহান ভাই বস্তুতঃ কবি,তাই গল্পের ভিতরেও কবিতা এঁকেছেন মনোরম । রেহান ভাই এর উষ্ণীষে নতুন এক উজ্জ্বল পালক এই গল্প । ভালবাসা অফুরান ।
একনিশ্বাসে পড়লাম। Climax এর চূড়ায় উঠে বিলাসীবালার যন্ত্রণা অনুভব করতে করতে কখন যে গল্প শেষ হয়ে গেল বুঝতে পারিনি। কৃষ্ণচূড়ার নিচে গড়িয়ে পড়ল একটি পরিবারের অশ্রুবিন্দু। প্রশংসার ভাষা নেই।
এইসব প্রান্তিক মানুষের জীবনের কথা খুব কম লেখায় পাই। আরো লিখুন।
অসম্ভব সুন্দর গল্পটা।ভাষার ব্যবহার মুগ্ধ করল।
অসম্ভব সুন্দর গল্পটা।ভাষার ব্যবহার মুগ্ধ করল।
খুব সুন্দর। আসাধারণ বর্ণনা।