বনপাটির জঙ্গল
(নলিনী বেরা)
মঙ্গল সোরেনের স্ত্রী সোমবারি। অমন কালো দিঘির জলের মতো সাঁওতালী বউটা ডাইনী হয়ে গিয়েছে। মঙ্গল তাকে খুব মারধর করেছে। ডাঙ্গর সাই গ্রামের জগমাঝিরা তাই সভা ডেকে তাদের দুজনের ভিতর ছাড়াছাড়ি করে দিচ্ছে। গ্রামের মাথায় শালগাছের তলায় সভা বসেছে। স্বামী-স্ত্রী আর বিচারকদের ঘিরে ধরে আছে গ্রামেরই লোকজন। মজা দেখতে দূর দূর গ্রাম থেকেও লোক আসছে। কলরব শোনা যাচ্ছে। যেন তারা বলাবলি করছে – চল চল! সত্বর না যাইলে দোল ফুরাইয়া যাইবে। আমাদের সম্মুখেই মঙ্গল তাহার বউকে আবার পিটাইবে তো ? মঙ্গলের বাড়ির উঠোনে অবশ্য তেমন কোনো ব্যস্ততা নেই। সবকিছুই হচ্ছিল খুব ধীরে সুস্থে। যেন এরকমই তো হওয়ার কথা ছিল – না হয় দুদিন আগে দুদিন পরে। এমনকী মঙ্গলের ‘ঘুসুরটা’, ঘুসুর তার মানে শুওরটা, যে কী না বাড়ির উঠোনেই শুয়েছিল – এত লোকজন দেখেও এতটুকু নড়ল না। বস্তুত মঙ্গলের ঘরের তেমন ছিরি-ছাঁদ নাই। শালগাছের ডাল থেকে ঝুলছে ছেঁড়া কাঁথা, ছেঁড়া ‘চাটিয়া’। আরেকদিকের ডাল থেকে একটা শত পুরাতন বোতল। কে জানে কী আছে তার ভিতর আর কত শত বৎসর ধরেই বা সেটা ঝুলছে এমনি করে ! স্বামী-স্ত্রী সামনাসামনি দাঁড়িয়ে। অথচ চোখ তুলে কেউ কাউকে দেখছে না। – না মঙ্গল না সোমবারি। দুজনের ভিতর এরমধ্যেই রাখা হয়ে গেছে ঘটি। তারমানে ব্যাপারটা গড়িয়েছে অনেকদূর। একবার যেন চোখ তুলে দেখল মঙ্গলের বউটা – তার চোখদুটো কটা ! ডাইনী কি এমনি বস্তু ? এই যদি ডাইনীর চেহারা হয় – কটা চোখ, মুগুরের মতো শরীর, কোঁকড়ানো চুল, কামার্ত ঠোঁটজোড়া – তবে তো তারা খুব সুন্দরী। এমন জিনিস হাজারে একটা হয়। এই সুন্দরী সন্তানহীনা রমণী, রাত্রে, হাত দুটো পা দুটো উলটে অনায়াসে হেঁটে যায় ? তাও আবার কপালে জ্বলন্ত প্রদীপ রেখে ? বিশ্বাস হয় না। ভাত-ডাল এত সব সুখাদ্য ফেলে গু খায় ? বিশ্বাস হয় না। বিশ্বাস হয় না, বিশ্বাস হয় না – একথা হাজারবার বললেও উপস্থিত মাতব্বররা মানবে কেন ? স্ত্রী যদি অন্যের সঙ্গে শোয়, স্ত্রী যদি স্বামীর সঙ্গে শুয়েও অন্যের হৃদয় পর্যন্ত দেখতে পায়, আর দেখতে পেয়ে তার হৃদ-যকৃতটা চুক চুক করে খেয়ে ফেলে, অর্থাৎ স্ত্রী যদি ডাইনী হয় – তবে স্বামী-স্ত্রীর ভিতর ‘ডিভোর্স’ হয়। মঙ্গলের হাবভাব দেখে মনে হচ্ছিল – বিচ্ছেদের আবেদনটা নিয়ে এসেছে সে-ই। আর মঙ্গলের মায়ের ঘন ঘন ঘর-বাহির করা দেখে বুঝতে অসুবিধা হচ্ছিল না – বউকে খেদিয়ে দিতে ছেলেকে উসকে দিয়েছে সে-ই। মঙ্গলের বাবা গুরা জুলু জুলু চোখে একবার দুজনের দিকে একবার দশজনের দিকে চেয়ে চেয়ে দেখছে। তার কাছে – বেটার বউ থাকলে হয়, না থাকলেও হয়। ডিমপাড়া একটা মুরগী এসময় খক্ খক্ করে ভুলক্রমে এদিকে উড়ে আসায় তাকে তাড়িয়ে দিতে হেট্ হেট্ শব্দে দিঙ্ নিনাদ করে দৌড়ে গেল গুরা। ঝটিতি সেদিকে তাকিয়ে চোখের জল চাপতে ঠোঁট কামড়ে ধরল সোমবারি। সাঁওতাল পাড়ার মাতব্বর কুলাই মাঝি ‘ঠারে’ বলল, “এ বাবু, আলেদ সিঞ বোঙ্গা, মঁড়ে বুরু বোঙ্গা আর হাপড়ামকোওয়াক্ সাহায়তে বৎস, সিঞ বোঙ্গা মঁড়ে বুরু বোঙ্গা ও পূর্বপুরুষদের সহায়তায় ডাকদিকে মুনিয়া পাখি আর বাঁদিকে কাঠঠোকরা পাখি রেখে লাড়লতা ও বান্দোলতা দিয়ে আমরা তোমাদের বিবাহবন্ধনে এক করে দিয়েছিলাম। একদিনের জন্য নয়, কিন্তু সারা জীবনের জন্য, বৃদ্ধাবস্থা পর্যন্ত যতদিন না মৃত্যু তোমাদের আলাদা করে। তোমাদের মধ্যে বনিবনা না হওয়ার জন্য আমাদের দোষ নেই; আমরা কি করব ? এবার তোমরাই নিজের মনে বিচার করে দেখ। পরে বল না যে লোকেরাই আমাদের ছাড়াছ করে দিল। এবার তুমি সিঞ বোঙ্গা, মঁড়ে বুরু বোঙ্গাও পূর্বপুরুষদের দোহাই দিয়ে পাতা ছিঁড়ে ফেল নতুবা ‘তালাক’ হবে না……। এসময় সভার মধ্য থেকে কে যেন চেঁচিয়ে উঠল – “এসব কী হচ্ছে ? ডাইনী যখন সাব্যস্ত হয়েছে, তখন এ-গ্রাম থেকে এ-পরগণা থেকে মেরে তাড়িয়ে দিলেই তো হয় ?” আরো দু-চারজন মারমুখী হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে তার সঙ্গে গলা মিলাল। সভায় একটা সোরগোল উঠল। তাতে ভয়ে এতটুকুও কেঁপে উঠল না সোমবারি। বরঞ্চ সেই কোন সুদূর নয়াগ্রামের ভালিয়াঘাটি থেকে খবর পেয়ে মেয়েকে নিতে আসা সোমবারির বাবা টপা সাঁওতাল আতঙ্কে আকাশে দু-হাত তুলে উঠে দাঁড়াল, মুখ দিয়ে তার কোনো কথা বেরুল না। গ্রামের জগমাঝি দু-হাতের ঝাপটা দিয়ে আনপড় যুবকদের থামিয়ে দিল – “বস, বস !” তারপরই বলল, “খেদাতে কেন হবে – মেয়েকে বরাবরের জন্য নিয়ে যেতে তো তার বাবা-ই এসেছে। লে মঙলা, ‘শালপতর’ ছিঁড়ে ফেল !” তিনটি শালপাতা হাতে ধরেই দাঁড়িয়ে ছিল মঙ্গল, সূর্যদেবের দিকে মুখ করে। আদেশ পাওয়া মাত্রই বাঁ পায়ে ভর দিয়ে পাতা তিনটি ছিঁড়ে ফেলল। ডানপায়ের লাথি মেরে জলভরা ঘটিটা উল্টে দিল। আর এ-দুটো কাজ সে এত দ্রুততার সঙ্গে করল যে সভাস্থ লোকজন “সাধু সাধু” করে উঠল। অনুরূপ কাজ করতে বলা হল মঙ্গলের স্ত্রীকেও, সে কিন্তু কাজ দুটো করল খুবই ধীরে – পাতাগুলো ছিঁড়ল কি ছিঁড়ল না, পা যেন তার আর চলতে চায় না। শেষ অব্দি সে গড় করতেও ভুলে গেল গ্রামের পাঁচজনকে। কাঁদল না – কান্নাকে ঠোঁটে কামড়ে ধরেই আদিবাসী কাঠিন্যে বাবার আগে আগে হাঁটতে লাগল সোমবারি। তবে এখন আর ধীরে ধীরে নয়, হাঁটতে লাগল বেশ দ্রুততার সঙ্গেই। পিত্রালয়ের দিকে, তার ফেলে আসা গ্রামের দিকে।
যেমন জঙ্গলের মধ্যে থাকে আরেকটা জঙ্গল, তেমনি গ্রামের মধ্যে থাকে আরেকটা গ্রাম। সেই মধ্যবর্তী গ্রামের মজলিশে চর্চা চলছিল এক ‘রাত – পুতড়ি’ বা গল্পকথার। চর্চাটা আগেও ছিল, সম্প্রতি বেড়েছে। জনা কয়েক যুবক, তারমধ্যে ‘গিরিহা’ পিত্যা হাঁসদার গরু বাগাল বুধন মান্ডিও আছে, আলোচনা করছিল এক গুহ্য-বৃত্তান্তর। বৃত্তান্তটা এই – মহাদেব এক মানুষকে গোপনে এক বিদ্যা দিলেন – তন্ত্রমন্ত্র, ওষুধের গুনাগুণ, শিকড়বাকড়ের উপযোগিতা, তুকতাক আর ঝাড়ফুঁকের। সেই লোকটা আবার তার দুই চেলাকে সে বিদ্যা দান করল। তবে সব নয়, অর্দ্ধেকটা। একদিন আচমকা গুরুকে সাপে কাটল। বাঁচাতে হলে অমৃত চাই। মহাদেব সে অমৃত দিলেন না। অগত্যা গুরুকে মরতে হল। মরবার আগে সে বলে গেল – শ্মশানে তার যকৃতটা দুই চেলা যেন খেয়ে ফেলে, তারপর পুড়িয়ে গোটা শরীরটাও যেন খায়। তবে বাকি অর্দ্ধেক বিদ্যা তারা পেয়ে যাবে। শ্মশানে গুরুর যকৃতটা বের করে পাতায় মুড়েও রাখল শিষ্যদ্বয়। তার উপর গুরুর শরীর পুড়িয়ে খাওয়ার উদ্যোগও করল তারা। এমন সময় মহাদেব এসে বললেন – ছিঃ এই তোদের গুরুভক্তি ! গুরুর শরীর পুড়িয়ে খাওয়া ! তখন লজ্জায় ঘৃণায় মহাদেবের কথায় যকৃত সহ গুরুর শরীরটা নদীজলে ভাসিয়ে দিল তারা। পাতায় মোড়া যকৃত ভাসতে ভাসতে এসে পড়ল গঙ্গায়। গঙ্গায় তখন এক প্রৌঢ়া তার একুশজন কন্যাকে নিয়ে স্নান করছিল। মেয়েরা ভাসন্ত পাতায় মোড়া যকৃত জল থেকে তুলে ভাগ করে খেয়ে ফেলল। আর তন্মুহুর্তেই তাদের জানা হয়ে গেল ‘ডাকিনী বিদ্যা’। কে যেন বলল, “তাদেরই বংশধর সোমবারি। এ বিদ্যা তার মায়ের কাছ থেকেই পাওয়া। নিশ্চিত জানবি।” এমন সময়ই টপা সাঁওতালের ঘর থেকে বেরিয়ে এল সাদা রংয়ের একটা ‘পুসি’। অর্থাৎ বেড়াল। নাচদুয়ারে ঘোরাঘুরি করে ফের ঢুকে গেল ঘরের ভিতর। দেখেই লোকজন বলাবলি করল, “ওই দ্যাক্ – সোমবারির ত বেটাবেটি নাই, ওই পুসিটাকেই মরণকালে এ-বিদ্যা দিয়ে যাবে – কাউকে না দিয়ে তো আর নিস্তার নেই ! ততদিন অবশ্য পুসিটা বাঁচলে হয় !” “বাঁচবে। ডাইনীর বেড়াল না ?” ডাইনী হয়ে গেল সোমবারি। এখন ভাবতেই পারছে না পিতম হাঁসদার ‘ভাতুয়া’ ও গরুবাগাল বুধন মান্ডি। বাকিরা তাকে আবার সতর্ক করল এই বলে, “বুধু, তুই ত টপার ঘরে যাস-টাস, কথাও বলিস ঐ ‘ইয়েটার সঙ্গে, সাবধান কিন্তু! ডাইনীরা মানুষের কলজেটাও দেখতে পায় খালি চোখে। তার উপর সোমবারির চোখ ত পুসির মতন কাঁচ ফিট করা, কটা।” টপা সাঁওতালের ঘরের নাচদুয়ারে বেড়ালটা আবার এল। এক দৌড়ে একধারের ভাবুর গাছটায় কিছুটা উঠে পড়ল। চারপায়ের নখ দিয়ে গাছের গুঁড়িটায় আঁচড়াল। আঁচড়ে কামড়ে ফের দৌড়ল ঘরের দিকে। তাই দেখে মজলিশের লোকজন হায় হায় করে বলে উঠল, “ওই দ্যাক্দ্যাক্ ডাইনীটা নির্ঘাত কোনো তুক-গুণ করছে।” ধুস ! এই সেদিনকার ওঠা-বসার সাথী চুন-দোক্তার সরবরাহকারী সোমবারি কী না রাতারাতি ডাইনী ! এসব আলোচনা বুধনের ভালো লাগছিল না, সে উঠে পড়ল। বলল – তার কাজ আছে। কাজ, কাজ। ‘কিমীড়’ অর্থাৎ ধনী পিতম হাঁসদার ‘বাখুলে’ কাজের কোনো শেষ নেই। এই সিজা ধান রৌদ্রে মেলা হল, পড়ে পড়ে শুকনা হল। শুকনা ধান বস্তাবন্দী হয়ে গাড়িতে উঠল। গরুর গাড়ি চলল নদী সে পারে রোহিনীগড়ের ‘বাবুঘরে’, হাস্কিং মেশিনে। সামনে ‘হিরোহণ্ডা’ ভটভটি বাইক চালিয়ে পিতমের বড়বেটা দাবানল হাঁসদা। তার আগে পান থেকে চুন – সবই ত সাজিয়ে দিতে হয় বুধনকে ! ঘরে ঢুকতে ঢুকতেই শুনতে পাচ্ছে পিতমের ‘বাহু’ পার্বতী বুড়ি চেঁচাচ্ছে, “বুধন উকুরিচ ? নিতহঁবায় হেচএ না ?” কোথায় বুধন ? এখনো আসছে না ? গোধূলির উড্ডীয়মান ধূলিকণা থিতিয়ে গেছে কখন, গোহালে গরুগুলিও বন্দী। কিন্তু এখনো তাদের খড়ভুষি, দানাপানি জুটল না! তাই বুধনের খোঁজ পড়েছে। “-বু-ধন ! বু-ধ-ন!!” প্রবেশমাত্রই উগ্রচন্ড পিতম হাঁসদার বাড়ি পড়ল পিঠের উপর ! চিৎকার করে বলছে, “নরকরিনিচ গিদরী আম অকাতেন সেনলে নাম ?” নরকের বাচ্চা, কোথায় গিয়েছিলি ? “সেই ‘ডান’টার বাড়ি ?” একটা কথাও বলল না বুধন, উত্তর দিল না লেখাপড়াজানা অথচ বদরাগী পিতমের প্রশ্নের। ঘ্যাঁস্ ঘ্যাঁস্ করে খড় কাটল, ‘বিরি’র ভুষি। তারপর ‘তাড়ে’ জল ঢেলে জাবনা গুলে দিল গরুর। আহাররত গরুগুলোর গলকমূলে হাত বুলিয়ে বুলিয়ে আদরও করল বুধন। কুঁদি, রাঙা, চোর, বাঁটু, বড়কা –কত কী নাম গরুগুলোর ! এসব নামকরণ তো তারই করা। অন্ধকার, জাবনা গলাধঃকরণের হেঁস-ফ্যাঁস আওয়াজ, আর জ্বলন্ত জোড়া জোড়া চোখ গরুগুলোর- জ্বল জ্বল করছে! জ্বলজ্বল করছে,জ্বলজ্বল করছে। কিছুক্ষন অন্ধকারে গোহালঘরে থাকতে থাকতে বুধনের হঠাৎ যেন মনে হল এরকম চোখ সে দেখেছে! সারা মুখ গামছা বাঁধা শুধু চোখদুটো খোলা, গরু চরাতে চরাতে। ‘অকারে ঞেলকাৎতামা’? কোথায় আমি দেখেছি ? কোথায় আবার ! বনে,’বনপাটি’তে। ’বনপাটি’, ’বনপাটি’। মালকিন খেতে ডাকল। সেই দরজার বাইরে, প্রায়ান্ধকার ঘুপচীতে, ডিমে ‘তা’ দেয়া মুরগীর খাঁচাঘরের পাশে। একটা ‘মামড়ি’ –ওঠা প্রায় নিভু নিভু ‘ডিবরি’ জ্বলছিল। শুধুমাত্র আজ নয়, যেন বুধনের বাপের আমল থেকেই ডিবরিটা জ্বলে আসছে। এখানে এই ঘরেই এই জায়গায় একই ভঙ্গিতে তার বাপ শরাবন মান্ডিও খেতে বসত। অবিকল একই ভঙ্গিতে তাদের জন্য নির্দিষ্ট করা তোবড়ানো ‘জাম’ গামলায় আমানিসহ ভাত গদ্ গদ্ করে ঢেলে দিত ‘গিরিহান’। সঙ্গে নুন, কাঁচালঙ্কা আর এক খামচা সজনা কি নাহাঙা শাকভাজা। আজ নাহাঙা। বুধন মান্ডি খেতে বসল। তার আওয়াজ পেয়ে ডিমে ‘তা’ দিতে বসা মুরগীটা কোঁক্ কোঁক্ করে বারকতক আওয়াজ দিল। বুধন খাচ্ছে। খাওয়া যখন সমাপ্তির পথে মালকিন এসে আরো কিছুটা আমানি ঢেলে দিয়ে বলল, “লে, খা!” আমানিসহ গামলাটা দুহাতে ঠোঁটের কাছে তুলে ধরে গামলায় চোখ-মুখ ঢেকে চোঁ-ক্ চোঁ-ক্ শব্দে মুহূর্তে নিঃশেষ করে দিল বুধন। চোখ-মুখ থেকে গামলা সরাতেই সে দেখল – সন্মুখে সোমবারির সেই সাদা রংয়ের বেড়ালটা ! অন্ধকারে স্পষ্টত চোখদুটিতে কাঁচ ফিট করা, কটা। জ্বলছে ! ভয়ার্ত বুধন ফিস্ ফিস্ করল শূন্য গামলা দেখিয়ে, “আর নাই, ‘বাঞ এম দাড়েয়াদা’, দিতে পারছি নাই” বেড়ালটি চোখ বুজে ডাকল, “মাও !”
যেমন গ্রামের মধ্যে আরেকটা গ্রাম, ঘরের মধ্যে আরেকটা ঘর থাকে, তেমনি জঙ্গলের মধ্যে থাকে আরেকটা জঙ্গল। আগে আগে গরুর গোঠ নিয়ে এই অন্তর্বর্তী জঙ্গলেও ঢুকে যেত বুধন। এখন যায় না, যেতে নেই। নাকি অন্তর্গত জঙ্গলের গভীরে এখন ‘-’। শুধু কী বুধন একা? অনাদি, দৈতারী, মহীধর, বাঈধররাও যায়। কখনও একসঙ্গে দলে ভিড়ে যায়, কখনবা একা একাই। সেই কোন ভোরবেলা ‘গিরিহা’ ‘গিরিহানী’র অর্থাৎ গৃহকর্তা-গৃহকর্ত্রীর দেয়া এক ‘মান’ মুড়ি কোঁচড়ে ভরে গরু নিয়ে জঙ্গলে যায় গরুবাগালরা। হাতে হোমিওপ্যাথির শিশির তুল্য শিশিতে স্নানের নিমিত্ত যৎসামান্য সরিষা বা কচড়ার তেল। কচড়াটাই বেশি। তারপর তো সারাদিন জঙ্গলে টঙসটঙস করে ঘোরা, নানাবিধ ফল-পাকুড় আলু-তুঙা আহরণ করা। মধ্যাহ্নে সীতানালা খালের কাকচঞ্চু জলে অবগাহন অন্তে মধ্যাহ্নকালীন আহার। কী-ই বা খায়! হয়ত এ-গাছ সে-গাছ ঢুঁড়ে ‘ভাতি-মাদাল’ বা বুনো আতা সংগ্রহ করে। শুকনো কাঠপাতা জড়ো করে তাতে আগুন ধরায়। আতা পুড়ে সিদ্ধ হয়ে গেলে তাই ভেঙে খায়। কতক কোঁচড়ে ভরে নিয়ে আসে ঘরের জন্য, গাঁয়ের প্রিয় বউড়ী-ঝিউড়ীদের জন্য। তাদের সঙ্গে তাদের সখ্যতা ভারি। আজ গরু নিয়ে গোঠে যেতে গিয়ে বুধন মান্ডি সোমবারিদের ঘরের কাছে এসে ‘গলা-খাঁকারি’ দিল, জোর আওয়াজ করে গরুগুলোকে খেদাতে লাগল। আওয়াজ শুনে অবশ্য দৌড়ে এসেছিল সোমবারিও। কিন্তু থমকে দাঁড়াল। আগে আগে জঙ্গল থেকে এটা-ওটা নিয়ে আসার বায়না ধরত। এই যেমন – কেঁদ্-ভেলা-ভুড়রু জাম-জামরুল বেল-কোৎবেল বনকুঁদরী-কাঁকড়ো মেহা-মাদাল কুরকুট পটম নানাবিধ ‘ছাতু’। ঠাট্টা-ঠিসারা করে বুধনও আব্দার করত, “আনলে কী দিবি?” “যা চাস তাই।” হরষিত উল্লাসে বুধন ল্যাজ মুচড়ে গরুগুলোকে ছুটিয়ে দিত, মনে সংরাগ – “লিবই লিব”“লিবই লিব”! আজ সেসব কিছুই হল না। দৌড়ে আসা সোমবারির দিকে আড়চোখেও দেখল না বুধন। তবু যেন ফিস্ ফিস্ করে সোমবারি বলল, “কোৎবেল পাস যদি ত আনিস!” “হাঁ” “না” কিছুই বলল না বুধন। আচমকা ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল – ‘পাঁড়রা চুলো’ তার মানে পিঙ্গল চুলের সোমবারির চোখদুটি ‘কটা’। যেন সত্যিসত্যি কাঁচ ফিট করা! এতদিন দেখেনি, আজ আবিষ্কার করল। ডাঙ্গরসাই ফেরত সোমবারি একেবারে ‘ঘর-বসা’ হয়ে আছে। অথচ বিবাহের আগে, পরে পরেও, যে সোমবারি জঙ্গলে পাতা ছিঁড়তে, ঝাঁটি কুড়োতে হলবলিয়ে গাঁ থেকে পথেপ্রান্তরে হাল্লাট করে বেরিয়ে পড়ত, সে আজ চুপচাপ। ঘর-বসা, ঘর-বসা। তাদের উঠোনে একটা পাতকুয়া আছে। পাতকুয়ার পাশে ভিজাজমিতে একটা ফলন্ত পেয়ারাগাছ আছে। পাকা পেয়ারা খেতে রাতভিত ঝাঁক ঝাঁক বাদুড় আসত। বাদুড় আটকাতে জাল দিয়ে গোটা গাছটা মুড়ে রাখত সোমবারির বাপ টপা সাঁওতাল। লোকে বলত হাড়কিপটে, প্রাইমারী স্কুলের মাস্টার সোম হেমব্রম বলত ‘সেলফিস জায়েন্ট’। পাতকুয়াটা এখনও আছে, জল তুলতে আজ আর কেউ আসে না, কেউই না। পেয়ারাগাছটা আঢাকাই পড়ে আছে, রাতভিত বাদুড় আসছে কী আসছে না – সে আর কে দেখছে! তবে পাড়ার একটা ছেলেও যে আর হাত তুলে ঢিল ছুঁড়ছে না সে ত চোখের দেখতা, চাঁদ-সূরযের মতো সত্যই। তবু কালে-ভদ্রে তাদের বাড়ির পাশ দিয়ে যেতে আসতে লোকেরা, বিশেষত মেয়েরা শুনতে পায় সোমবারি যেন কার সঙ্গে অনর্গল কথা বলে চলেছে। বাপ ছাড়া আর তো কেউ নেই ঘরে! কার সঙ্গে তবে কথা বলে মেয়েটা? কৌতূহলী জনতা উঁকি মেরে দেখেও এসেছে – নাকি অশরীরী আত্মার সঙ্গেই কথা বলে ডাইনীটা। মানুষের দৃষ্টি পড়া মাত্রই তা হয়ে দাঁড়াচ্ছে পুসিটা! ওই যে সেই সাদা রংয়ের বেড়ালটা – যত্রতত্র ঘুরে বেড়ায়, গাছে উঠে গুঁড়ি আঁচড়ায়, নরম মাটি বা বালি খুঁড়ে কী যেন চাপা দেয়! মাঝে মাঝে ঘর থেকে বেরিয়ে রৌদ্রে দাঁড়িয়ে সোমবারিও নিজের ছায়া দেখে। সে ছায়া কখনও পূর্বগামিনী কখনও পশ্চিমগামিনী, কখনও দেহের সঙ্গেই মিলিয়ে যায়। সেও শুনেছে–ডাইনীদের নিজস্ব ছায়া পড়ে না। এই তো–এই তো–তার ছায়া পড়ছে, ছায়া–ছায়া! উল্লসিত সোমবারি পরম মমতায় হাত বুলিয়ে বুলিয়ে দেখে। মধ্যাহ্নে, যখন মাথার উপর সূর্য, ছায়া হারিয়ে যায় দেহের সঙ্গে, তখন সে দুঃখিত হয়। কাঁদে। অঝোরঝর কান্না। দৌড়ে ঘরের ভিতর ঢুকে ভাঙা আরশিতে মুখ দেখে, চোখের সামনে আঙুল তোলে। আঙুলের ছায়া পড়ছে কী পড়ছে না–দেখে। শুনেছে সে–চোখের মণিতে ডাইনীদের ছায়া পড়ে না। এই তো–এই তো–চোখের মণিতে তার আঙুলের ছায়া পড়ছে! আনন্দে সে গীত আওড়াল, “জিউয়ি রেয়ার দরয়া আড়েরে দুড়ুপকাতে একলারে” – জীবনসমুদ্রের তীরে বসে একা একা। রাগে আক্রোশে তিতিবিরক্ত সোমবারি পেয়ারাগাছের তলায় এসে দাঁড়াল সাঁওতালপাড়ার ‘উপর-কুলহি’র দিকে মুখ করে। ওই তো কাঁদুরাদের আলতি খেতিতে ‘ঘুসুর’ চরে বেড়াচ্ছে, তার পিঠের উপর বসে একটা কাক হেলছে-দুলছে। কোথাও কেউ তার ‘কেঁদরি’তে তার জুড়ছে – “র্যাঁ-এ-এ-এ চ! র্যাঁ-এ-এ-এ চ!” সবই তো ঠিকঠাক আছে, ঠিকঠাক- আর আমি মাইরি গেঁড়াকলে পড়ে ডাইনী হয়ে গেলাম! ডাইনী! তার চোখে পড়ল তাদের পড়াশঝাঁটির বেড়ার দিকে। তিনটি পেটমোটা ‘ন্যাঙটা-ভুটুঙ সাধের কুটুম’ সাঁওতাল ছেলে, কে জানে কাদের ছেলে, লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ফলন্ত গাছটার দিকে। কারুর বা কোমরের ‘অঁটা-দড়ি’তে জালের কাঠি বাঁধা, কারুর বা লটকানো তামার কানা পয়সা। দেখে এত আনন্দ এত ফুর্তি হল সোমবারির যে তর্ তর্ করে পেয়ারা গাছে উঠে গাদাগুচ্ছের পেয়ারা পেড়ে বেড়ার ফাঁক দিয়ে তাদের হাতে দিয়ে বলল, “জমপে গিদরী–খাও বাছা! তোমাদের কিছু হবে না।”
আম ধরে বলেই আমগাছ, জাম ধরে বলেই জামগাছ। কদম্ব ফোটে বলে কদম্ব, নিম থেকেই নিমগাছ। তবু কিছু কিছু গাছের আলাদা নাম থাকে, হয়ে যায়, মার্কামারা। না হয়ে উপায় থাকে না। এই যেমন সুবর্ণরেখা নদীধারে বড়োডাঙ্গার ঘাটের শিমুলগাছটায় বাজ পড়ল, একটা ডাল শুকিয়ে মরে গেল। নাম হয়ে গেল ‘বাজগাছ’। স্বাধীনতা যোদ্ধা গৌর মাইতি একটা গাছ লাগালেন, সেগুন গাছ। নাম হয়ে গেল সেগুন ত নয়, ‘ফ্রীডম-ফাইটার’। তেমনি ‘গলাসিয়া’। গলাসিয়া, গলাসিয়া। ডালিয়াঘাটি গ্রামের দক্ষিণপ্রান্তে মাঝুডুবকা জঙ্গলের অন্তরালে একটা গাছ আছে, ভাদুগাছ। আকারে-প্রকারে খুব বৃহৎ নয়, মাঝারি। তরতরিয়ে ওঠাও যায়, আবার হাত বাড়িয়ে ধরাও যায়, নাগালের মধ্যে। গাছটায় উপর্যুপরি কয়েকটা গলায় দড়ির ঘটনা ঘটে যাওয়ায় ভাদুগাছটা রূপান্তরিত হল ‘গলাসিয়ায়’। কত লোক যে গলায় দড়ি দিয়ে মরল আর কত লোক যে ঝুলে পড়েও পরমুহূর্তে দড়ি কেটে দেয়ায় বেঁচে গেল–তার ইয়ত্তা নেই। নাকি গলাসিয়া গাছটা ডাকে–আয়! আয়! মরবি যদি তো আয় না, আয়! মরতে গিয়ে বেঁচে ফিরে এলেও পিছু ডাকে, গলা ‘শঁসায়’-আয়! আয়! মরতে এলি আবার ফিরলি কেন? আয়! সন্ধ্যা উত্তীর্ণ হয়ে গেছে কবেই। কাবা-কুইরি বাসায় ফিরেছে। মাঝে মাঝে ‘ভদকাচ্ছে’, ডানা ঝাপটাচ্ছে। বনেজঙ্গলে গাছের পাতাও নড়ছে মৃদু মৃদু। ‘মেঘপাতালে’র হাতিডহরে বিজকুড়ির মতো তারা ফুটেছে। কে জানে আজ ক’ঘড়ির ‘জন’, জ্যোৎস্না। এখন তো ভুষাকালির মতো অন্ধকার ঘুট ঘুট করছে। ‘গলাসিয়ায়’ আজ মরতে এসেছে সোমবারি। ঠিক ভাদুগাছটার নীচে নয়, অদূরবর্তী একটা আঁটারিগাছের ঝোপঝাড়ের ধারে সে বসে আসে রুম রুম। আজ বিকালেই জোর হুজ্জুতি হয়ে গেল টপা সাঁওতালের বাড়িতে। মারধর মারব কাটব। কার ছেলের হঠাৎ কী অসুখ হল, মরমর অবস্থা! নাকি ‘দু-পহরে’ ছেলেটাকে পাকা পেয়ারা খেতে দিয়েছিল ওই ডাইনীটা। তারপর থেকেই তো কাঁপুনি দিয়ে ধুম জ্বর। জ্বরের ঘোরে ওইটুকু বাচ্চা, সেও তো নাম করছে সোমবারির। সোমবারি, সোমবারি। আর কী প্রমাণ চাই? অতএব…। তক্ষুনি বিচার বসল, জরুরী বিচার। বিচারে সাব্যস্ত হল–আজ রাত না পোহাতেই গ্রাম থেকে খেদাতে হবে সোমবারিকে। আমরা দশগেরামের পাঁচজন কিছু করছি নাই, যা কিছু করতে হবে টপাকে। অন্যথায় মরতে হবে দুজনকেই। আমরা কি করব? এবার তোমরাই নিজের মনে বিচার করে দেখ। পরে বল না যে গেরামের লোকেরাই আমাদের। টপা সাঁওতাল ভেবে থলকূল পেল না–সে কী করবে! আজ রাতের মধ্যে কোথায় বা রেখে আসবে সোমবারিকে! তিন কূলে কেউ তো কোথাও নেই অভাগীর। এতদিন বলেনি, কিংকর্তব্যবিমূঢ় টপা আজ মুখ ফস্কে মেয়েকে বলেই ফেলল, “তোকে গলাসিয়ায়ও ডাকছে নাই? এক লোককে ডাকে! গুজুঃ মা! মর!” গলাসিয়ার ডাকে সাড়া দিয়ে আজ মরতেই এসেছে সোমবারি ভাদুতলায়। ডাঙ্গরসাই গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে ছাড়াছাড়ির সেদিন পায়ের কাছে রাখা জলের ঘটিটা ঝাপসা চোখে ঠিক মত দেখতে পায়নি, তাই উলটে দিতে ভুল হচ্ছিল। আজ জলের ঘটিটা অন্ধকারেও সে দেখতে পাচ্ছে পরিষ্কার। ঝকঝক করছে ঘটিটা। উলটাতে সময় লাগবে না একদন্ডও। এখন শুধু অপেক্ষা। অপেক্ষা, অপেক্ষা। ওদিকে গরু নিয়ে জঙ্গল থেকে বেরিয়ে গোঠটাঁড়ের মাঠে গরুগুলোকে জড়ো করে ‘গিনতি’ করছে বুধন, কোঁচড়ে কোৎবেল। গ্রাম, গ্রাম সন্নিহিত মাঠ-ঘাট-প্রান্তরকে গোধূলির রাঙা ধুলোয় গাবিয়ে দেওয়ার প্রাক্কালে এই গোঠটাঁড়ে একত্রিত গরুগুলোকে গিনতি করে সব বাগালরাই। যার যা গরু ভর্জে দিতে হবে ত! “মিৎটাং, বারয়া, পেয়া, পুনয়া…” এক দুই তিন চার… । একটা যে কম পড়ছে বুধনের! ফের গণনা শুরু করে সে- মিৎটাং বারয়া পেয়া… না, না, গিনতিতে অবশ্যই একটা কম। কোথায় ঝোপেঝাড়ে অলক্ষ্যে থেকে গেল গরুটা, হয়তো কোনো আসনগাছের তলায় এখনো বসে বসে জাবর কাটছে, হয়তো ঢূকে পড়েছে ‘বনপাটি’র জঙ্গলে, জঙ্গলের ভিতর আরেকটা জঙ্গলে। খুঁজতে যাবে কি? না গিয়েও উপায় নেই, উগ্রচন্ড ‘গিরিহা’র ভয়ঙ্কর মুখটা যে মুহুর্মুহু মনে পড়ছে। গরু না পেলে তাকে জ্যান্ত পুঁতে ফেলবে পিতম হাঁসদা। সন্ধ্যেও নেমে গেল, সঞ্ঝাতারা উঠি-উঠি। গরুগুলোকে ঘরমুখো ছুটিয়ে দিল বুধন–যার জীব তার কাছে যা! তারপর মরীয়া হয়ে ডুবকা-ডুংরিতে লাঠি পেটাতে পেটাতে দৌড়ুল জঙ্গলে, অগভীর থেকে গভীরে। গরুটার নাম ‘বুঁদি’ চুরনী গরু, গলায় ‘ঠরকা’ বাঁধলে বেশ হত – ঠ-র-ক ঠ-র-ক করে বাজত আর ধরা পড়ে যেত বুঁদিটা। এ জঙ্গলের নাড়ী নক্ষত্র তার জানা, ডরভয় নেই। “খুঁজি খুঁজি নারি – ”। খোঁজ খোঁজ। খোঁজাখুঁজি পশ্চিম থেকে শুরু করে সে পৌঁছল পুবে। পুবে, পুবে। ওই ত ‘গলাসিয়া’ গাছ, চারধারে তার ঝিকমিক করছে ‘বাঘযুগনী’ পোকা। তবে কী গলাসিয়ায় ধরল বুধনকে? একটু একটু করে সেওতো এগিয়ে যাচ্ছে সেদিকেই! আয়! আয়! মরবি যদি তো আয় না আয়! ওই তো ডাকছে গলাসিয়া। গলাসিয়া, গলাসিয়া। ধুস! আর কিসের জন্য অপেক্ষা? হুমদুম করে গাছে উঠে গেল সোমবারি। কী যেন নড়ে উঠল, কী যেন। গলাসিয়া গাছটা মাঝে মাঝেই নড়ে ওঠে। নড়ন দেখে দৌড়ে গিয়ে কত লোককে যে গলাসিয়ার হাত থেকে বুধন বাঁচিয়েছে! আজও দৌড়ুল – দৌড় দৌড়। কিন্তু ও কী! কে ও? ও কে? কোনো কথা নেই, ভয়ের কোনো চিহ্ন নেই, দুজনেই হাপুস নয়নে অঝোরঝর কাঁদল, কিছুক্ষন তো কাঁদুক! চাঁদ উঠল চাঁদ ঢলেও পড়ল। পুবের জঙ্গলে ছায়াচ্ছন্ন করে পশ্চিমের জঙ্গল খানিকটা উজ্জ্বল হল। ‘বনপাটি’র জঙ্গলে আলো পড়ল। দুজনেই গাছ থেকে নেমে পাশাপাশি বসল। নীরবতা, নীরবতা। আচমকা স্তব্ধতা ভেঙ্গে সোমবারি বলল, “দে আমার কোৎবেল!” ‘বনপাটি’র জঙ্গলের দিকে চোখ রেখে বুধন হেসে উঠল। হাত ধরাধরি করে ‘বনপাটি’র জঙ্গলে ঢুকে পড়ার ‘ডিসিশন’ তাদের সামনে সরু সুতোয় দুলতে লাগল, হয় এসপার নয় ওসপার। আপাতত হাতে কিছুটা সময় থাকল, বনমোরগ কী ঘরমোরগ এখনও ডাকে নাই।
I think this work done by Oindrila Das am I right ?
Correct!