ব্রেক-আপ
এক
‘ফালতু বকিস না। যেন সেই টানটাই আর নেই।’ কর্কশ শোনাল শায়নের কণ্ঠ। থমকে গেলো জিনাতের হাত। হাতের রং-মাখা তুলিটা সরিয়ে রেখে ক্যানভাস এর সামনে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো। তারপর খুব ঠান্ডা গলায় বললো, ‘কি বলতে চাইছিস, তুই?’ ‘সিম্পল। তুই আমাকে আগের মতো পছন্দ করছিস না।’
‘ভুল। একদম ভুল ধারণা তোর। এই তো গতকাল সন্ধেবেলাই কত কথা বললাম তোর সঙ্গে।’
‘হ্যা। তো? শুধু কথাই বলেছিস। শুধু কথা। তাতে আর কিছু ছিল না। কথার নাইন্টি পার্সেন্ট জুড়ে সৌম্য পুষ্পল অরিন্দমদা ঋতুরাজ, নেক্সট এক্সিবিশন এটসেটরা এটসেটরা…. ইদানীং আর একটা নাম যোগ হয়েছে আলাদিন।’ ‘আর ইউ জেলাস?’
‘নো not at all। আমি শুধু ফীল করতে চাইছি, তোর এতো রিলেসন এর মাঝখানে আমার জায়গাটা কোথায়! আমি তোর ঠিক কি!’
‘তুই আর পাঁচজনের সঙ্গে নিজের তুলনা করছিস কি করে সেটা ভেবেই আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি! তুই জানিস না তুই আমার কে?’
‘জানি। আর জানি বলেই তোর এই রিলেশনগুলো আমার কাছে ম্যাটার করে। হ্যাঁ, সিম্পলি ম্যাটার করে।’
‘প্রেমিক মানেই গার্জেন নাকি!’
‘ডেফিনিটলি গার্জেন নয়। কিন্তু নিজের ভালোবাসার জনকে আগলে রাখাটা দায়িত্বের মধ্যে পরে।’
‘তুই আগলে না রাখলে আমি গলে যাবো! ইটস সো ফানি! কলকাতা শহরটা কবে কাবুল হলো, আর কবেই বা তুই তালিবান হয়ে উঠলি বুঝলাম না!’
‘ইন্সাল্ট করছিস?’
‘না। একদম না। আমি তোর Attitude টা ডেসক্রাইব করছি।’
‘তোর ওই পুষ্পল, মাথায় ঝুটি কানে দুল হাতে ব্রেসলেট, জাস্ট লাইক এ স্ট্রিট-লাফাঙ্গা। আর তোর ওই অরিন্দমদা, হাতির মতো ক্ষুদে চোখ, মেয়েদের মুখের দিকে তাকিয়ে কথা বলে না, অলওয়েজ তাকিয়ে থাকে বুকের দিকে। আমি কিছুই জানি না ভেবেছিস! এদের সঙ্গে তোর এতো কিসের rappot!’
‘জাস্ট শাট আপ। কারও সম্পর্কে ভালো করে কিছু না জেনে কথা বলবি না। তুই জানিস…’
জিনাতের কথা শেষ হওয়ার আগেই ওপারে ফোনটা কেটে দেয় শায়ন। স্তব্ধ মোবাইলটা বিছানায় ছুঁড়ে দেয় জিনাত। ভয়ঙ্কর একটা শূন্যতা মাথার ভিতর রাগী সাপের মতো ছোবল দিচ্ছে।
ছবির বারোটা বেজে গেল। ভেবেছিলো আজ ক্যানভাসটা কমপ্লিট হয়ে গেলে গ্যালারিতে পাঠিয়ে দেবে। মাঝে আর মাত্র তিনদিন। পাঁচজনের এগজিবিশন। বিদেশ থেকে কিছু কাস্টমার আসার কথা। ছবিটা পছন্দ হয়ে গেলে ভালো টাকা চলে আসত পার্সে। শায়নের যুক্তিহীন কথাগুলই সব ভণ্ডুল করে দিল।
দেড় বছর সবকিছু স্মুদ ছিল। কোথাও কোনো প্রবলেম ছিল না। কিন্তু লাস্ট সিক্স মান্থ শায়ন যেন দিনদিন অচেনা হয়ে উঠছে। অথচ প্রবলেম হলে প্রথমেই হওয়ার কথা ছিল, যখন শায়ন জিনাতকে প্রপোজ করেছিল। কারণ একটা হিন্দু ছেলে আর একটি মুসলিম মেয়ের প্রেম হজম হওয়ার মতো পাকস্থলী এখনো এই সমাজের নেই। যে ক-টি হয়েছে, তাদের দিকে ছুতোয়নাতায় এখনো আঙ্গুল ওঠে।
শায়ন জানিয়েছিল তাদের ফ্যামিলি পিউরিটান নয়। তবুও সাবিনার মনে সংশয় ছিল। কিন্তু সেই সংশয়কে ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে জিনাত বলেছিল, ‘আম্মি, মুঘল-মেন্টালিটি নিয়ে এই সময়ের রিলেশনগুলোকে জাজ করো না, প্লিজ।…’ সাবিনা কোনোদিন মেয়েকে নামাজ শেখাতে পারেনি। অথচ কোরান গীতা রামায়ণ মহাভারত বাইবেল সব পড়েছে। নিজের ইচ্ছেতেই পড়েছে। এবং কথা প্রসঙ্গে জিনাত বলেছে, ‘আম্মা, মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু কে জান?’
‘কে?’
‘আত্মবিশ্বাসের অভাব। সঙ্গে অভাব সেল্ফ রেস্পেক্টের। যার ফলে মানুষের ভিতরে ভয়ের জন্ম হয়েছে।’
‘মানে?’
‘সেই প্রাচীনকাল থেকেই এই ভয় দূর করার জন্য মানুষ অবলম্বন খুঁজছে। বজ্রপাতে ভয়, ঝড়ে ভয়, অসুখ হয়ে মৃত্যু হলে ভয়। নিজের শ্রম নিজের মেধা নিজের বুদ্ধি-বিবেচনা দিয়ে যেসব সমস্যার মোকাবিলা করতে পারেনি, সেখানেই জন্ম মনগড়া অলৌকিক এক অদৃশ্য শক্তির। সেই শক্তিই জন্ম দিয়েছে ঈশ্বর আল্লা গডের।’
‘নিজের সম্পর্ককে জাস্টিফাই করার জন্য এমন বলছিস না তো?’
‘নিজের মেয়েকে এই চেনো তুমি!’
অভিমানে ঠোঁট ফোলায় জিনাত। তারপর বলে, ‘আম্মি, পূর্বজন্ম পরজন্মে বিশ্বাস করি না আমি। জন্ম থেকে মৃত্যু – এই পিরিয়ডে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকাই আমার ধর্ম। আমার সততা আমার আল্লা, আমার শ্রম আমার ইশ্বর, আমার স্বপ্ন আমার গড।
শায়নকে আমি ভালোবাসি, এ আমার হৃদয়ের সত্য। সঙ্গে এটাও সত্য যে ধর্মহীন জনজাতি আমার স্বপ্ন। তাই শায়ন আমার প্রয়োজনও।’
অনেকদিন পর কথাগুলো মনে পড়লো জিনাতের। শায়নের সঙ্গে সম্পর্কটা তার হৃদমহলের আতরদান। আর সেটাকে নিয়েই সংশয়! হঠাৎ কান্না পেলো। কিন্তু মুহূর্তেই নিজেকে সামলে নিল সে। জিনাত শিশিরের মতো মায়াময়, নরম। আবার স্ফুলিঙ্গের মতো তীব্রও, নিমেষে ছাই করার ক্ষমতাও ধরে।
দুই
জিনাত সটান বিছানায় বডি ফেলে দিল। খিদে আছে কিন্তু খাওয়ায় ইচ্ছেটাই নেই। দেখলো মোবাইল স্ক্রিনে আলাদিনের চ্যাটহেড, সঙ্গে সতেরোটা মেসেজ। ওপেন করতেই দেখল হাবিজাবি কতকিছু লিখেছে। মোদ্দা কথা আজ খুব লোনলি ফিল করছে।জিনাত মেসেঞ্জার এ টাইপ করল,’হোয়াই আলাদিন? হোয়াট হ্যাপেন্ড? এনিথিং রং ?’
সঙ্গে সঙ্গে মেসেন্জারে আলাদিনের চ্যাট-বক্সের লাইন গ্রিন হয়ে উঠল।আলাদিন যেন জিনাতের রিপ্লাই এর জন্যেই অপেক্ষা করেছিল। সেকেন্ডে রিপ্লাই দিল,’নাথিং …জাস্ট এমনিই মনখারাপ।’
‘আরে মনখারাপের কারণ থাকে না?’
‘তুমি যে আর্টিস্ট! শিল্পী! তুমি জানো না মানুষের কারণ ছাড়াও মিছিমিছি মনখারাপ হতে পারে।’ জিনাতকে মৃদু খোঁচা দেওয়ার চেষ্টা করল আলাদিন। জিনাত লিখল,’আর্টিস্ট বলেই কথাটা মানতে পারলাম না। কমন পাবলিক হলে হে হে করে পাশ কাটিয়ে যেতাম। লিসেন, যারা সত্যিকারের চিত্রশিল্পী কবি ঔপন্যাসিক, তাদের কাজগুলো সেকেন্ড আইডেন্টিটি, ফার্স্ট, দে আর অল ফিলোসফার, থিংকার।
‘বাট, আমি তো বুঝতে পারছি না আমার মনখারাপের জন্যে কোনো কারণ আছে কিনা?’
‘সেটা আলাদা কথা। মেবি, ইউ ডোন্ট ফাইন্ড দ্য রিজন। আস্ক ইয়োরসেল্ফ, সার্চ ইওর হার্ট। একসময়ে ঠিক খুঁজে পাবে। ‘
আলাদিন বস্টন ইউনিভার্সিটিতে স্পোর্টস মেডিসিনে রিসার্চ করে। বেশ মজার ছেলে।বাড়ি এখানে গড়িয়ায়।কয়েকমাস আগে ফেসবুকে আলাপ। ছেলেটাকে বেশ ভালো লাগে জিনাতের। কি করে যেন জিনাতের ভালোলাগা মন্দলাগাগুলো নিমেষেই বুঝে ফেলে!
আলাদিন লিখল, ‘তোমাকে আজ খুব হার্ড লাগছে!’
আলাদিনের মেসেজে বিস্মিত হল জিনাত।টাইপ করল, ‘হোয়াট! হার্ড!’
‘হুম। কেন জানিনা মনে হচ্ছে, তোমার মন আজ খুব ডিস্টার্বড হয়ে আছে। আর তাই তোমার রিপ্লাইগুলো কাঠ কাঠ। নরম স্পর্শ নেই।’
‘মেসেঞ্জারে লেখা মেসেজ থেকে এইরকম বোঝা যায় বাখোয়াজ। ‘
‘বাখোয়াজ শব্দটাই তোমার চেনা মেজাজে ফিরিয়ে আনল। গুড। বাট আমি যা বলেছি তা কি সত্যি নয়?’
‘যদি বলি সত্যি নয়!’
‘আই গেট দা আনসার। ‘
‘আর ইউ সাইকোলজিস্ট?’
‘নো ম্যাম।’ মেসেজের সাথে একটা স্মাইলি পাঠাল আলাদিন। তারপর লিখল, ‘একচুয়ালি, আমাদের শুধু মেডিসিন সম্পর্কে জানলে চলে না। পেশেন্টের সাইকোলোজিটাও বুঝতে হয়। মাইন্ডটা রিড করতে হয়। জানো তো, লিফ-রিডিং বলে একটা ব্যাপার আছে! দূর থেকে মানুষের নড়াচড়া দেখলেই লিফরিডাররা বুঝে নিতে পারে সেখানে কি আলোচনা হচ্ছে। বিশ্বের নানা দেশের নেতারা যখন কোনো কনফারেন্সে অংশ নেয়, তখন সেখানে লিফরিডারদের ছেড়ে রাখা হয়, শত্রু দেশের কোন নেতা অন্য কোন দেশের নেতার সঙ্গে কি কথা বলছে তা জানার জন্য। পিওরলি স্পাইয়িং আর কী!’
‘ কিন্তু আমার মেসেজ দেখে কি করে বুঝলে যে আজ আমার মেজাজটা ঠিক নেই? এখানে তো আর লিফরিডারের ব্যাপারটা খাটছে না !’
‘তোমার টাইপিং স্পিড, তোমার অনেক্ষন ধরে টাইপ করার পর যতটা লেখা আসার কথা ততটা আসছে না। লেখার পর বারবার মেসেজ মুছে নতুন করে লিখে সেন্ড করছ। মন বিভ্রান্ত থাকলে এমন হয়। খুব সিম্পল।’
সত্যি আশ্চর্য ছেলে! ক – মাসেই আলাদিন বেশ ভালো বন্ধু হয়ে উঠেছে। জিনাত লিখল, ‘কী করছ? আজ কাজ নেই?’
‘ছিল। ফাঁকি দিচ্ছি। বললাম না মনখারাপ? হয়তো তোমার মন ভালো নেই বলে আমারও ভালো নেই। এখন চার্লস নদীর বুকে দুপুরের সূর্য আলো ছড়াচ্ছে। সামনেই ব্রিজ। খুব রোমান্টিক এম্বিয়েন্স।
‘হুম বুঝলাম। কিন্তু সারাদিন কি নদীপাড়েই কাটাবে?’
‘ না না, স্টুডেন্ট ভিলেজে ফিরব। তোমাকে বলেছিলাম না আমাদের ইউনিভার্সিটিটা একদম চার্লস নদীর পাড়েই?’
‘অনেকবার বলেছো। এনিওয়ে, আমি খুব টায়ার্ড। কাল ক্যানভাস শেষ করতেই হবে। গুড নাইট। ‘
‘সিওর। যদি অসুবিধা না থাকে তোমার মনখারাপের কারণ আমাকে বলতে পার। হতেও তো পারে আমার মেডিসিনে তোমার মন ভালো হয়ে গেল!’
‘থ্যাংক্স। সময় এলে নিশ্চয় বলব। বাই। ‘
ফেসবুক থেকে লগ-আউট করল জিনাত।আসল আলাদিনের সঙ্গে আজ আর কথা বলতে ভালো লাগছিলো না। আলাদিন ছেলেটা স্মার্ট, সেনসিটিভ। যেকোনো বিষয়ে কথা বলতে পারে বলে ওর সঙ্গে চ্যাট করতে খুব ভালো লাগে জিনাতের।কিন্তু মেয়েদের একটা সিক্সথ সেন্স আছে। জিনাত যেন ইদানীং বুঝতে পারছে আলাদিন তার শুধু বন্ধুত্ব নয়।, আরও অন্য কিছু চায়। যদিও স্পষ্ট তেমন কোনো ইঙ্গিত দেয়নি। তবুও এই মুহূর্তে জিনাতের হঠাৎ মনে হল আলাদিন তার প্রেমে পরে যায়নি তো!
তিন
জিনাত ক্যানভাসে তুলির ফিনিসিং -টাচটা দিয়েই বাথরুমে ঢুকল। আলাদিনের সঙ্গে চ্যাটের পর আর ঘুম আসেনি।তাই ভোরবেলা থেকেই ক্যানভাসে হাত দিয়ে ছিল। একদিক থেকে ভালোই হয়েছে। ছবিটা শেষ করা গেছে। নাহলে আজও শেষ হতো না।
শাওয়ারের নীচে দাঁড়িয়ে ভাবল, যেকোনো জিনিসের নেগেটিভ দিক যেমন আছে, খুঁজলে পসিটিভ দিকও দেখতে পাওয়া যায়। গতকাল শায়নের ঝগড়া রাতের ঘুম কেড়ে নিয়ে ভোরবেলা থেকে কাজ করিয়ে ছবিটা কমপ্লিট করিয়ে নিল। জলের নীচে দাঁড়িয়ে মনের গুমোট ভাবটা কেটে গেল। বেশ ফুরফুরে লাগছে।হঠাৎ চোখ পড়লো আয়নায়। জলভেজা শরীরটা কি সুন্দর লাগছে! নিজেকেই যেন চিনতে পারছে না। আলিয়া ভাটের মতো মনে হচ্ছে।ক্যানভাস এগজিবিশন গ্যালারির চক্করে নিজের দিকেই যেন তাকাতে ভুলে গিয়েছিল।
স্নান করে ঝটপট রেডি হয়ে ট্যাক্সি নিল। ড্রাইভারকে বলল, ‘একাডেমী অফ ফাইন আর্টস চলো।’ বিকেলে আর্টিস্ট ফোরামের বিক্ষোভ আছে। আসাম সরকার চল্লিশ লক্ষের বেশি মানুষের নাম নাগরিক -পঞ্জিকাতে তোলেনি। তারা নাকি অনুপ্রবেশকারী। প্রায় অর্ধেক শতাব্দী তারা এদেশে বাস করেছে। কেউ সেনাবাহিনীতে কাজ করেছে, কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়িয়েছে আজ হঠাৎ করে তারা নেই-রাজ্যের বাসিন্দা হয়ে গেল? তাদের পূর্বপুরুষের শরীরে লেগেছিল দেশভাগের যন্ত্রণা, শিকড় ছেঁড়ার কষ্ট। আজ নতুন করে তাদের আবার উচ্ছেদ করতে হবে? এ পৃথিবী মানুষের নয়? সরকারের মানবিক মুখ থাকবে না? সেদিন প্রশ্ন তুলে খুব উত্তেজিত হয়ে গেছিল অরিন্দমদা। আর্টিস্ট ফোরাম ডাক দিয়েছিলো বিক্ষোভের।
ট্যাক্সি থেকে নামতেই মিতুল জিজ্ঞেস করল, ‘দেরি করলি কেন? ফোনও রিসিভ করছিস না, বুঝতে পারছি না কখন আসবি, আদৌ আসবি কিনা।’
‘ফোন করেছিলি! কই!’
‘দ্যাখ।’
জিনাত দেখলো, সত্যিই অনেকগুলো মিসড্কল। তার মধ্যে শায়নের পাঁচটা। ভোর বেলা কাজে বসার সময় মোবাইল সাইলেন্ট মোড করে দিয়েছিলো, তারপর রিংটোন তা ঠিক করা হয় নি।
কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ঘটার কথাও নয়। এটা প্রতীকী বিক্ষোভ। বিক্ষোভের পর সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেল। ঋদ্ধিমা, সুজয়, মিতুলের সঙ্গে চা নিয়ে বসল জিনাত। হটাৎ দেখতে পেলো শায়ন হাত নেড়ে পুষ্পল এর সঙ্গে কথা বলছে। গতকালই পুষ্পল কে স্ট্রিট – লাফাঙ্গা বলে গাল পlড়লো, আর আজকে তারই সঙ্গে দিব্যি গল্প করছে! অবাক হলো জিনাত। শায়নের তো অফিস এ থাকার কথা। এখন এখানে কেন! আইটি সেক্টরে তো দশটা -পাঁচটার ডিউটি নয়। পুষ্পল এর সঙ্গে কথা বলতে বলতে এদিকেই আসছে। জিনাতের অভিমান হল। যেন দেখতেই পায় নি এমন মুখ করে চা খেতে থাকলো। কিছুটা কাছে এসেই পুষ্পল বাজখাঁই গলায় হাঁক দিল, ‘জিনাত, গুরু আ গয়া। তুই কেটে পড়।’ শায়ন কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। এই চেহারা দেখলে কে বলবে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির আইটি ইঞ্জিনীয়ার। মুখটা এখন ভ্যাবলার মতো। পুষ্পল মনেহয় কিছু একটা আন্দাজ করলো। বলল, ‘কী ব্যাপার রে? ফোল্ডারে ভাইরাস ঢুকে গেছে মনেহচ্ছে, ডেটা ওপেন হচ্ছে না!’
হেসে উঠলো ঋদ্ধিমা, ‘পুষ্পল, তুই একটা জিনিস!’
শায়ন তড়িঘড়ি বলল, ‘ওর শরীরটা ঠিক নেই। ডাক্তারের এপো আছে।’ তারপর জিনাত কে লক্ষ্য করে বললো, ‘চল, শিগগির। ডাক্তার বেরিয়ে গেলে প্রব্লেম হয়ে যাবে।’
সবার সামনে একটা অপ্রস্তুতের হাসি হেসে উঠে দাঁড়ালো জিনাত। অক্লেশে নির্জলা মিথ্যে চালিয়ে দিয়ে একটা ট্যাক্সি দাঁড় করlলো শায়ন। ট্যাক্সিতে উঠে শায়ন বললো, ‘এক্সিক্স মল।’
এক্সিস মল এর বারে বসে শায়ন বলল, ‘কি খাবি?’
‘ধুর, আজ ভাল্লাগছে না। ‘ জিনাতের মুখে স্পষ্ট বিরক্তির ছাপ। শায়ন বললো, ‘সারা রাস্তা তো ক্ষমা চাইলাম, তারপরেও এমন করছিস কেন! বল, কি খাবি?’
জিনাত খানিক স্বাভাবিক হলো। বলল, ‘স্মারণভ নে।’
‘ওটা তো প্রায়ই খাই। আজ একটা হুইস্কি ট্রাই করি। ‘ শায়ন ওয়েটার কে ডেকে বলল, ‘শিভাসরিগ্যল দুটো করে। সঙ্গে আইস।’
জিনাত আগে কখনো হুইস্কি খায়নি। কিন্তু খুব স্মুদ বলে অসুবিধে হল না। চোখ লালচে হয়ে উঠেছে। চিলিচিকেন এর একটা টুকরো মুখের ভেতর চালান করে শায়ন বলল, ‘কী রে ঠিক আছিস তো?’
‘হুম…’
শায়ন ওয়েটার কে রিপিট করতে বলল। তারপর জিনাতের দিকে ডান হাতের দুটো আঙুল বাড়িয়ে বলল, ‘একটা ধর।’ জিনাতের গলায় বিস্ময়, ‘কেন?’
‘আহ্, ধর না।’
জিনাত শlয়নের বাড়িয়ে দেয়া দুটো আঙ্গুলের একটা ধরলো। সঙ্গে সঙ্গে খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে উঠলো শায়নের মুখ। তারপর বললো, ‘কবে করবো? ডেট ফিক্স কর।’
জিনাত যেন আকাশ থেকে পড়লো, কী করবি? কীসের ডেট?’
‘বিয়ের।’
‘তুই কি পাগল হয়ে গেলি?’
‘তুই তো এইমাত্র বললি!’
‘আমি! কই, কখন?’
‘ওই তো একটা আঙুলে ছিল বিয়ে পরে করা যাবে। অন্যটায় ছিল দেরি করা ঠিক হবে না।’
জিনাত হেসে উঠলো। বলল, ‘পাগল একটা!’
‘হাসছিস কেন! আয়াম সিরিয়াস।’
জিনাতের মুখটাও গম্ভীর হয়ে গেলো। বলল, আয়াম সিরিয়াস টু, শায়ন। বাট ইট উইল টেক টাইম…’
‘হোয়াই!’
‘সবে কাজ শুরু করেছি। পায়ের নীচের মাটিটা একটু শক্ত হোক। দেন …’
‘আমার টাকা কি তোর নয়?’
‘সে কথা নয়। টাকাপয়সাটাই সব কথা নয় জানি, কিন্তু এটা জরুরি।প্রত্যেক মানুষের আত্মসম্মানের জন্য ইকোনমিক স্টেবিলিটি টা ম্যাটার করে।’
‘ধর, তেমন কোনো স্টেবিলিটি তোর এলো না, তখন?’
শায়নের কোথায় হেসে উঠলো জিনাত। তারপর ইয়ার্কি করে বলল, ‘তাহলে আর কী! মাঝেমধ্যে এরকম দুজনে বেরোবো, মালফাল খেয়ে বাড়ি চলে যাব।
তাছাড়া তুই এমন ভাব্ছিসই বা কেন যে আমার ইকোনমিক স্টেবিলিটি আসবে না?’
জিনাতের ইয়ার্কিতে সাড়া দিলো না শায়ন। সে যথেষ্ট গম্ভীর। বলল, ‘হতেও তো পারে।’
‘আমার স্বপ্ন আছে, শায়ন। আমি শুধু ইকোনোমিক্যালি দাঁড়াবো না, কিছু ভালো কাজ করবো। ভালো ছবি আঁকব। পৃথিবীর মানুষ আমার ক্যানভাস কে ভালোবাসবে।’
‘সব স্বপ্ন কি সত্যি হয়?’
‘হয়তো হয় না। হয়না বলে দেখতে তো অসুবিধে নেই! স্বপ্ন ছাড়া বেঁচে থাকা আসলে মৃতের জীবন। যে মুহূর্তে মানুষের স্বপ্ন ফুরিয়ে যায় সেই মুহূর্তেই মানুষ মরে যায়। শরীর সচল থাকে, কিন্তু তা আসলে মৃতের নাড়াচাড়া।’
বেশ রাত হয়েছে। দুজনেই উঠে পরে। কারও মুখে কোনো কথা নেই। যেন দুজন নদীর দুপাড়ে। মাঝের সাঁকোটা আচমকাই ভেঙে গেছে! বার থেকে বেরিয়ে চলমান সিঁড়িতে পাশাপাশি দাঁড়ায়। সিঁড়ি নামতে থাকে নীচের দিকে।
চার
বাড়ি ফিরে ভালো করে স্নান করলো জিনাত। নেশার সামান্য রেশ আছে কিন্তু বেশ আরাম লাগছে। ভাবলো, সে কি শায়ন কে হার্ট করে ফেললো! কিছুই বলতো না শায়ন যদি তার কেরিয়ার কে অমন নেগেটিভ জায়গা থেকে না দেখত। কীসের প্রেমিক যদি তার স্বপ্ন তার কাজ তার দাঁড়াবার প্রচেষ্টা কে সাপোর্ট নাই করলো!
বিছানায় গা এলিয়ে দেয় জিনাত। দেখলো মেসেঞ্জারে কি একটা লিংক পাঠিয়েছে আলাদিন।ক্লিক করতেই ইউটিউবে এ গান বাজতে থাকে —মোহাব্বত বর্সা দেন তু, শাওন আয়া হ্যায়।
মিষ্টি রোমান্টিক গান। জিনাতের মন ভালো হয়ে গেল। একটু আগে মনে যে চিন্তাধারা গুলো নাড়াচাড়া করছিলো তা উধাও হয়ে গেলো। গান শেষ হবার পর মেসেঞ্জারে চোখ পড়তেই দেখলো আলাদিন মেসেজ করেছে, ‘কেমন লাগলো?’
‘নাইস, রিয়ালি নাইস। আমি আগে এই গান টা শুনিনি। লিরিক টিউন আর ভয়েস এর ব্রিলিয়ান্ট কম্বিনেশন।’
‘পার্পল কালারে তোমাকে দারুন লাগে।’
‘মানে!’
‘আজ তো ওই রঙের ড্রেস পরেছিলে।’
‘হ্যাঁ, কিন্তু তুমি জানলে কি করে?’
‘আরে বাবা, তোমার ওয়ালে তোমার কোন এক ফ্রেন্ড একটা ভিডিও আপলোড করেছে। সেখানে দেখলাম তুমি মাইক্রোফোন হাতে একটা গ্যাদারিং এ আসাম নিয়ে বলছো।
‘ও আচ্ছা, বুঝেছি। হ্যাঁ, আমাদের আর্টিস্ট ফোরামের বিক্ষোভ ছিল আসাম ইস্যু তে।’
‘খুব ফালতু ব্যাপার। খুব অমানবিক। এখানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও মেক্সিকান বর্ডার এ পাঁচিল তুলছে মাইগ্রেশন আটকানোর জন্য। খুব হৈচৈ হচ্ছে ওয়ার্ল্ড-ওয়াইড। এখানের বায়োডাইভার্সিটির ওপরেও এটা একটা থ্রেট। আমরা বিরোধিতা করছি।’
‘উচিতও তাই। পৃথিবী কি কিছু রাষ্ট্রনেতার বাবার জায়গীর নাকি যে যা খুশি তাই করতে পারে!’
‘ঠিক বলেছো। যেখানে সেখানে পাঁচিল, যাকে তাকে উচ্ছেদ, এটা সভ্যতা হতে পারে না।আমার ক্ষমতা থাকলে সব দেশের সব সীমান্তই উধাও করে দিতাম। পৃথিবীতে মানুষের তৈরী করা কোনো সীমান্তই থাকবে না।’
‘ইস! কি ভালোই না হতো তাহলে! আমি ফ্রান্স ইতালি রোমের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে ঘুরে ওদের স্কাল্পচার পেইন্টিং গুলো দেখতাম।’
একটা হাসি মুখের স্মাইলি পাঠায় আলাদিন। তারপর লেখে,’ তুমি শিল্পী জানতাম, বাট বিপ্লবী বলে জানতাম না। ইউ আর লুকিং সো বিউটিফুল সো হট!’
আলাদিনের কোথায় লজ্জা পেলো জিনাত। একটা স্মাইলি সেন্ড করলো। আলাদিন লিখলো, ‘কিছু মনে না করলে একটা কথা বলবো?’
‘মনে না করার মতো হলে নিশ্চই করবো না। বলো…’
‘আই লাভ ইউ। উইল ইউ ম্যারি মি?’
‘হোয়াট!’
জিনাত চমকে উঠলো আলাদিনের প্রস্তাবে।
‘একচুয়ালি, আমি মনে মনে ভালোবেসে ফেলেছি তোমাকে। আমি নেক্সট ইয়ার এ দেশে ফিরছি। তোমার পেইন্টিং আমি দেখেছি, ওয়ান্ডারফুল। য়ু আর এ গুড আর্টিস্ট। য়ু আর জাস্ট বিউটি উইথ ব্রেন। খুব খুব পছন্দ করি তোমাকে।’
‘থ্যাংকস ফর ইওর কমপ্লিমেন্ট, আলাদিন। বাট আয়াম এন্গেজড। হি ইজ শায়ন। সে আমাকে খুব ভালোবাসে, আমিও।’
‘ওহ! সরি। এক্সট্রিমলি সরি, জিনাত।’
‘সরির কিছু নেই আলাদিন। তুমি আমার খুব ভালো বন্ধু।’
‘সিওর জিনাত। তুমি হার্টফিল করনি তো।’
‘না না, একদমই না। অরে তুমি তো আমাকে ভালোবাসতে চেয়েছো, খুন করতে তো চাওনি। ‘
আর খানিক বকবক করার পর ফেসবুক থেকে লগ আউট করলো জিনাত। ঘুমে ভারী হয়ে এলো চোখ।
পাঁচ
বৃষ্টির পর রোদ বেশ মায়াময় হয়। জিনাতের দোতালা থেকে গঙ্গা দেখা যায়। গঙ্গার জলে বৃষ্টি ধোয়া রোদ যেন কফিরঙের বিকেল ছড়িয়ে দিয়েছে। জিনাত জানালার পাশ থেকে সরে এলো। কাল এগজিবিশন। ছবি চলেগেছে। মন খুব রিলাক্সড আজ বেরোনোও নেই। জিনাত নতুন একটা ক্যানভাস এ ড্রয়িং করতে বসলো। এমন সময় মোবাইল এ রিং হল। দেখলো, সেঁজুতি কলিং। ফোনটা হাত বাড়িয়ে তুলে নিল জিনাত।কল রিসিভ করে বলল, ‘কী রে, বল।’
‘কী করছিলি?’
‘নাথিং স্পেশাল। একটা ড্রয়িং শুরু করেছিলাম।’
‘দাদা অসুস্থ, জানিস!’
‘মানে! কী হয়েছে শায়নের?’ জিনাতের গলায় গভীর উদ্বেগ।
‘আরে না না, ঘাবড়ানোর কিছু নেই। অফিস এ হঠাৎ ব্ল্যাক-আউট হয়ে পরে গিয়েছিলো। কলিগ রা চেকআপের পর বাড়ি দিয়ে গেছে। এখন শুয়ে আছে। তুই একটু আসবি?’
‘আমি এক্ষুনি যাচ্ছি।’
জিনাত দশ মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে ট্যাক্সি নিলো। রাস্তায় দেখলো আলাদিন মেসেঞ্জারে আরো কি একটা লিংক পাঠিয়েছে। এবং অনলাইনেও আছে। জিনাত রিপ্লাই এ লিখলো, ‘শায়ন অসুস্থ। ওকে দেখতে যাচ্ছি। পরে কথা হবে। ‘
সঙ্গে সঙ্গে আলাদিন মেসেজ করলো, ‘ওহ নো! যাও যাও, উনি কেমন থাকেন জানিও। চিন্তায় থাকলাম।’
জিনাত আর রিপ্লাই করে না। হটাৎ শায়নের জন্য খুব মন খারাপ হলো। সেঁজুতি ফোন করেছে মানে শায়নের নিশ্চই ফোনে কথা বলতেও অসুবিধে হচ্ছে, নাহলে শায়নই তো ফোন করতো। তাই মনে হলেও জিনাত শায়ন কে ফোন করলো না।
শায়নের বাড়িতে কাজের মাসি দরজা খুলে দিলো। একটু অবাক হলো জিনাত। কেউ নেই। কাজের মাসিকে জিগ্যেস করায় সে বললো, ‘দাদাবাবু নিজের রুমে।’
জিনাত তরতরিয়ে দোতালায় উঠে গেলো। শায়নের রুমের দরজায় নক করলো। ভিতর থেকে শায়ন বললো, ‘আয়, খোলা আছে।’
জিনাত দেখলো শায়ন বেডে বসে ল্যাপটপে কি যেন খুটখুট করছে। কত উৎকণ্ঠা নিয়ে ছুটে এসে দেখে শায়ন দিব্যি শায়নেই আছে, মুখে-চোখে অসুস্থতার চিহ্নমাত্র নেই। জিনাত বিস্ময়ে বললো, ‘সেজুঁতি বললো তুই অসুস্থ! কোই তেমন তো কিছু…’
‘ছিলাম। এখন ঠিক আছি। তুই কি ভেবেছিলি আমি বিছানায় শুয়ে কোঁকাচ্ছি?’
শায়নের কথা বলার ভঙ্গিতে জিনাত ভিতরে ভিতরে খানিক শক্ত হয়ে উঠলো। বললো, ‘তা কেন! সে অবস্থা হলে তো এখানে নয়, হাসপাতালে শুয়ে থাকতিস।’
জিনাতের কোথায় হোহো করে হেসে উঠলো শাওন। বললো, ‘তুই কি দাঁড়িয়েই থাকবি নাকি! বোস।’ বলেই জিনাতের হাতে টান দিলো শায়ন। শায়নের পশে বসে পড়লো জিনাত।
জিনাত বললো, ‘সেঁজুতি কই?’
শায়ন বললো, ‘ও মাকে নিয়ে নাগের বাজার গেছে। দিদির বাড়ি। কেন রে, বাচ্ছা মেয়ে, আমাকে কি তোর ভয় করছে, লোকজনের খোঁজ নিচ্ছিস?’
জিনাত মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে বললো, ‘ভয় করবে কেন! তুই কি বাঘ-ভাল্লুক নাকি যে তোকে ভয় করবো?’
হটাৎ এক ঝটকায় জিনাত কে নিজের বুকের ওপর টেনে নিয়ে শায়ন বললো, ‘বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে এনিম্যালও সেফ প্রেমিকের চেয়ে।’
জিনাতের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট দুটো গেঁথে দেয় শায়ন। দীর্ঘ চুমু দিয়ে বলে, ‘তুই একটা ঢেঁড়স। চুমুটাও ঠিকঠাক জানিস না। চুমুর সময় মানুষ নাক বলে কিছু আছে ভুলে যায়, জানিস?’
উত্তর দেবার সুযোগ না দিয়েই নিজের শরীরের সঙ্গে গভীর ভাবে জিনাতকে মিশিয়ে নিতে থাকে শায়ন। একটা সময়ের পর বাধা দেয় জিনাত, ‘ওসব পরে হবে, শায়ন। দিন আসুক। আমি তো আছিই।’
‘আজ নয় কেন?’
জিনাত বললো, ‘না’
‘কেন? অশুদ্ধ হয়ে যাবি?’
‘তুই যা মিন করতে চাইছিস তা নয়। শুদ্ধ -অশুদ্ধর প্রশ্ন নয়। আর বিয়ের আগে সেক্স অশুদ্ধ হলে শুধু মেয়েরা কেন, ছেলেরাও অশুদ্ধ হয়। শরীরী ছুঁৎমার্গেই আমি বিশ্বাস করি না। আজ মানসিক ভাবে তৈরী নই, আর কিছু না।
শায়নের বহু শিথিল হয়। বিছানা থেকে উঠে বাথরুমে চলে যায়।
বেশ কিছুক্ষন একl থাকার পর বিছানায় শুয়ে শুয়েই জিনাতের মনেহয় আলাদিন কে শায়নের খবরটা জানিয়ে দি। জিনাত মোবাইলে মেসেজ করে, ‘ডোন্টওয়ারি, হি ইজ ফাইন।’
মেসেজ সেন্ড করার সঙ্গে সঙ্গেই বিছানায় পরে থাকা শায়নের দুটো স্মার্টফোনের একটাতে মেসেজ-রিসিভ-টোন বেজে ওঠে। সেদিকে চোখ পড়তেই দেখে স্ক্রিনের ওপর তারই চ্যাটহেড। চমকে ওঠে জিনাত। সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষা করার জন্য আলাদিনকে একটা স্মাইলি সেন্ড করে। যা ভেবেছে ঠিক তাই। শায়নের মোবাইল টা নিয়ে চ্যাটহেডে চ্যাট করতেই চোখ কপালে উঠে গেলো জিনাতের। পাসওয়ার্ড ছিলোনা বলে সমস্ত চ্যাট ই ওপেন হয়ে গেলো। আলাদিন আর কেউ নয়, শায়নই।
মুহূর্তে পায়ের নিচের পৃথিবীটা দুলে উঠল জিনাতের। শায়ন স্পাইয়িং করছিলো! প্রোভোক করছিলো সে অন্য কারো প্রেমে পরে কিনা! পরীক্ষা করছিলো তাকে! এতখানি অবিশ্বাস, এতো সংশয় মনে!
জিনাত দ্রুত শায়নের বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে এলো। ভাবলো হলদিরাম মোড়ে ট্যাক্সি একটা নিশ্চই মিলবে।
ট্যাক্সি পেয়েই উঠে পড়লো। দেখলো শায়ন রিং করছে। মাথা যেন কাজ করছেনা জিনাতের। মনেহচ্ছে এমন ছেলেকে ফায়ারিং স্কোয়াডের সামনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া উচিত বিশ্বাস-হত্যার জন্য। খুনি একটা।
তিনবারের বেলায় শায়নের কল রিসিভ করলো জিনাত। কাটা কাটা স্বরে বলল, ‘শায়ন ওরফে আলাদিন, ডোন্ট কল মি এগেইন। তোমার সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক শেষ।’
শায়নকে জবাব দেয়ার পর জিনাত ট্যাক্সির সিটে শরীর এলিয়ে দিলো। ভারহীন মনেহচ্ছে নিজেকে। জিনাত ফিল করে, কিছু কিছু সম্পর্ক থেকে নিজেকে ছিন্ন না করলে মানুষের অস্তিত্ব শেষ হয়ে যায়। মানুষ আর স্বাধীন থাকে না। কিছু আগে চুম্বনের দাগ গুলো ঠোঁট থেকে রুমাল দিয়ে ঘষে ঘষে নিশ্চহ্ন করে দিতে চায় সে। বাইরে সন্ধে নামছে কলকাতার চলমান রাস্তায়, ভিড়ে। আর সেই সন্ধে সেই ভিড়ের ভেতর চলন্ত গাড়িতে জিনাত একা। শিকড়হীন, স্তব্ধ, নির্ভার।
-সমাপ্ত-
চমৎকার
আন্তরিক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানবেন।
খুব সুন্দর গল্প। আর আমার ভাবনার সঙ্গে জিনাতের চিন্তাধারার অসম্ভব মিল। তাই আরো ভালো লাগলো।
ভালো লাগলো।