ভাস্বর চ্যাটার্জী
গাড়ির ডেলিভারি কবে?
দু’চামচ ফ্রায়েড রাইস পাতে তুলে সেঁজুতি অর্পণের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়।
পরশু বলছে।
বলছে মানে? এই নিয়ে কতগুলো ডেট দিল বলতো!
জানি কিন্তু মোটোর ভেহিকেলস থেকে নম্বর প্লেট না পেলে…
ছোট্ট রাই বাবার কথার মাঝে বলে, এবার আগেরবারের মত কেক কাটবে, পাপা?
ইয়েস, কাটবে বেটা, সেঁজুতি মেয়ের পাতের দিকে তাকায়। একি! বললে যে চিকেন ডামপ্লিংস তোমার ফেভারিট, খাচ্ছ না কেন?
মেইনল্যাণ্ড চায়নাতে খেতে খেতে বোর হয়ে গেছি, মাম্মি। নিউ কার এলে এখানে আর খাব না।
ল্যাম্বের একটা ছোট টুকরো মুখে পুরে অর্পণ হেসে ফেলে। বুদ্ধি দেখেছ! নেক্সট বাইরে খাওয়ার বন্দোবস্ত এখনই করে ফেলল।
খাওয়া সেরে তিনজনে হাঁটতে হাঁটতে সাউথ সিটি রেসিডেন্সের গেট দিয়ে ঢুকে টাওয়ার থ্রির ২৫ তলায় উঠে আসে। হ্যাঁ উঠে এসেছে অর্পণ। কসবা হালতুর খালপাড়ের সরু গলি থেকে আজ এখানে। উদ্বাস্তু ঠাকুরদা চার সন্তান নিয়ে বাংলাদেশ থেকে চলে আসেন কলকাতায়। ঘরছাড়া আত্মীয় বন্ধুদের কথায় খালের পাশে ঝুপড়িতে সংসার পাতেন। কোনোমতে চাকরী জুটিয়ে ছেলে মেয়েদের মুখে ভাত তুলতে তুলতে কেটে যায় অনেকগুলো বছর। ঝুপড়ি থেকে পাশের পাড়ার মল্লিকদের বাড়ির একতলায় ভাড়াটে হয়ে উঠে আসে তারা। কিন্তু অচিরেই বেহাল শরীরের জন্য কাজ থেকে ছুটি নেওয়ায় হাল ধরে বড় ছেলে অমরেন্দ্র। চাকরী আর টিউশন করে ভাই বোনেদের বিয়ে দিয়ে সব শেষে নিজে সংসার পাতে। অর্পণ, অরিজিত হয়। হাক্লান্ত হয়ে অমরেন্দ্র যখন স্যাঁতস্যাঁতে ঘরটায় রাতে ফিরত তখন অর্পণ দেখত তার মা উমা ভাতের থালা নিয়ে পরম যত্নে খাওয়াতে খাওয়াতে বলছে, চিরদিন এমন যেতে পারে না, একদিন সূর্য উঠবেই, দেখ।
ঠাকুরদা মারা যাওয়ার পর অর্পণের কানে আসত ঠাকুমার বিলাপ — উনি আর নিজের ভিটে দেখে যেতে পারলেন না রে, অপু।
চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে সে বলত, চিন্তা কোরো না ঠাম্মা, আমাদের ঠিকানা একদিন হবেই।
হল। তবে ততদিনে তিনিও পৃথিবী ত্যাগ করেছেন। ঢাকুরিয়া রেল লাইন পেরিয়ে প্রথম যখন অর্পণ দু’কামরার ফ্ল্যাট কেনে তখন ঘরের দেওয়ালে হাত বুলিয়ে অমরেন্দ্র বলেছিল, ওপর থেকে আজ বাবা মা তোকে অনেক আশীর্বাদ করছেন, বাবা!
তারপর উন্নতির সিঁড়ি দিয়ে তরতর করে ওপরে ওঠা, সেঁজুতির সঙ্গে বিয়ে আর সাউথ সিটিতে চলে আসা। অমরেন্দ্র উমা কখনো তার সঙ্গে তো কখনো ছোট ছেলে অরিজিতের কাছে চেন্নাইতে থাকে। থ্রি বেডরুম ফ্ল্যাট ছোট পড়ছে দেখে সেঁজুতি অনেকদিন বলছে, এবার পেন্টহাউজ নাও। রাইয়ের একটা আলাদা রুম না হলে…
মা বাবা তো এখানে থাকেই না প্রায়।
থাকলে তখন রাই তো আমাদের সঙ্গে শোয়। তাছাড়া টিচার আসে, একটা আলাদা রুম না হলে চলে?
পেন্টহাউজ এসব চত্বরে পারব না। যাবে মহেশতলা? সস্তায় পাব। অর্পণ মজা করে।
এই জায়গা ছেড়ে মহেশতলা! তুমি যাও।
টাকার যোগান কন্সট্যান্ট থাকলে চাহিদা বাড়তেই থাকে। প্রথমে অল্টো থেকে ডাস্টার হয়ে এখন এম জি হেক্টরের দিকে পা বাড়িয়েছে চক্রবর্তী পরিবার।
মেয়েকে চেঞ্জ করিয়ে শুইয়ে সেঁজুতি বেডরুমে আসে। এবার গাড়ি ডেলিভারি সেরিমনিটা আমি ভিডিও করে রিল বানাবো।
শিখে নিয়েছ না সব?
সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হয়, অর্পণ। আমি শিখছি, কারণ মেয়েটাকেও তো মানুষ করতে হবে।
রিল বানিয়ে?
উফ! সবেতে ইয়ারকি। শোনো, গাড়িটা পেলে এবার আমি কিটি পার্টি করব আমার ফ্ল্যাটে।
এতদিন করনি?
না। নতুন গাড়ির জন্য ওয়েট করছিলাম। লাস্ট টাইম মিসেস অরোরা নিজের গাড়ি দেখিয়েছিল, এবার আমি দেখাব।
সকালবেলা জিম সেরে নটার মধ্যে অর্পণ বেরিয়ে যায়। পাঁচবছর হয়ে গেল আর নিজে ড্রাইভ করে না, কারণ গাড়ি চালাতে চালাতে বেশ কিছু কাজের ফোন তাকে নিতে হয়। তাই কয়েক বছর হল পল্টু এসেছে গাড়িচালক হয়ে। ভাল হাত, সৎ ছেলে। অর্পণ গাড়িতে ওয়ালেট ইত্যাদি রেখে নিশ্চিন্তে যেতে পারে। হালকা করে এফ.এম বাজিয়ে পল্টু চালাতে থাকে আর পেছনের সিটে চোখে চশমা এঁটে অর্পণ খবরের কাগজ পড়তে পড়তে যায়।
নতুন গাড়ি কাল পাবেন, দাদা?
মনে তো হয়।
তাহলে কি কালকেই এই গাড়িটা নিয়ে নেবে?
সেইরকমই তো কথা। অর্পণ পাতা ওল্টায়।
সাউথ সিটি থেকে জ্যাম ঠেলে যাদবপুর থানার মোড়ের সিগন্যালে না আটকে একদিনও পেরনো যায় না। অর্পণ চোখ তুলে দেখে, ঝিরঝিরে বৃষ্টি পড়ছে। আবার কাগজে মন দিতে যাবে হঠাৎ জানলার কাচে মোটা আঙুলের খটখট শব্দে চমকে তাকায়।
দিন না কিছু।
ঠোঁটে লিপস্টিক, সিল্কের শাড়ি গায়ে, মাথায় বাহারি ছাতা ধরে এক হিজড়ে হাত বাড়িয়ে টাকা চাইছে।
পল্টু, দে তো।
দাদার মানিব্যাগ থেকে দশ টাকার একটা নোট বার করে দিতে যাবে আবার সে জানলায় আওয়াজ করে। বিরক্ত হয় পল্টু। জানলার কাচ নামিয়ে টাকাটা এগিয়ে দিয়ে বলে, দু’ মিনিট অপেক্ষা করতে খুব কষ্ট? এতবার জানলায় ধাক্কা মারছ কেন?
টাকাটা হাতে নিয়ে অর্পণকে দেখে এক সেকেণ্ড থমকে কিছু না বলে সে অন্যদিকে পা বাড়ায়।
ততক্ষণে সিগন্যাল সবুজ হয়ে যাওয়ায় পল্টু গাড়ি ছেড়ে দেয়। এরা এরকমই, দাদা। মহা পাজি সবকটা।
জবাব না দিয়ে অর্পণ কাগজে মন দিতে যাবে, ফোন বেজে ওঠে।
স্যার, কাল ডেলিভারি পাক্কা হচ্ছে। কটায় আসবেন?
ফাইনাল তো?
একদম স্যার।
দাঁড়ান, আমি একবার আমার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানাচ্ছি।
ফোন কেটে সেঁজুতিকে জিজ্ঞেস করে, কাল কটায় যাবে?
দুপুর তিনটে থেকে বিকেল পাঁচটার মধ্যে, তারপর নতুন জিনিস কেনার জন্য সময়টা ঠিক নয়।
এটা কে বলল? কেন জয় মদান! ওর ভিডিও না দেখে আমি কিছু করি না তুমি জানো তো।
শনিবার ছুটির দিন অর্পণের, রাইয়েরও। বাবা মা চেন্নাইতে তাই তারা তিনজনে রওনা হয় সাদার্ন এভিনিউয়ের শোরুম থেকে গাড়ি নিতে। পল্টুর থেকে পুরনো গাড়ির চাবি ইত্যাদি হ্যান্ডওভার নিয়ে নেয় সেলসম্যান।
চা কফি, কী দেব, স্যার?
আমি থামস আপ খাব, রাই বলে।
সেঁজুতি হাসে। আমরা কিছু নেব না।
রাইকে থামস আপ দিয়ে বসিয়ে দুজনে যায় গাড়ির ফিচার্স বুঝতে। ডিটেলস এ সব জেনে, পল্টুকে বুঝিয়ে এবার শুরু হয় সেরিমনি। গাড়ির গা থেকে সিল্কের চাদর সরিয়ে হাততালি দিয়ে ওঠে শোরুমের প্রতিটা লোক। একজন একটা টেবিলে মাঝারি মাপের কেক নিয়ে এসে অর্পণের হাতে ছুরি ধরিয়ে দেয়, সেঁজুতি তখন ভিডিও করতে ব্যস্ত। বাবা মেয়ে মিলে কেক কেটে হইহই করে গাড়ির চাবি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। দু’ পা এগিয়ে লেক কালীবাড়িতে পুজো দেওয়া হয়।
নতুন গাড়ি চালাবে না? সেঁজুতি জিজ্ঞেস করে।
ভাবছিলাম। পল্টু, সাইড কর তো। একটু ভাবে অর্পণ। এক কাজ কর, তুই চলে যা। এখান থেকে বাস পাবি তো?
হ্যাঁ দাদা।
গোল পার্ক থেকে গাড়ি নিয়ে অর্পণ বালিগঞ্জ গার্ডেনস ধরে বিজন সেতু পেরিয়ে কসবায় আসে।
একবার পুরনো পাড়ায় যাবে নাকি! সেঁজুতি চোখ নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে।
কেন?
এমনি।
এমনি ওখানে চক্কর মেরে কি হবে? তার থেকে চল…
কথা বলতে বলতে জোরে ব্রেক কষে অর্পণ। দুজন হিজড়ে বেপরোয়া ভাবে রাস্তা পেরোতে গিয়ে সামনে এসে পড়েছে। মেয়ে বউ ঠিক আছে দেখে বিরক্ত হয়ে জানলার কাচ নামিয়ে অর্পণ চেঁচায়, কি হচ্ছে কী? রাস্তা পেরোতে শেখোনি?
একজন এগিয়ে জানলার সামনে আসে, আপনিও তো হর্ন দেননি। দোষ কি শুধু আমাদের?
কথা বলেই সে একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা একজনকে বলে, দেখেছিস? নতুন গাড়ি! আরেব্বাস একেবারে রিবন লাগানো…কি স্যার, শোরুম থেকে নিয়ে বেরোলেন নাকি?
সেঁজুতি পাশ থেকে গলা তুলে বলে, তাতে তোমার কী?
দিচ্ছিলেন তো ধাক্কা, নিন এবার কিছু ছাড়ুন তো!
মানে?
টাকা ছাড়ুন। নাহলে আমরা আপনাদের ছাড়ব না।
ইয়ারকি হচ্ছে?
একদম না। নিন সাইড করুন গাড়ি। পাঁয়তারা কষলে এক ফোনে সবাইকে জড়ো করে ফেলব।
ততক্ষণে আরেকজন এগিয়ে এসেছে অর্পণের গাড়ির কাছে। ফুটপাথের ধারে গাড়ি সাইড করে নামতেই দেখে কিছু লোক তাদের দিকে উৎসুক হয়ে এগিয়ে আসছে। ঝুটঝামেলা অপছন্দ অর্পণের, তাই কথা না বাড়িয়ে ওয়ালেট বার করে।
বল কত দিতে হবে?
কিচ্ছু লাগবে না, আপনারা যান। দ্বিতীয় জন বলে।
সঙ্গীর কথা শুনে অপরজন অবাক। কি বকছিস, ছাড়ব কেন রে, মালটাকে?
যা বলছি শোন। হাত ধরে টেনে নিয়ে চলে যেতে যেতে একবার ঘুরে দেখে অর্পণকে। ততক্ষণে সেঁজুতি গাড়ি থেকে নেমে এসেছে।
টাকা নিল না?
না।
বাবা! এদের এত হিউম্যানিটি হল কবে থেকে?
ওদের দিকে দেখতে দেখতে খেয়াল করে অর্পণ। চেনা লাগছে ওই ওকে… যাদবপুর থানার ক্রসিংয়েই বোধহয় টাকা নেয়। পল্টু থাকলে বলতে পারত।
তুমি আবার মুখ চিনে রেখে দিয়েছ। গলায় ঝাঁজ সেঁজুতির। মাথাটা দুম করে গরম হয়ে গেল। চলতো, অ্যাক্রোপলিস মলে কিছু খেয়ে বাড়ি ফিরি।
যদিও সবকটা সকাল এক, তবে সোমবার সকালটা সবার থেকে আলাদা। মনে হয় গরগরে চোখে বেত হাতে কড়া মাস্টারমশাই তাকিয়ে আছে। রবিবার ছুটি পেয়েও পল্টু পরদিন আসেনি। সকালে ফোন করে বলল জ্বর হয়েছে। সাড়ে আটটার মধ্যে জিম, স্নান সেরে নীচে এসে গাড়ির ওপর পড়ে থাকা গাছের পাতা ইত্যাদি ঝেড়ে পরিষ্কার করে, লাল কাপড়টা দিয়ে উইন্ডসক্রীন মুছে অর্পণ বেরোয়। আজ পরপর দুটো মিটিং। ড্রাইভ করতে করতে কানে ব্লু টুথ গুঁজে কথা বলতে শুরু করে সেই ব্যাপারে। যাদবপুর থানার সিগনালে না আটাকালেও ক্রসিং পেরিয়ে ফ্লাইওভারে ওঠার মুখটায় বিস্তর জ্যাম। কথা বলতে বলতে অর্পণ খেয়াল করে ডানদিকের রোয়ের গাড়ি থেকে সেই হিজড়েটি টাকা তুলছে। কি মনে হয় ফোন কেটে জানলার কাচ নামিয়ে গলা তুলে ডাকে।
একবার শুনবে?
গলা পেয়ে সে গাড়ির কাছে আসে। বলুন স্যার।
সেদিনের জন্য মেনি থ্যানক্স। এই নাও…
ড্যাশবোরডে রাখা ওয়ালেট থেকে দুশো টাকা বার করে এগিয়ে দেয়।
মুচকি হেসে টাকা হাতে নিয়ে অর্পণের মাথায় ঠেকিয়ে আবার তাকেই ফেরত দিয়ে দেয়। চোখ থাকতেও নেই।
ততক্ষণে জট কেটে গাড়ি ছেড়ে দিয়েছে। পেছন থেকে হর্নের কানফাটা আওয়াজে বাধ্য হয় অর্পণ গাড়ি স্টার্ট করে বেরিয়ে যেতে কিন্তু কথাটা কানে বাজে। এদিকে অফিসের আরও এক কর্মীর ফোন এসে গেছে। না ধরলেই নয়। সারাদিন কাজের চাপে মাথা তুলতে পারে না। মিটিং প্রেজেন্টেশান চলে কিন্তু তার মধ্যেও মাথায় ঘুরপাক খায় একটাই কথা; চোখ থাকতেও নেই!
বিকেলের দিকে সব মিটিয়ে একটা কফি নিয়ে চেম্বারের জানলার সামনে এসে হালকা করে সিপ করে অর্পণ। চোখ থাকতেও নেই বলল কেন? আমি কি কিছু দেখতে পেলাম না? দুদিন হল টাকা দিতে গেলাম, নিল না। এমন তো খুব একটা এদের মধ্যে দেখা যায় না!
চিকেন স্টু করেছি আজ। সঙ্গে কি গারলিক ব্রেড খাবে?
সেঁজুতি হাউজ কোট চাপিয়ে খোলা চুলে হাতখোঁপা করতে করতে ঘরে আসে। অর্পণ অন্যমনস্ক হয়ে জানলার বাইরে তাকিয়ে।
কিগো বল?
চোখ থাকতে নেই মানে জানো?
কি!
কানের দুল খুলে ড্রেসিং টেবিলে রাখে সেঁজুতি।
জানো তো?
কে বলল? অফিসে কোনো প্রবলেম নাকি?
না অফিসে নয়।
না জানার কি আছে? চোখ থাকতে নেই মানে যে সামনে থাকা জিনিস দেখতে পায় না…আচ্ছ শোনো, মা ফোন করেছিলেন। সামনের মাসের টিকিট কাটছেন কলকাতার। এবার পেন্টহাউজের জন্য উঠে পড়ে লাগো। দু তিন মাস তো থাকবেন এখানে, রাই কি করবে তখন?
অর্পণ জানলার ধার থেকে সরে সেঁজুতির সামনে আসে। সামনে কি ছিল যা আমি দেখতে পেলাম না?
দুর বাবা! কি হয়েছে বলতো তোমার? খেতে এস, সাড়ে নটা বাজে, সেঁজুতি ঘর থেকে বেরোতে গিয়ে দাঁড়ায়। ও হ্যাঁ, পল্টুর বউ ফোন করেছিল,বলছে টেম্পারেচার কমছে না কিছুতেই, ব্লাড টেস্ট করাবে। তাই কালকেও আসবে না।
কমপ্লেক্সের এক ওয়াশারকে দিয়ে গাড়ি ধুইয়ে অর্পণ অফিস রওনা দেয়। যাদবপুর থানার কাছে জানলার কাচ নামিয়ে হিজড়েটিকে খোঁজে, পায় না। সিগনাল গ্রীন হলে গাড়ি নিয়ে এগোতেই দেখে রাস্তার ডানদিকে ঝুপড়ি স্টলে বসে সে চা বিস্কুট খাচ্ছে। ফ্লাইওভারে ওঠার ঠিক মুখে গাড়ি বাঁদিকের রাস্তায় রেখে অর্পণ এক ছুটে তার কাছে আসে।
শোনো…
চায়ের গ্লাসে শেষ চুমুক দিয়ে ঘুরে তাকিয়ে অর্পণকে দেখে উঠে আসে।
বলুন?
কাল কি বললে আমি বুঝিনি…প্লিজ একবার বুঝিয়ে বলবে।
হিজড়েটি কিছু বলার আগেই তার বাকি সঙ্গীরা পাশে আসে। আমি ওপারে যাচ্ছি, তুই কি আজ এদিকটায় থাকবি?
হ্যাঁ।
তাহলে দাঁড়িয়ে না থেকে কাজে লাগ, যখন তখন তো বৃষ্টি আসছে, দেখছিস তো। এক পয়সা ইনকাম হবে না।
বাকিরা রাস্তা পেরিয়ে যাওয়ার আগেই জোরে বৃষ্টি নামে। অর্পণ মাথা বাঁচাতে চায়ের দোকানে আশ্রয় নিতে গেলে দেখে হিজড়েটি ছাতা খুলে এগিয়ে আসছে। আপনার গাড়ি কোথায় স্যার?
ওধারে।
আসুন, আমি পৌঁছে দিচ্ছি।
ট্র্যাফিক পেরিয়ে এক ছাতায় কোনোমতে দুজনে গাড়ির কাছে আসে।
তুমি বললে না তো কাল কেন ও কথা বললে?
কি বলেছি?
চোখ থাকতেও নেই।
হাসে হিজড়েটি। নেই-ই তো তোর।
হতবাক অর্পণ। একি! একটা হিজড়ে তাকে তুই তোকারি করছে! গায়ের জল ঝেড়ে সামান্য বিরক্ত হয়ে তাকিয়ে দেখে, সে হাসছে।
এত কাছ থেকে দেখেও চিনতে পারলি না?
স্বাভাবিক কন্ঠস্বর শুনে এবার চমকে ওঠে অর্পণ। তুই…তুই…তুই পলাশ না!
কেমিস্ট্রি অনার্স ফার্স্ট ইয়ার?
পিঠে ব্যাগটা ফেলে পলাশ এগিয়ে আসে করিডোরের কোণে দাঁড়িয়ে থাকা দুজনের দিকে।
হ্যাঁ। তোমার?
আমারও। আসলে রুমের দরজায় সেকশন লেখা নেই তাই বুঝতে পারছিনা কোনটা বি সেকশন।
আমারও বি।
যাক, একজনকে পাওয়া গেল। আমি পলাশ দাস।
আমি অর্পণ চক্রবর্তী।
আশুতোষ কলেজের তিনতলার বারান্দা থেকে শুরু হয়েছিল পলাশ অর্পণের বন্ধুত্ব। প্রথম দিন থেকে শেষদিন সবসময় পাশাপাশি বসেছে, নোটস শেয়ার করেছে। কখনো ক্লাসের মাঝের গ্যাপে ইন্দিরা সিনেমা হলে টুক করে রোজা দেখে এসেছে। কলেজ সোশালে নাটক করেছে, অফ পিরিয়ডে টেবিল বাজিয়ে গান গেয়েছে। এস.এফ.আই-এর মিছিল করতে গিয়ে একদম পেছনের সারি থেকে কেটে ‘১৯৪২ আ লাভ স্টোরি’ দেখে এসেছে। আবার পরীক্ষার সময়ে একে অপরকে টক্কর দিয়ে নম্বরও পেয়েছে।
পলাশকে প্রফেসরেরা পছন্দ করলেও অনেকেই ওকে নিয়ে মজা করত। কাকদ্বীপে বাড়ি ছিল বলে তার নাম-ই হয়ে গেছিল ‘কাকদ্বীপ’। অর্পণ দু একবার রুখে দাঁড়ালেও দেখেছে পলাশ নির্বিকার।
তুই কিছু বলসি না কেন?
আরে বলুক না কাকদ্বীপ। তোকেও তো পেছনে সবাই আইনস্টাইনের নাতি বলে ডাকে।
হেসে ফেলে অর্পণ। তাই! কেন?
তুই জিনিয়াস বলে।
ধুর! তুই অনেক বেশি। সেদিন কি করে ওই শক্ত প্রশ্নটা ক্র্যাক করলি বলতো? আমি স্টানড!
স্টান্ড! কেন মিসেস অরোরা?
ফোনের এ পাশ থেকে মুচকি হাসে সেঁজুতি।
নট স্টান্ড…আই মিন…খুব আনন্দ হচ্ছে যে তুমি এম জি হেক্টর কিনেছ?
সেই জন্যই ভাবলাম আনন্দটা সবার সঙ্গে শেয়ার করতে লেট মি থ্রো আ কিটি পার্টি। পরশু দুপুরে তাহলে আসছেন তো?
অফ কোর্স! এখন রাখি…বাই।
ফোন কেটে সেঁজুতি আয়নার সামনে আসে। কেমন দিলাম। উফ! খুব শো অফ করত বুড়ি। দিয়েছি থোঁতা মুখ ভোঁতা করে। মাহিন্দ্রা এক্স ইউ ভি ৭০০ কিনে রোয়াব কত! এবার কথা হচ্ছে কোথা থেকে খাবার অর্ডার করব। একটু ভাবে সেঁজুতি। চিলিজ থেকে আনিয়ে নেব, বেস্ট হবে। আর ড্রিঙ্কস কি রাখব? আইডিয়া…ইউটিউবে চট করে মকটেল বানানো শিখে নিই।
ছোট সাদা ফুল ফুল কাপে চা এগিয়ে দেয় পলাশ। ভ্যাবলার মত দাঁড়িয়ে আছে অর্পণ, তার সামনে। ঘোর কাটছে না।
কি রে, নে!
কাপটা নেয়।
বোস।
অস্বস্তি নিয়ে তাকিয়ে আছে দেখে পলাশ আবার বলে, বোস।
দুবার বলার পর অর্পণ চৌকিতে বসে। সেদিন বৃষ্টির মধ্যেই পলাশকে কাজে চলে যেতে হয়েছিল, যাওয়ার আগে ফোন নম্বর দিয়ে বলেছিল, ফোন করিস। দুদিন পর ফোন করে সে, আসে দেখা করতে। সায়েন্স সিটি পেরিয়ে বাঁদিকে হ্যালদেন এভিনিউয়ের ঠিক পেছনের ঘিঞ্জি বস্তিতে পলাশের বাড়ি। না বাড়ি নয়,একটা বস্তির একফালি ঘর। দশ বাই আটে এঁটেছে একটা খাট আর আলমারি। প্লাস্টিকের দেওয়াল আয়নায় অজস্র টিপের ভীড়। ঘরের এ মাথা থেকে ও মাথা টাঙানো দড়িতে শাড়ি, নাইটি, সায়া ঝুলছে। দিনের বেলা চল্লিশ পাওয়ারের ল্যাম্প না জ্বালালে ভাল করে দেখা যায় না।
কিরে পলি! এ মাসের ভাড়াটা কবে দিবি?
লুঙ্গি পরা এক বয়স্ক লোক দরজায় এসে দাঁড়ায়। আজ তো ছ তারিখ হয়ে গেল!
খাটে রাখা পার্স থেকে টাকা বার করে পলাশ পর্দা সরায়। এই তো, নাও না।
জানি তোকে নিয়ে আমার চিন্তা নেই। বলেই লোকটার চোখ যায় অর্পণের দিকে। ধোপদুরস্ত বাবুসাহেবটি কে? যাও এখন দিকি।
মুখের ওপর দরজা বন্ধ করে পলাশ ফিরে আসে। চা-টা খা, বিস্কুট নে। একটা প্লাস্টিকের ডাব্বা থেকে দুটো হরলিক্স বিস্কুট প্লেটে রাখে।
অর্পণের চোখে ভিজে যায়। চশমা খুলে জল মুছে পলাশের দিকে তাকায়।
কাঁদছিস কেন?
ধরা গলায় অর্পণ বলে, পলি!
জানলার তাক থেকে একটা সিগারেট নিয়ে ধরিয়ে খাটে বসে পলাশ। খাবি?
অর্পণ মাথা নাড়ে।
তুই রোজ ওই রাস্তা দিয়েই যাস নারে? দেখিনি কখনো। মানে দেখতে পাইনি কালো কাচের আড়ালে তুই আছিস। সেদিনই প্রথম…কোথায় থাকিস?
সাউথ সিটি।
আমার বন্ধুরা যায় মাঝে মাঝে। অনেক দাম নারে ফ্ল্যাটের?
বললি না তো…তুই হঠাৎ…
হঠাৎ কি হয় রে এসব? অনেক ভেবে চিন্তেই যা হওয়ার হয়েছি।
চা শেষ করে কাপটা মাটিতে নামিয়ে রাখে অর্পণ।
বিস্কুট খাবি না?
না।
দে তুলে রাখি। নষ্ট করা যাবেনা। হাত বাড়িয়ে বিস্কুট দুটো নিয়ে ডাব্বায় রেখে সিগারেটে টান মারে।
আমার বন্ধুকে তো আমি চিনি। সে তো হিজড়ে নয়। তাহলে কেন…
কে বলছে রাস্তায় যারা এ ভাবে টাকা চায় সবাই হিজড়ে? বেশীরভাগ ছেলে। পেটের দায়ে এসব করছে। আমার মা কি বলত জানিস? কত রঙ্গ দেখালি পদি অম্বলে দিলি আদা…সত্যি তো একজন মানুষের মধ্যে কত রঙ্গ লুকিয়ে থাকে! এক্সপ্লোর করতে হয়। হাসে পলাশ।
এক্সপ্লোর করছিস? কাকে?
নিজেকে। প্রতিদিন। ধারণা ছিল না তো আমি এটাও পারি। সারাজীবন খেলাধুলো করা পলাশ যে মেয়েদের মত কোমর দুলিয়ে হাঁটতে পারবে ধারণা ছিল না তো!
একরাশ বিস্ময় নিয়ে অর্পণ তাকিয়ে থাকে বন্ধুর দিকে। ভেসে ওঠে সেই দিনটার ছবি যেদিন পলাশের সঙ্গে তার বাড়ি গিয়েছিল। দেখেছিল বৃষ্টি কাদায় মাখামাখি হয়ে কি ভাবে দমাদ্দম ফুটবলে লাথি মেরে মাঠ কাঁপাচ্ছে। শুনেছিল কালো চেহারার পলাশকে তার গ্রামে সবাই ‘কাকদ্বীপের পেলে’ বলে।
‘কাকদ্বীপের পেলে’ মনে পড়ল। হাহা করে হাসে পলাশ। বাড়িতে কাপগুলো আছে।
মাসীমারা জানেন?
পাগল! মাস গেলে টাকা পাঠাই, ব্যস। বাড়ি যাইনা। হাঁটাচলা কথা বলা সব পাল্টে গেছে তো…ধরা পড়ে গেলে সর্বনাশ হবে।
তোকে কেউ এখানে চিনতে পারে না?
একটু চুপ করে থেকে পলাশ বলে, আমাকে যখন প্রথমে বলা হয় আশুতোষ কলেজের সামনে দাঁড়াতে, সরাসরি না বলে দিই। পারব বল? পারা সম্ভব! ঝাপসা চোখ নিয়ে টাকা চাইব কি করে?
সিগারেটের শেষ টুকরো জানলা দিয়ে ছুঁড়ে পলাশ ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তাও বাধ্য হয়ে দাঁড়ালাম। পেট এমন একটা জিনিস যার কাছে লজ্জা শরম ধোপে টেকেনা। হাত পেতে টাকা চাইলাম চেনা প্রফেসর থেকে ল্যাব অ্যাসিস্টেন্ট প্রমথদা সবার কাছে। ভেতরে ভেতরে শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম কেউ যদি চিনতে পারে…দেখলাম কেউ পারল না। আসলে একটা সুবিধে কি বলতো, কেউ আমাদের দিকে খুঁটিয়ে দেখে না তো।
অর্পণ মাথা নীচু করে।
রোজ হাঁ করে কলেজটাকে দেখতাম। দেখতে পেতাম নিজেকে, তোকে, সবাইকে…মনে আছে অর্পণ, ভর্তির সময় ভোর থেকে লাইন দিয়ে ফর্ম তোলা? আর্টস এর মেয়েদের সঙ্গে যেদিন বন্ধুত্ব হল, কি দারুন লেগেছিল! তারপর তো আমরা একটা গ্রুপ হয়ে গিয়েছিলাম। ছাদের ক্যান্টিনে বসে পাউরুটি ডিমভাজা…আহা কি সব দিন ছিল!
পলাশ, আই উইল টেক ইউ আউট অফ দিস। অর্পণ পলাশকে থামায়।
কিভাবে?
খাটের সামনের ছোট্ট জায়গাটায় দুবার পায়চারি করে অর্পণ থামে। চাকরী হয়ে যাবে কিছু একটা। আই প্রমিস।
তাহলে সেদিন আমার সঙ্গে দেখা করলি না কেন?
থমকায় অর্পণ। কবে?
টি.এফ.এস টায়ারস এ মার্কেটিংয়ের জন্য অ্যাপ্লাই করেছিলাম। তোর ইন্টারভিউ নেবার কথা ছিল, বসেছিলাম সকাল থেকে। তারপর একসময় জানালো ক্যান্ডিডেট হ্যাজ বিন সিলেক্টেড, ইউ অল মে গো। কতবার রিকোয়েস্ট করলাম তোর সঙ্গে দেখা করতে দিতে। দিল না। দেখলাম তুই হনহন করে লিফটে উঠে গেলি, ডাকলাম ফিরেও তাকালি না। সেদিন চাকরিটা পেয়ে গেলে আর পলির জন্ম হত না।
হতভম্ব অর্পণ। আমি তোর নাম শুনেও দেখা করিনি? তুই ডাকলি তাও আমি কথা না বলে চলে গেলাম! ইম্পসিবল পলাশ। ভুল হচ্ছে তোর।
পেটে যাদের খিদে থাকে তাদের ভুল হয় না, বন্ধু।
ছটফট করে ওঠে অর্পণ। তুই ইন্টারভিউ দিতে আসার আগে আমায় ফোন করিসনি কেন?
নম্বর ছিল না তো! কলেজের পর সে ভাবে তো যোগাযোগ ছিল না তোর সঙ্গে। যে যার নিজের জীবনে ব্যস্ত ছিলাম। তাও তোর পুরনো বাড়ি গিয়েছিলাম, শুনলাম তোরা ওখানে থাকিস না।
উফ! ড্যাম ইট! যা হয়ে গেছে, গেছে…এবার আমার কথা শোন। তোকে আমি এই নরক থেকে বার করবই।
খবরদার! ধমকে ওঠে পলাশ। এটা নরক কে বলেছে তোকে? আমায় রোজ দু’বেলা খাবার দেয়।
খাবার দেয় বলছিস কিন্তু সেও তো ভিক্ষে করে! হাত না পাতলে একদিনও কি কিছু জুটবে?
ভিক্ষে না করলে ফ্রি তে কেউ দেবে? তুই দিবি?
কি বলবে অর্পণ বুঝতে পারেনা।
ফ্রি তে সম্মানটুকুও দেয় না। তুইও তো আমাকে ‘তুমি’ বলেই কথা বলেছিলিস, আমি কিন্তু আপনি তে স্টিক করে ছিলাম। ঘড়ি দেখে পলাশ। চল, এবার ওঠা যাক। বিকেলের ডিউটিতে বেরোতে হবে।
পলাশ উঠে আয়নার সামনে আসে। কাচ থেকে একটা মেরুন টিপ নিয়ে কপালে আটকায়। মুখে হালকা পাউডার বুলিয়ে, লিপস্টিক ঘষে শাড়িটা গুছিয়ে নেয়।
আই এম সরি তোর সেন্টিমেন্টে হার্ট করার জন্য কিন্তু এই জীবন তোর হতে পারে না। রাতে বাড়ি ফিরে ভেবে দেখিস। অর্পণ মরিয়া হয়ে বোঝায়।
ভাবার কিছু নেই, যেতে পারব না। এদের সুখ দুঃখের সঙ্গে ভীষণভাবে জড়িয়ে গেছি। এটাই আমার জীবন। বিপদে আপদে এরাই পাশে থাকে।
চটি গলিয়ে বাইরে এসে দরজা লক করে, চাবিটা পার্সে রেখে আকাশের দিকে তাকায় পলাশ।
পরিষ্কার হয়ে গেছে। আর বৃষ্টি হবে না।
কোথায় যাবি?
যেখানে রোজ দাঁড়াই…কিন্তু তোর সঙ্গে নয়। পলাশ অর্পণের দিকে হাসি মুখে তাকায়। একটা কথা বলব? থ্যাঙ্ক ইউ আজকের দুপুরটার জন্য। কতদিন পর পলির খোলস ছেড়ে বেরিয়ে পলাশ হয়ে নর্মাল কথা বললাম। ভুলে গিয়েছিলাম ওই সত্তাটা আমার ভেতর এখনো এক্সিস্ট করে। অল্প সময়ের জন্য হলেও সেই সময়টাকে ছুঁয়ে এলাম।
মাথা নাড়ে অর্পণ। থ্যাঙ্ক ইউ এর কি আছে…আমি আবার আসব।
না। আসবি না। সেদিন আবেগের বশে নম্বর দিয়ে ফেলেছিলিস। আমাদের দুনিয়াটা আলাদা হয়ে গেছে, ও আর এক হবে না।
দৃঢ় স্বরে কথাগুলো বলে। দাঁড়ায় না পলাশ। জিজ্ঞেসও করেনা অর্পণ কোথায় গাড়ি রেখেছে। ‘কাকদ্বীপের পেলে’ শাড়ির কুঁচি সামলে হাঁটতে হাঁটতে ঘিঞ্জি বস্তি পেরিয়ে মেইন রোডের দিকে চলে যায়, পলাশ থেকে আবার পলি হয়ে।
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন
খুব ভালো লাগল।