short-story-green-river-exit

গ্রীন রিভার একজিট
দীপেন ভট্টাচার্য




সে চাইছিল না সূর্যটা মেঘের পেছনে হারিয়ে যায়। সামনে রাস্তাটা পাহাড়ে উঠে কালো মেঘের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে, বৃষ্টি নেমেছে ওপরে। দু’লেনের হাইওয়ে হলেও রাতের অন্ধকারে গাড়ি চালাতে পছন্দ করে না সে, তার ওপর বৃষ্টিটা কিছুক্ষণ পরেই ওপর থেকে নিচে নামবে। উইন্ডশিল্ডের কাচটাকে পরিষ্কার করার ওয়াইপার ব্লেডদুটো কেন বদলাল না, ভাবে সে। সবকিছুতেই দীর্ঘসূত্রতা। পোকামাকড় লেগে সামনের কাচটার এখন যাচ্ছেতাই অবস্থা। এই ভাবতে ভাবতে বৃষ্টিটা নামল, জোরে নয়, ফোঁটা ফোঁটা। তার ওপর অমসৃণ ওয়াইপার ব্লেড কিছু তো পরিষ্কার করলই না, বরং পোকাগুলির দেহাবশেষ পুরো কাচটার ওপর ছড়িয়ে দিল। পাশ থেকে অরীনা বলে উঠল, ‘কতবার করে বললাম ব্লেডটা বদলাও।’

চুপ করে থাকে সে, মাথা নিচু করে কাচের ভেতর দিয়ে একটা পরিষ্কার জায়গা খোঁজে যা দিয়ে রাস্তাটা ভাল করে দেখা যায়।

অরীনা এবার বলে, ‘গ্রীন রিভারে তেল নিও কিন্তু, এরপরে ১০০ মাইলের মধ্যে তেল নেই।’

গ্রীন রিভার একটা খুবই ছোট জনপদ, সেখানে পেট্রোল স্টেশন বা এখানে যাকে বলে গ্যাস স্টেশন আছে।

রাস্তাটা গিরিখাতের মধ্য দিয়ে ওপরে উঠতে থাকে। আজ সকালে যখন তারা রওনা দিয়েছিল সে ভেবেছিল রাত দশটার মধ্যে পাহাড়গুলো পার হয়ে ডেনভারে পৌঁছে যাবে। গ্রীষ্মের দিন, সুর্য ডুবতে দেরি হবে, আলো পাওয়া যাবে অনেকক্ষণ। কিন্তু তার সব আশা বানচাল করে দিয়ে বিকেল চারটা থেকে আকাশ মেঘে ঢেকে গেল।

গাড়ি জোরে চালাতে পছন্দ করে না সে, বিশেষত যখন পেছনের সিটে তাদের দুটি সন্তান বসা। তবুও এই ফাঁকা রাস্তায় নিজে থেকেই যেন গাড়ির গতিবেগ ঘন্টায় আশি মাইল উঠছে। মাঝে মাঝে সচেতন হয়ে সেটাকে সে আবার সত্তরে নিয়ে আসছে। অরীনা অবশ্য জোরে চালানো পছন্দই করে, অন্তত ওইটুকু সময়ে যেন মনে হয় তার পাশের জন প্রাণ পেয়েছে। জীবনে উচ্ছাস থাকুক, তাপ-উত্তাপহীন মানুষটাকে অনেক সময় সহ্য করা যায় না। তার নির্লিপ্ততা সন্তানদুটোকেও কেমন গ্রাস করছে, মা বাবা দুজনের কাছ থেকেই দূরে সরে যাচ্ছে তারা। ‘সময়টা এরকমই, ওদের বেশি ঘাঁটিও না,’ অরীনার এক বন্ধু বলে সবসময়, ‘সময় দাও, নিজে থেকেই সব ঠিক হবে।’ সময় দিতে কোনও আপত্তি নেই অরীনার, কিন্তু সবকিছু ছেড়ে দিলেই কি সব ঠিক হয়ে যাবে? আর একজনের কাছে এটা কোনও সমস্যা নয়, অরীনা জানে। সেই মানুষটার মত হল – বাবা মা নিজে যেমন জীবনের পথ খুঁজে নিয়েছে, বেছে নিয়েছে, সন্তানরাও সেভাবে তাদের পথ খুঁজে পাবে। হাজার হাজার বছর ধরে পিতা মাতা সন্তান যে প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গিয়েছে তাদের জন্য এর অন্যথা হবে কেন?

হঠাৎ করে রাস্তাটা এরকম অন্ধকার হয়ে যাবে ভাবেনি সে। গাড়িটা একটু উঁচুতে উঠলে পেছনের আয়নায় ট্রাকের সারির আলো দেখা যায়। দু-লেনের রাস্তা, সামনে কোনও শ্লথ ট্রাক পড়লে বাঁ লেনে গিয়ে ওভারটেক করে সে, তারপর আবার ডানদিকে ফিরে আসে। আবার অনেক গাড়িই তার বাঁদিক থেকে পার হয়ে যায়। বৃষ্টিটা ফিরে আসে, তবু ওয়াইপার কাচ পরিষ্কার করতে পারে না।

সে ভাবছিল গ্রীন রিভার বা সবুজ নদীর কথা। ইউটা রাজ্যের উত্তর থেকে লক্ষ লক্ষ বছর ধরে পাহাড় কেটে সেই নদী দক্ষিণে গিয়ে মিশেছে কলোরাডো নদীর সাথে। আর তাদের মিলিত স্রোত গ্রানাইট ব্যাসাল্ট চুনাপাথর বেলেপাথর আর কর্দমশিলা খোদাই করে তৈরি করেছে অসাধারণ এক গিরিখাত – গ্র‍্যান্ড ক্যানিয়ন। গ্র‍্যান্ড ক্যানিয়ন এখান থেকে দক্ষিণে, আরিজোনায়। অরীনা বলে ‘গ্রীন রিভারের একজিট প্রায় চলে এসেছে, এখন আর কাউকে ওভারটেক করতে হবে না, ডানদিকে থাকো।’

ডানদিকেই থাকতে চেয়েছিল সে, কিন্তু হঠাৎ করে সামনের ট্রাকটি ব্রেক কষল, গাড়ি সামলাতে তাকে বাঁদিকে যেতে হল, গ্রীন রিভার একজিট মিস হল।

অরীনা বলল, ‘উফ, ট্রাকটার এত কাছে থাকতে কে বলেছিল? ঠিক জানতাম এরকম একটা কাজ করবে তুমি। এখন কী হবে?’

এত কাছে থেকে সাধারণত কোনও গাড়িকে অনুসরণ করে না সে, কিন্তু গ্র‍্যান্ড ক্যানিয়ন তার মনোযোগ নিয়ে নিয়েছিল।

সে বলল, ‘মনে হয় যা তেল আছে তাতে গ্র‍্যান্ড জাংশান পর্যন্ত চলে যাবে।’

অরীনা খুব নার্ভাস, ‘তুমি নিশ্চিত যে যাবে? নিশ্চয়ই গ্রীন রিভারে ফিরে যাবার কোনও উপায় আছে।’

মাঝে মধ্যে হাইওয়ের আসা-যাওয়ার দুটির রাস্তার মধ্যে একটা ছোট পথ থাকে যা শুধুমাত্র পুলিশ বা জরুরী সেবাই ব্যবহার করতে পারে, তেল ফুরিয়ে যাবার ব্যাপারটা নিশ্চয় জরুরী অবস্থার মধ্যে পড়ে। কিন্তু সেই অন্ধকারে, বৃষ্টির মধ্যে, সামনের অস্পষ্ট কাচের মধ্য দিয়ে সে ফিরে যাবার কোনও পথ খুঁজে পেল না। মিনিট দশ যাবার পরে বিড়বিড় করে বলল, ‘মনে হয় গ্র‍্যান্ড জাংশান পর্যন্ত চলে যাওয়া যাবে।’ পেছনের সিটে ঘুমন্ত দুই সন্তান এই নাটকটির কিছুই দেখল না।

অরীনা কিছুক্ষণ গজরায়, তারপর চুপ করে যায়। নিস্তব্ধতায় কেটে যায় মিনিট পনেরো। আস্তে চালায় সে, বহু গাড়ি বাঁদিক দিয়ে তাদের পার হয়ে যায়।

হঠাৎ অরীনা বলে ওঠে, ‘দেখো আমাদের মতই একটা গাড়ি।’

যে গাড়িটা বাঁদিক দিয়ে তাদের পার হল সেটা তাদেরই মতই টয়োটা, সাদা রঙের জিপজাতীয়, যাকে বলা হয় এসইউভি। তাদের মতই মডেল। এতে আশ্চর্য হবার কিছু নেই, এই মডেলটি বেশ জনপ্রিয়। এর আগে এরকম বহু গাড়ি তাদের পার হয়েছে।

অরীনা বলে, ‘দেখো এটারও ডানদিকের দরজার রঙ উঠে গেছে। আমাদের মতনই।’

সে সাথে সাথেই উত্তর দেয় না, একজিট মিসটা তার দোষেই হয়েছে তবুও সেই সময়ে অরীনার খোঁটাটা এখনও ভুলতে পারছে না।

মিনিটখানেক চুপ করে থেকে বলে, ‘ওই বছর এই মডেলেটার রঙ করতে গিয়ে কোম্পানি অনেক ভুল করেছে, এরকম রঙ-ওঠা অনেক গাড়িই পাওয়া যাবে।’

যে গাড়িটা নিয়ে কথা হচ্ছিল সেটি সঙ্কেত দিয়ে সামনে তাদের লেনে ফিরে আসে, তারপর গতি নিয়ে দূরে সরে যেতে থাকে। হঠাৎ কী মনে হয় যেন তার, সেও গতি বাড়িয়ে দেয়।

‘কী করছ?’ অরীনার স্বরে উৎকন্ঠা।

‘দেখতে চাইছি ওটা কোন স্টেটের, লাইসেন্স প্লেটটা কোথাকার?’

‘না, দরকার নেই দেখার,’ অরীনা তার বাঁ হাত স্টিয়ারিং হুইলে রাখা অমলের ডান হাতের ওপর রাখে। অরীনার স্বরে উৎকন্ঠা। সে বুঝে পায় না, অন্য সময় অরীনাই আগ্রহভরে কোন গাড়ি কোন স্টেট থেকে এসেছে দেখতে চায়, বরং সেই এসব বিষয়ে আগ্রহবোধ করে না।

‘ওটার এত কাছে যেও না,’ অরীনার কন্ঠে আকুতি।

ততক্ষণে সামনের গাড়িটার খুব কাছে এসে পড়েছে তারা । সে লাইসেন্স প্লেটটা পড়তে পারে – ক্যালিফোর্নিয়ার। পরের অক্ষরগুলো আওড়ায় – 7DHR037। খুব পরিচিত মনে হল অক্ষরগুলো। কয়েক সেকেন্ড লাগলো বুঝতে, তার প্লেটের নম্বর একই।

চিৎকার করে ওঠে সে, ‘একী! আমাদের নম্বর দেখছি আর একটা গাড়িকেও দিয়েছে।’

তার মনে হল সামনের গাড়িটি তার নিজের গাড়ির প্রতিফলন মাত্র। এক্সেলেটরের ওপরে ডান পা অবশ হয়ে আসে, সামনের গাড়িটা দূরে সরে যেতে থাকে।

‘এর মানে কী, অরীনা?’ অরীনার কাছ থেকে কোনো উত্তর আসে না। ‘এমন ভুল ডিএমভি কি করতে পারে? একই লাইসেন্স নম্বর দুজনকে দিয়েছে?’ অরীনার হাতের স্পর্শ পায় না সে আর, ডানদিকে মাথা ঘোরায়। অরীনা সেখানে ছিল না, অরীনার জায়গায় শূন্যস্থান। ‘অরীনা!’

অরীনা কি পড়ে গেছে? না, ডানদিকের দরজার লক আটকানো। পেছনদিকে মাথা ঘোরায় সে, তাদের দু’সন্তান কি এখনো ঘুমাচ্ছে, তার চিৎকার কি তাদের কানে পৌঁছায়নি। পেছনের সিট ছিল খালি, দুই সন্তানের কেউই নেই সেখানে। একী হতে পারে? এ কী ধরণের দুঃস্বপ্ন? গতি কমিয়ে ডানদিকের সোল্ডারে গাড়ি থামায় সে। নেমে পেছনের দরজা খোলে, সেখানে সবকিছু পরিষ্কার। ভিডিও গেম খেলার যন্ত্র নেই, কানের হেডফোন নেই, খাবারের কোনো উচ্ছিষ্ট নেই। পেছনের ট্রাঙ্ক খোলে সে। সেখানে একটি মাত্র ব্যাগ, শুধু তারটা, অথচ আজ সকালে পাঁচটা ব্যাগ ঢুকিয়েছিল সে। সামনে এসে যাত্রীর দিকের দরজা খোলে, সেখানে অরীনার চিহ্নটুকুও ছিল না। অরীনা একটা সেন্ট মাখে, সেই গন্ধটুকু একটু আগেও ছিল, কিন্তু এখন তার রেশমাত্র নেই। ফোন তুলে অরীনাকে ফোন করতে যায় সে, কিন্তু সেভ করা তালিকায় অরীনার নাম খুঁজে পায় না। অরীনার নম্বর টিপে টিপে ফোন করলে ওপার থেকে যান্ত্রিক গলা বলে, ‘এই নম্বরটি কাজ করে না।’ ৯১১-এ ফোন করা যেতে পারে, তাদের কী বলবে? গাড়ি থেকে এরা সব হারিয়ে গেছে, রেখে যায়নি কোনই স্মৃতিচিহ্ন?

গাড়ি স্টার্ট দেয় সে। সামনের সাদা টয়োটাকে ধরতে হবে, নিশ্চয় সেটার মধ্যে তার মনোবৈকল্যের উত্তর আছে। আশি, নব্বই মাইল বেগে চালায় সে, রাস্তার সব গাড়িকে পেছনে ফেলে, হাইওয়ে পুলিসের তোয়াক্কা না করে। অবশেষে খুঁজে পায় সাদা টয়োটা। বৃষ্টি ধরে এসেছিল তখন। মনে হল পেছনের সিটের ওপর দুটি মাথা দেখা যায়। গাড়িটিকে অনুসরণ করে সে। একশ মাইল পরে আসে গ্র‍্যান্ড জাংশান। সামনের টয়োটা একটা পেট্রোল স্টেশনে ঢোকে। বড় স্টেশন, সাথে বড় দোকান যেখানে খাবার কেনা যায়, কেনা যায় পথে লাগতে পারে এমন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। অন্য গাড়িটির কাছাকাছি, পেছনে, পার্ক করে সে। সেই গাড়ি থেকে তিনজন নামে। অরীনা আর তাদের দুই সন্তান। দূর থেকে দেখে সে, সিনেমার পর্দায় নিজের জীবনকে দেখার মতো। এখানে তার ভূমিকা দর্শকের। কিছুক্ষণ পরে সেই তিনজন দোকান থেকে বের হয়ে আসে। সামনের টয়োটায় ওঠার আগে অরীনা খেয়াল করে তার গাড়ি, সে দেখে অরীনা তার দিকে এগিয়ে আসছে। মাথা নিচু করে ফেলে সে, এই সমান্তরাল বিকল্পতায় তার থাকার কথা নয়। কিছুক্ষণ পর মাথা উঁচু করে দেখে অরীনা ফিরে গেছে অন্য গাড়িটিতে। পেট্রোল না নিয়েই তারা এরপর চলে যায়। ওরা নিশ্চয় গ্রীন রিভার একজিট মিস করেনি, সেখানে ট্যাঙ্কে ভরে নিয়েছে পেট্রোল, ভাবে সে।

এরপর তার টয়োটায় পেট্রোল ভরে সে। ফিরে যেতে হবে তাকে গ্রীন রিভারে, এবার সে একজিট মিস করবে না। সেই একজিট ধরলে তার গাড়ি হয়তো আবার পূর্ণ হবে। ফিরে আসবে সেন্টের গন্ধ, ভিডিও খেলার সরঞ্জাম, হেডফোন। তাই কী সে চায়? পেট্রোল ভরে আর ভাবে সে। সত্যিই কি সে ফিরে যেতে চায় গ্রীন রিভারে? হাল্কা গড়গড় শব্দ করে নল দিয়ে পেট্রোল ঢোকে। রাতের অন্ধকারে উল্টোদিকের রাস্তায় গাড়ির সারি দেখে সে, তাদের পেছনের লাল বাতিগুলি জ্বলন্ত লাভাস্রোতের মত গড়িয়ে যেতে থাকে পশ্চিমে। বারোটি বছর ধরে অমল এক সংসার নির্মাণ করেছে, সেটি কি ওই লাভাস্রোতের মতই অলীক? বৃষ্টি থেমে যায়, একটা মুক্ত আর্দ্র বাতাস পেট্রোলের স্ট্যান্ডগুলির মধ্য দিয়ে বইতে থাকে।




দোকান থেকে বেরিয়েই তাদের গাড়ির পেছনে সাদা টয়োটাকে চোখে পড়েছিল অরীনার। তাদের মতই মডেল, তাদের মতই রঙ-ওঠা। কিছু মনে করে সেদিকে এগিয়েছিল সে, লাইসেন্স প্লেটটা তখনই দেখল। স্টিয়ারিং হুইলের ওপর একটা মাথা তাকে দেখে নিচু হল, সেই মাথাটা কি তার বহু চেনা নয়? থাক, ভাবে অরীনা, সব জিনিসকে বুঝতে হবে না, জীবনকে সহজ সরল রৈখিক রাখাই দরকার। ফিরে যায় অরীনা। অমল বলে, ‘ভাগ্যিস উইন্ডশিল্ড ওয়াইপারটা শেষ মুহূর্তে বদলেছিলাম, নাহলে এই দুর্যোগে গাড়ি চালানো যেত না।’

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

1 thought on “short-story-green-river-exit

  1. এক্সিট মিস হতেই কী সব ঘটে গেল, সবকিছু হারিয়ে গেল,চেনা পৃথিবী, চেনা মানুষ! আর বারো বছরের প্রহর! টানটান উত্তেজনায় তরতর করে এগিয়েই নেয় না শুধু এই গল্প, ভাবায় অনেকক্ষণ গল্পশেষেও, জীবন-রহস্যের ধোঁয়া উদগীরণ চলে পাঠকের সময় ও স্থানাংকের উপর!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *