short-story-ichamotir-choya

ইছামতীর ছোঁয়া
দীপান্বিতা রায়


ফেব্রুয়ারি শেষের দার্জিলিং মানে বেশ কনকনে ঠান্ডা। কাল রাতে একপশলা বৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু আজ একদম ঝলমলে রোদ্দুর উঠেছে। ম্যালে পায়চারি করতে করতে জয়ীতা আরাম করে রোদ্দুরের ওম গায়ে মাখছিল। অনুভাদি ঢুকেছে জাঙ্ক জুয়েলারির দোকানে। সাজতে ভালোবাসে। সাজলে দিব্যি দেখায়ও। বিশেষ করে নানারকম জাঙ্ক-জুয়েলারির তো খুব শখ। জয়ীতা আবার অত কিছু পরতে পারে না। সেন্সিটিভ স্কিন। সোনা বড়জোর টুকটাক রূপো। তাই ওদিকে যায়নি। একবার ভেবেছিল অক্সফোর্ডের দোকানটায় ঢুকে নতুন বই কী এসেছে দেখবে। কিন্তু তারপর ইচ্ছা হল না। আসলে এমন রোদালো দিনে ম্যালে হেঁটে বেড়ানোটা একটা অন্যরকম আরাম। চোখ আর মন দুয়েরই। মেয়েদের দেখা যা্চ্ছে না। এদিক-ওদিক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গেছে। লাঞ্চের সময় হলে আবার সব ফিরবে। কলেজের মেয়েদের অত চোখে চোখে রাখার দরকারও পড়ে না। তাও জয়ীতা সবার মোবাইল নম্বর নিয়ে রেখেছে। যদি কোনও দরকার হয়। মোবাইলের কথা ভাবতে গিয়েই জয়ীতা বুঝতে পারল, ব্যাগের ভিতর ফোনটা ভাইব্রেট করছে। কাল রাতে ভাইব্রেশন মোডে দিয়ে রেখেছিল। মা যদি কোনও কারণে বেশি রাতে ফোন করে তাহলে অনুভাদির অসুবিধা হতে পারে। ট্যুরিস্ট লজে ও আর অনুভাদি একটা ডাবল বেড রুমে আছে। মেয়েরা ডর্মিটরিতে। আসলে পরশু যখন বাড়ি থেকে বেরোচ্ছে তখন জিনিয়ার গা-টা একটু ছ্যাঁক ছ্যাঁক করছিল। জ্বর যদিও আসেনি। কিন্তু কাল বিকেলেও মা বলল মেয়ে একটু ঝিমিয়ে আছে। সেটা কতটা মা-এর জন্য মনখারাপে আর কতটা শরীরের জন্য তা অবশ্য বোঝার উপায় নেই। মনখারাপ হলেও তো বলবে না, যা ঠোঁট-চাপা মেয়ে। তাই রাতে একটু টেনশনে ছিল জয়ীতা। যদি জ্বরটা বাড়ে। তবে বাড়েনি। এগারোটা নাগাদ মা মেসেজ করল, মুনিয়া ঘুমিয়ে পড়েছে, গা ঠান্ডা। অফিস ফেরতা শ্রীময়ীও এসেছিল। তার সঙ্গে গপ্প-সপ্পও করেছে মেয়ে। শ্রীময়ী বলে গেছে রাতে কোনও দরকার হলে তাকে ফোন করতে। তবে দরকার হবে না। মুনিয়া ভালো আছে। শ্রীময়ীকে ফোনে একটা লাভ সাইন পাঠাল জয়ীতা। অনেকদিনের বন্ধু। জিনিয়ার শরীরটা ভাল নেই, এটা একবার কথায় কথায় বলেছিল শুধু। শ্রীময়ীর জিভ ভ্যাংচানো ইমোজিটা দেখে নিশ্চিন্ত মনে কম্বলের তলায় ঢুকে পড়েছিল । সকালে বেরোনর তাড়ায় মোবাইল নরমাল মোডে আনতে ভুলে গেছে।

ব্যাগ থেকে ফোনটা বার করল জয়ীতা। মা ফোন করছে। মুনিয়া ঠিক আছে। স্কুলে গেছে। বাড়িতেও সব ঠিকঠাক। বাবা বাজারে বেরিয়েছে। মা-এর সঙ্গে দরকারি কথা সেরে নিয়ে কলেজের প্রিন্সিপালের মেসেজটাও একবার দেখে নিল জয়ীতা। গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়। মামুলি উপদেশ। কলেজ এক্সকারশন তো। মেয়েদের যেন একটু খেয়াল রাখে তারা। একটা কেজো উত্তর লিখতে শুরু করেছিল, এমন সময় একটা গলা শোনা গেল, জয়ী না!

পিছন ফিরে তাকিয়ে টুপি আর রোদচশমার জন্য কয়েকমুহূর্ত একটু ধন্দ লেগেছিল। কিন্তু অল্প ঠোঁট ফাঁক করে হাসি আর বাঁগালে টোল নির্ভুল চিনিয়ে দিল….অনি….অনিকেত মিত্র। মুহূর্তে ভীষণ একটা আফশোষ হল জয়ীতার। অনুভাদি বলেছিল তার সঙ্গে দোকানে যেতে। তখন রাজি হয়ে গেলে নিশ্চিত অনি তাকে দেখতে পেত না। অবশ্য সেটা খুব নিশ্চিতভাবে বলাও যায় না। দার্জিলিং-এ আসা মানে এবেলা-ওবেলা একবার অন্তত ম্যালে ঢুঁ-মারা। সেক্ষেত্রে সম্ভাবনা তো ছিলই। তবে সেকথা ভেবে এখন আর লাভ নেই। জয়ীতা তাই কপালে তুলে রাখা সানগ্লাসটা চট্ করে নামিয়ে চোখটা খানিকটা ঢেকে নিয়ে যথাসম্ভব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে ফিরে তাকিয়ে হাসল, বাব্বাঃ, দূর থেকেও দিব্যি চিনতে পেরেছিস তো!

না পারার তো কিছু নেই। চেহারা তো বিশেষ বদলায়নি। রোগা-মোটা কিছুই হোসনি। একইরকম আছিস। একটু বোধহয় গম্ভীর হয়েছিস, নাকি রে?

ওরকম কলেজে পড়াতে গেলে হতে হয়, নাহলে ছাত্ররা মানবে কেন?

অভ্যাসে কথাটা বলে ফেলেই মনে মনে অপ্রস্তুত হয় জয়ীতা। আসলে উচ্ছ্বল, হাসিখুশি জয়ীতাকে যারা চিনত, তাদের অনেকের কাছেই এই প্রশ্নটা শুনতে হয় বলে উত্তরটা ওর তৈরি থাকে। এরকম আরও অনেক উত্তর তৈরি করে রাখতে এখন অভ্যস্ত হয়ে গেছে সে। কিন্তু অনিকেতকে এই কথাটা বলার তার ইচ্ছা ছিল না। নিজের সম্পর্কে কোনও তথ্যই অনিকেতকে দিতে সে চায় না। কিন্তু কথার পিঠে কথা তো আসবেই। আশ্চর্যের ব্যাপার এল না কিন্তু। সম্ভবত ঠিক সেই সময় ম্যালের খোলা মঞ্চটাতে একটা জগঝম্প বাজনা বেজে ওঠায়, জয়ীতার কথাগুলো অনিকেত শুনতে পায়নি। তাই দিব্যি হেসে হেসেই বলল,

গম্ভীর হয়ে কিন্তু তোর গ্ল্যামার বেড়েছে রে…..

বেড়াতে এসেছিস?

কথা ঘোরায় জয়ীতা। নাহলে দার্জিলিঙে আবার বেড়াতে ছাড়া কোন কম্মে আসে লোকে।

বেড়াতেই বলতে পারিস। কাজ একটা আছে। তবে সেটাও ওই বেড়ানোর সঙ্গেই মিলেমিশে যাওয়া….মানে ওই মেলাবেন তিনি মেলাবেন-এর মতো অনেকটা….বাবার অনেকদিন ধরে ইচ্ছে ছিল একবার দার্জিলিং আসার। অনেককাল আগে এসেছে। কাঞ্চনজঙ্ঘা আর একবার না দেখলে নাকি মরেও সুখ পাবে না। একযাত্রায় পৃথক ফল হয়ে লাভ নেই। তাই মা-কেও নিয়ে এলাম। ছেলেরাও এসেছে…..

চোখের কোণ দিয়ে জয়ীতা দেখতে পায় অনুভাদি দোকান থেকে বেরিয়ে এদিক-ওদিক দেখছে। অনিকেত যাতে অবধারিত পরের প্রশ্নটা করতে না পারে, তাই জয়ীতা হাত তুলে ডাকে, অনুভাদি আমি এখানে…..

তারপর অনিকেতের দিকে ফিরে বলে, আমি আসি রে….পরে নিশ্চয় আবার দেখা হবে।

অনিকেত যাতে মোবাইল নম্বরটা চাওয়ার সুযোগ না পায়, সেজন্য পিছন ফিরে দ্রুত এগোয় অনুভাদির দিকে। অনিকেত যে খুব অবাক হয়েছে, সেটা না তাকিয়েও বুঝতে অসুবিধা হয় না। কিন্তু বুকের ভিতরে একটা গোপন স্বস্তির শ্বাসও পড়ে। সে জানে অনিকেত আর আসবে না। এরপর মুখোমুখি দেখা হয়ে গেলে নিজে থেকে আর কথাও বলবে না। ও ছেলের আত্মসম্মানবোধ প্রবল। তাছাড়া জয়ীকে ও হাড়ে-হদ্দে চেনে। না বললেও অনায়াসে জয়ীতার মনের কথা বুঝে নিতে অনিকেত। ফোন তুলে, হ্যাঁ বল—এই দুটো শব্দের শুধু অপেক্ষা। তারপরেই ওধারে উদ্বিগ্ন গলা শোনা যেত,

কী হয়েছে রে? মন খারাপ কেন?

কী করে বুঝিস তুই?

অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করত জয়ীতা।

না, বোঝার তো কিছু নেই। তোর গলার স্বর তো ঝরনার মতো। এতটুকু কোথাও বাধা পেলেই সঙ্গে সঙ্গে ধরা যায়।

সত্যিই বুঝতে পারতো। জয়ীতার মন যখন একটু একটু করে ঘুরছিল, যখন সে নিজেও ঠিক বোঝেনি, শুধু অনেক গভীরে কিছু একটা দানা বাঁধচিল, তখনই কিন্তু অশনি সংকেত দেখেছিল অনিকেত। দু-একবার জিজ্ঞাসাও করেছিল,

কী হয়েছে বলতো তোর জয়ী? আজকাল মাঝে মাঝে তোকে যেন কেমন অন্যরকম লাগে।

উত্তর দেয়নি জয়ীতা। সত্যি কথা বলতে কী, তখনও উত্তর দেওয়ার মতো কিছু তার কাছে ছিলও না।

গ্লেনারিজে লাঞ্চ। মেয়েরা তারপর শপিং-এ যাবে। অনুভাদি গেল সঙ্গে। মাথা ধরেছে বলে ট্যুরিস্ট লজের দিকে ফিরল জয়ীতা। ম্যালের ওপর দিয়ে আসার সময় বুকের ভিতর ধুকপুক করছিল। অবাধ্য চোখ বাগ মানছে না। গাঢ় কাচের চশমার ফাঁক দিয়ে এদিক-ওদিক দৃষ্টি ঘুরছে। যত দূরেই থাক চিনে নিতে এক মুহূর্তও লাগবে না। কোনও দিনই লাগত না। কলেজের গেট থেকে বাসরাস্তা বেশ খানিকটা। কিন্তু তবু অনিকেত বাস থেকে নামলেই নির্ভুল চিনে নিত। অনার্সের তিন আর তারপরের দুবছর….নাঃ দু বছর বলা যাবে না। সে যখন এম-এ ফাইনাল ইয়ারে পড়ছে, তখনই টান পড়েছে সুতোয়। কিন্তু তার আগের চার বছর যেন পরস্পরের সঙ্গে মিশে ছিল তারা। জয়ীতা সেন স্কটিশ চার্চ আর অনিকেত মিত্র প্রেসিডেন্সি। কলেজ ফেস্টে আলাপ। অনিকেত একবছরের সিনিয়র। ক্লাস করার সময়টুকু বাদ দিলে, কফিহাউস, কলেজ স্কোয়ার, সিনেমা, নাটক, বইমেলা সবসময় দুজনে একসঙ্গে। উত্তর কলকাতায় পড়াশোনা হলেও দুজনেই দক্ষিণের বাসিন্দা। তাই যাওয়াটা সবসময় একসঙ্গে না হলেও প্রায় রোজই জয়ীতাকে ওদের বালিগঞ্জের বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে যাদবপুর ফিরত অনিকেত। তবে বাড়িতে সাধারণত ঢুকত না। জয়ীতা বুঝতে পারত তার মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে কাজ করা আদ্যন্ত পেশাদারি বাবার সামনে অস্বস্তিবেোধ করে অনিকেত। কথা বলার বিষয় খুঁজে পায় না। বাবা কিন্তু কোনওদিন অনিকেতের সম্পর্কে কোনও বিরূপ মন্তব্য করেনি। মাও নয়। আসলে ছোটবেলা থেকেই মেয়েকে যথেষ্ট স্বাধীনতা দিয়ে বড় করেছেন। তাই একটা বয়সের পর তার কোনও সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করাটা যে অনুচিত, সেটা দুজনেই বোঝেন। এরকমটাই তখন ভাবত জয়ীতা। পরে বুঝেছে আসলে ব্যাপারটা সেরকম নয়। জয়ীতাকে যেভাবে মানুষ করা হয়েছে তাতে অনিকেতের সঙ্গে ওর সম্পর্কটা যে একটা পর্যায়ের পর আটকে যাবে সেটা মা-বাবা দুজনেই নিজেদের দূরদর্শিতায় বুঝতে পেরেছিলেন। তাই সুতো ছেড়ে অপেক্ষা করছিলেন।

ফাঁকটা যে জয়ীতাও বুঝত না তা কিন্তু নয়। বড়লোকের একমাত্র মেয়ে। চিরকাল বাড়ি-গাড়িতে অভ্যস্ত। ভালো ছাত্রী। নিজের কেরিয়ার সম্বন্ধেও যথেষ্ঠ সচেতন। যাদবপুরে অনিকেতের স্কুল শিক্ষক বাবার সারাজীবনের সঞ্চয় দিয়ে তৈরি একতলা বাড়িতে গেলে অস্বস্তি তো হতই। দুটো মাত্র ঘর। একচিলতে বারান্দা আর রান্নাঘর। ভিতরের কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু বাইরেটা রঙ করা হয়নি। অমসৃণ প্লাস্টারে ঢাকা বাড়ির কাঠামো। কিন্তু এসবে তেমনভাবে গুরুত্ব দেয়নি জয়ীতা। প্রেসিডেন্সি কলেজের নামকরা ছাত্র অনিকেত। পাশ করলেই ভালো চাকরি, বিদেশ যাওয়া এসব তো বাঁধা। একবার ঝলমলে কেরিয়ারে মসৃণ রাস্তা ধরে এগিয়ে গেলে, পিছনে কী ছিল তা নিয়ে আর কেউ মাথা ঘামাবে না।

ধাক্কাটা লাগল অনিকেতের যখন মাস্টার্সের ফাইনাল ইয়ার। ওদের ব্যাচের ছেলেরা সবাই চাকরির পরীক্ষা দিচ্ছে, তার জন্য প্রস্তুতিও নিচ্ছে। কিন্তু অনিকেতের যেন কোনও মাথাব্যথাই নেই।

তুই কি ডক্টরেট করবি ভাবছিস, নাকি এমবিএ পড়বি?

জয়ীতার প্রশ্নে চা-এর ভাঁড়ে একটা চুমুক দিয়ে অনিকেত বলেছিল,

কোনওটাই নয়। এমবিএ পড়ানোর ক্ষমতা আমার বাপের নেই। বাড়ি করতে গিয়ে দম ফুরিয়ে গেছে। এখন নিজেকে পুরোপুরি গ্যারেজ করে ফেলেছে। সুতরাং বুঝতেই পারছিস, ডক্টরেট করাও আমার দ্বারা হবে না। কতদিন ঘষটাতে হবে তার কোনও ঠিক আছে নাকি! তাছাড়া আমার নিজেরও ইচ্ছে নেই।

তাহলে তুই সিভিল সার্ভিসের পরীক্ষাটা দিলি না কেন?

আমলা হব না তাই। ওটা আমার পোষাবে না রে জয়ী….দ্যাট ইজ নট মাই কাপ অফ টি…..

তাহলে তুই কী করবি ভাবছিস?

এখনও বিশেষ কিছু ভাবিনি। হাতে বেশ কয়েকটা টিউশন আছে। বাবার পেনশনটাও চালু হয়ে গেছে। ধীরে-সুস্থে ভাবব।

তুই যতটা ভাবছিস, ততটা সময় কিন্তু হাতে নেই। এমএ পাস করে গেলে আমার বাড়ি থেকে বিয়ের কথা একটা উঠবেই। তাছাড়া কেরিয়ার তৈরি করতে গেলে খামোখা দেরী করবি কেন! প্রফেশনাল ওয়ার্ল্ডে একটা বছর মানে তো অনেকটা সময়। তোর ব্যাচমেটরা এগিয়ে যাবে…..

সেদিন আরও অনেক কিছু বলেছিল জয়ীতা। কিন্তু অনিকেত যে নিজের মত থেকে সরছে না সেটা বুঝতে অসুবিধা হয়নি। চাকরি, পেশাদারি জীবন, কাজের জগতের প্রতিযোগিতা এসবের প্রতি ওর যেন কেমন একটা অনীহা। বিরক্ত লাগছিল জয়ীতার। ভিতরে ভিতরে হতাশও। সেটা আরও বাড়ল যখন ফাইনাল পরীক্ষার মাসখানেক পরে অনিকেত এসে বলল যে সে ক্যানিং-এর কাছে একটা স্কুলে চাকরি পেয়েছে।

স্কুলে পড়াবি তুই! ওই ধ্যাড়ধ্যাড়ে গোবিন্দপুরের স্কুলে!

অসুবিধা কী আছে? যাদবপুর থেকে ট্রেনে যেতে একঘন্টা লাগে। উল্টোদিকের ট্রেন ফাঁকা থাকবে। চারটেয় ছুটি। বাড়ি এসে নিজের পড়াশোনার করার সময় পাওয়া যাবে। তাছাড়া বাচ্চাদের কীভাবে পড়ানো উচিত, কেমন করে পড়ালে ওরা বিষয়টাকে ভালোবেসে ফেলতে পারে, সেটা নিয়ে আমার কিছু চিন্তা-ভাবনা আছে। সত্যি কথা বলতে কী, সেজন্যই স্কুলের চাকরিটা নিলাম। পরীক্ষাটা যে দিয়েছিলাম সেটা তোকে আর বলিনি। না পেলে আবার আওয়াজ দিবি তো…..

মাস্টারিটাই করবি তারমানে ঠিক করলি। বিদেশ যাবি না, এমবিএ করবি না এমনকি একটা ভদ্রস্থ অফিসারের চাকরির পর্যন্ত চেষ্টা করবি না তাই না?

সারা পৃথিবীতে শিক্ষকতাকে সবথেকে মহান চাকরি বলে মনে করা হয় জয়ী । সুইত্জারল্যান্ডের মত দেশে প্রাইমারি টিচারদের মাইনে সবথেকে বেশি। আর তোর এটাকে ভদ্রস্থ চাকরি বলেই মনে হচ্ছে না! নাঃ জয়ী তুই একবারে গতে বাঁধা কেরিয়ারিস্টের মত কথা বলছিস। আমি আসলে ঠিক ওরকমভাবে ভাবছি না। সারাজীবন এই ক্যানিং-এর স্কুলেই থাকব, তা হয়তো নাও হতে পারে। কিন্তু আপাতত এখানেই পড়াব ঠিক করেছি রে।

এরপরে অনিকেতের সঙ্গে বারদুয়েকের বেশি দেখা হয়নি জয়ীতার। প্রত্যেয়ের সঙ্গে বিয়েটা অবশ্য আরও এক বছর পরে হয়। ততদিনে এমএ পাস করে গেছে জয়ী। চাকরির চেষ্টা করছিল। প্রত্যয়ের মা বলেছিলেন এখানে আর চেষ্টা করার কী দরকার। অত ভালো রেজাল্ট। একেবারে আমেরিকায় গিয়ে চাকরি খুঁজে নেবে। সম্বন্ধটা এনেছিল জয়ীতার মাসি। একেবারে ছাঁচে ঢালা উপযুক্ত ছেলে প্রত্যয়। কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। ম্যানেজমেন্ট ডিগ্রিও আছে। ভালো চাকরি। গ্রিন কার্ড হোল্ডার। সুপুরষ না হলেও দেখতে খারাপ নয়। আর জয়ীতার কাছে যেটা সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছিল, তার চাকরি বা কেরিয়ার তৈরিতে বিন্দুমাত্র আপত্তি নেই প্রত্যয়ের। তাই বিয়েটা হয়ে গেল এবং অনিকেত ও সেই সংক্রান্ত যাবতীয় লেগাসি ঝেড়ে ফেলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে ল্যান্ড করল জয়ীতা।

প্রত্যয়ের বাড়িটা ছিল ছিমছাম বাংলো ধরনের। চারপাশে ছোট বাগান। সামনে ড্রাইভওয়ে। তবে ও বাড়ি তার বরের যে মোটে পছন্দ নয় সেটা জয়ীতা জানত। প্রথম আলাপেই প্রত্যয় বলেছিল কথাটা। নেহাত এখন সামর্থ্য নেই, তাই এরকম একটা বাড়িতে থাকতে হচ্ছে তাকে। আর একটু টাকা জমাতে পারলেই মূল শহরের কাছে কোনও অ্যাপার্টমেন্টে চলে যাবে তারা। জয়ীতার কিন্তু দিব্যি লেগেছিল। যদিও ঘরে নানারকম জরুরি আসবাববপত্র আর গ্যাজেটস্ থাকলেও কোনও বই নেই দেখে অবাক হয়েছিল খুব। প্রত্যয়ের স্পষ্ট বক্তব্য ছিল, ঘর ভরানোর জন্য বই কেন লাগবে! সব ইনফরমেশনই তো ল্যাপটপে পাওয়া যায়। কলকাতা থেকে নিয়ে যাওয়া পছন্দের বইগুলো সাজিয়ে রাখতে তাই প্রথমটায় একটু অস্বস্তিই লাগত জয়ীতার। তবে কিছুদিনের মধ্যেই বুঝে গেল সে যে বইগুলো রেখেছে সেটা প্রত্যয় খেয়াল করেনি। আরও অনেক কিছুই প্রত্যয় খেয়াল করে না। দেওয়ালে নতুন ছবি টাঙালে বুঝতে পারে না। পর্দা বদলে দিলে খেয়াল করে না। বাগানের বেডে বাটার কাপ কিংবা ব্লু বেল ফুটলে তার চোখে পড়ে না। এমনকি জয়ীতা গুণগুণ করে গান গাইলে কখনও জিজ্ঞাসা করে না কী গাইছে। প্রত্যয় একজন হার্ডকোর প্রফেশনাল মানুষ। অফিস এবং নিজের কাজই তার জগত। তার বাইরে অন্য কোনও কিছুতে প্রত্যয়ের আগ্রহ নেই। এমনকি তার কাছে নিয়মিত শরীরী মিলনও যতটা না ভালোবেসে উপভোগ করা তার থেকে বেশি স্ট্রেস রিলিজের জন্য। কারণ আধুনিক বিজ্ঞানীদের মতে সহবাস, স্ট্রেস রিলিজের অন্যতম কার্যকরী উপায়।

চাকরিই করবে ঠিক করেছিল জয়ীতা। কিন্তু সুযোগ এল নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট করার। বিষয় ফার্স্ট জেনারেশন লার্নার। প্রত্যয়ের ইচ্ছা ছিল বউ চাকরি করুক। কিন্তু জয়ীতা রিসার্চে জয়েন করল। পরে অনেক সময় জয়ীতার মনে হয়েছে, খুব বেশি কিছু না ভেবেও এরকম একটা সঠিক সিদ্ধান্ত সে ওই সময় কীভাবে নিয়েছিল। কারণ তার পরের বছর দুয়েক যে সে প্রত্যেয়ের সঙ্গে থাকতে পেরেছিল তার একমাত্র কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ এবং তার নিজস্ব পড়াশোনা। মেকানিক্যাল লাইফ কথাটা জয়ীতা তার আগে অনেকসময় বইয়ে পড়েছে কিন্তু বাস্তবে ব্যাপারটা কীরকম সেই ধারণা তার ছিল না। দুটো মানুষ এক ছাদের নীচে থাকে। তাদের মধ্যে কোনও ঝগড়া নেই, অশান্তি নেই। কিন্তু কথা বলার, গল্প করার মতো কোনও বিষয়ও নেই। দুজনেই নির্দিষ্ট সময় বাড়ি ফেরে। কফি নিয়ে ল্যাপটপে মুখ গুঁজে বসে থাকে। একই টেবিলে ডিনার খায়। পাশাপাশি শুয়ে সঙ্গম করে। তারপর উল্টো দিকে ফিরে ঘুমিয়ে পড়ে। ক্রমশ দমবন্ধ হয়ে আসছিল জয়ীতার। বিষণ্ণতা গ্রাস করছিল। প্রত্যয় একেবারেই চায়নি। তাও তার রিসার্চের কাজ যখন শেষ হয়ে আসছে তখন ইচ্ছে করেই প্রেগন্যান্ট হল জয়ীতা। বিরক্ত হয়েছিল প্রত্যয়। বাচ্চা হওয়া মানেই সংসারের জন্য বাড়তি সময়, দায়িত্ব। কেরিয়ারের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা। জয়ীতা আশা করেছিল মেয়েকে দেখার পর মন বদলাবে নিশ্চয়। কিন্তু তা হয়নি। জিনিয়া যখন তিনছরের, তখন একদিন জ্বরের ঘোরে আচ্ছন্ন মেয়েকে কোলে নিয়ে প্রত্যয়কে ফোন করায় বলেছিল, তোমাকে বাচ্চা নিতে আমি বারণ করেছিলাম জয়ী। তুমি শোনোনি। আমার এখন জরুরি প্রেজেন্টেশান আছে। মেয়ের শরীর খারাপ বলে যদি বাড়ি চলে যাই তাহলে আনপ্রফেশনাল বলে আইডেন্টিফায়েড হয়ে যাব। সেটা আমি হতে দিতে পারি না। নিজে যা পারো করো। আমাকে বিরক্ত কোরো না।

জিনিয়ার জ্বর দুদিন পরে ছেড়ে গেছিল। আর তার ঠিক একমাস পরে আমেরিকার পাট গুটিয়ে মেয়েকে নিয়ে দেশে ফিরে এসেছিল জয়ীতা। পরিবারের মধ্যে একমাত্র মা হয়তো কিছুটা বুঝেছিলেন। কিন্তু তাছাড়া আর কাউকে জয়ীতা বোঝাতে পারেনি, কেন সে প্রত্যয়ের সঙ্গে থাকতে পারল না। লম্পট নয়, নেশা-ভাঙ করে না, বউ-এর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে না, ভালো চাকরি, তাও কেন ফিরে এল মেয়ে! বাবা খুবই বিরক্ত হয়েছিলেন। একমাত্র সন্তান। ফেলে দেওয়ার প্রশ্ন ওঠে না। কিন্তু পারতপক্ষে জয়ীতার সঙ্গে কথা বলেন না এখনও। বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে ইচ্ছে করেই যোগাযোগ রাখেনি জয়ীতা। কারণ অনিকেতের সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া নিয়ে ওদের ক্লোজ সার্কিটে খুবই আলোচনা হয়েছিল। বিশেষ করে জয়ীতা এনআরআই বিয়ে করার পর সমালোচনার আঙুল নিশ্চিত তার দিকেই উঠেছিল। একমাত্র শ্রীময়ী সেদিনও কোনও প্রশ্ন করেনি। এবারও কিছু জানতে চায়নি। অন্যের অন্দরমহলে নাক গলাতে সে ভালোবাসে না। জয়ীতা কোনও পরামর্শ চাইলে নিজের বুদ্ধি-বিবেচনা মতো দেবে। কিন্তু জীবন যার, তার সিদ্ধান্তকে সম্মান করে শ্রীময়ী। দুজনের তাই গল্পগুজব, আড্ডা হয়। শ্রীময়ী একটা ইংরাজি দৈনিকে কাজ করে। সম্প্রতি ওদের কাগজেই নিজের বিষয় নিয়ে গোটা দুয়েক প্রবন্ধ, সম্পাদকীয় পাতায় লিখেছে জয়ীতা। সেগুলো অনেকের বেশ পছন্দও হয়েছে। কলেজে পড়ানোর পাশাপাশি ইদানীং টুকটাক লেখালিখির ভাবনাটাও তার মধ্যে নড়াচড়া করছে।

দার্জিলিং থেকে কলেজের এক্সকারশন সেরে ফেরার সপ্তাহ দুয়েক পরে ফোনটা এল শ্রীময়ীর। কলেজ থেকে ফিরে চা নিয়ে বসেছিল জয়ীতা।

জয়ী শোন, তোর একটা ওয়ার্কশপের ইনভিটেশন এসেছে…..

আমার ইনভিটেশন তোর কাছে!

আরে শোন না কথাটা। টাকির একটা স্কুল থেকে প্রিন্সিপাল ফোন করেছিলেন। স্কুলটা ঠিক সাধারণ স্কুলের মতো নয়। অনাথ বাচ্চা আর বিভিন্ন নিচু জাত, অন্ত্যজ বাচ্চাদের ওখানে পড়াশোনা, থাকার ব্যবস্থা আছে। পুরোটাই রেসিডেন্সিয়াল। একটা এনজিও চালায়। আমার ধারণা বিদেশ থেকে সাহায্যও পায়। বুঝতেই পারছিস এই বাচ্চার প্রায় সবাই ফার্স্ট জেনারেশন লার্নার। তাই কাগজে তোর লেখাটা পড়ে ভদ্রমহিলা আমাকে ফোন করেছিলেন। ওঁর স্কুলের টিচারদের নিয়ে একটা ওয়ার্কশপ করতে চাইছেন, সেখানে তুই যদি থাকিস। মানে লেকচার দিলি, আলোচনা করলি…..

গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিল স্কুল থেকেই। বেশ অনেকটা রাস্তা। তাই সকাল সকালই বেরিয়েছিল। সাধারণত ছুটির দিনে মা কোথাও গেলে মুনিয়া গম্ভীর হয়ে যায়। কিন্তু আজ ওদেরও স্কুলে অ্যানুয়াল ফাংশানের রিহার্সাল। তাই নিশ্চিন্তে বেরিয়েছিল জয়ী। উঁচু পাঁচিল দিয়ে ঘেরা স্কুল ক্যাম্পাসের ভিতরে ঢুকে মনটাও ভারী ভাল হয়ে গেল। চারিদিকে যেন সবুজের বন্যা। একেবারে ইছামতীর ধারে স্কুল। ছোট-বড় অজস্র গাছ আর ফুলের মাঝখানে লাল-সাদা স্কুল বিল্ডিং। একপাশে ঝলমলে সাদা হস্টেল। সামনের মাঠে একদম পুঁচকেরা খেলছে। পিছনে একদল বল পেটাচ্ছে। প্রিন্সিপাল মহিলা বেশ আপ্যায়ন করে ভিতরে নিয়ে গেলেন। ছোট একটা অডিটোরিয়ামে ওয়ার্কশপের আয়োজন। জয়ীতা বুঝতে পারছিল যেসব টিচাররা অংশ নিয়েছেন, তাঁরা সত্যিই বিষয়টা সম্পর্কে জানতে আগ্রহী। ভাল লাগছিল। কথার পিঠে কথা, আলোচনায় তিনঘন্টার সেশন গড়িয়ে চারঘন্টা পেরিয়ে গেল। শেষ হওয়ার পর ছোট একটা লাঞ্চ। খাওয়ার টেবিলে প্রিন্সিপাল বললেন, আমাদের ডিরেক্টর এসেছেন আপনার সঙ্গে কথা বলার জন্য। খাওয়ার পর ওঁর সঙ্গে কথা বলে নিয়েই রওনা দেবেন। গাড়ি আমি বলে রেখেছি।

একটু ক্লান্ত লাগছিল জয়ীতার। কিন্তু এরকম অনুরোধ তো এড়ানো যায় না। লাঞ্চ সেরে মহিলার সঙ্গে বেরোল জয়ীতা। স্কুলের পিছনে বিশাল মাঠ। সেখানে ফুটবল খেলছে একদল ছেলে। তাদের সঙ্গে পাজামা গুটিয়ে মাঠে নেমে পড়েছে একজন ঝাঁকড়া চুলো মানুষ। জয়ীতার মনে হচ্ছিল তার পা-দুটো যেন কেউ স্ক্রু দিয়ে মাটিতে আটকে দিয়েছে।

কী রে কেমন লাগল আমাদের ওয়ার্কশপ?

হাসতে হাসতে এগিয়ে এল অনিকেত। পাজামার এখানে-ওখানে কাদার ছোপ।

আপনি ম্যাডামকে চেনেন নাকি?

হ্যাঁ। অনেক বছর ধরে। মিসেস চ্যাটার্জি আপনি বরং বাকি কাজ সেরে ফেলুন। আমি ওকে স্কুলটা ঘুরে দেখাই।

পিছনের একটা গেট দিয়ে একেবারে ইছামতীর পাড়ে যাওয়া যায়। গোটা স্কুলটা ঘুরে দেখে দুজনে এসে দাঁড়াল নদীর ধারে।

এই স্কুলটা বুঝতেই পারছিস আমার একটা স্বপ্নের প্রজেক্ট। করতে যে পারব শেষ পর্যন্ত ভাবিনি। কিন্তু ইচ্ছে যদি খুব জোরাল হয়, তাহলে তার তাগিদেই বোধহয় অনেকটা এগিয়ে যাওয়া যায়। তাগিদটা বুঝলে দু-চারজনকে পাশেও পাওয়া যায়। সেরকমটাই হয়েছে। কিন্তু শুরুতে তো এতটা ভাবিনি। এখন কাজের জায়গাটা এত বড় হয়ে গেছে যে আমি আর একা সামলাতে পারছি না….তুই আমার সঙ্গে থাকবি জয়ী?

প্রশ্নটা আকস্মিক। চমকে উঠল জয়ীতা। বুকের ভিতর গড়িয়ে গেল লোহার বল।

আমি! কিন্তু একলা কেন? তোর স্ত্রী এই প্রজেক্টে যুক্ত নেই?

এই কবছর বড্ড ব্যস্ত ছিলাম রে। নিজের জন্য ভাবার সময় পাইনি।

তবে যে সেদিন বললি, ছেলেদের নিয়ে এসেছিস?

কয়েক সেকেন্ড একটু অবাক হয়ে তাকায় অনিকেত। তারপর হো হো করে হেসে বলে,

হ্যাঁ। হস্টেলের কয়েকজন ছেলেকে নিয়ে গেছিলাম পাহাড় দেখাতে…..

অনিকেতের হাসির শব্দটা যেন দোল খেতে খেতে এগোচ্ছে ইছামতীর জলে। যেন অনায়াসে সীমান্ত পেরিয়ে ছুঁয়ে ফেলবে ভিন দেশের মাটি। নদীর জলে সোনালি-কমলা রঙ গুলে দিয়েছে আগুনে আকাশ। সেই রঙ লেগে যাচ্ছে ওর গালের টোলে, চোখের তারায়। কনেদেখা আলোয় অনিকেতের দিকে তাকিয়ে জয়ী বুঝতে পারছিল জলের গন্ধ মাখা হাওয়ায় ভেসে চলে যাচ্ছে তার ভিতরে অনেক দিন ধরে জমে থাকা বিষণ্ণতার মেঘ। জীবনের সুগন্ধ নিঃশব্দে ঘিরে ধরছে। বুক ভরে শ্বাস নিয়ে জয়ীতা বলল,

ঠিক আছে চল্, চেষ্টা করে দেখি তাহলে।

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

2 thoughts on “short-story-ichamotir-choya

  1. অপূর্ব একটি ছোটগল্প পড়লাম। ঝরঝরে ভাষায় তরতর করে এগিয়েছে গল্পটি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *