short-story-luck

লাক
অনুষ্টুপ শেঠ


মেদিনীপুরে আসাটা একেবারে আনপ্ল্যান্ড, যাকে বলে হুট করে হয়ে গেল। অজয় ওর কাজে যাওয়ার প্ল্যান করছিল, কথাটা কানে আসতেই সুনন্দা ঝুলে পড়ল সঙ্গে যাবে বলে।

অবশ্য ‘ঝুলে পড়া’-টা অজয়ের ভাষা। সুনন্দা আসলে বেশ কিছু সময় ইতস্তত করার পর মৃদু গলায় বলেছিল, “অনেকদিন কোথাও যাইনি… আমিও তোমার সঙ্গে একটু ঘুরে আসি না?”

‘ঝুলে পড়া’ মানে আবদার। সুনন্দা আবদার করে না। করার সাহস পায় না বলা ভালো।

অজয় কাচের সেন্টার টেবিলে পা তুলে বসে ফোনে কীসব করছিল। মুড ভালো ছিল মনে হয়, একদম এক কথাতেই রাজি হয়ে গেল।

“যাবে? তা চলো। ওদিকে ভালো একটা আর্কিওলজিক্যাল সাইট আছে বলল, পাথরা, ফেরার পথে ঘুরে আসব।“

কিন্তু যাবার দুদিন আগে থেকে বাবুর আর গা নেই। বারকয় বলার চেষ্টাও করেছিল, ‘অনেকদূর, রাস্তায় কষ্ট হবে’, ‘আমি তো কাজ করব, তুমি বোর হবে’ ইত্যাদি। সুনন্দা শুনেও না শোনার ভান করেছে। মুখে কেমন ঘুরবে, কী দেখবে এসব বলার সময়ে ডগমগ ভাব এনেছে।

মন যে দমে যায়নি, তা না। কিন্তু নিজেই নিজেকে ধমকেছে ভুলভাল ভাবার জন্য।

আসলে অজয় যখন ফোনে “আরে তোমায় নিয়ে যাব কী করে, এবার তো…” বলছিল, ও ঠিক তখনই রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে অজয়ের পিছনে এসে দাঁড়িয়েছিল। সুনন্দার উপস্থিতি টের পেয়েই অজয় ফোন রেখে ওর সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেছিল।

অফিসেরই কোনও জুনিয়র ছেলে নিশ্চয়, বসের সঙ্গে কাজ শিখতে যেতে চাইছিল।

এতদিন দেখছে না লোকটাকে! একটু মেয়েদের বেশি পছন্দ করে, তার বেশি কিছু না। সে তো মেয়েরাও সুপুরুষ বলিয়ে-কইয়ে অজয়কে বেজায় পছন্দ করে, বিরক্তিকর রকমের বেশি! তাতে অজয়ের আর কী দোষ, অভদ্র তো আর হতে পারে না!

এসে অবধি অবশ্য সত্যিই বোর হচ্ছে সুনন্দা। অজয় সারাদিন মার্কেটে ঘুরছে, আর বিকেলের পর থেকে সারা সন্ধে ছেলেছোকরাদের সঙ্গে বসে ড্রিঙ্ক করছে। কাল ওদেরই একজন বলছিল, “বৌদিকে কোথাও ঘুরতে নিয়ে যান স্যার, এরকম ঘরে বসে ওনার ভালো লাগছে নাকি…”

হালকা সুরেই বলেছিল। তখনই অজয় ঝাঁঝিয়ে উঠেছিল, “কে বলেছিল আসতে! নিজে ঝুলে পড়ল, এখন আমি কী করব!”

দু পাত্তরের পর থেকেই অজয়ের কথাবার্তায় বাঁকা সুর লেগে যায়।

এসব সময়ে কিছু বলতেও লজ্জা করে সুনন্দার। উঠে গেছিল একটু পরে, ঘুম পাওয়ার অজুহাতে।

এখন অবশ্য ওসব কথা মাথায়ই নেই ওর আর। মন্দিরগুলোর গায়ের কারুকার্য দেখতে দেখতে কেমন বুঁদ হয়ে যাচ্ছে ও। কী সুন্দর করেছে দেখো টেরাকোটার কাজ!

মাছ। ফুল। চক্র। প্রহরী। মেয়ে…

উদ্ধত শরীর। লাস্যময় ভঙ্গিমা। দেখতে দেখতে গা শিরশির করে কেমন। ওড়নাটা আরেকটু টেনে জড়িয়ে নেয় সুনন্দা।

“যাবে?”

অজয়ের ছুঁড়ে দেওয়া প্রশ্নও কেমন অলস। আজকের রোদের মতোই। সামনে, খানিক দূরে, ঝিমিয়ে পড়ে থাকা কংসাবতী নদীটির মতোই। লরি দাঁড়িয়ে আছে একটা নদীর পাড়ে। স্থানীয় যে লোকটি ওদের কটা মন্দির আছে, কী দেখার আছে এসব বলছিল, সে-ই বলেছিল, বালির লরি। চালান যায়। খুঁড়ে খুঁড়ে বালি তুলে তুলে চড়া পড়ে গেছে সব, নদী শেষ।

“কী করবে বলুন। পেট ভরাতে হবে আগে তো! কত এরকম কাজ করা মূর্তি বিক্রি করে দিল লোকে মন্দির থেকে খুলে খুলে…”

বিষণ্ণ গলাটা মিলিয়ে গেছিল হাওয়ায়।

সুনন্দা অজয়ের কথার জবাব না দিয়ে ওদিকে আরেকটু এগিয়ে যায়। ভাঙা দুর্গাদালান। ইতস্তত করতে করতে ঢুকেই পড়ে। ঢুকে একটু অপ্রস্তুতে পড়ে যায়। জায়গাটা খালি না। একদিকে সার দিয়ে দাঁড়ানো কয়েকটা রোগা বাচ্চা জুলজুল করে ওদের দেখছে। তাদের পাশে, একটা পাথরের উপর উবু হয়ে বসে আছে এক বুড়ি। এই শীতেও বাচ্চাগুলোর কারও কারও গায়ে জামা নেই, পেট ফোলা, হাত পা সরু সরু। বুড়ির গায়ে একটা নীল চাদর, মাথায় ঘোমটা টানা।

“কন থে’ এলে?”

গলাটি মিঠে এই বয়সেও। সুনন্দা বলে, “এখন মেদিনীপুর থেকে। থাকি কলকাতায়।“

“দুইজন শুধু?”

মাথা নেড়ে হ্যাঁ বলে সুনন্দা। দেখার মতো কারুকাজ কিছু নেই ভিতরটায়।

“বিয়ে কদ্দিন হয়েছে?”

এবার বিরক্ত হয় সে। এত খবরে কী দরকার! তবু, মুখে বলে, “সাত বছর।“ “ওমা! এখুনও ছ্যানাপোনা নাই? শখ করে বুঝি?”

“না, হয়নি।“

উত্তরটা দিয়েই সুনন্দা মুখ ফিরিয়ে বেরিয়ে আসে। মাথাটা টিপটিপ করছে। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে, অজয় ডানদিকের শিবমন্দিরের চাতালে দাঁড়িয়ে দুটো অচেনা লোকের সঙ্গে গল্প করছে।

“ডাগদার দেখিয়েছ, অ মা?”

বুড়ি আচ্ছা ছিনে জোঁক তো! পিছু পিছু এসেছে উঠে!

আজন্মলালিত ভদ্রতা উত্তর দিতে বাধ্য করে।

“দেখিয়েছি অনেক। কিছুই তেমন পায়নি।“

“সোয়ামীকেও দেখেছে?”

সুনন্দা আস্তে আস্তে মুখ ফিরিয়ে বুড়ির চোখে চোখ রাখতে বাধ্য হয়। রীতিমতো রাগ হচ্ছিল ওর।

“অফ কোর্স! উনিও দেখিয়েছেন ওঁর ডাক্তারকে। হচ্ছে না, কী করা যাবে। আমার গাইনি বলছেন আনেক্সপ্লেইন্ড ইনফার্টিলিটি…”

সুনন্দার নিজেরই বোধগম্য হচ্ছিল না এই গ্রাম্য বৃদ্ধাকে সে এত কিছু বলছে কেন। ইংলিশ শব্দের আঘাতে চুপ করিয়ে দেবার উদ্দেশেই কি! বুড়ি একটুও চোখ সরায় না। স্থির ভাবে ওর দিকে চেয়ে থেকে বলে, “তোর মরদটা বাঁজা রে। হবেক্‌ নাই।“

“হোয়াট রাবিশ্‌!” রাগটা আর সামলাতে পারে না সুনন্দা। গলা তুলে ডাকে অজয়কে, “এই চলো, চলো!!! আমার মাথা ধরছে।“

ফেরার পুরো রাস্তা সুনন্দা গোঁজ হয়ে বসে রইল। অজয়কে কিচ্ছু বলতে ইচ্ছে করল না এসবের। এক দুবার ওকে কিছু বলে সাড়া না পেয়ে অজয়ও আবার ওর ফোনে ডুবে গেল।

কয়েকদিন পরে মাঝরাত্রে সুনন্দা উঠল বিছানা থেকে। না, ঘুম আসেইনি তো ভাঙবে কী করে! পায়ে পায়ে অন্য ঘরে এল ও।

অজয় অকাতরে ঘুমোচ্ছে। মুখ হাঁ হয়ে আছে, ঘরে হুইস্কির কটু গন্ধ। হাফ প্যান্টের নিচে লোমশ পা বেরিয়ে আছে। সুনন্দার গুছিয়ে দেওয়া স্যুটকেস দরজার পাশে খাড়া করা। অজয়কে কালকেই আবার ভোরের ট্রেন ধরতে হবে। আগামী পাঁচদিন বিহারের পথে ঘাটে বাজার চরে বেড়াবে সুনন্দার উচ্চপদস্থ সেলস অফিসার বর।

চেয়ে চেয়ে ঘুমন্ত মুখটা দেখে সুনন্দা। একটা মৃদু হাসি খেলে যায় তার মুখে। নিজের ঘরে ফিরে যায়, আবার শুয়ে পড়ার আগে একবার ফোনটা তুলে দেখে।

মেসেজের জবাব এসেছে। হাসিটা আবার ফিরে আসে সুনন্দার মুখে।

বছরখানেক আগে প্রসন্ন নামের অবাঙালি ছেলেটা নিচের ফ্ল্যাটে ভাড়া নিয়ে এসেছিল। শুরু থেকেই ছেলেটির চোখের ভাষা বেশ স্পষ্ট বুঝতে পারত সুনন্দা। কয়েক সপ্তাহ না যেতেই, ওর সঙ্গে এক সময়ে মর্নিং ওয়াক শুরু করল ছোকরা।

“কে বলবে আপনার বয়স তেইশ চব্বিশের বেশি…”

“আপনাকে এত ফ্রেশ লাগে রোজ… দিনটাই সুন্দর হয়ে যায়…”

“পিওর বেঙ্গলি বিউটি হো আপ ভাবি…”

প্রশংসাগুলো উপভোগ করত সুনন্দা। তারপর একদিন ফোন নাম্বার চাইল। দোনামনা করে নিজের নাম্বার দেয়নি ও, একটা পুরোনো সিম ছিল, এক কাজের মেয়ের নামে নেওয়া, তাকে ছাড়িয়ে দেবার পর আর ফেরত দেওয়া হয়নি – সেটাই দিয়েছিল।

প্রসন্ন প্রথমে নানারকম মজার জোকস পাঠাত, তারপর শুরু হল ইঙ্গিতপূর্ণ কথাবার্তা। কফি খেতে যেতে ডাকত। ফ্ল্যাটে আসতে বলত। ওর সঙ্গে ঘুরতে যেতে বলত। ওরা মেদিনীপুর বেড়াতে যাবার আগের দিন প্রায় স্পষ্টই কাকুতিমিনতি করতে শুরু করছিল পিছনের দিকটায় নিরিবিলি পেয়ে।

“ভাবি, মুঝে পতা হ্যায় আপ খুশ নেহি হো। একবার আমায় বিশ্বাস করে দোস্তি করে দেখুন না! আর কিন্তু আমি থাকব না কলকাত্তা, জব চেঞ্জ করেছি, পুনে চলে যাচ্ছে সামনের মাসে।“

কেন প্রশ্রয় দিয়েছিল সুনন্দা এতটা? ওর নিজেরও জানা নেই। হয়তো এই অনন্ত মন খারাপ আর ক্লান্তিকর জীবনে একটু উৎসাহ আসত ছেলেটার কথা শুনে।

কারও বাড়ি তো আর যাবার উপায় নেই…

“তোমরা কী করছ বলো তো? ইচ্ছে করে আটকে রাখছ নাকি?”

“এখনকার কত ওষুধবিষুধ শুনি বৌমা, তাতেও হচ্ছে না?”

“অজয়, আমার মামাবাড়ির ওখানে একবার জোড়ে পুজো দিয়ে এসো বাবা… খুব জাগ্রত, কতজনের ঐ করেই ফুটফুটে ছেলে হল!”

“আচ্ছা অজয়দা, আর কতদিন উড়ে বেড়াবে গো তোমরা দুটিতে? আমাদের তো বেটুকে নিয়ে নাজেহাল দশা হচ্ছে, কীইইই যে হিংসে হয় তোমাদের দেখলে…”

“তুই আরেকটা সেকেন্ড ওপিনিয়ন নে না, এ তো কিছু হচ্ছে না…”

শ্বশুরমশাই, খুড়শাশুড়ি, অজয়ের বন্ধুর মা, নিজের খুড়তুতো ভাইয়ের বৌ, এমনকী নিজের কলেজের বান্ধবী। কারও মুখে যেন আর কথা নেই।

আর প্রতিবার, প্রতিবার সুনন্দার অন্ধকার হয়ে আসা চোখের সামনে ঝলসে উঠবে সেই দৃশ্য – মুখটা বিকৃত করে খেঁকিয়ে উঠছে অজয়, “আমি বার বার তোমার সঙ্গে যেতে পারব না! ইট’স নট মাই প্রবলেম!”

হ্যাঁ, মহিলা গাইনিকে দেখাবে না বলে, নিজের চেনা ডাক্তারকে দেখিয়ে এসেছিল অজয়। গর্বভরা গলায় রিপোর্ট পড়ে শুনিয়েছিল সুনন্দাকে, সমস্ত খুব খুব ভালো।

অথচ বুড়িটা হুট করে অমন একটা কথা বলে দিল!

আর সে কথা পাগলা ভীমরুলের মতো সুনন্দার মাথায় ঘুরতেই লাগল, ঘুরতেই লাগল… যতক্ষণ না ও জীবনে প্রথমবার অজয়ের দেরাজ থেকে আলমারির চাবি চুরি করে নিজের কাছে লুকিয়ে রাখল, যতক্ষণ না অজয় অফিসে বেরিয়ে যাবার পর সেই চাবি দিয়ে আলমারি খুলল, লকার খুলল, খুঁজে খুঁজে রিপোর্টটা বার করল, যতক্ষণ না বার বার করে পড়ে নিশ্চিত হল যে স্পার্ম কাউন্ট আর মোবিলিটি দুটোই ভীষণ কম বলছে সেই রিপোর্ট।

গাইনি ওর কোনও দোষ খুঁজে পায়নি। ডাক্তার বহু আগেই অজয়ের “প্রবলেম” জানিয়ে দিয়েছিল।

কিন্তু অজয় ওকে জানায়নি।

অতএব, ওর নিজের কাছেও, এত বছর ধরে, ব্যাপারটা তার একার প্রবলেম হয়ে থেকেছে। এত বছর ধরে ও ঘরে বাইরে সর্বত্র সিঁটিয়ে, মাথা নিচু করে, অপমান আর কষ্ট গিলে গিলে দিন কাটিয়েছে।

এই রিপোর্ট ছাড়াও আরও অনেক কিছু মজুত ছিল অজয়ের লকারে, যা নিয়ে তুলকালাম করা চলে। ছেলেদের উপহার যা সুনন্দার জ্ঞানত কেউ অজয়কে দেয়নি, একটা মেয়েদের সোনার লকেট “বি” খোদাই করা…

কিন্তু সুনন্দা সেসব কিছুই করল না। এই নিজে হাতে সাজানো গোছানো পর্দা টেবিল ক্লথ পুতুল শোপিসের, এই আয়েসী বালিশ আর এসির নরম ঠাণ্ডা হাওয়ার, এই ইচ্ছেমতো আঙুল চালিয়ে যা খুশি কিনে ফেলার সুবিধার মায়া কি কম নাকি! বদলে গতকাল সে দুপুরে পাবদা মাছের ঝাল রান্না করেছে ধনেপাতা দিয়ে, নিজের চূড়ান্ত অপছন্দের কটকটে হলুদ শার্টিটা ইস্ত্রি করে দিয়েছে নিঃশব্দে, বরাবরের মতো দিন গুনে প্রেশারের ওষুধ ভরে দিয়েছে স্যুটকেসে।

ও হ্যাঁ, সব সেরে শুয়ে পড়ার আগে প্রসন্নকে মেসেজটাও করেছে অবশ্য।

ভেবেচিন্তেই করেছে। প্রসন্ন তো বলেইছে এ মাসের পরেই কলকাতা ছেড়ে চলে যাবে। তাছাড়া সামনের জুনে ওরাও ওদের নতুন কেনা ফ্ল্যাটে শিফট করে যাবে। কাজেই ভবিষ্যতে আর কখনও দেখা হয়ে যাওয়ার চান্স নেই বললেই চলে।

এই সিমটা ফেলে দেবে নষ্ট করে।

“চেষ্টা চালিয়ে যান, মিসেস বসু! আমাদের হাতে যা ছিল তো করেইছি, এবার আপনার লাক!”

শেষ ভিজিটে বলেছিলেন ডক্টর মুখার্জি।

লাকই বটে! অজয়ের ট্যুরের কথা শুনেই মনে মনে কর গুনেছিল সুনন্দা – হ্যাঁ, ঐ পাঁচদিন ফার্টাইল পিরিয়ড পড়ছে।

পাশ ফিরে চোখ বোজে ও। কাল সন্ধ্যায় প্রসন্নকে ফ্ল্যাটে আসতে বলেছিল, একটু আগে সম্মতিসুচক জবাব এসেছে।

পরশুও বলবে। তার পরের তিনদিনও।

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

2 thoughts on “short-story-luck

  1. Predictable গল্প কিন্তু সহজ ভাষার টানে পড়ে ফেলতে হয়.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *