দেবতোষ দাশ
আজ দোল। গত কয়েকদিন একটা সর্বনেশে হাওয়া বইছে। চৈত্রের সবে শুরু। হাওয়াটা ফাল্গুন পার করে চৈত্রেও ঢুকে পড়েছে। ঘুম থেকে উঠে, রাস্তার টাইমকলে দাঁত মাজার সময়, গতরাতে দেখা ভাঙা-স্বপ্নের কথা মনে পড়ল নন্দলালের। চৈত্রপবন নাকি স্বপ্ন, সকাল সকালই একটু ঘেঁটে দেয় নন্দকে। বিভ্রান্ত নন্দ পিছু নেয় স্বপ্নের।
এক গ্লাস লাল চা মায়ের হাত থেকে প্রায় ছিনিয়ে নেওয়ার সময় একটু চলকে পড়ে হাতে। মা ‘উঃ’ বলে আঁতকে ওঠে। নন্দ ওঠে না। তিনটে বাসি রুটি চা দিয়ে খেয়ে নন্দ বেরোয় অটো নিয়ে। পইপই করে মা বেরোতে বারণ করে, নন্দ শোনে না। আজ দোল, বেরোবার দরকার নেই। ঘরে থাক। মায়ের নিষেধ উড়িয়ে দিয়েই সস্তার একটা নীল জিন্স আর লাল টি-শার্ট গলিয়ে বেরিয়ে যায় সে। মা চিৎকার করে, ‘নেশাভাঙ করিস না নন্-দো-ও-ও!’
মোড়ের মাথায় দাঁড়িয়ে দিবাকর অকারণে দাঁত কেলাচ্ছিল, সে-ও বলল আজ না বেরোলেই ভালো। দিবাকর ঠাকুর গড়ে। তার চালার বাইরে রোদে, নগ্ন এক প্রতিমা দণ্ডায়মান। এই চৈত্রে প্রতিমা কেন, কে জানে। পুজো-টুজোর তো ঢের দেরি। মূর্তির জোড়া নিটোল বক্ষ নন্দ’র নজর টানল। চোখ নামায় নন্দ। সকালের বাজার টপকে, গাড়ি বাঁয়ে মুড়ে গলি থেকে বেরোতেই উন্মুক্ত রাজপথ। ঘড়িতে তখন বেলা দশটা। গতি বাড়িয়ে অটো ছোটাতেই আবার মনে পড়ে গেল গতরাতের স্বপ্নের কথা। পামলুর কথা। তাকে অটোয় বসিয়ে সে বেরিয়ে পড়েছে অজানার দিকে। পামলুকে সে ভালোবাসে।
অটোয় চাপিয়ে নিয়মিত সে চারটি মেয়েকে ভিক্টোরিয়া ইন্সটিটিউশনে নিয়ে যায়। ইশকুলের বাঁধা ট্রিপ। সকাল-বিকেল আনা-নেওয়া করলেই মোটা টাকা। গরমের ছুটি, পুজোর ছুটিতে ডিউটি না-করেও পুরো মাইনে। ইশকুলের বাচ্চা নিতে পছন্দ করে নন্দ। মাধ্যমিক পর্যন্ত পামলুও যেত তার অটোয়। বছর খানেক হল পামলুর বাবা গাড়ি কিনেছে। আর যায় না সে নন্দ’র অটোয়। কিন্তু নন্দ তাকে এখনও সওয়ারি করে অটো ছোটায়, মনে মনে। সেই পামলু কাল স্বপ্নে এসে বলল, নন্দদা, আমায় দূরে কোথাও নিয়ে যাবে, বহুদূরে! পামলুকে পিছনের সিটে বসিয়ে, অটো চালু করে, নন্দ সত্যিই পাড়ি দেয় বহু দূর।
মসৃণ সেই শুনশান রাস্তা আর শেষই হতে চায় না। পামলু হেসে বলে, ‘রাস্তা কখনও শেষ হয় নাকি! রাস্তা আনলিমিটেড! ড্রিমও!’ কিন্তু রাস্তাটা সত্যিই শেষ হল আর শেষ হল বিশাল এক বটগাছের গোড়ায়। অটো থেকে নামল পামলু। দু’হাত ছড়িয়ে হেলিকপ্টারের মতো খানিক ঘুরল। জড়িয়ে ধরল নন্দকে। তারপর সাপটে চুমু খেতে উদ্যত, ও মা, পামলুকে থমকে দিয়ে, বড় একটা পাখি বিষ্ঠা দিয়ে ভরিয়ে দিল নন্দ’র মাথা। পাখির পায়খানা-ভরা মাথা দেখে নন্দকে ছেড়ে হাসতে শুরু করল পামলু, হাসতে হাসতে তার হেঁচকি উঠে গেল আর ঘুম ভাঙল নন্দ’র।
ভাঙা স্বপ্নটাকে অটো নিয়ে তাড়া করে নন্দ, আজ দোলে সে পামলুকে রঙ মাখাবেই। আসলে স্বপ্নটা তো কেবল স্বপ্ন নয়, সত্যি। পামলু তো তাকে একদিন সত্যি সত্যিই বলেছিল বহুদূরে নিয়ে যাওয়ার কথা। বলেছিল, ‘জানো নন্দদা, আমার না অনেক দূরে চলে যেতে ইচ্ছে করে, নিয়ে যাবে আমায়?’ শুনে কেঁপে গিয়েছিল নন্দ। আয়নায় পামলুর মুখ। হাসি আর চোখে প্রশ্ন। ‘নিয়ে যাবে আমায়?’ বাকিরা নেমে গিয়েছে যে-যার বাড়ির দোরগোড়ায়, পামলু তখন শেষ যাত্রী। সেই আকুল জিজ্ঞাসা আর দুর্জ্ঞেয় হাসি আয়নায় দেখে, সেদিনই স্বপ্নের ভিতর ঢুকে পড়েছিল নন্দ, আর বেরোতে পারেনি।
বাড়িতে আজ নেই পামলু। সে জানে পামলু কোথায় গিয়েছে। ওর বন্ধুরাই কাল অটোয় বলাবলি করছিল বাগানবাড়িতে হোলি খেলার কথা। ওরা দোল বলে না, বলে হোলি। হইহই হাসিতে একে অন্যের গায়ে গড়িয়ে পড়তে পড়তে বলছিল, ‘কাল খুব মজা হবে!’
শখেরবাজার পেরোয় নন্দ। অটো চলে বাগানবাড়ির দিকে। রাস্তা শেষ হয়। গাড়ি থামায় মস্ত গেটের সামনে। বন্ধ। ডিজে চলছে। ফটকের ফাঁকে চোখ রেখে দেখে, ভিতরে চলছে তুমুল হুল্লোড়। রঙ মেখে সবাই ভূত, আলাদা করে চেনার জো নেই। বালাম পিচকারি’র সঙ্গে নাচ চলছে উদ্দাম। জিন্সের শর্টস আর পেটকাটা টপ দেখে চিনতে পারে পামলুকে। একটা ছেলে নাচছে পামলুর সামনে আর বারবার ছুঁতে চাইছে। ছেলেটা যতবারই গায়ে হাত দিতে চায়, হাত দিয়ে বাধা দেয় পামলু, নাচতে নাচতেই। ছেলেটার ভঙ্গিই বলে দিচ্ছে বাগানবাড়িটা ওর।
‘পামলু-উ-উ-উ!’
নন্দ’র চিৎকারে, কেন কে জানে, থেমে যায় ডিজে। নাচও। সকলে চায় গেটের দিকে। নন্দ কোনও রকমে একটা হাত গলিয়ে ডাকে আবার। ‘পামলু-উ-উ-উ!’ গেটের কাছে দৌড়ে আসে পামলু। পিছনে সেই ছেলেটাও।
‘কী ব্যাপার নন্দদা, তুমি!’
নন্দ’র বাঁ হাতে তখন আবিরের ঠোঙা। ডান মুঠোয় লাল আবির। হাসে পামলু। নন্দও। এগিয়ে যায় পামলু। চোখ বুজে বাড়িয়ে দেয় মুখ। গেট গলে নন্দ’র হাত এগোয় পামলুকে ছুঁতে। কিন্তু এবারও সে ছুঁতে পারল না পামলুকে। কবজিতে প্রবল আঘাত, আবির উড়ে যায় হাওয়ায়। হাতটা বের করে নেওয়ার আগেই, ছেলেটা নন্দ’র হাতটা মুচড়ে দেয় সজোরে। কঁকিয়ে ওঠে নন্দ। ছেলেটাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় পামলু। ছেলেটা চিৎকার করে, ‘হাও ডেয়ার হি! গা-আ-আর্ডস!’
পামলু লোহার ফটকের ফাঁক দিয়ে দেখে যন্ত্রণাক্লিস্ট নন্দকে। আবিরের ঠোঙাটা পড়ে আছে রাস্তায়। বড় ফটকের মধ্যে ছোট্ট ফটক খুলে, একজন রক্ষী এসে যখন ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছে নন্দকে, নন্দ শেষবারের মতো দেখে, ছেলেটা জড়িয়ে ধরেছে পামলুকে। পামলু বাধা দিচ্ছে, কিন্তু ওর বাধা অগ্রাহ্য করেই ছেলেটা জড়িয়ে চুমু খায় ওকে। হইহই করে, হাততালি দিয়ে সকলে ছেলেটার বিজয় উদযাপন করে। চিৎকার করে নন্দ আবার এগিয়ে যায় গেটের দিকে। গালাগাল করে ছেলেটাকে। আরেকজন রক্ষী ছোটো গেট গলে বেরোয়। দু’জনে মিলে প্রায় মারতে মারতে ভাগিয়ে দিতে চায় নন্দকে। ওদের হাত ছাড়িয়ে গাড়িতে উঠে নন্দ ইঞ্জিনের চাবি ঘোরায়। চালু করে অটো। পিছনে আবার শুরু হয়ে গিয়েছে ডিজে। বালাম পিচকারি, জো তু নে মুঝে মারি, তো সিধি সাধি ছোড়ি শরাবি হো গ্যয়ি …।
সর্বনেশে হাওয়াটা এখনও বইছে। গাড়ি নিয়ে উদাসীন এগোয় নন্দ। রঙ-মাখা একটা ভূতের দল হল্লা করতে করতে রাস্তা দিয়ে এগোচ্ছে। কারো গায়ে জামা নেই। জামাগুলো ছিঁড়ে পরপর গিঁট মেরে লম্বা করে, রাস্তার বাম প্রান্তের বাতিস্তম্ভ থেকে ডান প্রান্তের স্তম্ভে লটকে দিচ্ছে দু’জন। দলটাকে সাবধানে টপকায় নন্দ। ডানহাতটা টনটন করছে। তার থেকেও বেশি যন্ত্রণা হচ্ছে বুকের ভিতরে। চোখ বুজে এগিয়ে আসা পামলুর মুখটা মনে পড়ে। পামলু সাদাসিধে মেয়ে হতে পারে কিন্তু মাতাল সে হয়নি, লজ্জায় রাঙাও হয়নি, বরং রাগে লাল হয়েছে, দূর থেকেই ওর শরীরী ভাষা দেখে বুঝেছে নন্দ।
রাগের ঝাঁঝ মাথা দখল করছে। ছেলেটার উদ্ধত চাহনি, হুংকার ভুলতে পারে না। সামান্য আবির মাখাতে বাধা দিল, কেবল তাই নয়, মুচড়ে দিল হাত! জোর করে চুমু খেল পামলুকে! বাজারের দিকে গাড়ি ঘোরায় নন্দ। আক্রামের চায়ের দোকানের আগে গাড়ি রাখে। স্পেশাল চা না-খেলে এই রাগ পড়বে না।
বেঞ্চে বসে চায়ে চুমুক মারতেই সামনে আটকে যায় চোখ। ফ্যাশন কর্নারের এক কর্মচারী, দোকানের বাইরে রাখা, মেয়ে-পুতুলটার জামা বদলাচ্ছে। এই পুতুলটাকেই কখনও পরায় স্কার্ট-ব্লাউজ, কখনও চুড়িদার, আবার কখনও শাড়ি। পুতুলের পোশাক কখনও বদলাতে দেখেনি এর আগে। লোকটা শাড়িটা খুলে নেয় পুতুলটার গা থেকে। ভাঁজ করে রাখে। তারপর ব্লাউজ। সফেদ সেই নগ্নিকার দিকে হাঁ করে চেয়ে থাকে নন্দ। আজ জিন্স-টপ পরাবে। প্রস্তুতি নেয় লোকটা। চোখ নামায় নন্দ। তারপর রাগ, গ্লানি আর অপমানের পরতে, গরম চায়ের স্পর্শ পেতে যতটুকু সময়, তার মধ্যেই ঘটে যায় পরবর্তী ঘটনা।
হল্লা কানে আসে। চুমুক দিয়ে মুখ তুলে দেখে, রাস্তার রঙ-মাখা ভূতবাহিনী ঘিরে ফেলেছে পুতুলটাকে। একজন রঙ মাখায় তার দুই গালে। আরেকজন তার বাম বুকে। অন্যজন দক্ষিণে। হ্যা-হ্যা করে হাসে বাকিরা। কর্মচারী বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। তাকে বাঁদুরে রঙে ভূত বানায় নিমেষে। চকিতে এক মত্ত, নগ্ন পুতুলের বুকে দুই হাতে রঙ মাখিয়ে, মুখ ঘষতে থাকে, নাবাল হাতির মতো। বাকিরা হইহই করে তাকে মদত দেয়। নিরেট নগ্নতা, কারণবারি বা দোলের সর্বনেশে হাওয়া, যে কোনও প্ররোচনাতেই হোক বা সম্মিলিত, ছেলেটি তারপর নগ্নপুতুলটির ওপর যা করে, তাকে বলাৎকারই বলে।
পুতুলটিকে জড়িয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়ে মেঝেয়। একটি হাত খুলে যায় পুতুলটির। নড়ে যায় একটি পা। ছেলেটি তবু ছাড়ে না। উদ্ধত দুই স্তন আঁকড়ে সে যেন পিষে ফেলবেই সেই নিষ্প্রাণকে। বরং তার অতিসক্রিয়তা দেখে, পুতুলে প্রাণপ্রতিষ্ঠা হয়েছে জাতীয় ভ্রম হতে পারে। আর পারে না নন্দ। চা ফেলে, চিৎকার করতে করতে ছুটে যায়। ঝাঁপিয়ে পড়ে ছেলেটার ওপর। উন্মত্তের হাত থেকে বাঁচাতে চায় পুতুলটিকে। পারে না। সম্মিলিত আক্রমণে সে-ও গড়াগড়ি খায় মাটিতে। মেঝেতে মাথা ঠুকে দেয় কোনও সবল থাবা। লাথির পর লাথি আছড়ে পড়ে শরীরে।
নিমেষে ভিড় হয়ে গেলেও, নগ্ন পুতুল বা নন্দ, একজনকেও বাঁচাতে এগিয়ে আসে না কেউ। হল্লা করতে করতে চলে যায় বাহিনী। হাত-পা সব ছড়িয়ে আছে চারপাশে, হাতের কাছে একটা ময়লা গামছা পেয়ে, নন্দ যত্নে ঢেকে দিয়েছে পুতুলটির খণ্ডিত অনাবৃত শরীর। তাকে কোলে নিয়ে ভেউভেউ করে কাঁদে। ঠোঁট ফেটে ফুলে উঠেছে। জমাট বেঁধেছে রক্ত। চায়ের দোকানদার আক্রাম দৌড়ে এসে জল দেয় নন্দকে। মুছে দেয় রক্ত। নন্দ’র কান্না থামে না।
উপস্থিত কোনও দর্শকের স্মার্টফোন বাহিত হয়ে সেই দৃশ্য ঢুকে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ার অপার্থিব জগতে। দোলের হই ও হুল্লোড় থিতিয়ে আসার পর সেই ভাইরাল ভিডিও নিয়ে চর্চা শুরু হয় বিস্তর। ম্যানিকিন হলেও, বলাৎকার তো বলাৎকারই! সপ্রাণ অথবা নিষ্প্রাণ, উদ্দেশ্য যখন রেপ, তখন অবশ্যই এই কাজ রেপ! এর বিপরীতে অনেক বলেন, এটা বাড়াবাড়ি, নিষ্প্রাণ জড়বস্তুর আবার রেপ কী! এমন মন্তব্যও লেখা হয়ে যায়— তাহলে তো এবার গরুও গোয়ালার বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করবে! দেওয়ালে দেওয়ালে ঘুঁটের মতো আছড়ে পড়ে জনতার বিভিন্ন বয়ান।
সেদিন সন্ধ্যায় নন্দকে চিহ্নিত করতে পারে বৈদ্যুতিন সংবাদ মাধ্যম। রাত আটটার টক-শোয়ে, উজ্জ্বল আলো ও ক্যামেরার সামনে এনে বসান হয় নন্দকে। সেই অনুষ্ঠানে হাজির আরও একজন। এক ম্যানিকিন। নগ্নিকা। নন্দকে হতবাক করে, সঞ্চালক তাকে অভিনয় করে দেখাতে বলেন, কীভাবে সে ম্যানিকিনের সম্মান বাঁচাতে চেষ্টা করেছিল। তিনি নন্দ’র দিকে এগিয়ে দেন নগ্ন ম্যানিকিনের শরীর। ফোলা ঠোঁট নিয়ে অবসন্ন নন্দ হাঁ হয়ে থাকে কিছুক্ষণ, তারপর কেঁদে ফেলে। দ্বিতীয়বার।
পরেরদিন সেই ঘটনা নিয়ে আরও সরগরম হয় অ-শরীরী মহল্লা। দোলের দিনের ঘটনা বা ঘটনা পরম্পরা নিয়ে হল্লা ওঠে। খবরের চ্যানেলের আচরণ নিয়ে শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। লেখক-বুদ্ধিজীবী-উকিল-মনোবিদ গরম করেন পাড়া। কবিতা লেখেন কবিকুল। মিমস ও কার্টুন সহযোগে দিন তিনেক উদ্বেল হয়ে ওঠে ছায়াদুনিয়া। ঘটনার জল এতদূর গড়ায়, একজন আইনজীবী উচ্চ আদালতে জনস্বার্থ মামলা পর্যন্ত ঠোকেন, কেন পুতুল-ধর্ষণও ধর্ষণ হিসেবে গ্রাহ্য হবে না!
এই তিনদিন হাতের মোবাইলে আর ঘরের টিভিতে কেবল নন্দ’র মুখ। গামছা-ঢাকা একটা ভাঙা-পুতুল বুকে জড়িয়ে হাপুস কাঁদছে সে। বুম-এগিয়ে-দেওয়া সাংবাদিকের প্রশ্নে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে কেবল। ঠোঁটের ক্ষত’য় চিনি লাগিয়ে দিতে দিতে মা অস্ফুটে বলে, ‘বেরোতে বারণ করেছিলাম, হাওয়াটা খারাপ ছিল, শুনলি না বাবা!’
তিন সপ্তাহ পর।
ন্যায়ালয়ে দ্রুত নিষ্পত্তি হয় জনস্বার্থ মামলার। চ্যানেলে চ্যানেলে শিরোনাম, যুগান্তকারী রায় আদালতের— ম্যানিকিনকে ধর্ষণও, এখন থেকে অপরাধ হিসাবে গ্রাহ্য হবে। পুলিশও তড়িঘড়ি মূল অপরাধী ও শাগরেদদের চিহ্নিত করে গ্রেফতার করে। অজস্র বুম এগিয়ে আগে আবার নন্দ’র মুখের দিকে, আপনার তো জয় হল, কী মনে হচ্ছে আপনার? বেবাক চেয়ে থাকে নন্দ। হুড়োহুড়ি আর ধস্তাধস্তিতে কাঁচুমাচু মুখে নন্দ, সংবাদ মাধ্যমের সামনে কেবল হাতদুটো জোড় করতে পারে। তারপর বেরিয়ে যায় অটো নিয়ে।
ধূ-ধূ রাস্তায় অটো নিয়ে সে আবার ঢুকে পড়ে তার স্বপ্নে। পামলু তাকে বহুদূর নিয়ে যেতে বলেছিল। অনন্ত সে পথ।
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন