“হ্যালো, দীপু ?”
“বলো অন্তু , এত সকালে ফোন করলে যে ? জরুরী কিছু? ”
অন্তরীপ কেমন অদ্ভুত গলায় বলে, “জরুরী কিছু না, কিন্তু খুব ইচ্ছে করল কথা বলতে। বিরক্ত করলাম না তো?”
প্রদীপ্তা হাসে, বলে, “না, না, বিরক্ত আর কীসের? আসলে কাল রাতে ঘুমোতে ঘুমোতে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল। তাই আজ, ছুটির দিন, দেরিতে উঠবো। ” হাই তোলে প্রদীপ্তা, সে এখনও বিছানা ছাড়ে নি।
শনিবারের দিন, এমনিতেও দেরিতে ওঠে। এই একটা দিনই তো একটু আরাম করার, একটু ঢিলেমি করার। সপ্তাহের বাকী ছ’টা দিন তো দৌড় আর দৌড়, টেনশন আর টেনশন। এমনকি রবিবারেও সোমবারের কাজের গোছগাছ করে রাখতে হয়।
মাথা কাত করে ফোনটা কান আর কাঁধের মাঝে আটকে প্রদীপ্তা কথা বলতে বলতেই বিছানা ছেড়ে ওঠে।
ওপাশ থেকে অন্তরীপ ভাঙা গলায় বলে, “আমার খুব মনখারাপ দীপু। ”
প্রদীপ্তা কোমল গলায় বলে, “কেন? কী হয়েছে? আবার বৌয়ের সঙ্গে ঝগড়া করেছ?”
অন্তরীপ ধরা গলায় বলে, “গতকাল দিনটাই ঝগড়া দিয়ে শুরু হল। সকালে বৌয়ের সঙ্গে ঝগড়া, সারাদিন কথা না বলে একা একা নিজের মধ্যে নিজে আটকে—আমি আর পারছি না দীপু। এইভাবে আমি আর পারছি না। সব ছেড়েছুড়ে পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করে। ”
প্রদীপ্তা বলে, “ঝগড়া মিটিয়ে নাও। এইভাবে ছেলেমানুষী করে কেউ? কী নিয়ে লাগল এবারে?”
অন্তরীপ ভাঙা গলায় বলে, “বৌয়ের অনেক অভিযোগ। আমার নাকি সংসারে মনোযোগ নেই, আমি নিজের বই পড়া আর লেখালিখি নিয়ে মগ্ন। এদিকে ছেলেটাকে মানুষ করতে হবে, বাড়ীঘরদোর সারাতে হবে, সবেতেই টাকার দরকার। এদিকে বাড়তি টাকা রোজগারের কোনো চেষ্টা নেই, ফালতু লেখালিখির পিছনে সময় দিচ্ছি। এইসব আরকি।”
প্রদীপ্তা বলে, “তাহলে সংসারে মন দাও। বাড়তি টাকা রোজগারের চেষ্টা কর। তোমার বৌ তো ঠিকই বলেছে। ছেলেটাকে মানুষ করার দায়িত্ব তো আছেই।”
দীর্ঘশ্বাস ফেলে অন্তরীপ বলে,” তাই করতে হবে মনে হচ্ছে। লেখালিখি ছেড়ে দিতে হবে। এতে তো অর্থাগম নেই কোনো।”
প্রদীপ্তা হাসে, বলে, “লেখালিখি ছেড়ে দিতে পারবে না তুমি। সেকথা বলে লাভ নেই। আমি সেসব দিনের কথা ভুলিনি। যাক সে কথা। কিন্তু লেখালিখি বজায় রেখেও সংসারে মন দেওয়া যায়, দায়িত্ব পালন করা যায়। ”
ওপাশ থেকে অন্তরীপের গলা কেমন কেঁপে কেঁপে আসে, সে বলছে, “তুমি আমার সেদিনের ভুল ভুলতে পারবে না, না? কোনোদিন ক্ষমা করতে পারবে না আমায়?”
প্রদীপ্তা হাসে, বলে, “ক্ষমা করার আমি কে অন্তু ? আর রাগও আমি করিনি। সত্যি তো, তুমি তোমার যা ধারণা সেই অনুসারে কাজ করেছিলে। তা ভুল কি ঠিক, সেটাই বা বলার কে আমি? দ্যাখো, আমাদের যোগাযোগ আছে আজও, সেটাই কি প্রমাণ করে না যে আসলে রাগ টাগ কিছু নেই আমাদের মধ্যে, কোনো ভুল বোঝাবুঝিও নেই।”
অন্তরীপ বলে, “আমি সেদিন কিছুই জানতাম না, অজ্ঞ, মূর্খ ছিলাম। তাই নিজের অজান্তে তোমার মনে আঘাত দিয়েছিলাম। কিন্তু বিশ্বাস কর, তারপর অনেকবার আমি চেষ্টা করেছি যোগাযোগের, অনেকবার। কিন্তু তুমি সম্পূর্ণ উধাও হয়ে গেলে। তোমার বন্ধুরা, আত্মীয়স্বজন, অন্য চেনা-পরিচিত কেউ তোমার কোনো খোঁজখবর দিতে পারল না। তুমি আমাকে ক্ষমাপ্রার্থনার সুযোগটুকুও দিলে না তখন।”
প্রদীপ্তা হাসে, ” ক্ষমাপ্রার্থনার কী আছে? আমি তো অন্যায় বলে ধরিনি তোমার কথা। তুমি যা মনে করেছিলে, তাই বলেছিলে। ব্যস। আমারও তখন মনে হয়েছিল পরিচিত বলয় থেকে উধাও হয়ে যাওয়াই ঠিক, তাই করেছিলাম। পরে তো আবার যোগাযোগ হল ঠিকই। ”
“হুঁ, তোমার প্রথম বই পাব্লিশড হবার পর আবার তুমি যোগাযোগ করলে। ততদিনে অনেক বছর কেটে গিয়েছে। তখন আর আমার আগের ভুল শুধরানোর উপায় নেই। ততদিনে আমার সংসার হয়েছে, ছেলে হয়েছে, আর আমার ফিরে যাবার পথ ছিল না।”
“ফিরতে কে বলেছে তোমায়? তোমাকে স্ত্রীপুত্র নিয়ে সংসারী দেখে সত্যি ভালো লেগেছে আমার। সেই কবি, সেই ভবঘুরে, যে বলতো শুধু দুনিয়া জুড়ে ঘুরবে আর লিখবে, কোনো বাধা মানবে না, সেই মানুষ তাহলে তাহলে সত্যি সংসারী হল।”
“নিয়তির কী পরিহাস দ্যাখো, সেইদিন তুমি নিজেই বাঁধতে চাইতে আমায়, সংসারী করতে চাইতে। থিতু হয়ে বসতে বলতে। প্রতিষ্ঠিত হবার চেষ্টা করতে বলতে। সেই তুমিই তারপর সব বাঁধন ছিঁড়ে উড়ে চলে গেলে মুক্তির আকাশে, আমিই বাধা পড়ে গেলাম সংসারের খাঁচায়। আর আমার মুক্তি নেই। ”
“খাঁচা কেন বলছ? সুন্দর করে সংসার করাও তো কৃতিত্বের। যারা তোমার আপনজন, তাদের খুশি রাখা তোমার কর্তব্য। ”
“হুঁ, কর্তব্য। সেইজন্যেই দাঁতে দাঁত চেপে সব সহ্য করছি। উপায় নেই। ঘরেও না পারেও না অবস্থা হয়েছে। পালাতেও পারি না, আবার সংসারও যন্ত্রণার। এসবই আমার প্রায়শ্চিত্ত দীপু, আমি এখন বুঝতে পারছি। তোমার উপরে অন্যায় করেছিলাম, তার প্রায়শ্চিত্ত।”
প্রদীপ্তা বলে, “অন্তু, অন্তু, শান্ত হয়ে শোনো একটু। প্রায়শ্চিত্তের কথা ওঠে না, তুমি তো কোনও অন্যায় করোনি। আমিই বরং সেদিন অবুঝ আর অধৈর্য্য হয়ে উঠেছিলাম। আসলে সেদিনের আমি নিজের কমফর্ট জোনটুকুর বাইরে ভাবতে পারিনি। একটা স্থায়ী উপার্জনের রাস্তা, একটা গোছানো সংসার, দু’টি ছেলেমেয়ে —এইসবের বাইরে ভাবতে পারিনি সেদিন। কিন্তু তোমার ব্যবহারেই সেদিন বুঝতে পারলাম বিপুল পৃথিবী পড়ে আছে এর বাইরে। শুধু শুধু অল্প কয়েকটা জিনিসের বাসনা বুকে আঁকড়ে পড়ে আছি ভীরুর মতন, যখন গন্ডীর বাইরে থেকে হাজার স্বপ্ন ডাকছে দু’হাত তুলে।”
প্রদীপ্তা চুপ করেছে, ওপাশ থেকে অন্তরীপের কথা আর আসে না, দীর্ঘশ্বাস আসে শুধু। একটু পরে অন্তরীপ বলে, “তুমি সমুদ্রে পাড়ি দেওয়া জাহাজ, এই অন্তরীপ ছেড়ে চলে গিয়েছ চিরদিনের জন্য। আচ্ছা, কোনোদিন কি তুমি ফিরবে না?”
প্রদীপ্তা হাসে, বলে, ” জানি না অন্তু, আমি কিছুই জানি না। সমুদ্রের স্রোত যেখানে নিয়ে যাবে… তুমি ভালো বলেছ, সমুদ্রে পাড়ি দেওয়া জাহাজ…. আজকাল তুমি আর কবিতা লিখছো না অন্তু?”
অন্তরীপ বলে, “কবিতারা ছেড়ে চলে গিয়েছে আমায়, ওরাও এই অন্তরীপ ছেড়ে ভেসে গিয়েছে অথৈ সমুদ্রে। অন্তরীপে পড়ে আছে শুধু হাওয়ার হাহাকার। কবিতারা হয়তো আর ফিরবে না কোনোদিন।”
প্রদীপ্তা বলে, “ফিরবে ফিরবে, ঠিক ফিরবে। তুমি লিখতে বসে যাও মন ঠিক করে নিয়ে। ওরা ফিরে আসবে। তোমার মনের বাগানের গাছটিতে মুকুল ধরেছে খবর পেলেই ওরা ফিরবে ঘরে ফেরা পরিযায়ী পাখিদের মতন। আজ রাখি তাহলে অন্তু, পরে আবার কথা হবে। ভালো থেকো। ”
কল এন্ড করার বোতামে চাপ দিয়ে কথা শেষ করে প্রদীপ্তা। ফোন রেখে দেয়।
হাল্কা পায়ে বসার ঘরের জানালার কাছে গিয়ে পর্দা সরায়, চেয়ার টেনে নিয়ে বসে। বাইরে শীতের শান্ত প্রকৃতি। পত্রমোচী গাছেদের ন্যাড়া চেহারা আর তারই মধ্যে মধ্যে কিছু চিরহরিৎ গাছের সবুজ অবয়ব। আজ একটু বেলা থেকেই তুষারপাত হবার পূর্বাভাস আছে।
চুপ করে বসে বাইরের দিকে চেয়ে রইল প্রদীপ্তা। চোখ খোলা, কিন্তু এসব দৃশ্য আজ ওর মনের মধ্যে পৌঁছচ্ছে না। মনের সমুদ্রের তলা থেকে ঝাঁক ঝাঁক মাছের মতন উঠে আসছে স্মৃতিরা। অন্তরীপ তার বন্ধু ছিল কলেজজীবনে। যদিও দু’জনের বিষয় ছিল আলাদা, তবু বন্ধুত্ব হয়েছিল দু’জনেরই সাহিত্যে আগ্রহের জন্য। প্রদীপ্তার ছিল কেমিস্ট্রি অনার্স আর অন্তরীপের অনার্স ছিল মডার্ণ হিস্টরিতে। অথচ ওরা ক্লাস শেষ হলে কাছের এক পার্কে গিয়ে নতুন প্রকাশিত কবিতা আর গল্প পড়ত, সেই নিয়ে আলোচনা করতো।
পাশ করার পর যখন প্রদীপ্তা একটা ছোটোখাটো চাকরি পেয়েছে একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে আর অন্তরীপ কিছু প্রাইভেট টুইশন করে, তখনই একসঙ্গে থাকতে শুরু করল তারা। তার আগে অন্তরীপ থাকতো মেসে, প্রদীপ্তা থাকতো এক দূর সম্পর্কীয় আত্মীয়ের বাড়িতে। তাই জরুরী ছিল নিজেদের একটা আস্তনা করার। দু’কামরার ছোট্টো ফ্ল্যাট ভাড়া করে খুবই শান্তি পেয়েছিল দু’জনেই। প্রদীপ্তার মাইনের টাকার প্রায় অর্ধেকই ভাড়ায় চলে গেলেও অভিযোগ ছিল না তার, অল্প সাধ্যের মধ্যেই যতদূর সম্ভব সাজিয়ে গুছিয়ে তুলছিল সব।
গান শেখার সুযোগ না পাওয়া নিয়ে চাপা দুঃখ ছিল প্রদীপ্তার। জানতে পেরে অন্তরীপ ওকে গান শেখার সুযোগ করে দিয়েছিল। নিজেই উদ্যোগ করে হারমোনিয়ম কিনে এনেছিল একদিন। প্রতি শনিবার বিকেলে ওর এক পরিচিতা গায়িকা, তাপসীর কাছে নিয়ে যেত ওকে গান শেখানোর জন্য।
মাস পাঁচেক নিয়মিত গিয়েছিল প্রদীপ্তা। তারপর তাপসীদির বিয়ে হয়ে গেল। তাপসীদি চলে গেল কয়েকশো মাইল দূরে শ্বশুরবাড়িতে। প্রদীপ্তার গানও বন্ধ হয়ে গেল তখনই, ধুলো জমলো হারমোনিয়মে। তখনই প্রদীপ্তা বুঝতে পেরেছিল গান তার প্যাশন ছিল না, ছিল বালিকাবয়সের একটা না-মেটা শখ মাত্র, ওই কয়েকমাসেই সেই শখ মিটে গিয়েছিল।
সেসব ছিল প্রথম বছরের কথা। দ্বিতীয় বছর থেকেই সব কেমন এলোমেলো হয়ে যেতে লাগল। সম্পর্কের মধ্যে কোথাও একটা যেন সূক্ষ্ম চিড় দেখা দিল কেজানে কীভাবে। তারপরেই সব কিছু আলগা হয়ে পড়তে লাগল।
টুইশন করে তখন মোটামুটি ভালোই আয় করছিল অন্তরীপ, কিন্তু তাতে তার মন ভরছিল না। একটা স্থায়ী চাকরির জন্য অধৈর্য্য হয়ে উঠছিল সে। কিন্তু চাকরি কোথায়? বেকার সমস্যা তখন ভয়াবহ অবস্থায় পৌঁছেছিল, তার সমাধানের কোনো সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছিল না।
অন্তরীপের মেজাজ দিন দিন গরম হয়ে উঠছিল। নিজেকে হীন মনে করতে শুরু করেছিল সে, একই সঙ্গে আবার তার জন্য দোষ দিত প্রদীপ্তাকে। সে প্রতিপালিত হচ্ছে বান্ধবীর উপার্জনের টাকায়, এটা ওর অহংকে বিপর্যস্ত করতে শুরু করেছিল।
প্রদীপ্তা অনেক বোঝাতে চেষ্টা করেছে তখন। বলেছে, “প্রতিপালিত কেন বলছ অন্তু? তোমার যা রোজগার, তা তো মন্দ নয়! আর যদি তা না ও হত, তাতেই বা কী? আমার উপার্জিত অর্থে তোমার অধিকার নেই কি?”
অন্তরীপ লেখালিখি শুরু করল তারপর। কয়েকটা লিটল ম্যাগে তার কিছু কবিতা আর কিছু গল্প বের হবার পর সে বদলে যেতে লাগল। হ্যাঁ, আগের সেই হীনম্মন্যতা কেটে গিয়ে তার বিপরীতভাব প্রবল হয়ে উঠল ওর মধ্যে। অনেকগুলো টুইশন ছেড়ে দিল, লেখালিখিতে সময় দেবে বলে। কেমন যেন ছন্নছাড়া জীবনযাপন শুরু করল। আজ কবি-সম্মেলনে যাচ্ছে, কাল লেখক-বন্ধুদের সঙ্গে চলে যাচ্ছে দু’তিনদিনের ভ্রমণে —এইরকম আনপ্রেডিকেটেবল হয়ে গেল অন্তরীপ। তখন প্রদীপ্তার আরেক জ্বালা শুরু হল। অতখানি ছন্নছাড়া মানুষকে গোছানো সংসারের মধ্যে ফিট করে নেওয়া তো সোজা নয়!
প্রায়ই ঝগড়া হত তাদের। প্রথমদিকে অল্পস্বল্প, তারপর মারাত্মক হয়ে উঠল। এক পর্যায়ে অন্তরীপ তকে জঘন্য অপমান করল, এমনকি মারধোরও করল। সেই ঘটনার পরই “চলে যাচ্ছি, চিরদিনের জন্য। তুমি ভালো থেকো। ” এই চিঠি লিখে রেখে নিরুদ্দেশ হয়ে যায় প্রদীপ্তা। নিজেদের শহর থেকে অনেক দূরে, পাহাড়ের কোলে এই ছোটো শহরের মিশনারি স্কুলে কাজ নেয়।
তারা শুধু লিভ-ইন রিলেশনে ছিল। সামাজিক বিয়ে, আইনী বিয়ে তাদের হয় নি। তাই আইনি কোনো জটিলতা ছিল না, ডিভোর্স নেবার দায় ছিল না। সমস্ত কিছু ফেলে রেখে তাই অত সহজেই চলে যেতে পেরেছিল প্রদীপ্তা।
হ্যাঁ, সেইটুকুর জন্য অবশ্য ভাগ্যকে ধন্যবাদ দেয় সে। নইলে ওই মানসিক অবস্থায় ডিভোর্সের মামলা লড়া তার পক্ষে সম্ভব হত না।
২।
কফি আর প্রাতরাশ নিয়ে ও ডাইনিং টেবিলে বসল না আজ। ছোটো সাইড-টেবিলটা টেনে নিয়ে গেল বসার ঘরের জানালার কাছে, সেইখানে বসে খেতে খেতে তুষারপাত দেখবে আজ। খাওয়া আর দেখা চলছিল, তার মাঝখানেই ফোন এলো। ওপাশে হৃদিতা।
“হ্যালো, প্রদীপ্তা? আজ বিকেলের প্রোগ্রাম মনে আছে তো?”
মনে পড়ে গেল প্রদীপ্তার। আজ বিকেলে মিশনের অরফ্যানেজে যাবার কথা। এখানে যে মিশনারি স্কুলে প্রদীপ্তা পড়ায়, হৃদিতাও সেই স্কুলেই পড়ায়। প্রতি তিনমাসে একবার তারা মিশনের অরফ্যানেজে যায়। সাধারনতঃ সপ্তাহান্তেই যায়। ওখানের বাচ্চাদের জন্য পোশাক, খেলনা, খাবার এইসব উপহার নিয়ে যায়।
মাঝে মাঝে বাচ্চারা বিশেষ অনুষ্ঠান করে, নাটক, নাচগান ইত্যাদির অনুষ্ঠান, আগে থেকেই খবর দেয়। আজ ওদের নাটক আছে একটা। ঈশ, এদিকে অ্যাতো স্নোফল শুরু হয়েছে! এখন অনুষ্ঠান হতে পারে কিনা কেজানে!
স্নোফল দেখতে দেখতে প্রদীপ্তা ভেসে যায় স্মৃতির উজানে। মনে পড়ে যায় আঠেরো বছর আগের কথা। তখন সে নিজেই পঁচিশ বছরের তরুণী। কিন্তু সংসার-অনভিজ্ঞা নয় মোটেই, সংসারের আঁচ তখনই ওর হৃদয়টি পুড়িয়ে পুড়িয়ে কালচে করে দিয়েছে। সেই তখনই সংসারে বীতস্পৃহ হয়ে সে এই মিশন স্কুলে এসে যোগ দিয়েছিল শিক্ষিকা হিসেবে।
তখন সে দু’মাসের অন্তঃসত্ত্বা। নাহ, অন্তরীপ জানতো না। অন্তরীপকে জানায় নি প্রদীপ্তা, ভেবেছিল তিনমাস পার হলে জানাবে। তার মাস পাঁচ পরেই সন্তান জন্মেছিল প্রিম্যাচিওর বেবি হিসেবে, বেঁচে রয়েছিল কয়েক ঘন্টা।
অকালমৃত সন্তানের স্মৃতিভার বয়েই তারপর থেকে বেঁচে আছে প্রদীপ্তা। তার সমস্ত কবিতা, সমস্ত গল্প, সবই ওই শোকের সমুদ্র থেকে উৎসারিত সোনালি রুপোলি ফসল। প্রথম কবিতার বই বের হবার পরে অন্তরীপ খোঁজ পেয়ে যায় তার, যোগাযোগও হয়, কিন্তু আজও অন্তরীপ জানে না তাদের সেই ক্ষণিকের অতিথি সন্তানটির কথা।
একমাত্র হৃদিতাই সব জানে। হৃদিতা তখনও এই স্কুলেই পড়াতো। সে বড় দিদির মতন আগলে রেখেছিল প্রদীপ্তাকে একেবারে শুরু থেকে। সেই দিশেহারা ভগ্নহৃদয় অবস্থা থেকে কিছুতেই প্রদীপ্তা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারতো না যদি না হৃদিতার শক্ত কাঁধ থাকতো তার সমস্ত কান্না ধারণ করে নেবার জন্য।
বাইরে তুষারপাত আরও বেড়েছে, একেবারে সাদা হয়ে তুষার পড়ছে। মাঝে মাঝে প্রবল হাওয়ার ঝাপ্টা আসছে, তখন তুষারকণাগুলো হাওয়ার সঙ্গে ঘুরছে।
সেইদিকে চেয়ে থাকতে থাকতে প্রদীপ্তা আঠেরো বছর আগের সেই দিনটায় ফিরে যায়। এইরকমই তুষারপাতের দিন ছিল সেদিনও। ছুটির দিন ছিল। প্রদীপ্তা কিছুই সেদিন সন্দেহ করেনি, তার নিজের শরীর সকালে একদম স্বাভাবিক ছিল। মুখহাত ধুয়ে চা-বিস্কুট খেতে শুরু করা মাত্রই গা গুলিয়ে উঠল। শুধু ফোনের কাছে গিয়ে হৃদিতাকে ফোনটুকু কোনোক্রমে করতে পেরেছিল। প্রচন্ড ব্যথায় দুনিয়া উথালপাথাল করছিল, কথাটুকু বলার পরেই ফোনটা হাত থেকে খসে গেল, মেঝের কার্পেটের উপরেই অচেতন হয়ে পড়ল ও।
হৃদিতাই সব ব্যবস্থা করেছিল, ছুটে এসেছিল তখনই। তারপরে ফোন করে অ্যাম্বুলেন্স আনিয়ে মিশনের হসপিটালে নিয়ে যাওয়া, ভর্তি করা, সবই করেছিল। সারাদিনে সেদিন তুষারপাত থামে নি, কমে বেড়ে কমে বেড়ে চলছিলই। আর হসপিটালে তখন প্রদীপ্তার জীবনমৃত্যুর মাঝখানে দুলতে থাকা।
সদ্যোজাতা কন্যাটিকে জীবন্ত অবস্থায় দেখা হয় নি প্রদীপ্তার, সমাধি দিতে নিয়ে যাবার আগে নার্স কয়েক মিনিটের জন্য ওর কোলে দিয়েছিল মৃত শিশুদেহটি। মেয়েটির নীলচে কপালে একটিমাত্র বিদায়চুম্বন সে দিতে পেরেছিল শুধু।
আজও তুষারপাতের দিনগুলোতে সেই ক্ষণিকাকে মনে পড়ে প্রদীপ্তার। মাঝে মাঝে মনে হয় সে নিজেই দায়ী ওর অকালজন্ম ও অকালমৃত্যুর জন্য। গর্ভে সন্তান থাকা অবস্থায় তার ওই ছিন্নভিন্ন মানসিক অবস্থাই হয়তো সন্তানটিকে বাঁচতে দিল না। তখন তো প্রদীপ্তার নিজেরও বাঁচতে ইচ্ছে করত না।
মাঝে মাঝে অন্তরীপকেও দায়ী মনে হয়। সে অমন না করলে তো প্রদীপ্তা ওভাবে সব ছেড়ে উদ্ভ্রান্তের মতন বেরিয়ে পড়ত না! আজ তো প্রদীপ্তাও বেঁচে আছে, অন্তরীপও বেঁচে আছে ভরা সংসার নিয়ে। শুধু সেই নিষ্পাপ শিশুটিই কোথাও নেই আর।
কোথা থেকে কচি গলার একটা হাসির আওয়াজ আসে। প্রদীপ্তা চমকে ওঠে। হাসিটা আরো স্পষ্ট এখন। কাপ রেখে উঠে দাঁড়াল সে, জানালার আরো কাছে এগিয়ে গেল। জানালার সামনেই প্রদীপ্তা দেখতে পেল তাকে, গোলাপী জ্যাকেট পরা একটি বাচ্চা মেয়ে, মাথায় লাল টুপি। খিল খিল করে হাসছে সাদা তুষারের মধ্যে। সেই আঠেরো বছর আগে প্রদীপ্তা যেমন দেখতো।
একমুহূর্তের জন্য ভয়ে কেমন অস্থির হয়ে গেল সে, মাথা চেপে ধরল দু’হাতে। দু’চোখ বন্ধ করল। ভাবতে চেষ্টা করল কী করবে এখন? হৃদিতাকে ফোন করবে? তারপর সেই সাইকিয়াট্রিস্ট, ডক্টর দেবব্রত সেনগুপ্তের কাছে আবার —যাহ, তা তো আর হবে না, ডক্টর সেনগুপ্ত তো মারা গিয়েছেন পাঁচ বছর আগে। মাথার ভেতরটা কেমন এলেমেলো হয়ে যাচ্ছে প্রদীপ্তার। অন্য কোনো সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে যেতে হবে।
সে মেঝের উপরে আস্তে আস্তে বসে পড়ল। বসে পড়তেই অস্থিরতাটা চলে গেল। আস্তে আস্তে চোখ খুলল সে, জানালার বাইরে আর কেউ নেই। দীর্ঘশ্বাস ফেলে প্রদীপ্তা দুই হাঁটুর উপরে মুখ রাখল, হাঁটু জড়িয়ে ধরে রাখল দুহাতে। ঐ অবস্থায় অল্প অল্প দুলতে দুলতে একটা অস্পষ্ট ছড়া বলে যেতে লাগলো, ছোটোবেলায় শোনা ছড়া একটা যার অল্প অংশই মনে আছে ওর।
সন্তানের জন্ম ও অকালমৃত্যুর পর হসপিটাল থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়ি ফেরার কিছুদিন পর থেকেই প্রদীপ্তার মানসিক অসুখ দেখা দেয়। মাঝে মাঝেই সে একটি বাচ্চা মেয়েকে দেখতে পেত, গোলাপী জ্যাকেট আর লাল টুপী পরা। বাচ্চাটা খিল খিল করে হাসতো আর মাঝে মাঝে ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদতো। মাঝে মাঝে ওকে এত কাছে দেখত প্রদীপ্তা, হাত বাড়ালেই যেন ছুঁতে পারবে!
হৃদিতা তখন দেখভাল করত অসুস্থ প্রদীপ্তার। সে নিজে ব্যবস্থা করে ডক্টর সেনগুপ্তের কাছে নিয়ে গিয়েছিল প্রদীপ্তাকে। ডক্টর সেনগুপ্ত দীর্ঘদিন চিকিৎসা করেছিলেন তার। তারপর অসুখ সারে। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে সে।
এত বছর পর আবার কেন ফিরে আসে সেই অসুখ? তাহলে কি সারে নি, শুধু লুকিয়ে ছিল এতদিন? কী করবে এখন সে? এতগুলো বছর তো কাটানো হয়ে গেল জীবন, সুখেদুখে কেটে তো গেলই, প্রচন্ড সার্থক না হলেও একেবারে নিষ্ফলও তো বলা যায় না। তাহলে এইবারে ছুটি নিলে কেমন হয়? সেই ক্ষণিকের অতিথি হয়তো অপেক্ষা করে আছে তুষারঝরা নির্জন পথে আজও? এবারে ওর হাত ধরতে পারে না প্রদীপ্তা? একসঙ্গে যাবে দু’জনে সেই অনেক দূরে যেখানের কথা কেউ জানে না?
ফোনটা ঝিঁঝিঁ করে কেঁপে ওঠে। ধরতে হবে। হৃদিতাই মনে হয়। হয়তো বিকেলের প্রোগ্রামটার জন্য। প্রদীপ্তার ইচ্ছে করছে না, একটা ঠান্ডা-ঠান্ডা অবসন্ন ভাব যেন বুকের মধ্যে। সেই আঠেরো বছর আগের যুবতী যেন ফিরে আসে, তার সমস্ত মানসিক অবসাদ নিয়ে। চারিদিকে যেন অচেনা সাদা অন্ধকার। তার ভিতর থেকে প্রচন্ড চেষ্টায় দেহটা টেনে তোলে প্রদীপ্তা। ফোনটা রিসিভ করে।
অচেনা নম্বর, ওপাশে এক অচেনা গলা। বলছে সে একটি প্রকাশনসংস্থার প্রতিনিধি, প্রদীপ্তার সাম্প্রতিক কাব্যগ্রন্থটির জন্য ওকে পুরস্কৃত করতে চায় ওঁদের সংস্থা। সামনের মাসের দশ তারিখে ওদের কবি-সম্মেলন, সেই দিন। নিমন্ত্রণ জানিয়ে কার্ড পাঠাবে। সম্মেলনের দিন গাড়িও পাঠাবে। প্রদীপ্তার ইচ্ছে করে বলে দিতে যে সে পুরস্কার চায় না, সে কোনো কবি-সম্মেলনেও যেতে চায় না। কিন্তু তাহলে উল্টোদিক থেকে হয়তো অনেক বেশি বকবক শুনতে হবে শেষপর্যন্ত রাজী হবার আগে অবধি।
খুব বিনয়ী গলায় সে তাই বলে, “খুবই সম্মানিত বোধ করছি। আপনাদের নিমন্ত্রণপত্রের অপেক্ষায় রইলাম। আজ আমার একটু কাজ আছে, ফোন রাখতে হচ্ছে। তার জন্য দুঃখিত, ক্ষমাপ্রার্থী।” কল এন্ড করে দিয়ে মেঝের কার্পেটের উপরে এলিয়ে পড়ে থাকে প্রদীপ্তা।
আজকে মাসের একুশ, সামনের মাসের দশ তারিখ দেরি আছে অনেক। তখন কোথায় থাকবে সে?
৩।
এখন প্রদীপ্তার সব কাজ থেকে ছুটি। এখন হসপিটালের বেডে শুয়ে শুধুই অপেক্ষা।
সেদিন স্নোফল বন্ধ হয়েছিল দুপুরে, অরফ্যানেজের বিকেলের অনুষ্ঠান ঠিকঠাকই হতে পেরেছিল। সেদিন ছেলেমেয়েরা করেছিল “ডাকঘর” নাটক।
সেইদিন অনুষ্ঠান শেষ হবার পরেই ওখানে অজ্ঞান হয়ে যায় প্রদীপ্তা। ওখান থেকেই সরাসরি হসপিটালে নেওয়া হয় ওকে।
সেখানে পরীক্ষায় ধরা পড়ে ওর ঘাতক ব্যধি বহুদূর অগ্রসর হয়েছে, আর কিছুদিনের অপেক্ষা শুধু। এই স্টেজে আর সারানোর কোনো উপায় নেই, শুধু কষ্ট উপশমের কিছু ওষুধ দেওয়া ছাড়া।
প্রদীপ্তা মনে মনে তৈরী ছিল। সে অনেকদিন থেকেই কষ্ট পাচ্ছিল কিন্তু ডাক্তার দেখায় নি, এমনকি কাউকে জানতেও দেয় নি।
হৃদিতা দেখতে এসে চুপ করে বসে থাকে বেডের পাশে, প্রদীপ্তা একাই কথা বলে। বলে, “জানিস হৃদি, তুই আগের জন্মে আমার সত্যিকার দিদি ছিলি। সেইজন্যেই এবারেও সেই টান এড়াতে পারিস নি।”
হৃদিতা কিছুই বলে না, শুধু প্রদীপ্তার ডানহাতটা নিজের দুহাতের মধ্যে নিয়ে বসে থাকে। তার দু’চোখের ভিতর বন্দী অশ্রু, গলার মধ্যে জমাট কান্না কথা বলতে বাধা দেয়।
প্রদীপ্তার বেড জানালার পাশেই, জানালা দিয়ে বাগানের গাছগুলো চোখে পড়ে। জানালার একেবারে পাশেই একটা ম্যাগনোলিয়া গাছ, চকচকে সবুজ পাতায় রোদ্দুর পিছলে পড়ে।
সেইদিকে চেয়ে প্রদীপ্তা বলে, “দ্যাখ, আমার অবস্থা এখন সেই “ডাকঘর”এর অমল এর মতন, জানালার পাশে অপেক্ষায় আছি কবে রাজা আসে, রাজার চিঠি তো এসেই গিয়েছে।”
হৃদিতার চোখ ছাপিয়ে অশ্রুধারা গাল ভিজিয়ে দেয়, কিন্তু এবারে সে কথা বলতে পারে। বলে, ” অন্তরীপ তোকে দেখতে আসবে বলেছে। কাল পৌঁছবে সকালে, রাতের বাসে আসছে। নিয়ে আসবো এখানে?”
প্রদীপ্তা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে, “হুঁ, নিয়ে আসিস। আঠেরো বছর পর দেখা হবে। ওকে তো বলে যেতে হবে মুনাইয়ের কথা। প্রতি বছর মুনাইয়ের জন্মদিনে ওর সমাধিতে ফুল দিতে যেতাম। সামনের বার থেকে আর যাওয়া হবে না। ” মুনাই হল প্রদীপ্তার দেওয়া নাম, তার অকালমৃতা কন্যাটির জন্য ।
হৃদিতা এবারে খোলাখুলি কান্নায় ভেঙে পড়ে, বলে, “এতবড় অসুখ তুই গোপণ করে রাখলি? ডাক্তার তো দেখালিই না, কাউকে জানালি না পর্যন্ত?”
প্রদীপ্তা ম্লান হাসে, বলে, “নিজেই বুঝতে পারি নি। কষ্ট হত, কিন্তু কষ্টের সঙ্গেই তো বসবাস করছি সেই কবে থেকে। তাই এই কষ্ট যে আলাদা কিছু তা বুঝতে পারিনি।”
সেই প্রকাশনসংস্থার নিমন্ত্রণপত্র এসেছিল, কিন্তু প্রদীপ্তার তো আর উপায় নেই যাবার। হৃদিতা ফোন করে সব জানানোর পর ওঁরা আন্তরিক দুঃখপ্রকাশ করেন।
নিজের এত বছরের সব সঞ্চয় সমান দু’ভাগ করে একভাগ মিশনের অরফ্যানেজের জন্য দিয়েছে প্রদীপ্তা। আর বাকী অর্ধেক হৃদিতার নামে। হৃদিতা নিতে চায় নি, খুব কেঁদেছিল, কিন্তু প্রদীপ্তা বলেছে নাহলে তার আত্মা শান্তি পাবে না।
ভিজিটিং আওয়ার শেষ হয়ে আসে, হৃদিতা বিদায় নেয়। জানালা দিয়ে চেয়ে থাকে প্রদীপ্তা, বাইরে গোধূলি নামছে।
কাল অন্তরীপ আসলে তাদের দেখা হবে আঠেরো বছর পর। কিন্তু যদি তার সময় না পাওয়া যায়? যদি আজ রাতেই রাজার রথ আসে?
বেডের পাশের নিচু টেবিলের উপরে রাখা খাতা থেকে একটা পাতা ছিঁড়ে নেয় প্রদীপ্তা, বালিশের তলা থেকে পেন বার করে লিখতে শুরু করে। শেষ চিঠি, অন্তরীপকে।
“প্রিয় অন্তরীপ,
এইবার সত্য সত্যি পৃথিবীর অন্তরীপ ছেড়ে চলে যাচ্ছে এই জাহাজ, অসীম সমুদ্রে। যাবার আগে তোমাকে একটা কথা জানাতে চাই যা এতকাল বলা হয় নি ……”
(শেষ)
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে এখানে ক্লিক করুন
3 thoughts on “short-story-mayabi-aaral”
চারপাশের অতি পরিচিত, পুরোনো হয়ে যাওয়া সব জিনিসের মধ্যে থেকেও নতুন নতুন অনুভূতি, না-বলা অনেক গল্প খুঁজে পাওয়া যায় — যদি খোঁজার ইচ্ছে আর চোখ থাকে। লেখিকার এই সুন্দর গল্পটিতেও তা-ই পেলাম। পটভূমিকা, ঘটনাপ্রবাহ, চরিত্র — কোনোটাই নতুন বা ব্যতিক্রমী নয়। তবুও পড়ার পর মনের মধ্যে পাহাড়ের শান্ত নির্জনতা আর নিরবচ্ছিন্ন তুষারপাতের প্রচ্ছন্ন বিষন্নতা জাগছে। তার মানে অনুভূতির তুলি দিয়ে ছবিটা ভালই আঁকা হয়েছে। একটা কথা অবশ্য বলতেই হবে। এই প্রদীপ্তা মেয়েটি ভয়ঙ্কর চাপা স্বভাবের তো ! পরের দিকে যখন সন্তানের অকালমৃত্যুতে শোক আর অবসাদ তার নিজের বাঁচার ইচ্ছেকেও গ্রাস করেছে, তখন নাহয় ক্যান্সার লুকিয়ে রাখার ব্যাপারটা বুঝলাম, কিন্তু দুমাস অন্তঃসত্ত্বা থাকার পরেও নিজের জীবনসঙ্গীকে জানালনা সেটা? এটাই একমাত্র ব্যতিক্রমী লেগেছে। ওই একটি খবরে কত পুরুষ বদলে যায় — এক্ষেত্রেও তো তাই হতে পারত। বললেও যদি না বদলাত অন্তু, যদি তার তরফ থেকে কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া বা কুপ্রস্তাব আসত, তখন না হয় নিঃশব্দে চলে যেত সব ছেড়ে।
চারপাশের অতি পরিচিত, পুরোনো হয়ে যাওয়া সব জিনিসের মধ্যে থেকেও নতুন নতুন অনুভূতি, না-বলা অনেক গল্প খুঁজে পাওয়া যায় — যদি খোঁজার ইচ্ছে আর চোখ থাকে। লেখিকার এই সুন্দর গল্পটিতেও তা-ই পেলাম। পটভূমিকা, ঘটনাপ্রবাহ, চরিত্র — কোনোটাই নতুন বা ব্যতিক্রমী নয়। তবুও পড়ার পর মনের মধ্যে পাহাড়ের শান্ত নির্জনতা আর নিরবচ্ছিন্ন তুষারপাতের প্রচ্ছন্ন বিষন্নতা জাগছে। তার মানে অনুভূতির তুলি দিয়ে ছবিটা ভালই আঁকা হয়েছে। একটা কথা অবশ্য বলতেই হবে। এই প্রদীপ্তা মেয়েটি ভয়ঙ্কর চাপা স্বভাবের তো ! পরের দিকে যখন সন্তানের অকালমৃত্যুতে শোক আর অবসাদ তার নিজের বাঁচার ইচ্ছেকেও গ্রাস করেছে, তখন নাহয় ক্যান্সার লুকিয়ে রাখার ব্যাপারটা বুঝলাম, কিন্তু দুমাস অন্তঃসত্ত্বা থাকার পরেও নিজের জীবনসঙ্গীকে জানালনা সেটা? এটাই একমাত্র ব্যতিক্রমী লেগেছে। ওই একটি খবরে কত পুরুষ বদলে যায় — এক্ষেত্রেও তো তাই হতে পারত। বললেও যদি না বদলাত অন্তু, যদি তার তরফ থেকে কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া বা কুপ্রস্তাব আসত, তখন না হয় নিঃশব্দে চলে যেত সব ছেড়ে।
bhalo laglo…
অনেকদিন পরে একটা গল্প পড়ে চোখ ভিজে এল । অপূর্ব গল্প ।