বিনোদ ঘোষাল
সন্ময় ঘরগুলো ঘুরে ঘুরে দেখছিল। শরৎকালের মিঠে বিকেলে, রিচি রোডের এই পুরনো বাড়ির ভেতরটা ঘুরে ঘুরে দেখছিল ও। সন্ময় দে পেশায় একজন ইন্টেরিয়র ডেকরেটর। পৈতৃক ব্যবসা। সন্ময় প্রায় কুড়ি বছর আগেই বাবার তৈরি এই ব্যবসায় নেমে পড়েছিল, এখন ওর পয়তাল্লিশ চলছে। ব্যবসা নিজে হাতে নেওয়ার পর একটা সময় প্রচুর লড়াই করে শেষে নিজের মনের মতো দাঁড় করিয়েছে। এখন ওর কোম্পানির নাম ইনটেরর। কলকাতায় যথেষ্ট ভাল কাজ তো চলেই রাজ্যের বাইরেও যথেষ্ট কাজ হয়। বেশ বড়সড় একটা টিম তৈরি করে ফেলছে সন্ময়। ওর জীবনের প্রধান শখ হল বই পড়া। গোগ্রাসে গল্প উপন্যাস পড়ে। এই অভ্যাস ওর স্কুল লাইফের। আজ এত ব্যস্ততার মধ্যেও, এই স্মার্ট যুগের ঝনঝনানিতেও সোশাল মিডিয়ার চিলচিৎকারের যুগেও দিনের শেষে কিংবা যে কোনও অবসরে সন্ময় কোনও একটি গল্প-উপন্যাসের বই হাতে তুলে নিতেই বেশি আগ্রহ বোধ করে। রোজ রাতে একটা বই অন্তত আধঘন্টা হলেও ও পড়বেই।
রিচি রোডে একটা ক্লায়েন্ট মিট ছিল। সন্ময় নির্দিষ্ট সময়েই পৌছে গিয়েছিল। অভিজাত এলাকায় পুরনো দোতলা একটি বাড়ি। দরজার কলিংবেলটি বাজানোর পর ভেতরে যে শব্দটি শুনেছিল সেটাও পুরনো শব্দের। কিছুক্ষণ পর এসে দরজা খুলেছিলেন এক বৃদ্ধা। পরনে হাউজকোট। একসময়ে ডাকসাইটে সুন্দরী ছিলেন তা এই শনের মতো পাকা চুল, ফর্সা ঢিলে চামড়া দেখেও দিব্বি আন্দাজ করা যায়।
দরজা খুলে উনি সন্ময়ের দিকে তাকিয়েই প্রথম প্রশ্নটা করেছিলেন মিস্টার দে?
সন্ময় মৃদু হেসে উত্তর দিয়েছিল, ইয়েস ম্যাম, সন্ময় দে।
প্লিজ কাম।
একতলা থেকে দোতলায় যাওয়ার সিড়িটা কাঠের। চকচকে পালিশ করা কাঠ। জুতো পরে উঠলে খটখট সাহেবি শব্দ হয়। দোতলায় উঠেই ড্রয়িং রুম। বনেদি বাড়ির ড্রয়িংরুম যেমন হয় এটাও তেমনই। সব পুরনো ডিজাইনের বার্মাটিকের আসবাব দিয়ে সাজানো।
বসুন।
বসেছিল সন্ময়।
আমি মিসেস সরখেল। আপনাকে আমিই ফোন করেছিলাম।
ও আচ্ছা।
আসলে বিষয়টা আপনাকে স্পষ্টভাবে বলি। আমরা এই বাড়িতে প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে রয়েছি। আমরা নিঃসন্তান। দুইজন বুড়োবুড়ি মিলে থাকি। এত বড় বাড়ি তাই আমরা আর এটা মেন্টেইন করতে পারছি না। তাই ভেবেছি বাড়িটার ইন্টেরিওর চেঞ্জ করে পেয়িং গেস্ট রাখব। তো আপনি প্লিজ বলুন আমার বাড়ির অন্দরমহলটা বদলে এমন কিছু কি করা যায় যাতে আমি আর আমার কত্তাও রইলাম, দুই জন পেয়িং গেস্টও রইল, কিন্তু কারও প্রাইভেসি নষ্ট হল না।
মিসেস সরখেলের কথা শুনতে শুনতে চারদিকে দেখছিল সন্ময় আর মনে মনে হিসেব করছিল। ভেতরের স্পেসটাকে ভেঙেচুরে কীভাবে কয়েকটা আলাদা আলাদা এস্টাবলিশমেন্ট তৈরি করা যায় সেটা ভেবে নিচ্ছিল।
আপনার কি শুধু ফার্স্টফ্লোরেই হবে কাজটা?
হ্যাঁ। গ্রাউন্ড ফ্লোরে ভাড়াটে রয়েছে।
আচ্ছা। বেশ। ম্যাদাম আমি কি ঘরগুলো একবার দেখতে পারি?
হ্যাঁ নিশ্চয়ই। আসুন প্লিজ।
মিস সরখেলের সঙ্গে ফ্লোরটা ঘুরে ঘুরে দেখছিল। যথেষ্ট বড় স্পেস। তিনটে বেডরুম, ডাইনিং স্পেস, দুটো টয়লেট, স্টোররুম, কিচেন সবই রয়েছে। সব রিমডেলিং করতে হবে।
সবকটা ঘর ঘুরে ঘুরে দেখে শেষে একটা বন্ধ ঘরের দিকে আঙুল তুলে সন্ময় জিজ্ঞাসা করল, আর ওই ঘরটা ম্যাম?
ওহ হ্যাঁ, আসুন।
ঘরটা খুলে দিলেন মিসেস সরখেল। পুরনো একটা গন্ধ নাকে ধাক্কা দিল সন্ময়ের নাকে। সঙ্গে কড়া তামাকের গন্ধ।
ঘরের ভেতরে ঢুকে তাজ্জব হয়ে গেল সন্ময়। ওরেব্বাস এ তো পুরো স্বর্গরাজ্য! ঘরের চারটে দেওয়াল দেখার কোনও উপায় নেই, শুধু একটা জানলা বাদে বাকি পুরোটাই বইয়ে ভরা আলমারি দিয়ে ঢাকা। হাজার হাজার বই। সন্ময় এত বই দেখে আর মাথার ঠিক রাখতে পারল না। প্রায় ছুটেই ঢুকে পড়ল ঘরটার ভেতরে তারপর আলমারিতে রাখা থরে থরে বইগুলোতে চোখ রাখল, ওরেবাবা এ তো পুরো স্বর্নখনি! দেশ বিদেশের সব বিখ্যাত লেখকদের বই। শুধু তাই নয়, দামী দামি থেসোরাস, এনসাইক্লোপিডিয়াও রয়েছে। অধিকাংশই ইংরেজি বই, কিন্তু বাংলা ক্লাসিকও একটা আলমারি জুড়ে! অনেক দুষ্প্রাপ্য বইও রয়েছে। হাত নিশপিশ করে উঠল সন্ময়ের, বইগুলো ছোঁয়ার জন্য।
আপনি কি বইপ্রেমী? ইংরেজিতে জিজ্ঞাসা করলেন মিসেস সরখেল।
হ্যাঁ ম্যাডাম। খুবই।
বাহ এ তো খুবই ভাল! আমার কর্তার সঙ্গে আপনার এই বিষয়ে মিল রয়েছে।
এই লাইব্রেরি কি ওর?
হ্যাঁ অবশ্যই। আজীবন দেশ বিদেশে ঘুরেছেন আর বই কিনেছেন। শুধু কেনেননি পড়েওছেন। এখনও পড়ে চলেন।
আরেবাহ! দারুন ব্যাপার তো! নিজের শখের বিষয়ে একটা মিল পেয়ে খুব উৎসাহিত হয়ে উঠল সন্ময়। বলল, এ তো অসাধারণ কালেকশন!
হ্যাঁ ওর জগতই তো এই বই।
আর চুরুট? ওই যে টেবিলের ওপরে এ্যাশট্রেতে রাখা আধখাওয়া চুরুটটা রাখা রয়েছে। ওটা দেখেই আন্দাজ করছি।
মিসেসে সরখেল হেসে বললেন, হ্যাঁ ঠিক বলেছেন। হাভানা চুরুট।
চারটে দেওয়ালই ঘুরে ঘুরে চোখ বুলিয়ে যতটা সম্ভব দেখল সন্ময়। কালেকশন দেখে পুরো মুগ্ধ। নাহ এমন ভাণ্ডার যার, তার সঙ্গে একবার দেখা না করলে চলছে না। সন্ময় কিন্তু কিন্তু করে বলেই ফেলল, আচ্ছা বলছি যে মিস্টার সরখেলের সংগে কি একবার মিট করা যায়? মানে পরিচয় করতে খুব ইচ্ছে করছে।
মিসেস সখেল হেসে ফেললেন। ওর সঙ্গে দেখা করতে গেলে সেই রাতে আসতে হবে। সারা রাত উনি পড়াশোনা করেন আর আমাকে কফি বানিয়ে দিতে হয়।
রাত মানে কখন বলুন?
কোনো ঠিক থাকে না ওর আসার।
ও আচ্ছা, যাইহোক কাজটা শুরু হলে একদিন দেখা তো হয়েই যাবে। আমাকে এবারে একটা কথা শুধু বলুন এই ঘরটার কী হবে?
কী হবে মানে?
মানে এই ঘরটাও তো চেঞ্জ করতে হবে আমাকে।
না না! প্রায় আঁতকে উঠলেন মিসেস সরখেল। এই ঘরের একটা কাগজও এদিকওদিক করা যাবে না। তাহলে কত্তা খুব রাগ করবেন।
ওহ!
আপনি একটা প্ল্যান বানিয়ে তাহলে একদিন আসুন, আর এস্টিমেটটাও আনবেন।
হ্যাঁ নিশ্চয়ই। আজ চলই তাহলে?
আচ্ছা আসুন।
কাজ শুরু হয়ে গেল। পর পর কয়েকদিন কাজের সূত্রেই ওই বাড়িতে গেল সন্ময়, কিন্তু একদিনও মিস্টার সরখেলের সংগে দেখা হল না। ওই বাড়িতে কাজও শুরু হ’ল। মিস্তিরি লেগেছে ভাঙাচোরার কাজ চলছে। মিসেস সরখেল বারবার একটাই কথা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলেন ভাগ্যিস কাজ সব দিনের বেলাতেই হয়, পড়াশোনার সময় সামান্য শব্দ বা মনোসংযোগে ব্যাঘাত ঘটলেই কর্তা রেগে আগুন হয়ে যান। এ ওর চিরকালের স্বভাব।
হুঁ খুব স্বাভাবিক। কিন্তু ম্যাডাম, স্যরের সংগে একবার দেখা হলে ভাল লাগত।
হুঁ, যদিও উনি লোকজনের সঙ্গে দেখা করা খুব একটা পছন্দ করেন না। চিরকালই তাই। আর বছর কয়েক হল তো তিনি একেবারেই নিজের জগতে ঢুকে গেছেন।
ওহ তাহলে তো আর উপায়ই নেই!
তবে আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন মিস্টার দে, আপনার কাজের বা পেমেন্টের কোনও অসুবিধা হবে না।
এই রে না না ছি ছি আমি সে কথা বলতে চাইনি। আসলে বোঝেনই তো ম্যাডাম একজন বইপ্রেমী আরেকজন বইপ্রেমীর সন্ধান পেলে বেশ আগ্রহী হয় আর কী…
কথাটা শুনে বেশ কয়েক মুহূর্ত সন্ময়ের দিকে তাকিয়ে রইলেন মিসেস সরখেল। তারপর বললেন, আপনি কি সত্যিই খুব আগ্রহী আমার কর্তার সঙ্গে কথা বলতে?
হ্যাঁ খুবই।
আচ্ছা বেশ আমি তাহলে আজ ওকে আপনার কথা বলব, ও যদি রাজি হয়…
প্লিজ দেখুন না ম্যাডাম একবার…মনে মনে একটা অদম্য কৌতুহল তৈরি হয়ে উঠছিল সন্ময়ের।
আচ্ছা দেখছি। তবে…
হ্যাঁ বলুন।
রাতে আসতে হবে কিন্তু। মানে উনি বাড়ি ফেরেন অনেক রাত করে।
আমার কোনও অসুবিধা নেই ম্যাডাম। রাত বারোটা হলেও চলে আসব। আমি ড্রাইভ নিজেই করি সুতরাং…
বেশ দেখছি।
ওই সাইটে কাজ হচ্ছে দ্রুত। আজ মিস্তিরিদের নির্দেশ দিতে দিতে বার কয়েক টুক করে ওই বন্ধ ঘরের দরজাটা খুলে ঢুকল সন্ময়। মিসেস সরখেল যেহেতু কাজের সময়টায় একতলার একটি ঘরে থাকেন তাই ওই ঘরে উঁকি দিতে সন্ময়ের অসুবিধা হয়নি। দরজা খুললেই মন মাতানো চুরুট আর কফির গন্ধ। নেশা ধরিয়ে দেয়। ঘরের ভেতর ঢুকে টেবিলের ওপর রাখা সুন্দর পেজমার্ক গোঁজা বইটার নাম হাউজ ফর মিস্টার বিশ্বাস। ভি এস নইপালের লেখা। বইটা পড়া নেই। একবার হাতে তুলে দেখতে ইচ্ছে করল সন্ময়ের। সবে ধরতে যাবে পিছন থেকে প্রায় চিৎকার করে উঠলেন মিসেস সরখেল। কী করছেন ওটা! খবরদার ধরবেন না!
চমকে উঠল সন্ময়। মিসেস সরখেল কখন নিঃশব্দে পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে টেরই পায়নি সন্ময়।
আপনি এই ঘরে কী করছেন? প্রায় ধমকের সুরে জিজ্ঞাসা করলেন তিনি।
সন্ময় বুঝতে পারল উনি বেশ বিরক্ত হয়েছেন।
সরি ম্যাডাম, এক্সট্রিমলি সরি। আসলে বইগুলো…
কাজটা আপনি ঠিক করেননি, বইটার পৃষ্ঠা সরে গেলে কী হত? আর উনি যেভাবে রেখে গেছেন তার থেকে একচুলও সরলে ভীষণ রেগে যান।
না না মানে…ভেরি সরি ম্যাডাম।
সন্ময়ের এমন কাঁচুমাচু মুখ দেখে মহিলার মুখ থেকে বিরক্তির ভাব কিছুটা কমল।
আপনারা কেন যে বুঝতে চান না, মানুষটা বিরক্ত হয়, খুব বিরক্ত হয়।
‘আপনারা’ শব্দটা কট করে কানে লাগল সন্ময়ের। কিছু জিজ্ঞসা না করে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকাল মিসেস সরখেলের দিকে।
আপনি ওর সঙ্গে মিট করতে চান?
হ্যাঁ মানে…
বেশ আজ রাতে আসুন। কিন্তু ও এক একদিন বাড়ি ফেরে না, আমি শিওর নই যে আজকে ও আসবে। হয়তো আপনাকে অপেক্ষা করে চলে যেতে হবে।
কোনও ব্যাপার না ম্যাডাম।
বেশ। আজ রাতে আসুন তাহলে।
আমি কি ফোন করে নেব আপনাকে?
না। আপনি এগারোটা নাগাদ চলে আসবেন।
আচ্ছা। বলার সময় সন্ময় খেয়াল করল ওর গলায় তীব্র উত্তেজনা আটকে রয়েছে।
ঠিক এগারোটার সময়েই গাড়িটা রিচি রোডে ঢুকে মিস্টার সরখেলের বাড়ির সামনে থামল। সন্ময় নিজেও বুঝতে পারছে না এই পাগলামোটা ও কেন করছে। পেমেন্ট নিয়ে কোনও সমস্যা নেই, কাজও ঠিকঠাক এগোচ্ছে। আর মাত্র কয়েকদিন হলেই শেষ হয়ে যাবে। মিসেস সরখেল যথেষ্ট সন্তুষ্ট সন্ময়ের কাজে। কিন্তু তবু একটা অকারণ কৌতুহল সন্ময়কে তিষ্টোতে দিচ্ছে না। মিস্টার সরখেলের সঙ্গে একবার মুখোমুখি না হতে পারলে যেন ওর জীবন বৃথা।
কলিং বেল বাজাতে নিষধ করেছিলেন মিসেস সরখেল। বলেছিলেন নিচে এসে মোবাইলে কল করতে। সন্ময় তাই করল। একটু পরেই খুট করে দরজা খোলার শব্দ। মিসেস সরখেল ফিসফিস করে বললেন এসেছেন? আসুন, শব্দ করবেন না।
উনি আছেন?
না এখনও আসেননি, তবে চলে আসার সময় হয়েছে। আপনি বসুন।
সন্ময়কে নিয়ে গিয়ে ওই স্টাডিরুমে বসালেন মিসেস সরখেল। সন্ময় খেয়াল করল স্টাডিরুমে শুধু একটা টেবলল্যাম্প জ্বলছে। হাউজ ফর মিস্টার বিশ্বাস এখনও রাখা, তবে পেজমার্ক অনেকটাই পিছিয়েছে। বইয়ের পাশে রাখা কফির কাপ। তারপাশে চুরুটের বাক্স, লাইটার, এ্যাশট্রে। সব পরিপাটি সাজানো।
আপনি বসুন, ও যে কোনও সময়েই চলে আসবে। বলে ঘরের দরজা বন্ধ করে বাইরে বেরিয়ে গেলেন মিসেস সরখেল। সন্ময় বসে রইল। আধঘন্টা…এক ঘন্টা… দেড় ঘন্টা। কারও পাত্তা নেই, এদিকে ম্যাডামের নির্দেশ মতো মোবাইল অফ করে রাখতে হয়েছে। বসে থাকতে থাকতে একসময় চোখ যেন বুজে আসতে চাইল। সারাদিন দৌঁড়ঝাপের পরিশ্রমের পর আর বেশি রাত জাগা যায় না। জোর করে জেগে থাকতে চেষ্টা করেও একসময় বেশ বুঝতে পারল চোখ ওর বন্ধ হয়ে আসছে, চারদিক কেমন যেন ঝাপসা, আচমকাই ওই আবেশের মধ্যে মনে হ’ল ঘরের দরজাটা কে যেন খুলল। হ্যাঁ ওই তো এক দীর্ঘদেহী প্রৌঢ় স্লিপিং সুট পরা, ঘরে ঢুকলেন, চেয়ারে বসলেন, কফির কাপে চুমুক দিয়ে সিগার ধরালেন, করা তামাকের গন্ধে ভরে যাচ্ছে ঘর। সন্ময় যে ঘরে রয়েছে তার অস্ত্বিত্বকে যেন পাত্তাই দিলেন না উনি, চেয়ারে ঠেস দিয়ে বইটা তুলে পেজমার্ক সরিয়ে ডুবে গেলেন বইয়ের পাতায়। আর পারল না সন্ময়। চোখ বুজে গেল ওর।
ঘুম যখন ভাঙল ততক্ষণে ভোর।
গুডমর্নিং মিস্টার দে।
মিসেস সরখেলের কন্ঠে ধড়মড় করে উঠল সন্ময়। এ কী! সারারাত চেয়ারেই ঘুমিয়েছিল ও!
মর্নিং ম্যাম!
দেখা হ’ল কর্তার সঙ্গে? কথা বললেন?
সন্ময় কী বলবে ভেবে পেল না। কাল আধো তন্দ্রায় যা যা দেখেছিল তা আদৌ সত্যি না মিথ্যে সেটাই বুঝতে পারছে না ও।
চা খাবেন তো?
না ম্যাম, আজ নয়, আমাকে বেরোতে হবে।
আচ্ছা বেশ। বলে একটু চুপ থেকে মিসেস সরখেল বললেন আচ্ছা মিস্টার দে, একবার বাইরে আসুন।
সন্ময় বেরোলো মিসেস সরখেলের সংগে। একতলায় উনি নিজের ঘরে নিয়ে গেলেন ওকে। তারপর এই ফটোটা কাইন্ডলি আমার ঘরে একটু টাঙিয়ে দেবেন? এত ভারি আমি পারছি না। এই যে এই দেওয়ালে। কাল আমার ঘরে এসে উনি অভিযোগ করেছেন ওর প্রিয় ছবিটা কেন খুলে রেখেছি।
ওহ নিশ্চয়ই।
দেওয়ালের দিকে ফেরানো ফ্রেম করা ফটোটা হাতে ধরে ঘোরাতেই শিউরে উঠল সন্ময়। এ কী! এ কে! সুট বুট পরা এক দীর্ঘদেহী প্রৌঢ়, এক হাতে বই অন্যহাতে ছড়ি, ঠোঁটে সিগার জ্বলছে, কাচের ওপরে ভদ্রলোকের কপালে পরানো শুকনো চন্দনের ফোঁটা এখনও খসে পড়েনি…!
মিসেস সরখেল বলে চলেছেন, বইয়ের নেশা ওর চিরকালের। আজও ছাড়তে পারেনি, রোজ রাত হলেই চলে আসেন…আমাকে সব ব্যবস্থা করে রাখতে হয়…
সন্ময়ের কানে কিছু ঢুকছিল না। ও দেখার চেষ্টা করছিল ভদ্রলোকের হাতে ধরা বইটার নাম…হাউজ ফর মিস্টার বিশ্বাস!
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন