রতনতনু ঘাটী
নাটকনগর গ্রামটা বড়ই আশ্চর্যের। গ্রামের মানুষ কারও সঙ্গে কোনও বিবাদ-বিসংবাদে যায় না। বরং মিলমিশ করেই চলে আসছে সেই আদিকাল থেকে। এই মিলমিশের প্রধান অবলম্বন হল নাটক।
বহুদিন আগে এ গ্রামের নাম ছিল দিলদরিয়াপুর। সব মানুষই ছিল বড়ই দিলখোলা। কার্পণ্য এ গ্রামের মানুষের চরিত্রে ছিল না। এ গ্রামের কড়িকোমল বটব্যাল ছিলেন অবস্থাপন্ন মানুষ। তিনি এক নিশুতি পূর্ণিমা রাতে হঠাৎ ভেবে বসলেন, জীবনটা হল আসলে একটা নাটক। যা কিছু ঘটে সবই নাটকের দৃশ্যান্তর বলেই মনে হয়। পরদিন গ্রামের একে-তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হ্যাঁ গো, তোমরা সত্যি করে বলো তো, মানুষের জীবনটা কি সত্যিই একটা নাটক? না অন্য কিছু?’
বড়লোকের মুখের উপর কথা বলার অভ্যাস আজও যেমন সাধারণ মানুষের মধ্যে নেই, তখনও ছিল না। কেউ বলল, ‘হ্যাঁ, জীবনটা একটা নাটকই!’ আবার কেউ বলল, ‘না, জীবনটা তো জীবনই, নাটক হতে যাবে কেন?’
অনেক দনোমনো পেরিয়ে কড়িকোমলবাবু শেষমেশ একটা নাটকের দল তৈরি করবেন বলে উঠেপড়ে লাগলেন। শুরুর দিকটায় কিছুকিঞ্চিৎ সাড়া পেলেও, পরের দিকে নাটকের ব্যাপারটা কেমন ঝিমিয়ে পড়ল। শেষে তিনি ভাবলেন, নাটক মঞ্চস্থ করতে হলে স্টেজ বানাতে হয়। পরদা ঝোলাতে হয়। কিন্তু নাটকের দলটাকে মডিফাই করলে কেমন হয়? কিন্তু মডিফাই করে কী করবেন? তরজার দল করবেন? নাকি লোকগানের দল? কিন্তু তাতে নাটক ব্যাপারটা ঠিক আসছে না। ওই নামগুলোর মধ্যে নাটক-নাটক ব্যাপারটাই যেন নেই।
অনেক ভাবতে ভাবতে কড়িকোমল বটব্যাল তাঁর নাটকের দলটাকে যাত্রার দলে কনভার্ট করে ফেললেন। মনে-মনে নিজেকে এই বলে সান্ত্বনা দিলেন, নাটকের সঙ্গে যাত্রার আর তফাত কী? দুটোরই তো মূল বস্তু হল, নাটক আর অভিনয়।
এর পর কলকাতার চিৎপুরের একটা জমকালো দোকান থেকে ম্যানেজারকে পাঠিয়ে রাজা-রানি, বাদশা-বেগমের ঝকমকে পোশাক কিনিয়ে আনলেন। দেখলেন, এবার মানুষের মধ্যে অপরিসীম সাড়া মিলছে। দিলদরিয়াপুর গ্রামের নানা মেলা-পার্বণে শামিয়ানা টাঙিয়ে যাত্রাপালার অভিনয়ও শুরু হয়ে গেল।
একই গ্রামে একজন বড়লোককে দেখলে আর-একজন বড়লোকের গা চুলকোয়। এ সেই মহাভারতের যুগ থেকে ঘটে আসছে। যুধিষ্ঠিরকে দেখলে কি আর দুর্যোধনের গায়ে জ্বালা ধরত না? তেমনই দিলদরিয়াপুরের আর-একজন বড়লোক ছিলেন জাঁকজমক দিন্দা। তিনি কড়িকোমল বটব্যালের ছায়াও মাড়াতেন না। বলা যায়, এ গ্রামে পরশ্রীকাতরতার গোষ্ঠীসংক্রমণের সেই শুরু! জাঁকজমক দিন্দা ভাবলেন, যাত্রার দল একটা ইচ্ছে করলে আমিও তো বাঁধতে পারি। এ আর এমন কি কঠিন কাজ?
নিজে ছোটাছুটি করে সত্যি-সত্যিই একটা যাত্রার দল গড়ে তুললেন। তবে তাঁর এত ছোটাছুটির মূল লক্ষ ছিল, তাঁর যাত্রাদলে যে পালাই অভিনীত হোক না কেন, তিনি নিজে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করবেন। প্রধান চরিত্র তিনি কারও হাতে ছাড়বেন না। তাতে হল কী, তাঁর যাত্রাপালাগুলো তত মানুষ টানতে পারল না।
এর অন্যতম কারণ, জাঁকজমকবাবুর স্মৃতিশক্তি বড় দুর্বল বলে প্রায়ই সংলাপ ভুল করতে লাগলেন। প্রধান চরিত্র যদি সংলাপ ভুল করে, তা হলে সে নাটকের আর বাকি থাকে কী? তারপর অভিনয় চলাকালীন যখন তাঁর আসরে প্রবেশের কথা, তার আগের সিনেই ভুল করে প্রবেশ করতে লাগলেন জাঁকজমকবাবু।
এসব কাণ্ডের হাত ধরে দেখতে-দেখতে দিলদরিয়াপুর গ্রামে ন’খানা যাত্রার দল গড়ে উঠল। কোনও যাত্রাদল ‘শ্রীশ্রী বিষ্ণুপ্রিয়া’ বা ‘ভীষ্ম’-এর মতো পৌরাণিক পালা করল তো, কোনও যাত্রাদল ‘মেবার পতন’ বা ‘পলাশির প্রায়শ্চিত্ত’ নামের ঐতিহাসিক পালা নামাল। কোনও দল ‘তটিনীর বিচার’ বা ‘মমতাময়ী হাসপাতাল’ টাইপের সামাজিক পালা করল তো কোনও দল ‘হিটলার’ ‘ফেরারি ফৌজ’ নামের রাজনৈতিক পালায় আসর জমাতে লাগল। এক-একটা যাত্রাদলে নেই-নেই করে জনা পনেরো করে অভিনেতার দরকার পড়ল। ন’টা যাত্রাদলে একশো পঁয়ত্রিশজন গ্রামবাসী কোনও না-কোনও যাত্রাদলের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়ল।
গুনেগেঁথে দেখে গ্রামের বিশেষজ্ঞরা বললেন, ‘দিলদরিয়াপুর গ্রামের আর মাত্র শ’দুয়েক মানুষ পড়ে রইল যাত্রাদলের বাইরে। এ কী নাটকের হিড়িক রে বাবা!’’
অনেক বছর আগে এক সময় গ্রামে-গ্রামে প্রথম গ্রাম চৌকিদারি আইনের মাধ্যমে আধুনিক গ্রাম পঞ্চায়েত ব্যবস্থা শুরু হয়েছিল। তখনই কিছু উৎসাহী মানুষ গ্রামে মিটিং ডেকে দিলদরিয়াপুর গ্রামের নাম বদলে ফেলতে উঠে-পড়ে লাগল। তাদের বক্তব্য, ‘যে গ্রামে নাটক নিয়ে এত হইচই, যে গ্রামের সিংহভাগ মানুষ সারা বছর নাটক নিয়েই মেতে থাকে, সে গ্রামের নাটক-ঘেঁষা কোনও নামই থাকা বাঞ্ছনীয়। সেটাই শোভন!’
গ্রামের নামবদলের খবরটা চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে দিনরাত অভিধান ঘেঁটে নামসংগ্রহ অভিযান শুরু হয়ে গেল। কিছু লোক গৃহীসন্ন্যাসী দেশমুখের বাড়িতে গিয়ে হত্যে দিয়ে পড়ল। কারণ, মাননীয় গৃহীসন্ন্যাসীবাবুই এ গ্রামের একমাত্র সংস্কৃত পণ্ডিত। সংস্কৃত ব্যাকরণে তাঁর অতলান্তিক মহাসাগর সমান জ্ঞান। যে-কেউ তাঁর কাছে কোনও বিষয়ে জানতে গেলে তাকে প্রথমে ‘লতা’ শব্দের বহুবচনের রূপ কী হবে—তার উত্তর জিজ্ঞেস করেন। সঠিক উত্তর দিতে পারলে তবে তিনি তার প্রশ্নের উত্তর দেন।
অভিনিবেশ পানিগ্রাহী শুধু এ গ্রামের কেন আশপাশের দশ-বিশখানা গ্রামের মধ্যে সংস্কৃতে তুখোড় ছাত্র। সে মাননীয় গৃহীসন্ন্যাসী দেশমুখের বাড়িতে গিয়ে বেশ কয়েক দিন নিরলস চেষ্টা চালিয়ে দিলদরিয়াপুরের নতুন নাম ছিনিয়ে এনেছিল। তার পর জনসভা ডেকে সর্বসম্মতিক্রমে দিলদরিয়াপুরের নতুন নাম গৃহীত হয়েছিল—‘নাটকনগর’। সেই নাম এখনও বহাল আছে। এক সময় ভারতের প্রাকৃতিক এবং রাজনৈতিক মানচিত্রে ‘নাটকনগর’ নামটা ইচ্ছে করলেই সহজে খুঁজে পাওয়া যেত।
স্বাধীনতা লাভের তিন-চার বছর আগে থেকে নাটকনগরের নামটা মহকুমা শহর থেকে জেলা শহরেও ছড়িয়ে পড়েছিল। তার একটাই কারণ, দেখতে-দেখতে নাটকনগরের সব অধিবাসীই কোনও না-কোনও যাত্রাদলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ল। প্রায় একুশখানা যাত্রার দলে ভারতের স্বদেশ প্রেমের কাহিনি নিয়ে পালা ‘সিরাজদ্দৌলা’, ‘মীরকাশিম’, ‘ছত্রপতি শিবাজি’, ‘শহিদ ক্ষুদিরাম’, ‘বীরজননী মাতঙ্গিনী’ ‘নেতাজি সুভাষ’ অভিনয় শুরু হয়ে গেল ব্রিটিশের নাকের ডগায়। সে খবর কলকাতায় ওয়ারেন হেস্টিংসের কানেও গিয়ে যে পৌঁছয়নি তা নয়। হেস্টিংস একবার নাকি মনস্থ করেছিলেন ঘোড়ায় চড়ে নাটকনগর গ্রামটা দেখতে আসবেন। কী সেই গ্রাম, যে গ্রামের সব মানুষই এমন স্বাধীনতা আন্দোলন নিয়ে যাত্রাপালা লিখে অভিনয় করছে? কিন্তু নানা জরুরি কাজে তাঁর আর নাটকনগর গ্রামে যাওয়া হয়নি। তবে তিনি দিন পনেরোর মধ্যে নাটকনগর গ্রামে একটা পুলিশচৌকি স্থাপনের অর্ডার দিয়ে বসলেন। তাতে অবশ্য নাটক অভিনয়ের ক্ষেত্রে কোনও রকম ব্যাঘাত ঘটল না। নাটক যেমন চলছিল, তেমনই চলতে থাকল।
গান্ধীজি স্বাধীনতা লাভের বছর দুয়েক আগে মেদিনীপুর জেলার মহিষাদলে এসেছিলেন। এক্তারপুরে কয়েকদিন ছিলেনও। তখন বিদ্যুৎবাহিনীর একজন গান্ধীজিকে নাটকনগরের স্বদেশী নাটকের কথা বলেছিলেন। গান্ধীজিও এ গ্রামে আসবেন বলে ভেবেও সময় করে উঠতে পারেননি। তবে শোনা যায়, গান্ধীজি নাকি কারও মাধ্যমে একটা শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। এসব খবর নিয়ে নাটকনগরের একালের ছেলেমেয়েদের মধ্যেও গর্বের শেষ নেই।
কিন্তু বেশ ক’বছর ধরে নাটকনগর নিয়ে এক মহা সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। সে সমস্যার জেরে পণ্ডিত, সমাজতত্ত্ববিদদের মাথার চুল ছিঁড়ে ফেলার জোগাড়। সমস্যাটা আর কিছুই নয়, এই গ্রামের সব মানুষই নাটকের বাইরে ব্যবহারিক জীবনেও কথাবার্তা নাটকের সংলাপের ঢঙে বলতে শুরু করেছে। কেউ স্বাভাবিক কথা বলতে পারছে না। যে কথাই বলতে যাক না কেন, সেটা যাত্রাদলের সংলাপের মতো বলা হয়ে যাচ্ছে। এটা নাকি অনেক দিন ধরেই চলে আসছিল। কেউ খেয়াল করেনি ব্যাপারটা।
প্রথম কুমুদিনী মিদ্যা তাঁর পাঁচ বছরের ছেলেকে দুপুরবেলা ভাত খেতে দিয়েছিলেন। ছেলেটি যাত্রাদলের রাজার তরোয়াল ঘোরানোর ভঙ্গিতে ডান হাত ঘুরিয়ে বলছে, ‘আমি ভাত নাহি খাব! হে মাতঃ, চাউমিন, ম্যাগি জাতীয় অন্য কিছু আয়োজন করে আনো এক্ষুনি!’
মা ওইটুকু দুধের শিশুর মুখে এই ধরনের কথা শুনে ছেলেকে কোলে নিয়ে ছুটলেন নাটকনগর গ্রামপঞ্চায়েত অফিসে। অফিসে তখন পঞ্চায়েত প্রধান হরেকৃষ্ণ বাসুলি, উপপ্রধান অমূল্য দণ্ডপাট তো ছিলেনই। জেলা পরিষদের সভাধিপতি নগেন্দ্রনারায়ণ মুখুটিও কী কাজে যেন এসেছিলেন। তিনি কুমুদিনী মিদ্যার কথা শুনে বিচলিত হয়ে পড়লেন।
পঞ্চায়েত প্রধানের কাছে জানতে চাইলেন, ‘কতদিন ধরে এরকম সমস্যা তৈরি হয়েছে হরেকৃষ্ণবাবু? কই জেলা স্তরে কোনও খবর পাঠাননি তো?’
উত্তরে হরেকৃষ্ণ বাসুলি চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে দু’হাত প্রসারিত করে বলে উঠলেন, ‘এ সংবাদ সদ্য প্রকাশিত হল জনসমক্ষে। কীভাবে এ সংবাদ পূর্বে দিতে পারি, বলুন হে রাজন?’
নগেন্দ্রনারায়ণ মুখুটি ঘাবড়ে গিয়ে স্বগতোক্তি করে উঠলেন, ‘এ কী? আপনিও তো যাত্রার সংলাপের ঢঙেই কথা বলছেন মশাই? হল কী আপনার?’
তখনই গ্রামের একজন অধিবাসী এসে ঢুকল। তারপর পঞ্চায়েত প্রধানের দিকে তর্জনী তুলে চেঁচিয়ে বলতে শুরু করল, ‘শুনে রাখেন হে পঞ্চায়েত প্রবর, জলনিকাশি নালার সংস্কার সাধন এখনই না করিলে মম পাড়া জলপ্লাবিত হইবার সমূহ আশঙ্কা! তাহা সত্য হইলে আপনি এই সিংহাসন হইতে নিক্ষেপিত হইবেন আগামী কল্যই!’
সভাধিপতি নগেন্দ্রনারায়ণ তড়িঘড়ি পঞ্চায়েত অফিস থেকে বেরিয়ে গিয়ে নিজের গাড়িতে উঠে পড়লেন।
নাটকনগরের অধিবাসীরা নিজের ভাষায় কথা বলতে কবে-কবে একেবারেই ভুলে গেছে, কেউ খেয়াল করেনি। মানুষ তার নিজের ভাষায় কথা বলবে না, এও কি হয়? এ তো এক মস্ত অসুখ! এ বিষয়ে সকলের টনক নড়ার পর দেখা গেল, শিক্ষক ক্লাসে পড়াচ্ছেন যাত্রাপালার সংলাপের ঢঙে, পুরুতমশাই পুজোর মন্ত্র উচ্চারণ করছেন—যাত্রার সংলাপের স্বগতোক্তির ভঙ্গিতে, নিধুবননিবাসী দাস কীর্তনীয়া কীর্তন গান করছেন, সেও যাত্রার সংলাপের ধাঁচে, মণিকুন্তলা দাস নাটকনগর স্কুলের রবীন্দ্রজয়ন্তীতে উদ্বোধনী রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইল, সেও যাত্রার সংলাপের ধরনে।
গ্রামবাসীরা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা শুরু করল, কী করলে যাত্রার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়? অনেক অনুসন্ধান করেও কারও মাথায় কোনও আইডিয়া এল না।
জানুয়ারি মাস থেকে নতুন কী উপায় উদ্ভাবন করা যায় নাটকের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্যে, সকলে ভেবে ঠিক করবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। তার পর-পরই পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ল করোনা ভাইরাস। পৃথিবীতে লক্ষ-লক্ষ মানুষ মারা যাচ্ছে। এই মারণ ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে মানুষকে মুখে পরতে হবে নাক-মুখ ঢাকা মাস্ক, সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং মেনে মানুষের মধ্যে দূরত্ব রাখতে হবে ছ’ ফুট। তা হলে নাটকনগরে আর নাটক বা যাত্রাপালা হবে কী করে? মাস্ক পরে কি নাটকের সংলাপ বলা সম্ভব? সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং মেনে ঔরঙ্গজেব তাঁর বাবা শাহজাহানকে বন্দি করবেন কী করে?
এই সব প্রশ্নচিহ্নের মধ্যে নাটকনগর গ্রামের মোড়ল অগ্রপশ্চাৎ শাসমল সমাধান করতে এগিয়ে এলেন। তিনি বৃদ্ধ মানুষ। অনেক নাটকে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন সারা জীবন। অনেক মেডেলও পেয়েছেন অভিনয়ের জন্য।
তিনি গ্রামবাসীদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে জানিয়ে এলেন, ‘নাটক আমাদের জীবনে যে মহা বিপদ ডেকে এনেছে, এর হাত থেকে আমাদের বাঁচতেই হবে। কিন্তু এ তো একদিনে সম্ভব নয়। আমাদের নাটক এবং নাটকের সংলাপ ভুলে যাওয়া অভ্যাস করতে হবে আজ থেকেই।’ সকলে ঘাড় নেড়ে সায় দিল তাঁর কথা।
একটা হুজুগে ছোকরা বলে উঠল, ‘কিন্তু দাদু, সব যাত্রাদল মিলে আমাদের গ্রামে যে একটা মহানাটক মঞ্চস্থ হওয়ার কথা ছিল তার কী হবে?’
‘ওই নাটকের কাজ যেমন চলছে চলুক! ওটাই হবে নাটকনগর গ্রামের শেষ নাটক!’
সন্ধের অন্ধকার নেমে পড়েছে একটু আগে। এমন সময় রাজ্যের মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী অনুরাগময় বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা ফিরছিলেন নাটকনগর গ্রামের পাশের রাস্তা দিয়ে। গ্রামের দিক থেকে হইহট্টগোলের শব্দ শুনে তিনি কনভয় থামিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লেন। অগ্রপশ্চাৎ শাসমল ওদিকে কোথাও যাচ্ছিলেন। মন্ত্রীর গাড়ি দেখে এগিয়ে গেলেন। মন্ত্রী তাঁকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘করোনার সময় গ্রামে এত মানুষের চিৎকার শোনা যাচ্ছে কেন? কী হয়েছে? কেউ মাস্ক পরছে না? কেউ দূরত্ব মেনটেইন করছে না? ’
অগ্রপশ্চাৎবাবু হেসে বললেন, ‘চিন্তা করবেন না স্যার! নাটকনগরে সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং মেনে এখন শেষ নাটকের রিহার্সাল চলছে!’
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন