short-story-pashan-pratima

পাষাণ প্রতিমা
জয়ন্ত দে


পুণ্য ব্যাপারটা মালুম পাওয়া যায় না। কিন্তু পাপবোধ হল কাঁটার মতো। নড়তে চড়তে গেলে কাঁটার মতো খচ খচ করে। অবশ্যই যদি গায়ের চামড়াটা মানুষের চামড়ার মতো হয়, গন্ডারের মতো হলে ভিন্ন কথা। এই পাপবোধ থেকেই দেবরাজ মাসির বাড়ি যায় না। আগে ভালো না লাগলেই মাসিরবাড়ি চলে যেত। অত বড় বিশাল বাড়ি, এত যত্ন আরাম দেবরাজ নিজের বাড়িতে পায় না। হ্যাঁ, সে কলকাতার ছেলে। মাসি মেসোর কাছে— লেখাপড়া জানা শিক্ষিত, চালাক চতুর। মাসি মেসো তাই অন্য সবার থেকে দেবরাজকে বেশ খাতির যত্ন করে। এমনকী নিজের ছেলের থেকেও। কথায় কথায় সবাইকে দেবরাজের কথা বলে। তারপর দেবরাজ যখন ল পড়া শুরু করল, তার বাবা মায়ের থেকে মাসি মেসো গর্বিত ছিল বেশি। শুনেছে, কিছুদিন আগে একটা গোলমাল নাকি মেসো শুধু দেবরাজের ভয় দেখিয়েই কেল্লা ফতে করে দিয়েছে।

মেসোর পাথর ভাঙাইয়ের কারখানার পাশের এক টুকরো জমি নিয়ে ঝামেলা। মেসো চায়নি ঝামেলাটা করতে। কিন্তু ঝামেলাটা লেগে গেল হইহই করে। তখনও মেসো নাকি পাশের জমির মালিককে বলেছিল, “দেখ সনাতন, ফালতু ঝামেলার করছিস কর। দু দিনের বেশি তিনদিন কিন্তু তুই সঙ্গে পারবি না। জমি আমার দখলে আছে, তুই ট্যাঁ ফোঁ করলে আমি কেস করে বসে থাকব। আর দেড় বছর আমি কোর্ট উকিলকে পয়সা দেব। তারপর আমার এক কানাকড়িও লাগবে না। জিতুর ছেলে দেবরাজ ব্যারিস্টারি পাস করে বেরুচ্ছে। সে আমার কেস চালাবে। বিনা পয়সায়। বলেছে মেসো সব কেস আমি ম্যাড্রাস হাইকোর্টে টেনে নিয়ে যাব। তোমার অপনেন্টকে এমন ছোটা ছোটাব, আর ভাতের বদলে ইডলি দোসা খাইয়ে আমাশা ধরিয়ে দেব। তোর সঙ্গে আমার দেড় বছর মোলাকাত তারপর তুই চেন্নাই। তোকে বাসা আর দোসা দুই খুঁজতে হবে।”

এসব শুনে সনাতন নিগোসিয়েশনে আসে, দশ হাজার টাকা নিয়ে সব ঝামেলা মিটিয়ে নেয়। তারপর মেসো নাকি তাকে মদ খাইয়ে বলছিল, “তোর কিন্তু ডবল লাভ হল রে সনাতন, কোর্টে টাকা দিতে হল না, উলটে তুই দশহাজার টাকা পেলি।”

মেসোর কথায় সনাতন হ্যাঁ বা না কিছু একটা বলেছিল কি না জানা যায় না। কিন্তু মেসো বলেছিল, “শোন সনাতন, দশহাজার টাকা ব্যাঙ্কে রাখ, আর ফি মাসে কোর্ট খরচা বাবদ এক হাজার টাকা করে রেকারিং কর। মনে কর পাঁচ বছর পর তুই জিতে গেলি। তখন তোর ওই জমির দাম কত হবে? বিশ হাজার বা ত্রিশ হাজার? কিন্তু পাঁচ বছর পর তোর ব্যাঙ্কে কত আছে দেখ— দশ প্লাস ষাট হাজার, প্লাস ইন্টারেস্ট। সব মিলিয়ে পঁয়ষট্টি হাজার। তোর ওই জমির দাম কোনওদিন এত হবে? হবে না।”

দেবরাজ বুঝেছিল মেসোর পাক্কা ব্যবসায়ী মাথার কাছে সনাতন তার ন্যায্য জমি ছেড়ে দিয়েছে। দেবরাজের ভয়ে নয়।

অথচ এই মেসোর ছেলে তার থেকে পাঁচ বছরের বড় কাঞ্চনকুমারের কোনও কাঞ্চন মূল্য নেই মেসোর কাছে। মেসো কথায় কথায় সবার সামনে বলে— “অপদার্থ। পেটে মদ পড়লে তো আর কথাই নেই।” নিজের ছেলে এবং তার বাপকেও মানে নিজেকেও মেসো ছাড়ত না।

অপদার্থ শুনে রেগে গেলে মাসি ওর গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। বাবা বাছা করে। কাঞ্চন ঠান্ডা হয়। মাসি তাকে ঠান্ডা না করলেও সে ঠান্ডা হবে, ঠান্ডা না-হয়ে তার উপায় নেই। নিজে কিছুই করে না, বাবার পাথরের কারখানায় গিয়ে মাঝেমাঝেই সে গোলমাল পাকিয়ে আসে। কাঞ্চনকুমার রোগা প্যাংলা, হাড় সর্বস্ব একটা মানুষ। মুখে ও ব্যবহারেও যেন রস কষ নেই। বাপের পাথর ভাঙাই কারখানায় গিয়ে সকাল থেকে পড়ে থাকে। ওই একঘেয়ে বিচ্ছিরি আওয়াজের ভেতর বেমালুম ঘুরে বেড়ায়। পাথর ভাঙার মেশিন থেকে হু হু বেরিয়ে আসা পাথরের গুঁড়োর ভেতর নাকে মুখে আচ্ছাসে গামছা চাপা দিয়ে ট্রাকঅলাদের গাড়িতে ঢোকে। ওর ধারণা মুখে গামছা চাপা দিলে ওকে কেউ চিনতে পারবে না। সেখানে বসে শুকনো মাংসের সঙ্গে রাম খায়, হুইস্কি খায়। আর মগ্ন হয়ে বসে মোবাইলে অশ্লীল ছবি দেখে। আগে নিজের মোবাইলে এই সব ছবি ভর্তি থাকত। একবার গুচ্ছের ছবি নিয়ে গিয়েছিল বাড়িতে মল্লিকাকে দেখানোর জন্য। সেসব ছবি নাকি মল্লিকা সারারাত ধরে দেখেছে, দেখেছে আর কেঁদেছে। তারপর সেই মোবাইলটা গোবরজলের বালতিতে ডুবিয়ে দিয়েছে। মোবাইলটির প্রাণআয়ু শেষ।

সকালবেলা উঠে গোবর জলের বালতি থেকে মোবাইলটা উদ্ধার করে ট্যাঁ ফোঁ করেনি কাঞ্চনকুমার। শুধু মল্লিকার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থেকে কারখানায় পালিয়েছিল। তাই এখন নিজের মোবাইলটা গেরস্ত করে ট্রাকঅলাদের মোবাইলই তার বিশ্বদর্শন!

কাঞ্চনকুমার বেশি দারুময় হলে মাঝেমাঝে দুঃখ করে— সে সতীসাধ্বী স্ত্রীকে নষ্ট করে দিয়েছে। এই পাপ সে কোথায় রাখবে! যারা তখন সেখানে তার সঙ্গে পান, ভোজন ও পর্ন-ফিল্মে থাকে তারা সবাই বলেছে— “তুনে আচ্ছা কাম নেহি কিয়া কানচন!”

কানে কানে সে কথা কাঞ্চনকুমারের বাবার কাছেও পৌঁছায়। কথাটা শুনে আক্ষেপ করে মেসো, “বাড়ির প্রতিমাটি পাষাণ হয়ে যাচ্ছে, এখানে এসব না করে ওখানে গিয়ে বলো পাথর ভাঙতে।”

ঠিক এইখানে একদিন প্রবেশ ঘটে দেবরাজের। ক’দিনের ছুটিতে বেড়াতে এসেছিল, হাতে ছিল তিনদিন। এল প্রায় দু’বছর পরে। শেষ এসেছিল কাঞ্চনকুমারের বিয়ের সময়। এবার আসতেই মাসি বলে দিল— “দোতলায় চলে যা। তোর ঘর তোর জন্যই রাখা আছে।”

কাঞ্চনের পাশেই দেবরাজের ঘর। স্বাভাবিকভাবেই সে ভেবেছিল দোতলার দক্ষিণমুখো ঘরগুলোতে হয়তো এখন কাঞ্চনরা থাকে। কিন্তু গিয়ে একবেলা থেকেই বুঝল, কোথায় কাঞ্চন? কাঞ্চন নেই, কামিনী একা।

মল্লিকা খুব চটপটে মেয়ে। একবেলাতেই ভাব হয়ে গেল শহুরে দেওরটির সঙ্গে। বেলায় বাড়িতে খেতে এল কাঞ্চন। দেবরাজ বলল, “আজ আর বেরুসনি, চল আড্ডা মারি।”
কাঞ্চন ফিসফিস করে বলল, “রাতে হবে, কিছু খাবি, তালে ব্যবস্থা করি। রাতে পার্টি হবে।”
দেবরাজ আঁতকে উঠল, “এই বাড়িতে? মাসি জানতে পারলে কী ভাববে?”
কাঞ্চন বলল, “কোনও ব্যাপার না, দোতলা থেকে না নামলেই হল। সন্ধে হলেই মা পায়ের যন্ত্রণায় কাবু হয়ে বিছানা নেয়।”
“আর মেসো?”
“ধুস বাবা সন্ধে হলেই আউট। তখন আমি আর তুই, মা আর মল্লিকা, সব এক।”
দেবরাজ রসিক ছেলে, শহুরে, বলল, “নিয়ে আয়, তবে সাবধানে, কেউ যেন টেরটি না পায়। হ্যাঁ রে তোর বউ, অ্যালাউ করবে?”
কাঞ্চন বলল, “ও কোনও ব্যাপার নয়। ও নীচে থেকে খাবারটা ওপরে পৌঁছে দেবে, ব্যস।”
কাঞ্চন বেরিয়ে গেল।


দুপুর গড়িয়ে বিকেল। মল্লিকা এল চা দিতে। দেবরাজ বলল, “কাঞ্চন ফেরেনি?”
“ও কি ফিরবে বলল? আটটার আগে আসবে না। ন’টাও হতে পারে।”
“ও হো, বললাম আড্ডা মারব।”
মল্লিক কপাল কোঁচকাল, “ওর সঙ্গে আড্ডা! ও গল্প করতে পারে? ও শুধু একটা জিনিসই পারে—”
“কী?”
“কী আবার— গিলতে?”
ঢোক গিলল দেবরাজ। বলল, “ও কি রোজ খায়?”
“হ্যাঁ, দুপুরে খায়, রাতে খায়। খেতে খেতেই তো এমন চেহারা হয়েছে। হাড়ের ওপর মাংস জড়ানো।”
“তুমি কিছু বলো না?”
“বলে কী হবে, আমার কথা শুনবে? অবশ্য না শুনলেও আমার কিছু এসে যায় না।”
দেবরাজ ভাবছিল, একটু পরেই নিশ্চয়ই বোতল নিয়ে কাঞ্চন হাজির হবে। তখন দেবরাজ কী করবে? দেবরাজ বলল, “শোনো, ও আমাকে খাওয়াতে চাইছে, আমি ঠিক রাজি নই। কিন্তু ও শুনল না, বেরিয়ে গেল। বলল, রাতে নিয়ে আসবে। পাটি হবে। তুমি ওকে আটকাতে পারবে? ফোন করে বলে দাও, আমি ওসবের মধ্যে নেই!”
“ওর একটা বাহানা চাই। না, আমি পারব না। কাকে আটকাবো বলো, ওর বাপেরও তো সন্ধে হলেই মনে হয়— বড্ড খাটুনি গেছে, নেশা না করলে গায়ের ব্যথা মরবে না। আমি অশান্তি করে করে থেমে গেছি। ও যা মন চায় করুক। এই নরককুণ্ডে আমি বেঁচে আছি, কী মূল্য আছে আমার?”
দেবরাজ ফোন করল কাঞ্চনকে। বলল, “শুধু হাতে আয়, আমার শরীরটা ঠিক নেই। আমি খাব না।”
খ্যা খ্যা করে হাসল কাঞ্চন, “তুই নির্ঘাত সতীলক্ষ্মীর পাল্লায় পড়েছিস! আমি জানি ও ডিসলাইক করে। তবে ও থাকবে ওর ঘরে। কী প্রবলেম। আজ একটা দিন। বাড়িতে গেস্ট এসেছে। ডোন্ট অরি।”
দেবরাজ বলল, “সরি। এটা মনে হয় ঠিক হবে না।”
কাঞ্চন হাসল, “দেওর হয়ে বউদিকে ম্যানেজ করতে পাচ্ছিস না!”
ম্লান হাসল মল্লিকা, বলল, “দেখলে তো কী বলল তোমাকে— দেওর হয়ে বউদিকে ম্যানেজ করতে পারছিস না! নাও তুমি আমাকে ম্যানেজ করো।”
দেবরাজ মাথা নিচু করল। মল্লিকা চলে গেল। সাতটা নাগাত ফিরল কাঞ্চন। বলল, “ভালো জিনিস, তিরিশ তিরিশ ষাট কিলোমিটার গিয়ে নিয়ে এলাম, এখানে যা পাওয়া যায়, তা খেলে তোর মেসোর মতো ছয়কে নয় দেখবি। দুটো বোতল দুদিনের কোটা তুলে নিয়ে এলাম।”
“আজ নয়, কাল খাব রেখে দে। আজ বরং গল্প করি।”
“ধুস, এটা নিয়েই গল্প হলে জমে যায়। হ্যাঁ রে তোর মোবাইলে কিছু আছে নাকি? আমার মোবাইল এমটি।”
“কী?” দেবরাজ বলল।
“হট ভিডিও।”
“না।” মুখ কুঁচকে দেবরাজ মাথা নাড়ল।
বিষণ্ণ মুখে কাঞ্চন বলল, “ওটাই তো আমার চাট রে! তালে আর কি চাট নেই। হট ভিডিও ছাড়া শুধু শুধু খেতে হবে।”
কিন্তু একটু পরেই এত্ত চাট নিয়ে এসে দিয়ে হাজির হল মল্লিকা। সঙ্গে রাতের খাবারও। বারান্দায় গোল টেবিলে খাবার সাজিয়ে বলল, “সন্ধ্যামাসি বাবাকে খাবার দিয়ে দেবে। আমি সব গুছিয়ে এসেছি। নাও তোমরা শুরু করো।”
দেবরাজ একটু কিন্তু কিন্তু করছিল, “আরে আমি তো আছি, কাল হতো।”
কাঞ্চন ফিসফিস করল, “দুটো বোতল, কালও হবে, কে বলছে হবে না! আর কাল যদি হবে তবে আজ হতে বাধা কোথায়?”
কাঞ্চন বোতল খুলে ফেলল। বলল, “দেখেছিস, মল্লিকা কিন্তু সব সাজিয়ে দিয়েছে। গ্লাস, জগ ভরে জল, বরফ, কাজু-কিসমিস, শশা, ডিমের ভুজিয়া, চিকেন, রুটি, আর কী চাই। হ্যাঁ রে তুই শহরের ছেলে, তোর মোবাইল কি এমটি? কিছু নেই? চাট না হলে মাল খাওয়া যায়!”

কাঞ্চন দুটো গ্লাসে মদ ঢালল। বলল, “অ্যাঁ, মল্লিকা ভুল করেছে— তিনটে গ্লাস দিয়েছে!”
মল্লিকা এগিয়ে এসে ওদের দুজনের মাঝে বসল, বলল, “না, না, আমি কী ভুল করলাম— গ্লাস বেশি কে বলল, তিনটেই তো আছে।”
কাঞ্চন বলল, “তিনটে কেন? আমরা তো দুজন।”
মল্লিকা হাসল, “আজ আমার দেওর তার বউদিকে ম্যানেজ করেছে—আজ আমিও খাব, তিনটে গ্লাসে ঢালো।”
কাঞ্চন একটু থেমে গেল যেন, বলল, “তুমি খাবে? নেশা হবে, শরীর খারাপ করবে।”
“কিছু হবে না। কে বলল শরীর খারাপ হবে? আমার শরীর খারাপ দেখে, তোমার বাবা আমাকে দু-দু’দিন অফার করেছে, বলেছে— ‘টক করে দু’ঢোক মেরে দাও, শরীর ফিট হয়ে যাবে।’ আর তুমি বলছ, শরীর খারাপ হবে! দাও আমাকে দেখি কেমন শরীর খারাপ হয়!”
থমকে থাকা কাঞ্চনের হাত থেকে বোতল নিয়ে নিজের গ্লাসে মদ ঢালে মল্লিকা। জল মেশায়। দু’কুচি বরফ দেয়। তারপর তিন ঢোকে গ্লাস শেষ।
কাঞ্চন বিব্রত মুখে বলে, “আহা একসঙ্গে এমনভাবে কেউ খায়, আস্তে আস্তে খেতে হয়। তারিয়ে তারিয়ে। নাও মুখে দুটো কাজু দাও।”
মল্লিকা বলে, “আমার এই চাটে হবে না, আসলি চাট বের করো।”
কাঞ্চন বলে, “তবে ডিম ভুজিয়া খাও।”
মল্লিকা মুখ ব্যাজার করে বলল, “তোমার মোবাইলে কিছু নেই— বের করো বস! আমার ওই চাট চাই।”
বিনবিন করে ঘামছে কাঞ্চন। মিনমিন করে বলল, “সেই মোবাইলটা তো গোবরজলে ডুবে মরেছে। এটা গেরস্থ ফোন, কিছু নেই।”
কাঞ্চনের কথার মাঝে মল্লিকা আবার গ্লাসে ঢেলে নিয়েছে। অল্প জল দিয়ে, বরফ দিয়ে আবার চোঁ চোঁ করে টেনে নিয়ে মুখ বিকৃতি করল, “আহা ঢং, গেরস্ত ফোন! গেরস্থরা যেন কিছু দেখে না, ঘোমটার নীচে খেমটা নাচা! এই দেবরাজ, দেওর আমার, তোমার মোবাইলে কিছু আছে?”
কাঞ্চন বলল, “না, না, দেবরাজ ভালো ছেলে, ওর মোবাইলে কিছু নেই। ওসব থাকে না।”
মল্লিকা উঠে দাঁড়াল। “ন্যাকা! দুগ্ধপোষ্য!” মাথায় খোঁপা করা চুলটা খুলে সারা পিঠে ছড়িয়ে দিল। বলল, “আহ্‌! কী হল তোমার থমকে গেলে কেন? পার্টি তো সবে শুরু হল!”
কাঞ্চন বোকার মতো হাসল। “তোর বউদিকে মাইরি আজ ভূতে পেয়েছে!” তারপর মাথা নিচু করে গ্লাসে চুমুক মারল। দেবরাজও চুমুক দিল ধীরে ধীরে। কিন্তু ওরা ধীরে চললে কী হবে, মল্লিকা গ্লাসে ঢালছে, জল দিচ্ছে, টপাটপ বরফ ফেলছে— আর চোখ বুজে বলছে— “ভ্যাগিস আমার দেওরটা আজ বলল, খুব জমে গেছে দেবরাজ, আমি বিন্দাস! বড্ড ভালো লাগছে। থ্যাঙ্কু! থ্যাঙ্কু!”
বাইরে আঁধার ঘন হয়। একতলার আলো নিবে টিমটিম করে একটা লালচে ব্লাব জ্বলছে।
কাঞ্চন চাট খায়নি কোনও, বিনা চাটে তিন চার পেগ মদ খেয়ে টেবিলে মাথা দিয়ে শুয়ে।
মল্লিকা হালকা ঠেলা দিল দেবরাজের গায়ে, বলল, “ও কবার নিল? তিন বার, না চারবার? দেখো উলটে পড়েছে, এই ধক নিয়ে মাস্তানি মারে!”
দেবরাজ হাসল।
“তোমার দাদার শরীরটা দেখেছ, একটা খড়-ছাড়া-কাঠামো! এই চেহারা নিয়ে ও হট দেখে!”
দেবরাজেরও নেশা হয়েছে প্রচণ্ড। বলল, “বউদি তুমি তো ভালোই খেলে!”
মল্লিকা হাসল, “ভালো মন্দ জানি না, খেয়ে দেখলাম। এত খাওয়ার কথা শুনি, আজ দেখলাম তোমার দাদা কেমন খেতে পারে। জান তো, একদিন মোবাইল এনে খুব ন্যাংটো ছবি দেখাচ্ছিল। তারা সব বিছানা কাঁপাচ্ছে, খাট ভাঙছে, উনি দেখছেন। আমি বললাম, ছবি দেখে কী হবে, তুমিও ওইরকম প্র্যাকটিশ করো। আমি বলতে কেমন ভয় পেয়ে গেল। বলল, ওগুলো সত্যি না, ছবি! আমি বললাম, হোক ছবি। এসো আমরা ছবি হই। ভয়ে গুটিয়ে গেল। বলল, ওগুলো সব মিথ্যা! শুনে মাথাটা গরম হয়ে উঠল। দিলাম মোবাইলটা গোবরজলে ফেলে। এত ফোঁস ফোঁস করত, হট ভিডিও, মদের সঙ্গে চাট, অথচ নিজে অপদার্থ!”
দেবরাজ তাকাল কাঞ্চনের দিকে। বলল, “ওকে বিছানায় শুইয়ে দিই।”
মল্লিকা মুখ বিকৃতি করল, বলল, “ওকে জাগাও, বলো, মাল আছে চাট আছে, পার্টি চালু!”
দেবরাজ হাই তুলল, মল্লিকাকে বলল “চলো শুয়ে পড়া যাক। খুব সকালে বেরিয়েছি।”
মল্লিকা বলল, “পার্টি খতম! না, না তা হবে না, ওকে ডাকো।”
দেবরাজ বলল, “না, আর পারছি না, শুয়ে পড়ি, কাঞ্চন তো টেবিলেই পড়ে রইল।”
“ও একটু ঘুমিয়ে নিক, বোতলে এখনও মদ আছে, ঘুম ভাঙলে খাবে।”
দেবরাজ ঘরে ঢুকল, ওর সঙ্গে মল্লিকাও ঘরে ঢুকল। দেবরাজ হেসে বলল, “তোমার ঘর পাশে।”
মল্লিকা ওর গলা জড়িয়ে ধরে বলল, “আজ আমার ঘর ভুল হয়ে গেছে, আমি এখানেই শোব।”
দেবরাজের একটু অস্বস্তি হল, বলল, “তাহলে কি আমি ওই ঘরে যাব?”
“তোমার ঘর ভুল হবে কেন? ইশ, ছি ছি ঘর ভুল করে তুমি পাশের দাদা বউদির ঘরে ঢুকে পড়বে?”
আচ্ছা মুশকিলে পড়েছে দেবরাজ। বলল, “ধুস, তুমি মজা করছ?”
“রোজ রাতে আমার শ্বশুর আমাকে চিনতে ভুল করে, রোজ রাতে আমার স্বামী আমাকে নিয়ে মজা করে। আজ আমি দুটোই করব! ভুলও করব, মজাও করব!”
মল্লিকা পরনের শাড়িটা খুলে খুব সুন্দর ভঙ্গিতে দাঁড়ায়। দেবরাজের সারা শরীরে রক্ত ছলকে ওঠে। সে বাইরে তাকায়, টেবিলে মুখ থুবড়ে কাঞ্চন! ফিসফিস করে বলে, “যদি বাইচান্স মেসো বা মাসি দেখে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে।”
মল্লিকা বলল, “কিচ্ছু হবে না, কতদিন তোমার মেসো আমাকে তোমার মাসি বলে জড়িয়ে ধরেছে। আমি নেশা করিনি বলে, তাঁকে ঠেকিয়ে দিয়েছি। আজ আমার ভুল হবে।”
দেবরাজ নিজেকে সামলাতে সামলাতে বলে, “প্লিজ কাঞ্চন আছে।”
“তুমি যদি এ ঘর থেকে আমাকে বের করে দাও, আমি সোজা নীচে চলে যাব। আজ আমার ঘর ভুল করতেই হবে। বলো রাজি?”
দেবরাজ থমকে থাকে। মল্লিকার মুখে বুকে আগুন জ্বলছে। দেবরাজ আর পারে না, টেনে নেয় কাছে। ফিসফিস করে, “যদি কাঞ্চনের ঘুম ভেঙে যায়।”
মল্লিকা দ্রুত হাতে ব্লাউজ-ব্রেশিয়ার খুলে ফেলে। দেবরাজ মল্লিকার স্তনে মুখ ঘষতে ঘষতে বলে, “কাঞ্চন এ জিনিস ছেড়ে মোবাইলে কী দেখে!”
“দুর দুর তোমার কাঞ্চনকুমার পাথর ভাঙতেই জানে না। আমার শ্বশুর তো আমার নাম দিয়েছে পাষাণ প্রতিমা। উনিও ভাঙতে পারেননি। বাবা বেটা দুজনে শুধু শুধু নাকে মুখে পাথর ভাঙা ধুলো গিলে উল্লাস করেছে।”
দেবরাজ মল্লিকাকে বিছানার দিকে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বাইরে তাকাল। বলল, “আমি কিন্তু ধুলো খাওয়ার ছেলে নই। পাথর ভেঙে তবে যাব।”
“কদিন থেকে যাও।”
“তিনদিন তো আছি।”
“না, সাত দিন।”
“আমি রাজি।”
মল্লিকা নিজের নগ্ন শরীরটা বিছানায় তোলপাড় করতে করতে, দেবরাজের সঙ্গে মাখামাখি হতে হতে আনন্দে আর শীৎকারে ঘর ভরিয়ে তুলল। টেবিলে কাঞ্চন, মুখ থুবড়ে পড়ে। দেবরাজ বলল, “যে কোনও সময় ও জেগে উঠতে পারে। ঘরের জানলা দরজাটা বন্ধ করি—।”
মল্লিকা খিলখিল করে হাসল, “একদম না, ঘুম ভাঙলে কাঞ্চনকুমার আজ মোবাইলে নয়, জানালা দিয়ে বড় স্ক্রিনে হট দেখবে! চাট দিলাম, এবার মদ খাক। পার্টি চলুক!”

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

5 thoughts on “short-story-pashan-pratima

  1. উরেঃ ব্বাস ! এতো পরকীয়া আনলিমিটেড ! দারুণ লাগলো ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *