short-story-poschimer-baranda

পশ্চিমের বারান্দা
রেহান কৌশিক

এক



‘কচুরিপানা আর মানুষের মধ্যে সেই অর্থে কোনো ফারাক নেই, স্যার।’
সাত্যকির কথায় ভ্রু কোঁচকাল মৌলিনাথ– ছোকরা বলে কী! শেষ চুমুক দিয়ে চায়ের ভাঁড়টা জংলা ঝোপের দিকে ছুঁড়ে দিয়ে সাত্যকি বলল, ‘অবাক হলেন তো! আসলে স্যার, পুকুরের স্থির জলে ভাসতে থাকা কচুরিপানা ভাবে শেকড় ছড়িয়ে দিব্যি আছি। কিন্তু একটা ঢিল পড়ুক কিংবা কেউ স্নান করতে নামুক, জল একটু দুলে উঠলেই কচুরিপানাকে সরে যেতে হয়।
মানুষও অমন। স্থায়িত্ব বলে কিছু নেই। মানুষ ভাবে– এই বোধহয় থিতু হলাম, কিন্তু দেখবেন, কোনো-না-কোনো ঘটনায় সেই স্থায়িত্ব ভেঙে যায়।
আবার দেখুন, এখন একান্নবর্তী পরিবার বলেই কিছু নেই। নানা কারণে সবাই আলাদা, একা। বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো। অথচ মানুষ কিন্তু মনে-মনে একলা থাকতে পারে না। সঙ্গী খোঁজে। কথা বলার লোকজন চায়। কিছুজনকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চায়। কচুরিপানার স্বভাবও তাই। একে অন্যকে ছুঁয়ে থাকে, আঁকড়ে ধরে থাকে।’

কথাটা ফেলে দেওয়ার মতো নয়– ভাবে মৌলিনাথ। সে যখন ছোটোবেলায় এই বাড়িতে থাকত, ভেবেছিল আজীবন বোধহয় এখানেই কেটে যাবে। তারপর কোল ইন্ডিয়ার চাকরি নিয়ে যখন এলাহাবাদে সেটল হল, তখনও ভেবেছিল এই প্রবাসেই বোধহয় জীবনের বাকি দিনগুলো পার হবে। ভেবেছিল– ঊর্মিলার সঙ্গে গঙ্গাপাড়ের শহরে কথা বলতে বলতেই জীবন ফুরিয়ে যাবে। হঠাৎ ঊর্মি হার্ট অ্যাটাকে চলে গেল। ভবিষ্যতের জন্য সাজিয়ে রাখা ছকগুলোই ওলটপালট হয়ে গেল। ছেলের কাছে বস্টনে গিয়ে বেশিদিন থাকা হল না। ছেলে-বউমার ব্যস্ত শিডিউল। কথা বলারই ফুরসত মিলত না ওদের।
ওখানে দিনের বেশিরভাগ সময়টাই পার্কে চলে যেত মৌলিনাথ। মানুষের মুখ দেখার লোভে। আলাপও হয়েছিল কয়েকজনের সঙ্গে কিন্তু একাকিত্ব ঘুচল না। কিসের যেন একটা অভাব বোধ করত মৌলিনাথ। দিনে দিনে নিঃসঙ্গতা তাকে ময়াল সাপের মতো গিলতে শুরু করেছিল। একদিন সে নিজেই নিজের একাকিত্বের কারণ আবিষ্কার করল। বুঝল– এখানে মানুষ আছে ঠিকই কিন্তু তাদের শরীরের জ্যামিতি আলাদা। তাদের মুখচোখের রেখায় আজন্মের চেনা মানুষজনের আদল নেই, আদরের আলো নেই।
বাবার সিদ্ধান্তে দুঃখ পেয়েছিল শমীক। কিন্তু মৌলিনাথ ছেলেকে তার মনের অবস্থাটা বুঝিয়েই দেশের ফ্লাইট ধরেছিল। দেশে ফিরে এলাহাবাদের পাট চুকিয়ে নিজের পৈত্রিক বাগানসহ বাড়িটা সংস্কার করছে। ইচ্ছে আছে জীবনের বাকি সময় এখানেই থেকে যাবে।
হ্যাঁ ঠিকই, মানুষ অনেকটা কচুরিপানার মতোই। মনে মনে সাত্যকির তারিফ করল মৌলিনাথ।

ছেলেটা করিতকর্মাও। মনে মনে আশঙ্কা ছিল, কুড়ি কাঠা বাগানের মধ্যে ধ্বংসস্তুপের মতো এই বাড়িটাকে ফের বসবাসযোগ্য করা যাবে কিনা! তখনই সাত্যকি হাজির। ওদের একটা সিন্ডিকেট আছে। এলাকার বালি-সিমেন্ট-ইঁট থেকে বাড়ি তৈরির সব সরঞ্জাম সাপ্লাই দেয়। সাত্যকিকে দেখে একটু কিন্তু কিন্তু করছিল মৌলিনাথ। বছর তিরিশ বয়স। কদমছাঁট চুল। চোঙা জিনস। গায়ে চকরাবকরা জলিংপ্রিন্টের টি-শার্ট। মৌলিনাথ বলেছিল, ‘আমি যে বাড়ি রেনোভেট করব, খবর পেলে কোথায়?’
মুচকি হেসে সাত্যকি বলেছিল, ‘খবর হাওয়ায় ওড়ে, স্যার।’
সাত্যকির কথা বলার ধরনটা পছন্দ হল না মৌলিনাথের। সেটা বুঝতে পেরেই বোধহয় সাত্যকি একটু মোলায়েম স্বরে বলল, ‘স্যার আমরা গুণ্ডা-মস্তান নই। বর্ধমান ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স করেছি। বুঝতেই তো পারছেন চাকরির অবস্থা! কিছু তো একটা করতে হবে, নাহলে স্যার, খাব কী?’
মৌলিনাথ বলল, ‘আমার তো শুধু বাড়ি সারালেই হবে না, এত বড়ো বাগান, জংলাগাছ আর আগাছায়…’
মৌলিনাথকে কথা শেষ করতে না-দিয়েই সাত্যকি বলেছিল, ‘স্যার, ভাববেন না। বাগানের পুরো জায়গা-পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে বাড়িটা রেনোভেট করে ঝকঝকে করে দেব।’
কথা রেখেছে সাত্যকি। পনেরো দিনে হাল ফিরিয়ে দিয়েছে। খুব বেশি হলে আর দিন দশ লাগবে। বাউন্ডারি-ওয়ালটা নতুন করে গাঁথা হচ্ছে। সারা বাগান জুড়ে একদল লোক কাজ করছে। সাত্যকি তাদের তদারক করছে।
এদিকে বাড়ির প্লাস্টার শেষ। রং করা বাকি। একতলার বাড়িটার সেই পুরোনো আভিজাত্য ফিরে এসেছে। পাঁচিলের কাজ দেখতে দেখতে মৌলিনাথ বলল, ‘সাত্যকি, পশ্চিমের বারান্দার কাছে মরে যাওয়া তালগাছটা লেবারদের দিয়ে কাটিয়ে দিয়ো। শুকনো গুঁড়িতে লতার কুণ্ডলী জায়গাটা অন্ধকার করে দিয়েছে।’
‘ওসব আপনাকে চিন্তা করতে হবে না। কাজ শেষ হলে দেখবেন পঁয়ত্রিশ বছর ধরে পড়ে থাকা জায়গা কী দাঁড়ায়! নিজের প্রপার্টি নিজেই চিনতে পারবেন না।’

দুই



সত্যিই এখন যেন নিজেরই বিশ্বাস হচ্ছে না! কী সুন্দরভাবে সেজে উঠেছে বাড়ি ও বাগান। ঘরের ভেতর ছড়িয়ে আছে নতুন রংয়ের মনকেমন গন্ধ। ইচ্ছে করেই দেওয়ালে ইলেকট্রনিক্স ঘড়ি লাগায়নি মৌলিনাথ। আটকে দিয়েছে গ্রান্ডফাদার ক্লক। পেতলের পেণ্ডুলামের শব্দে ফিরে আসে ছোটোবেলা।
হাতে সকালের চা। হঠাৎ জানালা দিয়ে চোখ পড়ল কাঁঠালগাছে। অজস্র শাখা-প্রশাখায় ঘন কালচে-সবুজ পাতা। ভালো করে খুঁটিয়ে দেখল মৌলিনাথ– নাহ্‌, তেমন কোনো রূপান্তর চোখে পড়ল না। পঁয়ত্রিশ বছর আগে দেখা যুবক-গাছটার যৌবন আজও অটুট।
পৃথিবীতে যারা কথা বলে তারাই বোধহয় দ্রুত যৌবন হারায়, বার্ধক্যে পৌঁছে যায়! আর যারা স্তব্ধ হয়ে থাকে তারা দীর্ঘ যৌবন লাভ করে। প্রৌঢ়ত্ব সহজে তাদের ছুঁতে পারে না। যেমন– মানুষ ও গাছ।
মৌলিনাথের মনে এমন আশ্চর্য একটা সিদ্ধান্ত জন্মাল! আর সঙ্গে সঙ্গে বুকের ভেতর খাঁ খাঁ করে উঠল এক শূন্যতাবোধে। সে চা শেষ করে উঠে গিয়ে আলমারির পাল্লা খুলে রুমালটা বের করে আনল। রুমালের এক কোণে লাল সিফন সুতোয় সেলাই করা সূর্যটা আজও সুস্পষ্ট। শুধু সাদা রুমালে বাক্সবন্দী সময়ের হলদেটে দাগ। সময় বোধহয় সবকিছুকেই হলদে ও মলিন করে দেয়।

ক-দিন আগে সাত্যকির লোকজন ঘর পরিষ্কার করার সময় আলমারির ভেতর একটা টিনের বাক্স পেয়েছিল। ছোটোবেলার নানা জিনিসের ভেতর এই রুমালটাও ছিল। মুহূর্তে সেলিনার মুখটা খুব উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল মৌলিনাথের সামনে। কলেজবান্ধবী সেলিনার সঙ্গে সম্পর্কটা ঠিক প্রেমের ছিল না ঠিকই কিন্তু তাকে সাধারণ বন্ধুত্বও বলা যায় না। প্রায়দিনই এই গোলাপবাগের বাড়ি থেকে সাইকেল নিয়ে কাঞ্চনপুরের দিকে চলে যেত মৌলিনাথ। ভেতর থেকে কে যেন টান দিত আর সাইকেলের মুখ দামোদরের দিকে ঘুরে যেত! কাঞ্চনপুর থেকে সেলিনাও চলে আসত নদীর কাছে।
নদীজলের ওপর ছড়ান শান্ত আকাশ। পাড়ে কাশফুলের জঙ্গল। দূরে ক্রমশ নদীর বাঁকে হারিয়ে যাওয়া ডিঙিদের দেখতে দেখতে মৌলিনাথের জন্মদিনে সেলিনা এই রুমালটা দিয়েছিল। রুমালটা হাতে নিয়ে মৌলিনাথ মুচকি হেসে বলেছিল, ‘সূর্য-রুমালে মুখ মুছলে মুখ না পুড়ে যায়!’
হেসে উঠেছিল সেলিনাও, ‘সকালের সূর্য মুখ পোড়ায় না। মুখ উজ্জ্বল করে।’

কে জানত নদীতীরে এই দেখা হওয়াই তাদের শেষ দেখা! সেলিনা আর কলেজ আসেনি। এমন নাটকীয় নিরুদ্দেশে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল মৌলিনাথ। সেই নিরুদ্দেশের রহস্য আজও রহস্যই রয়ে গেছে।
এত বছর বাদে রুমাল আবিষ্কারের পর মৌলিনাথ গত তিনদিন কাঞ্চনপুরে ঢুঁ দিয়েছে। তন্নতন্ন করে খুঁজেছে। নানাজনকে জিজ্ঞাসা করেছে। কিন্তু কেউ সেলিনার কোনো হদিশ দিতে পারেনি।
বাইকের শব্দে মুখ তুলল মৌলিনাথ। দেখল– বাউন্ডারি-গেটের ভেতর ঢুকে সাত্যকি বাইকের স্টার্ট বন্ধ করে স্ট্যান্ড দিচ্ছে। মৌলিনাথ তৈরিই ছিল। দরজায় সাত্যকিকে দেখেই বলল, ‘এসো। তোমার চেক রেডি করা আছে।’
সাত্যকি সামনের চেয়ারে বসল। চেক হাতে নিয়ে বলল, ‘থ্যাঙ্কু, স্যার। বাই দ্য ওয়ে, আপনি বাড়ির একটা নাম ঠিক করে জানাবেন বলেছিলেন, ভেবেছেন কিছু? আপনি জানালেই প্লেট করে বাউন্ডারির ওয়ালে লাগিয়ে দেব।’
হঠাৎই মৌলিনাথ বলল, ‘ভাবিনি এখনও। ভেবে জানাব। আচ্ছা, অন্য একটা ব্যাপারে আমাকে একটু হেল্প করতে পার?’
‘হ্যাঁ, বলুন না। কী ব্যাপারে?’
মৌলিনাথকে অন্যমনস্ক দেখাল। তারপর একটু চিন্তা করে বলল, ‘না থাক…’
‘বলতে পারেন। সম্ভব হলে আমি নিশ্চয় সাহায্য করব।’ মৌলিনাথে চোখের দিকে তাকিয়ে বলল সাত্যকি।
‘এত বছর পরে ফিরে নিজের শহরটাকেই আর চিনতে পারছি না, জানো! মাটি ও মানুষের ভূগোলটাই যেন বদলে গেছে! নিজের শহরে আমিই যেন উটকো কেউ! একটা আইডেন্টিটি ক্রাইসিস তৈরি হয়েছে!’
‘অত ভাববেন না, স্যার। ক-দিন পরে দেখবেন ক্রাইসিসটা কেটে যাবে। থাকতে থাকতে আবার চেনাজানা বাড়বে। আপনি কিন্তু আপনার সমস্যাটার কথা বললেন না!’
‘সমস্যা ঠিক নয়, আসলে আমি একজনকে খুঁজছি। কাঞ্চনপুরে থাকত। সেলিনা খাতুন। কলেজে একসঙ্গে পড়েছি। ফিজিক্সের ছাত্রী ছিল। তা ধরো, ফিফটি ইয়ার্স আগে।
শহরে ফিরে পুরোনো সব বন্ধুদের খুঁজছি। সবাইকে যে পাব, এমন নয়। হয়তো কেউ আছে, কেউ নেই। বলতে পার, অনেকটা নিজের শেকড় খোঁজার মতো। দেখা-সাক্ষাৎ হলে এই বয়সে বাঁচার একটা অন্য অর্থ খুঁজে পাওয়া যায়, এই আর কী।’
নিজেকে যতটা নিরুত্তাপ রেখে কথাগুলো বলা যায়, মৌলিনাথ সেভাবেই সাত্যকির কাছে প্রসঙ্গটা উত্থাপন করল। কারণ, এ বিষয়ে কারও অনর্থক কৌতূহল তার কাম্য নয়।
‘খুব চেষ্টা করব, স্যার। দেখছি…’

তিন



রিংটোনে রবিশংকরের সেতার। সাত্যকি কলিং। স্ক্রিন সোয়াইপ করল মৌলিনাথ। ‘স্যার, এস.এম.এস. দেখেছেন?’
‘না তো!’
‘একটা সেল নাম্বার সেন্ড করেছি। সেলিনা, আই মিন আপনার বান্ধবী এখন শারজায় থাকেন। ওঁর নাম্বার। বছর সাত আগে হাজব্যান্ড মারা গেছে। এক মেয়ে। ওঁরা ওখানেই সেটেলড। ওঁর এক রিলেটিভের কাছে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ইনফরমেশনগুলো কালেক্ট করছি।’
‘থ্যাংকস।’
মৌলিনাথ ইনবক্স খুলল। মেসেজে সেলনাম্বারের কয়েকটা ডিজিটের দিকে আশ্চর্য চোখে খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইল। প্রায় পঞ্চাশবছরের সেলিনা-উধাও-রহস্যের সমাধান এই কয়েকটা নিরীহ নাম্বারের বুকে লুকিয়ে আছে!
ফোনে কী বলবে সেলিনাকে? প্রথমেই জিজ্ঞেস করবে হঠাৎ নিরুদ্দেশ হওয়ার কারণ? নাকি, আগে কেমন আছে তার খোঁজ নেবে? ভাবতে ভাবতেই দুপুর পেরিয়ে গেল মৌলিনাথের। বিকেলে পশ্চিমের বারান্দায় একটা ইজিচেয়ারে গা এলিয়ে নাম্বারগুলো পাঞ্চ করল। ও-প্রান্তে একটা ভারী মেয়েলি কণ্ঠ জেগে উঠল, ‘হ্যালো…’
‘সেলিনা, মৌলিনাথ বলছি।’
ও-প্রান্ত কয়েক মুহূর্ত নিশ্চুপ। তারপর সেলিনা বলল, ‘নাম্বার কোথায় পেলে?’
উত্তর না দিয়ে হঠাৎ ফোন কেটে দিল মৌলিনাথ। তারপরেই ভিডিয়ো কল করল। সেলিনা রিসিভ করতেই মৌলিনাথ দেখল সেলিনা একটি হুইলচেয়ারে বসে আছে। ক্রমশ সেলিনা জানাল অতর্কিতে কীভাবে একদিনের নোটিসে বিয়ে হয়ে গিয়েছিল মামাতো দাদার সঙ্গে। বিয়ের পরেই চলে আসতে হয়েছিল বিদেশে। প্রথমে দুবাই, পরে শারজা। সেলিনার সব কথাগুলো কানে ঢুকছিল না মৌলিনাথের। সাদা চুলের প্রৌঢ়া সেলিনার মুখে এখনও একটা লাবণ্য আছে। সেলিনা বলল, ’বছর চার আগে সেরিব্রাল অ্যাটাক হয়েছিল। প্রাণে বাঁচলেও বামদিকটা প্যারালাইজ হয়ে গেছে।’
অসুখের প্রসঙ্গ এড়াতে চাইল মৌলিনাথ। বলল, ‘সেই রুমালটার কথা মনে আছে, সেলিনা? রুমালে সেই সূর্যটার কথা?’
সেলিনার মুখে আশ্চর্য এক হাসি ছড়িয়ে গেল। বলল, ‘আছে। সেটা ছিল সকালের সূর্য। এখন তো পশ্চিমে ঢলে গেছে। ওই দ্যাখো…’ বলে সেলিনা মোবাইলটা একটু ঘুরিয়ে দিতেই মৌলিনাথের চোখে পড়ল, মরুশহরের আকাশ-ছোঁয়া মাল্টিস্টোরিড বিল্ডিংয়ের ফাঁক দিয়ে পশ্চিম আকাশের ঢলে যাওয়া সূর্য।
মৌলিনাথ বলল, ‘আরে! আমিও তো পশ্চিমের বারান্দায় বসেই তোমার সঙ্গে কথা বলছি, সেলিনা।’
মৌলিনাথের কথায় একটু থমকে গেল সেলিনা। তারপর বলল, ‘এটাই তো স্বাভাবিক, মৌলিনাথ। বয়স অনুযায়ী জীবনে মানুষের কাছে একটি করে বারান্দা খোলে, তারপর নির্দিষ্ট সময় পার হলে সেই বারান্দাটি বন্ধ করে নতুন অন্য আর-এক বারান্দা খুলে দেয়। শেষ অব্দি মানুষ এসে পশ্চিমের বারান্দায় দাঁড়ায়। পশ্চিমের বারান্দায় এসেই তো প্রতিটি মানুষ পাখি হয়। এই বারান্দা থেকেই তো শেষবারের মতো ওড়ে। নিরুদ্দেশের দিকে। তাই না?
সেলিনার কথায় মনটা বেশ ভারী হয়ে আছে মৌলিনাথের। সারা সন্ধ্যে শুধু একটা কথাই মনে ভাসছে– পশ্চিমের বারান্দা। হঠাৎ একটা ভাবনা মাথায় ঝিলিক দিয়ে উঠল– হ্যাঁ, সে বাড়ির নাম পেয়ে গেছে– ‘পশ্চিমের বারান্দা’।


এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে এখানে ক্লিক করুন

11 thoughts on “short-story-poschimer-baranda

    1. অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানবেন।

  1. মন ভরে গেল । অনেক দিন পরে একটা নির্মল নিটোল নির্মেদ গল্প পড়লাম।

    1. অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানাই।

  2. Sir, Your every words charmed me. Really the narration, the style , the metaphors just spellbound.

    1. অনেক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা জানবেন।

    1. আন্তরিক শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানবেন।

  3. “পশ্চিমের বারান্দা ” পড়া নিঃসন্দেহে একটা সুন্দর অভিজ্ঞতা,একটা বয়সের পর মানুষ যে শিকড়ে ফিরে যেতে চায় সেই গভীর টানের অনুভব এই গল্পের মধ্যে দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন রেহান ভাই। সূর্যাস্তের যে শেষ আলো পশ্চিম আকাশে এক অপরূপ মায়ার সৃষ্টি করে ,হয়তো শেষ বয়সে এসে মানুষের মনের যে আকূতি তার সাথে একটা গভীর মিল আছে কোথাও…. তাই মৌলিনাথের শিকড়ে ফিরতে চাওয়ার অনুভবে আকস্মিকভাবে বাড়ির নাম খুঁজে পাওয়াটা মিলে যায় ।এইখানেই “পশ্চিমের বারান্দা”র সার্থকতা । অনেক ভালবাসা রেহান ভাই ।

  4. অনেক শ্রদ্ধা ও শুভেচ্ছা, অজয়দা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *