মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য
ওরা এসেছিল পাত্রী দেখতে। ছেলে নিজে আসেনি। এসেছিল তার মা, দিদি-জামাইবাবু আর তাদের বছর চারেকের দস্যি একটা বাচ্চা। একটু আগে ওরা চলে গেল। যাবার সময় কারও মুখে শব্দ নেই, তিনজন মূক মানুষ ধীর পায়ে বেরিয়ে গেল গেটের দরজা খুলে। নিজের মনে শুধু কথা বলে চলছিল ছোট বাচ্চাটা। তার কচি গলায় বকম বকম একসময় হারিয়ে গেল শ্রুতির আড়ালে।
পৌষ শেষ হতে চলল। বিকেল থিতু হতে না হতেই অতর্কিতে সন্ধে নেমে আসে এই জনপদে। কুয়াশা উঠে আসে মাটি ফুঁড়ে। রাস্তায় ফিনফিনে কুয়াশার জালের মধ্যে রাখা ছিল গাড়িটা। ড্রাইভিং সিটে বসল ছেলের জামাইবাবু। এক এক করে সিঁধিয়ে গেল বাকিরা। ছেলের মা পুবের ব্যালকনিতে দাঁড়ানো আমার দিকে তাকালেন মুখ ফিরিয়ে। যেন খুব তাড়া আছে এমন একটা ভঙ্গিতে পেছনের সিটে গিয়ে বসলেন। শব্দ করে বন্ধ করে দিলেন দরজা। গাড়িটা চলে গেল ধোঁয়া উড়িয়ে।
কালো ফিতের মতো রাস্তাটাকে দেখছিলাম। এদিকটা সাহেবকাটার এক প্রান্তে। লোকজন চলাচল করে না বিশেষ। তবে আজকের দিনটা অন্যরকম। অভিনেতা দীপ্তাংশু চট্টোপাধ্যায় গতকাল প্রয়াত হয়েছেন। এই মফঃস্বল শহরে তাঁর জন্ম, বেড়ে ওঠা। পরে চলে যান কলকাতায়। গ্রুপ থিয়েটার দিয়ে কেরিয়ার শুরু করে চলে আসেন রুপোলি পর্দায়। অভিনয়ের গুণে হয়ে ওঠেন তুমুল জনপ্রিয়। শাসক দলের হয়ে নির্বাচনে জিতেছিলেন একবার। কিন্তু রাজনীতি সহ্য হয়নি, ফিরে এসেছিলেন অভিনয়ের জগতে। তিন তিনবার জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন তারপর। দুরারোগ্য রোগে ভোগা দীপ্তাংশুর শেষ ইচ্ছে ছিল তাঁর অন্ত্যেষ্টি যেন জন্মভিটের শ্মশানেই হয়। অভিনেতার শেষ ইচ্ছেকে মর্যাদা দিয়ে বিশেষ বিমানে তাঁর দেহ আনানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল বাগডোগরা বিমানবন্দরে। সেখান থেকে নিয়ে আসা হয় এখানে। আজ বিকেলে তাঁর শব দাহ করা হয়েছে স্থানীয় শ্মশানে।
ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছি। এখন পথঘাট শান্ত। সারাদিনের হুটোপুটির কোনও চিহ্ন আর নেই। অন্ধকার গাঢ় হচ্ছে। সাদা কুয়াশার দখলে চলে যাচ্ছে দৃশ্যপট। হিমেল আর্দ্রতায় নিঃসাড়ে ভিজে যাচ্ছে কালচে সড়ক। সিক্ত হচ্ছে গেটের পাশের কদমগাছটা। নিঃশব্দে ভিজে চলেছে শ্মশানঘাট লাগোয়া কৃশকায় নদীটাও। সামনের দৃশ্য দুই চোখ আর ত্বকে শুষে নিলাম কিছুক্ষণ। হিমেল বাতাসে মিশিয়ে দিলাম নিজের ভারী শ্বাস। ভেতরের ঘরের দরজায় গিয়ে দাঁড়ালাম লঘু পায়ে। এটা বাবার ঘর ছিল। কাঠের ফ্রেমে বেত দিয়ে বোনা এই চেয়ারে বসে বাবা একমনে বই পড়ত। রবীন্দ্রনাথ। গীতা। উপনিষদ। রামকৃষ্ণ কথামৃত। বাবাকে লোকে স্পষ্টবক্তা বলে জানত। বহু আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগের সুতো আলগা হয়ে গেছে এই স্বভাবের কারণে। সে নিয়ে মায়ের সঙ্গে খটাখটি লেগেই থাকত সবসময়। বাবা ছিল পড়ুয়া মানুষ। একটাই নেশা, বই পড়া আর চায়ের কাপে চুমুক দেওয়া। রিটায়ারমেন্টের পর প্রয়োজন ছাড়া বেরোত না বিশেষ। এই চেয়ারটায় বসে থাকতে থাকতেই অচৈতন্য হয়ে গেল। সেরিব্রাল থ্রম্বোসিস। চলচ্ছক্তিহীন হয়ে বেঁচে ছিল কিছুদিন। আবার অ্যাটাক হল। ঘুমের মধ্যেই চলে গেল মানুষটা। নার্সিংহোম থেকে ফিরে আসার পর দিনরাতের দু’জন আয়া রাখা হয়েছিল বাবার পরিচর্যার জন্য। বাবা বিছানা থেকে উঠতে পারত না। দিনের যে আয়া, সেই মাঝবয়সি মহিলা বাবার চেয়ারটায় হেলান দিয়ে বসে বসে উলকাঁটা বুনত। মাথায় কী তেল দিত কে জানে, উৎকট একটা গন্ধ ভেসে আসত। সেই তেলের দাগ লেগে গিয়েছিল দেওয়ালে। ম্লান আলোয় কেমন ছায়া ছায়া অন্ধকারের মতো লাগত ক্রিম রঙের দেওয়ালটাকে। বাবা মারা যাবার পর রঙ করানো হয়েছিল গোটা বাড়ি। রঙমিস্ত্রিদের হাতযশে সেসব দাগ মুছে গেছে।
মা একসময় গান গাইত। ছোটবেলায় মা-কে হারমোনিয়াম বাজিয়ে রবীন্দ্রসঙ্গীত রেওয়াজ করতে দেখেছি। এখন গুনগুন করছে – তোমার অসীমে প্রাণমন লয়ে যত দূরে আমি ধাই…। গানের কথা ভুলে গেছে এক এক জায়গায়। নিজের বানানো শব্দ গুঁজে জোড়াতালি দিচ্ছে। আমি যে ফাঁকিবাজিটা ধরে ফেলেছি সেটা আমার ভ্রূভঙ্গি দেখে আন্দাজ করেছে। হাসছে মা। আমিও হাসছি। একসময় চোখে জল চলে এল। দমচাপা কান্নাটাকে আড়াল করার চেষ্টা করছি মা-মেয়েতে। পারছি কোথায়!
পঁচিশ বছর আগে স্ত্রী ও নবজাত কন্যাকে নিয়ে বাবা সাহেবকাটা হাইস্কুলে পড়াতে এসেছিল। তখন আমরা থাকতাম বাসস্ট্যান্ডের পাশে। কিন্তু ঘিঞ্জি জায়গা বাবার পছন্দ ছিল না। নিরিবিলিতে থাকার লোভ ছিল ষোল আনা। লোকালয় ছাড়িয়ে এই প্লটটা কিনে ফেলেছিল বেশ সস্তায়। একতলা বাড়ির ভিত গাঁথা হল। এক শুভক্ষণ দেখে ভাড়াবাড়ি ছেড়ে এই বাড়িতে এসে উঠলাম আমরা। রাস্তার ধারে তিন কাঠা জমির ওপর বাড়ি। ঘুপচি ভাড়াবাড়ির থেকে অনেক বেশি প্রশস্ত। হাত পা ছড়িয়ে আরাম করে থাকা যায়।
সামনের রাস্তাটা তখনও পাকা হয়নি। গেটের কাছে একটা কদমগাছ লাগিয়েছিল বাবা। তাড়াতাড়ি বড় হতে শুরু করেছিল গাছটা। ইটের রাস্তার ওপর পড়ে থাকত কদমফুল। আশ্চর্য সুগন্ধে ম’ ম’ করত চারপাশ। রাস্তার ওপাশে বাঁশবাগান। ওপারে শ্মশানঘাট। পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে নদী। স্বচ্ছতোয়া নদীর নামটি ভারি মিঠে, সহজ। গ্রীষ্মে হাড় জিরজিরে, কিন্তু বর্ষায় পাগলা হাতির মতোই প্রমত্ত। নদীর ওদিকে যত দূর চোখ যায় ধানি জমি। নদীতে কোনও সেতু ছিল না। জেলেরা খাপলা জাল ফেলে মাছ ধরত। বিকেল ফুরোলে শুনশান হয়ে যেত গোটা এলাকা।
রাতে গা ছমছমে পরিবেশ। শেয়াল ডাকে হৌ হুয়া, প্যাঁচা ক্র্যাও ক্র্যাও করে ওঠে আগাপাশতলা চমকে দিয়ে, ডানা ঝাপটে উড়ে যায় রাতচরা পাখি। এমন অনেক হয়েছে, গভীর রাতে আমরা ঘুমোচ্ছি অকাতরে, ‘বলো হরি হরি বোল’ ধ্বনি দিতে দিতে মড়া নিয়ে গেছে রাস্তা দিয়ে। আমি আর মা ঘুম ভেঙে উঠে ঠাকুরের নাম জপেছি। ভয়ে সিঁটিয়ে গিয়ে ডেকেছি বাবাকে। বাবা ডাকাবুকো স্বভাবেব মানুষ। নিরুত্তাপ গলায় আমাদের অভয় দিত, ধুস ভূত বলে আবার কিছু হয় না কি!
নিজের মনকে প্রবোধ দিতাম। বাবা যখন বলেছে ভূত-প্রেত বলে কিছু নেই তখন নেই। তবে এটাও ঠিক, নিশুত রাতে যখন শনশন হাওয়া দিত, রাস্তার ওপাশের বাঁশবন দুলে উঠত, শকুন ডেকে উঠত বাচ্চার কান্নার মতো শব্দ করে, তখন গায়ের সব রোমকূপ দাঁড়িয়ে যেত। আমি যেবার মাধ্যমিক দেব বাবা লোন নিয়ে দোতলার কাজে হাত দিল। মাস দুয়েক ধরে কাজকর্ম চলল মিস্ত্রিদের। আমরা দোতলায় উঠে এলাম। নিচতলায় ভাড়া এলেন একজন পোস্টমাস্টার।
সাহেবকাটা ততদিনে আড়েবহরে বাড়তে শুরু করেছে। ছিল পঞ্চায়েত এলাকা, মিউনিসিপ্যালিটি হয়েছে। নতুন নতুন লোক আসতে শুরু করেছে বাইরে থেকে। এই তল্লাটেও একটা দুটো করে অনেক বাড়ি তৈরি হয়ে গেছে। অ্যাসফল্টের রাস্তা হয়েছে। আমাদের বাড়ির ঠিক সামনে স্ট্রিট লাইট বসিয়েছে পৌরসভা থেকে। দু’পা এগোলেই চায়ের দোকান, চুলদাড়ি কাটার সেলুন, ওষুধের দোকান, মুদিখানা। কাছেই সবজিবাজার। দোতলার ব্যালকনিতে দাঁড়ালে দোকানপাট, বাজার, বাঁশবাগান, সহজ নামের শান্ত একফালি নদী আর শ্মশানঘাট স্পষ্ট দেখা যায়।
বাবা চলে যাবার পর থেকে কৃশ, মনমরা, নিষ্প্রভ হয়ে পড়েছিল মা। একটা যুগল ছবি খুঁজে বের করেছিল অ্যালবাম থেকে। প্রথম বিবাহবার্ষিকীতে স্টুডিওতে গিয়ে তোলা। পাঞ্জাবি পরা বাবাকে কী অপরূপ যে দেখাচ্ছে! সেই ছবিটা নিয়ে গিয়েছিলাম স্টুডিওতে। অর্ধেক এনলার্জ করে মাউন্ট করিয়ে আনা হয়েছিল শ্রাদ্ধের সময়। পরে টাঙানো হয়েছে এই ঘরের দেওয়ালে। মা চন্দনের ফোঁটা দেওয়া সেই ছবিতে ধূপবাতি দেখাচ্ছে। টিভি অন করে বলল, বড্ড মাথা ধরেছে। চা খাব একটু। তুই খাবি?
দীপ্তাংশুর শেষকৃত্যের খবর টিভিতে দেখাচ্ছে। সাহেবকাটা শ্মশানে বাবার শব নিয়ে একবারই গিয়েছি। একটা পলাশ গাছ আছে গেট দিয়ে ঢুকতেই। চৈত্রে এত ফুল ফোটে যে, লালরঙের গাছটাকে দেখে চোখ ঝলসে যায়। এখনও ফুল ফোটার সময় হয়নি, তবে এমনিতেই ঝাঁকড়া গাছটার একটা নিজস্ব সৌন্দর্য আছে। ফোটোজিনিক গাছটাকে পেছনে রেখে বাইট দিচ্ছেন কালো সানগ্লাসে চোখ ঢাকা এক অভিনেতা। দীপ্তাংশুর প্রয়াণে টিনসেল দুনিয়ায় কী বিরাট শূন্যতা তৈরি হল সেসব বলছেন। আমি বললাম, চা-পাতাটা একটু বেশিক্ষণ ভিজিও। আমি ব্যালকনিতে আছি।
বাবার কথা খুব মনে পড়ছিল আজ। শেষের দিন এগিয়ে আসছে সেটা কি কেউ বুঝতে পারে? তা যদি না-ই হবে তবে মেয়েকে পাত্রস্থ করার জন্য বাবা মরিয়া হয়ে উঠবে কেন? আমার ছোটবেলায় জটিল অসুখ হয়েছিল, মুখের কিছু সূক্ষ্ম নার্ভ বেঁকে গিয়েছিল সেই রোগে। চিকিৎসার জন্য কলকাতা অবধি দৌড়ঝাঁপ করেছিল বাবা। কিন্তু মুখশ্রীর লাবণ্য আর ফিরে আসেনি। বয়ঃসন্ধির সময় খুব হতাশ লাগত। একটু একা হলেই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের মুখ দেখতাম। যেন চামড়া নয়, প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি মুখ। নিষ্প্রাণ মুখে হাসি, কান্না, রাগ, লজ্জার অভিব্যক্তি ফোটাবার চেষ্টা করতাম। অনুভূতিগুলো আলাদা করা যেত না। বড্ড রাগ হত ঈশ্বরের ওপর।
আমি ছাত্রী হিসেবে ভাল ছিলাম। মাস্টার্স করার পর বেশিদিন বসে থাকতে হয়নি। স্থানীয় একটা কলেজে পার্ট টাইম পড়াবার চাকরি পেয়ে গিয়েছিলাম। ঘুষ-টুস দিতে হয়নি কাউকে। নেতাও ধরতে হয়নি। আত্মীয়স্বজন অভিনন্দন জানিয়ে ফোন করেছিল। কিন্তু এই চাকরিতে যে অতি অল্প টাকা মাইনে, আর তার জন্য অগুনতি ক্লাস নিতে হয়, এটা তারা কেউ প্রথমে বিশ্বাস করেনি। ছেলের বাড়ির লোকও ভাবতে পারেনি, পার্ট টাইম হলেই বা কী, কলেজ টিচারের মাইনে এত কম হতে পারে!
আমার বাবা ছিলেন দীর্ঘদেহী। ফর্সা, একমাথা চুল, উন্নত নাক, পাতলা ঠোঁট। সুপুরুষ বলতে যা বোঝায় তাই। মায়ের গায়ের রঙ কালোর দিকে। মামাবাড়ির ধাঁচটাই তেমন। আমি ওই বাড়ির সকলের মতো দেখতে হয়েছিলাম। গত বছর এক পৌষে আমাকে দেখতে এসেছিল পাত্র, সঙ্গে তার মা। শিমুলবাড়িতে বাড়ি। বড়রাস্তার ওপর ওষুধের দোকান। বাবার অকালমৃত্যুর পর ছেলে ব্যবসার হাল ধরেছে। ছেলে কমার্স গ্র্যাজুয়েট। একটু শান্ত গোছের বলেই মনে হল। রাজপুত্রের মতো না হলেও চেহারা মন্দ নয়। ড্রয়িংরুমে বসানো হয়েছিল ওদের। আমি দুরুদুরু বুকে অপেক্ষা করছিলাম পাশের ঘরে। আমার গায়ের রং চাপা, বাবার পরামর্শে হলদে তাঁতের শাড়ি পরেছিলাম। আলমারি থেকে বের করে নতুন বেডকভার পাতা হয়েছিল বিছানায়। জানলা দরজায় ঝোলানো হয়েছিল নতুন পর্দা। বাবা নিয়ে এসেছিল গুচ্ছের মিষ্টি আর নোনতা। মা নিজের হাতে বানিয়েছিল দার্জিলিং চা। আমি চায়ের ট্রে নিয়ে ঘরে ঢুকেই টের পেলাম, আমাকে দেখে ছেলের মুখ কেমন নিভে গেল। পাত্র-পাত্রীকে নিভৃতে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হল। আমাদের ড্রয়িংরুমে বসিয়ে রেখে পুবের ব্যালকনিতে চলে গেল ওরা। গল্প করছিল নিজেদের মধ্যে। আবহাওয়া দিয়ে শুরু করে খেলাধুলো হয়ে প্রসঙ্গ বদলাতে বদলাতে এল রাজনীতিতে। আমার সঙ্গে ছেলে কথা বলল দু’চারটে। কত টাকা মাইনে, ক্যারিয়ার নিয়ে কী প্ল্যান, রান্নাবান্না জানি কিনা। শিগগিরই খবর দেব বলে চলে গেল ওরা। শরীরী ভাষা দেখেই বুঝতে পারছিলাম, আমাকে ওদের পছন্দ হয়নি।
আমার অনুমান সত্যি করে ওরা কেউ রা কাড়ল না। এর মধ্যে আরও এক পাত্রপক্ষ এসে দেখে গেছে আমাকে। তারাও হাঁ হুঁ করল না। দু-দুটো প্রত্যাখ্যান বাবাকে নাড়িয়ে দিয়ে গেল। কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ লেগেই থাকত। খাওয়া দাওয়া কমে গিয়েছিল। যখনই দেখতাম, চেয়ারের ব্যাকরেস্টে ক্লান্ত শরীরটা এলিয়ে বই খুলে রেখে দেওয়ালের দিকে বিমনা হয়ে তাকিয়ে থাকত। প্রস্তুতির সুযোগ না দিয়ে একদিন সেরিব্রাল স্ট্রোকে আক্রান্ত হল বাবা। চলল যমে মানুষে টানাটানি। গলা অবধি ঋণে ডুবে রোগীকে বাড়িতে নিয়ে এলাম নার্সিংহোম থেকে। কিন্তু ফিরে আসার পর মানুষটা বদলে গেল। স্মৃতিকোষ থেকে বেশিরভাগ স্মৃতি মুছে গেল অসুখের পর। শরীরের বাঁ দিক পক্ষাঘাতে আক্রান্ত। সামনে গেলে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে মুখের দিকে। খাওয়ানোর সময় ডান হাত দিয়ে টান মেরে ফেলে দেয় জলের গ্লাস, খাবারের বাটি। শিশুর মতো হাসে খিলখিল করে। আয়া বিরক্ত হয়ে কিছু খাওয়াবার আগে ডানহাত বেঁধে রাখে দড়ি দিয়ে। তবে এসব সহ্য করতে হয়নি বেশিদিন, ঘুমের মধ্যেই একদিন চলে গেল বাবা।
শবদেহ বহন করার লোক পাওয়া যায়, কিন্তু শোকের ভার বইতে হয় কাছের মানুষকে। তবে বেঁচে থাকতে গেলে মুখ ফেরাতেই হয় জীবনের দিকে। বিষাদভার নিয়ে একলা মানুষ কতদিন আর বসে থাকতে পারে। আমিও চেষ্টা করছিলাম নিজেকে নিজের মধ্যে ফিরিয়ে আনতে। জীবন ক্রমশ ফিরছিল সমের দিকে। ধরে নিয়েছিলাম, যে দুই বাড়ি থেকে এসে দেখে গেছে আমাকে তারা আর যোগাযোগ করবে না। নিজের মনকে প্রস্তুতও করে নিয়েছিলাম। কোনও প্রত্যাশাও ছিল না জীবনের থেকে। কিন্তু আমাদের অবাক করে গতকাল ফোন এল ছেলের বাড়ি থেকে। খাওয়া দাওয়া সেরে যখন ঘুমোতে যাবার উদ্যোগ নিচ্ছি তখন বেসফোন বেজে উঠল। বুকটা ছ্যাঁত করে উঠল। আজকাল সকলে মোবাইলে কল করে। তার মানে কোনও খারাপ খবর দেবার জন্য ফোন করেছেন কোনও বয়স্ক মানুষ, যিনি মোবাইলে ততটা সড়গড় নন। আত্মীয়স্বজন কেউ হাসপাতালে ভর্তি? না কি তার চাইতেও কোনও খারাপ খবর অপেক্ষা করে আছে আমাদের জন্য?
শশব্যস্ত হয়ে মা ধরল ফোনটা। দু-চারটে কথা বলে ফোনটা রেখে মুখে লাখ টাকার ঝাড়বাতি জ্বেলে বলল, শিমুলবাড়ির সেই ছেলের বাড়ি থেকে ফোন করেছিল। ছেলের তোকে বিয়ে করতে কোনও আপত্তি নেই। তবে ওর দিদি-জামাইবাবুর পছন্দই শেষ কথা। আমরা রাজি থাকলে তোকে দেখতে আসবে কাল দুপুরে। খাওয়া দাওয়া করে আসবে। আমরা যেন ভাত-টাতের ব্যবস্থা না করি।
‘তোকে বিয়ে করতে কোনও আপত্তি নেই’ মানে কী! আমি কি করুণার পাত্রী? আমার কথায় মা আমল দিল না। আমার থুতনিটা নেড়ে দিয়ে বলল, অত ধরলে চলে না। শোন, ওদের আমি হ্যাঁ করে দিয়েছি। আমি গোঁজ হয়ে বললাম, আগের বার বিকেলে এসেছিল। এবার দুপুরে কেন?
মা আলগা গলায় বলল, ছেলের দিদি-জামাইবাবু নিশ্চয়ই অন্য কোনও জায়গায় থাকে। এখান থেকে বেলাবেলি বেরিয়ে বাড়িতে ফিরবে। চল, শুতে যাবি চল। আমি তোর মাথায় তেল দিয়ে দিচ্ছি। কাল স্নানের সময় ভাল করে শ্যাম্পু করে নিস। তোর বাবা যে ময়ূরকণ্ঠী রঙের শাড়িটা কিনে দিয়েছিল সেটা পরিস। ওটায় তোকে খুব মানায়।
এগারোটার আগেই দুপুরের খাওয়া খেয়ে নিয়েছি। ময়ূরকণ্ঠী পিওর সিল্কে সাজিয়েছি নিজেকে। ঠোঁটে লিপস্টিক বুলিয়েছি, চোখে দিয়েছি আইলাইনার। ছেলের মা সত্তর ছুঁই ছুঁই। দাপুটে চালচলন। কলপ করা চুল। পরিচয় করিয়ে দিলেন তাঁর মেয়ে বুল্টির সঙ্গে। মাঝবয়সি মেয়ের গিন্নিবান্নি ধাঁচের চেহারা, সিল্কের শাড়ির ওপর টমেটো রঙের কার্ডিগান। গলায় সোনার হার, হাতে কয়েক গাছা চুড়ি, সোনা দিয়ে বাঁধানো পলা আর শাঁখা। ছেলের মা, দিদি আর জামাইবাবুর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতে হল মায়ের চোখের ইশারায়। ছেলের দিদি আমুদে স্বভাবের। কথায় কথায় ঘর কাঁপিয়ে হেসে ওঠার অভ্যাস আছে। বুল্টি বলল, সে বিরিয়ানি এতটাই ভালবাসে যে, তার স্বামী বাইরে থেকে বিরিয়ানি কিনে আনলে বউয়ের জন্য দু-প্লেট নিয়ে আসে। বুল্টি রান্নায় পারদর্শী। বিশেষ করে আমিষ রান্না। তার হাতের খাসির মাংস খেলে নাকি আঙুল চেটে চেটে চামড়া তুলে ফেলতে হয়, এমন তার স্বাদ। বই বা পত্রপত্রিকা পড়লে ঘুম পায়। টেলিভিশন তার পছন্দের অবসর বিনোদন। বিকেল থেকে রাত অবধি কী কী সিরিয়াল দেখে আঙুলের কড় গুনে তার ফিরিস্তি দিল। জানাল যে, সে সিনেমারও পোকা। হিন্দি বেশি দেখলেও বাংলাও যে দেখে না তা নয়। দীপ্তাংশু যখন নায়কের পার্ট করতেন সে সময়ের অনেক ফিল্মই তার দেখা।
বুল্টির স্বামী রাজেন্দ্র পাল ইরিগেশনের কনট্রাক্টর। ঘাড়ে গর্দানে চেহারা। গায়ের রং তামাটে। গলায় সোনার চেন। হাতে রূপোর বালা, আঙুলে লাল-নীল-সবুজ-হলুদ আঙটি। পঞ্চাশের বেশিই হবে বয়স। পুরুষ্টু গোঁফ। চোখের নিচে কোলেস্টেরলের পুরু ব্যাগ। এই শীতেও ঘামছে অল্প অল্প। লেদারের জ্যাকেটটা খুলে রাখতে বললাম। রাজেন্দ্র হাসার চেষ্টা করে বলল, না ঠিক আছে। তার পর মায়ের দিকে তাকিয়ে মুখে লজ্জার একটা ভাব ফোটাবার চেষ্টা করে জানাল, সে চেন স্মোকার। বহু চেষ্টা করেও নিকোটিনের নেশা ছাড়তে পারেনি। তো, একটুক্ষণ পর পর পুবের ব্যালকনিতে গিয়ে রাজেন্দ্র ধোঁয়া পান করে আসতে লাগল।
পাত্রের ভাগ্নের নাম কৃষ। তার মায়ের মুখে জানা গেল, জনপ্রিয় এক হিন্দি সিনেমার নায়কের নামের থেকে এই স্মার্ট নামটা ধার নেওয়া। কৃষ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি হয়েছে। দিম্মার অনুরোধে সে টুইঙ্কল টুইঙ্কল, ব্যা ব্যা ব্ল্যাকশিপ, জনি জনি ইত্যাদি রাইম শোনাচ্ছিল আমাদের। এমন সময় বাইরে থেকে একটা শোরগোল কানে এল। ব্যালকনিতে সিগারেট ফুঁকছিল রাজেন্দ্র। ভেতরে মুখ বাড়িয়ে চেঁচিয়ে উঠল, শিগগির এসো। এই রাস্তা দিয়েই বডি নিয়ে যাচ্ছে। বুল্টি ধড়মড় করে ছুট দিল। পুবের ব্যালকনির দিকে দৌড় দিলেন ছেলের মা। তাঁদের পিছু পিছু কৃষও। বেঁটে টেবিলটায় সাজিয়ে রাখা ছিল এক জোড়া পোড়ামাটির ঘোড়া। আমার মাধ্যমিক শেষ হবার পর বিষ্ণুপুর বেড়াতে গিয়েছিলাম আমরা। শখ করে এই ঘোড়াদুটো কিনে এনেছিল বাবা। একটা ঘোড়া বুল্টির অসাবধানি হাত লেগে পড়ে গেল মেঝেতে। ভেঙে খানখান হয়ে যাওয়া ঘোড়াটার দিকে ফিরেও তাকাল না কেউ।
আমি উঠে দাঁড়ালাম। ভেঙে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাওয়া টেরাকোটার টুকরোগুলো মেঝে থেকে তুলছি হাতে করে। জড়ো করছি সেন্টার টেবিলটার ওপর। গালে হাত দিয়ে বসে আছে মা। মুখে বিস্ময় মেশানো হতাশা। আমার গালে কেউ যেন সশব্দে বিরাশি সিক্কার চড় কষাল ঠাটিয়ে। কান্না উঠে আসছে ভেতর থেকে। মাথা হেঁট করে বসে আছি। ঠাকুরকে ডাকছি যাতে এই অপমানের প্রহর তাড়াতাড়ি শেষ হয়। চোয়াল শক্ত করে রেখেছি যাতে অবরুদ্ধ চলকে আবেগ বেরিয়ে চোখ না ভিজিয়ে ফেলে। একটুক্ষণ বাদে পারফিউমের উগ্র গন্ধ ফিরে এল ড্রয়িংরুমে। ব্যালকনি থেকে বুল্টি এসে বসেছে সোফায়। গুটি গুটি চলে এসেছেন ছেলের মা, তাঁর জামাই। রাজেন্দ্র নানারকম অ্যাঙ্গেল থেকে ছবি তুলেছে শোকমিছিলের, অভিনেতার শবদেহের। সেই ছবিগুলো দেখাচ্ছে বউ আর শাশুড়িকে। তিনজন মশগুল রাজেন্দ্রর মোবাইলের ফোটো গ্যালারিতে। আমি আর মা দুই জলজ্যান্ত মানুষ যে তাদের সামনে বসে আছি, আমাকে দেখার ছুতোতেই যে তাদের এ বাড়িতে আসা, সে কথা বেমালুম ভুলে গেছে সকলে।
এর পর এলোমেলো দু-চারটে কথা হল। রাজেন্দ্র গলা খাকারি দিয়ে বলল, আজ উঠতে হবে আমাদের। শাশুড়ি মা-কে শিমুলবাড়ি ড্রপ করে আমাদের আরও অনেকটা পথ যেতে হবে। এখন না রওনা দিলে রাত হয়ে যাবে পৌঁছতে পৌঁছতে। সে কথায় সায় দিয়ে ছেলের মা উঠে পড়লেন। হাত জড়ো করে বললেন, এবার তাহলে আমরা আসি।
আমার শ্রীলক্ষ্মী মা, সর্বংসহা মা, কখনও সৌজন্যের সীমারেখা না পার হতে শেখা শান্তশিষ্ট মা আর্তনাদের মতো করে বলেই ফেলল, আমি সত্যিই বোকা! বুঝতে পারছি আপনারা বেছে বেছে আজকের দিনটাতেই কেন এসেছিলেন। এটুকু বলেই কথাটা গিলে ফেলল মা।
যেন ভিমরুলের চাকে ঢিল পড়ল। ছেলের মায়ের মুখের ভাঁজে ঝিলিক দিয়ে সরে গেল ক্রূর নিষ্ঠুরতা। চোখ সরু করে তিনি বললেন, তাই নাকি? তা, কী বুঝতে পারছেন? মা নিজেকে সামলে নিয়েছে। অস্ফুটে বলল, একটু বসে যান, আমি চা করে আনছি। সৌজন্যের সুর কেটে গেছে। ছেলের মা চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন, দেখুন দিদি, আমি স্পষ্ট কথা স্পষ্ট বলতে পছন্দ করি। কেলেকুষ্টি মেয়ে আপনার, মুখটাও বলতে নেই কেমন বাঁকামতো। কোন ছেলে জেনেবুঝে এমন খুঁতো মেয়েকে ঘরে আনবে বলুন তো! আর হ্যাঁ, মেয়ে নাকি কলেজের মাস্টারনি! আমার ছেলে বলছিল, সরকারি অফিসের ঝাড়ুদারও এর থেকে বেশি মাইনে পায়।
কান মাথা ঝাঁ ঝাঁ করছে নিরুচ্চার অপমানে। শিরা উপশিরা দিয়ে বয়ে চলছে গরম লাভার স্রোত। দু’-কানের পাশের রগ পাগলা ঘোড়ার মতো দাপাচ্ছে। উঠে দাঁড়ালাম আমি। এতক্ষণ স্থাণুর মতো বসে থাকা আমার মুখ দিয়ে বেরিয়ে এল, কালো রং যদি এতই অপছন্দ তবে আপনি চুলে কলপ করেছেন কেন? আমাকে তো দেখেই গেছেন আগে, আজ আবার এলেন কেন? আসলে পাত্রী দেখতে নয়, দীপ্তাংশু চট্টোপাধ্যায়কে সামনে থেকে দেখতে এসেছিলেন আপনারা, তাই না? মুখের কথাটা ফুরোবার আগেই একটা অদ্ভুত কাজ করে বসলাম আমি। বাঁকুড়ার ঘোড়াদুটোর মধ্যে যে শো-পিসটা অক্ষত ছিল সেটা তুলে নিলাম হাতে। প্রচন্ড শব্দে আছড়ে ফেললাম ঘরের মেঝেতে।
আমার অবিশ্বাস্য আচরণে স্তম্ভিত হয়ে গেছে সকলে। কয়েক সেকেন্ড নির্বাক কাটল। মুখে বিস্ময়ের আঁকিবুঁকি, উঠে পড়লেন পাত্রের মা। বুল্টি আর রাজেন্দ্র হতভম্বের মতো দেখছে আমাকে। এতক্ষণ বকবক করা কৃষ অবধি চুপ করে গেছে। বড় বড় চোখ করে জরিপ করছে আমাকে। এক এক করে সকলে নেমে যেতে লাগল সিঁড়ি বেয়ে। আমার ভেতর তোলপাড় হচ্ছিল। নিজেকে সামলাবার চেষ্টা করতে করতে ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ালাম আমি।
ওরা চলে গেছে অনেকক্ষণ। আমি পুবের ব্যালকনিতে দাঁড়ানো। অন্যদিনের মতো সামনের রাস্তাটা দেখছি। এখন অনেক বদলে গেছে সাহেবকাটা। সহজ নদীর ওপর চওড়া ব্রিজ তৈরি হয়েছে। বড় গাড়ি চলাচল করতে পারে। কুয়াশার পরত থাকায় চাঁদের আলো অস্পষ্ট। মরা মাছের চোখের মতো জ্যোৎস্নায় শ্মশানঘাটটা ভূতুড়ে দেখাচ্ছে। নদীর দু’পারে ঘন গাছপালা মন্ত্রমুগ্ধের মতো দাঁড়িয়ে। কুয়াশায় ভিজছে সামনের কদমগাছটাও। তার পাতা একটা দুটো করে খসে পড়ছে নিঃসাড়ে। ফাল্গুন এলেই ফুল ফুটবে এই কদমগাছে। ফুলের রেণুর গন্ধ ভেসে বেড়াবে বাতাসে। আকাশে তারা ফোটেনি ভাল করে। কুয়াশার আড়ালে মাথার ওপরে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকা গ্রহ তারা কী খেলা খেলছে কে জানে! মা এসে দাঁড়িয়েছে আমার পাশে। হাতে চায়ের কাপ। আমি আর মা যেন আগুন লাগা দুটো গাছ, একই মাটিতে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে ধিকিধিকি জ্বলছি। দু’জন চুপচাপ চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছি। মা আমার কাঁধে একটা হাত রেখে বলল, তুই আজ যা খেল দেখালি!
আমি হেসে ফেললাম ফিক করে। মাকে জড়িয়ে ধরে মায়ের চুলের রুখু গন্ধে নাক ডুবিয়ে দিতে দিতে বললাম, চেহারায় পাইনি, তবে স্বভাবে বাপের ধারা পেয়েছি, কী বলো!
মা মুখ টিপে হেসে বলল, তোর বাবা আজ বেঁচে থাকলে যে কী করত তাই ভাবছি!
পাশাপাশি বসে গান শুনছিলাম তিনজন। একটু আগে উঠে গেছে বাবা। আমাদের দুজনকে নিঃস্ব, রিক্ত করে ছেড়ে রেখে গেছে অন্ধকারে। সোফার মাঝখানটায় বসছিল, এখনও চাদরটা কুঁচকে আছে। কিন্তু তীব্র কস্তূরী গন্ধের মতো বাবার উপস্থিতি আজও ছড়িয়ে আছে বাড়ি জুড়ে। বাবা মারা যাবার পর বাড়ি রং করানো হয়েছিল। দেওয়ালের রং-চটা দাগের ওপর, নতুন রঙের প্রলেপ পড়েছে, কিন্তু বাবার স্মৃতিজড়ানো হিরণ্ময় মুহূর্তগুলো এখনও দাগ কেটে বসে আছে আমাদের দুজনের মনের দেওয়ালে। আপনমনেই হাসলাম একটু, রংমিস্ত্রির সাধ্য কী সেই দাগ তোলে!