short-story-rathin-sonarur-bou

রথীন সোনারুর বউ
শেলী সেনগুপ্তা


‘বউমা, হুনছি তোমার গাভী নাকি বিয়াইছে?’

‘কাকীমা, কাইলই কালি বিয়াইছে।’

কথাটা বলেই মোহনা পাড়াতুতো কাকী শাশুড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো, কেমন বিদ্রুপের হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে চলে গেলেন। বিদ্রুপের অর্থ বুঝে মুখে আঁচল চাপা দিতে মোহনা ঘরের ভেতর চলে গেলো।

মোহনা আর রথীনের বিয়ে হয়েছে দশ বছর আগে। রথীনের বাবা মা নেই, খুব ছোটবেলায় মারা গেছে। সে মামার বাড়িতে বড় হয়েছে। মাত্র এইট পর্যন্ত পড়েই মামার সাথে কাজে লেগে গেলো। মামার সোনার দোকান, সেখানে সহকারী হিসেবে কাজ করতে শুরু করলো। কিছুদিনের মধ্যে মামা ওকে কারখানায় নিয়োগ করে দিলো। মামার ইচ্ছা সে কাজটা ভাল করে শিখে নিক। তাহলে আর ভাতের অভাব হবে না। মামা সবসময়ই ওর প্রতি কঠোর, কিন্তু এর মধ্যে কোথায় যেন একটা কোমল মন শরতের মৃদু বাতাসের মতো ছুঁয়ে যায় ওকে। তাই যতই বকাবকি করুক ও বুঝতে পারে মামা আসলে ওর ভাল চায়। তাই বকাগুলো বুক পেতে বরণ করে নেয়।

মামাবাড়িতে থেকে কাজ শিখতে শিখতে একসময় ওকে সে বাড়ি ছাড়তে হলো। মামাতো ভাই এর বিয়ে উপলক্ষ্যে বাড়িতে অনেক মানুষ এলো, তখন ওর শোয়ার জায়গা ছাড়ার প্রসঙ্গ এলো। রথীন তখনই নিজের বিছানা নিয়ে কারখানায় চলে এলো। সেখানেই স্থায়ী আবাস গড়ে নিলো।

রাতদিন সোনার কারখানায় থাকার ফলে গয়না গড়ার কাজটাতে খুব অল্প সময়ের মধ্যে বেশ দক্ষতা অর্জন করলো। এখন সবাই ওকে একনামে চেনে, রথীন সোনারুর ডিজাইন আর হাতে গড়া গহনার খুব চাহিদা।

কিন্তু মামা একটুও খুশি না, সবসময় কেমন যেন রেগে থাকে। কথায় কথায় ধমক দেয়।

সবাই রথীনকে বোকা ভাবে কিন্তু এ বোকা ছেলেটাও বুঝতে পারে মামার এ রাগের মধ্যে এমন কিছু আছে যা সে বুঝতে পারছে না। মামা কিছু একটা চায় যা সে দিতে পারছে না।

একদিন মামা ওকে হাতে কিছু টাকা দিয়ে দোকান থেকে বের করে দিলো। অনেক কেঁদেছে, কিন্তু মামার মন একটুও গলে নি। সেদিন সবাই অবাক হলো, এতো ভাল কাজ জানা ছেলেটাকে এভাবে কেউ তাড়িয়ে দিতে পারে। মামার পাষাণ মন যখন কিছুতেই নরম হলো না তখন রথীন বোশেখের ঝরা পাতার মতো দুলে ঊঠে বের হয়ে গেলো। বাজারের একপাশে একটা ঘর ভাড়া নিয়ে থাকার জায়গা করে নিলো।

অনেক জুয়েলারীতে সে চাকরি খুঁজতে গেলো, ওর জন্য সবার সহানুভূতি আছে, তাছাড়া ও অনেক কাজেরও। কিন্তু মামার ভয়ে কেউ ওকে কাজ দিলো না।

মামাবাড়ির পাশেই থাকে মোহনা। একদিন খুব সকালে এসে রথীনের হাত ধরে সোজা মন্দিরে নিয়ে গেলো। ঠাকুর মশায়ের সাথে কী সব কথা বলে রথীনের হাত থেকে সিঁদুর পরে নিলো। সেই থেকে ওরা একসাথে থাকে। কে যে কার দায়িত্ব নিলো বোঝা গেলো না। তবে মোহনার বুদ্ধিতে ভাড়াবাসার সামনে ছোট্ট একটা সাইনবোর্ড দিলো, “এখানে পুরাতন সোনারূপা গহনা মেরামত করা হয়”। কয়েকদিনের মধ্যে বেশ কিছু কাজ পেয়ে গেলো। দু’জনের খাওয়া পরা নিশ্চিত হয়ে গেলো।

দেখতে দেখতে পাঁচ বছর হয়ে গেলো। জীবন শুরু করেছিলো দু’জন, এখনও দু’জন। ওদের এখনও সন্তানসন্ততি হলো না। মাঝে মাঝে মোহনা মন খারাপ করে কিন্তু রথীন নির্বিকার। বেশী মন খারাপ হলে মোহনাকে বলে, ‘এতো বাচ্চা বাচ্চা করস ক্যান? আমি কি তোরে বলছি বাচ্চা না হইলে সংসার হইবো না?’

‘তার পরও একটা শিশু সন্তান লাগে তো।’

‘হ, মনে কর আমি তোর সন্তান, আর তুই আমার সন্তান, অইবো?’

মোহনা এক গাল হেসে বলে ‘অইবো।’

দু’জনেই একসাথে হেসে ওঠে। কী সুন্দর করে বেদনার সাথে আনন্দের সমন্বয় ঘটিয়ে দিলো। মোহনার মন খারাপকে প্রশ্রয় দেয় না রথীন। এভাবেই কেটে যাচ্ছিলো দিন।

মোহনার সময় আর কাটে না, তাই মামার দেয়া টাকা থেকে মোহনা একটা গাভী কিনলো। এখন ওর কাটে রান্নাবান্না আর গাভীর দেখাশুনা করে। সব কাজ শেষ হলে দরজার কাছে বসে রথীনের কাজ দেখে। দেখতে দেখতে ভাবে মানুষটা এত ভাল কেন? মানুষ কি এতো সহজ সরল হতে পারে?

মোহনার গাভী কালি গাভীন হয়েছে, আজকাল ওর চলাফেরা কেমন যেন শ্লথ হয়ে গেছে। মোহনার মনের মধ্যে কত যে কথার বুদ বুদ। ভাবে কালির বাচ্চা হলে অনেক দুধ পাওয়া যাবে। বাচ্চা খাওয়ার পর যা টাকা থাকবে তা দিয়ে ওরা একটা জমি কিনবে, সেখানে একটা বাড়ি করবে, বাড়ির সামনে একটা ঝলমলে দোকান হবে। পেছনে ওরা থাকবে। রথীনের দোকানে সারাক্ষণ খরিদ্দার থাকবে। প্রচুর বিক্রি হবে, ওর হাতের কাজের খুব প্রশংসা হবে। ওরা খুব সুখে থাকবে।

বেশ রাত হয়ে গেছে। রান্নাঘরের কাজ শেষ করে সব দরজা বন্ধ করে বিছানায় আসতে আসতে রথীন ঘুমে কাদা। হাত পা ছড়িয়ে কেমন শিশুর মতো শুয়ে আছে। মোহনার জন্য একটুও জায়গা রাখেনি। ঘুমের ঘোরে লুঙ্গিটা অনেকটা ওপরে উঠে গেছে। কোন রকমে একটু জায়গা করে পাশে শুয়ে ওকে বুকের মধ্যে আগলে নিলো মোহনা। ওদের বিছানায় সব সময় একটা বালিশ। ওরা দু’জন কখনো একসাথে বালিশে ঘুমায় না, একজন আরেকজনের বাহুতে ঘুমায়। আজ মোহনা রথীনকে নিজের বাহুতে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।

রাতে কালি যেন কেমন করছে। বেশ যন্ত্রণাকাতর শব্দ করছে। মোহনার ঘুম ভেঙে গেলো। রথীনকে ডেকে তুলে বাইরে এসে দেখে ছটফট করতে করতে কালি বসে পড়েছে। রথীন বললো,

‘মনে অয় তোমার গাই বিয়াইবো।’

‘কেমুন য্যান ছটফট করতাছে।’

‘হ।’

‘কী করবা?’

‘পাশের বাড়ির জ্যাডারে ডাকি?’

‘ডাকো।’

রথীন যাওয়ার আগেই কালির দু’পায়ের কাছে মাঝখানে একটা বাছুর দেখা গেলো। কী সুন্দর লাল রঙের! মোহনা খুশিতে লাফিয়ে উঠলো। রথীনকে জড়িয়ে ধরে বললো, ‘দেহ, দেহ কি সোন্দর বাছুর অইছে।’

‘হ, তোমার মত সোন্দর অইছে।’

মোহনার সেদিকে খেয়াল নেই, সে একমনে বাছুর দেখছে। মন ভরে উঠলো আনন্দে। রাতে আর ঘরে গেলোই না। কালি চেটে চেটে বাছুরটার শরীর পরিষ্কার করে দিচ্ছে, মোহনা কালির পাশে বসে বসে দেখছে।

সকালে রথীন ঘুম থেকে উঠে ওকে ডেকে তুললো।

‘আর কত দেখবি, অহন অডো, আমারে চা দেও।’

‘হ, যাইতাছি।’

বলেও আরো কিছুক্ষণ বসে রইলো। ওর দিকে দেখে হেসে রথীন ঘরে চলে গেলো।

মোহনা এখন সারাক্ষণ কালির বাছুরের দিকে তাকিয়ে থাকে। মাঝে মাঝে কোলে নিয়েও বসে থাকে। ওর নাম রেখেছে লালি। লালিকে দেখতে দেখতে ওর বাৎসল্যরস উথলে ওঠে। কখনও ওর দু’চোখ ভরে আনন্দে আবার কখনও হাহাকারে।

লালির যখন খিদে পায় দৌড়ে মা’র কাছে ছুটে যায়। কালির ওলানে গুঁতো দিয়ে দিয়ে দুধ খায়। আবেশে কালির চোখ বুজে আসে। মোহনা দু’চোখ ভরে দেখে। কখনো কখনো অজান্তেই নিজের বুকে হাত দিয়ে দেখে।

আজকাল ঘরের কাজ পড়ে থাকে, ও শুধু লালিকে দেখে আর লালির দুধ খাওয়া দেখে।

রথীন খেয়াল করেছে মোহনা কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গেছে। আগের মতো কথা বলে না। বসে বসে রথীনের কাজও দেখে না। এখন বেশিরভাগ সময় উদাস হয়ে গোয়ালের পাশে দাঁড়িয়ে থাকে।

রাতে রথীনের বুকেও তেমন ঢেঊ তুলে না। কাছে টেনে নিলে ওর কামুক ডাকে কোনওরকমে সারা দিয়ে পাশ ফিরে শোয়।

রথীন কয়েকবার দেখেছে মোহনা প্রায় সময় নিজের স্তন টিপে টিপে দেখে। কখনও আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বুকের আঁচল সরিয়ে স্তনবৃন্ত দু’আঙুলে চেপে ধরে।

রথীন অনেক সময় দেখেও না দেখার ভান করে। রাতে কামার্ত রমণীর বুকে আরও বেশি করে লাঙল চষে।

আজও বিছানায় এসে সে মোহনাকে বস্ত্রমুক্ত করলো। মনে হলো শরীরটা আগে থেকেই জেগে ছিলো। আজ মোহনাই ওকে বুকের মধ্যে টেনে নিয়ে একটা স্তন মুখের মধ্যে পুরে দিলো। রথীন একটু অবাক হলেও হাঁ করে স্তনবৃন্ত মুখে নিয়ে চুষতে শুরু করলো।

মোহনা অস্থির। কিছুতেই পছন্দ হচ্ছে না। বার বার রথীনকে নিজের মধ্যে টেনে নিচ্ছে। রথীন নানাভাবে চেষ্টা করছে ওকে খুশি করার। হচ্ছে না।

হঠাত মোহনা ডুকরে কেঁদে উঠলো। রথীনের মাথার চুল ধরে ঝাঁকুনি দিয়ে বললো, ‘লালির মতো কইরা খাও। গুঁতা মাইরা মাইরা খাও।’

একটু থমকে গিয়ে রথীন আবারও চেষ্টা করছে। ডুকরে ডুকরে কাঁদছে মোহনা। ওর বুক ভিজে গেছে রথীনের চোখের জলে। একটু একটু করে ওরা এগিয়ে যাচ্ছে অব্যক্ত সন্ধির দিকে।

গোয়ালে তখনও লালি মায়ের ওলানে নাক ঘষে ঘষে দুধ খাচ্ছে।

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *