travel-tarashankar-birbhum

বীরভূমের মাটিই লালন করেছিল তারাশঙ্করকে
হাঁসুলী বাঁক আজও অপেক্ষায় থাকে করালীদের

প্রসূন বিশ্বাস

শীতল গ্রামের এক বাজিকর পুজোয় বসেছেন

কেমন আছে লাভপুর? সেই রুক্ষ মাটি। শনশন করে বয়ে যাওয়া হাওয়া, আর মাদলের সুর ভেসে আসা দূরের কোনো এক আদিবাসী পল্লী থেকে। প্রকৃতি জননী যেন লালমাটির এই শরীরটাকে গড়ে তুলেছেন তিলতিল করে। এখানকার মানুষদের সহ্য ক্ষমতা দিয়েছেন অনেক বেশী। সেই লাভপুরকে ফিরে দেখতেই নীরে ফেরা পাখির মতো ছুটে আসি বারবার। কখনও তারাশঙ্করের জন্মভিটের কাছে। কখনওবা আবার তাঁরই লেখা কালজয়ী উপন্যাসের সেই প্রেক্ষাপট হাঁসুলী বাঁকের উপকথার হাঁসুলী বাঁকের তীরে। আবার কখনওবা অট্টহাস ছুঁয়ে নিকটবর্তী বাজিকরদের শীদ্ধল গ্রামে।

আজ আপনাদের এই অঞ্চলে নিয়ে যাচ্ছি। যে অঞ্চলের কথা বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিকবার তুলে ধরেছেন তাঁর লেখায়। আজও ঠিক একইভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে হাঁসুলীবাঁক কিংবা লাভপুর। যাঁরা একটু অন্যরকম গ্রামীন পল্লীর খোঁজে ছুটে বেড়ান এক দেশ থেকে অন্য দেশে, তাঁদের কাছে এই গ্রামগুলো অবশ্যই একটুকরো ভালোলাগার প্রতিচ্ছবি মনে হবে। অবশ্য, এই গ্রামগুলোতে আসতে চান তাহলে আমার একটা ছোট্ট অনুরোধ হাঁসুলী বাঁকের উপকথা, ধাত্রীদেবতা, সপ্তপদীর মতো তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিখ্যাত উপন্যাসগুলো চোখ বুলিয়ে আসতে পারেন। তাহলে অন্ত্যত বুঝতে পারবেন হাঁসুলী বাঁকের সেই করালী চরিত্র কিংবা সপ্তপদীর কৃষ্ণেন্দুর বেড়ে ওঠার এই ভূমিকে।

হাঁসুলী বাঁক থেকে শীতলগ্রামে যাওয়ার পথ

সারা বীরভূম ঘুরলে এখন আপনি বড় সড়কপথ গুলো আর সেই আগের মতো লাল মাটি দেখতে পাবেন না। যাঁরা বছর ১৫ আগেও শান্তিনিকেতন গিয়ে গুরুদেবের আশ্রমে ঢুঁ মেরেছেন তাদের এই মেঠো লাল মাটির পথে গরুর গাড়ি চেপে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে হয়তো কষ্ট হতো কিছুটা, কিন্তু মনের আরাম ছিল প্রবল। গরুর ছইয়ের মধ্যে বসে শহরের মানুষরা মনের হিল্লোলে কোপাইয়ের পারে গিয়ে সেই অনাবিল আনন্দ খুঁজে নেওয়ার বহিঃপ্রকাশ যাঁরা যেতেন সেই সময় তাঁরাই বলতে পারবেন। ইদানিং বীরভূমে লালমাটির সড়ক আর দেখা মেলে কই? লাল মাটির বদলে পিচ রাস্তার সারি। আর গরুর গাড়ির হদিশ মিললেও টোটোর সাম্রাজ্যে আর ক‘জন মানুষ গরুর গাড়ি চাপেন? আমাদেরও বীরভূম চক্কর দিতে প্রথম পছন্দ টোটোই। তার অবশ্য কারন একটা চারচাকা গাড়ির থেকে এর মন্থর গতিবেগ। গাড়িতে চড়লে হুঁশ করে চলে গেলে গাছ-পালা, নদী, পাখি কিছুই যেন বোঝা যায় না। বরং টোটোয় গ্রামের ভিতর দিয়ে যাওয়ার সময় উপভোগ করা যায়। এবার আমাদের গন্তব্য লাভপুর তারাশঙ্করের ভিটে সহ পাশের গ্রামগুলো। কলকাতা থেকে শান্তিনিকেতন গিয়ে আপনার সেখান থেকে গাড়ি বা টোটোয় আসতে পারেন লাভপুর। কলকাতা থেকে একাধিক শান্তিনিকেতনের ট্রেন পেয়ে যাবেন। হাওড়া থেকে শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেসও আছে। যাইহোক শান্তিনিকেতন থেকে টোটোয় আমরা চললাম লাভপুরের দিকে। টোটোয় লাগে মিনিট পঁয়তাল্লিশের একটু বেশী।

হাঁসুলীর চরে গরু খুঁজতে বেড়ানো সেই বৃদ্ধা

টোটো ছুটে চলল বোলপুর হয়ে প্রান্তিক রেলস্টেশন পার করে সোজা লাভপুরের দিকে। মাঝখান থেকে পিচ রাস্তা। আর দুই দিকে সদ্য ধান তুলে নেওয়ার পর ফাঁকা জমি। মাঝে সতীপীঠ কঙ্কালীতলার পাশ দিয়ে একটু এগিয়ে রাওতারা অঞ্চল পার হওয়ার সময় লক্ষ্য করলাম পাশের দুই দীঘিতে ফুটে রয়েছে সারি সারি পদ্ম। শুনলাম এই অঞ্চলে পদ্ম চাষ হয়। আবার এগোতে চলল টোটো। লাভপুর ব্রিজ টপকানোর পরই ডানদিকে বাঁক নিতেই দেখলাম আরেক সতীপীঠ ফুল্লারা মন্দিরের বিশাল তোরন। এই ফুল্লরা মন্দিরের কিছুটা দূরেই তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রামের বাড়ি। মাটির দোতালা বাড়ি। ফুল্লরা মন্দিরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় টোটো থেকে নেমে একটু মন্দির দর্শনও করে এলাম। এই বীরভূম প্রাচীন কালে তন্ত্র সাধনার জন্য বিশেষ খ্যাতি লাভ করেছিল। এখানেও দেখতে পেলাম পঞ্চমুন্ডির আসন। সেই আসনকে আবার বাঁধিয়ে রাখা হয়েছে। দেবী ফুল্লরা দর্শন করে ফের উঠে পড়লাম টোটোতে। ওঠার আগে চোখে পড়ল এক বাউলকে। আপনমনে মাধুকরির জন্য গান গেয়ে বেড়াচ্ছেন।

এই ঘরেই জন্মেছিলেন তারাশঙ্কর। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন তাঁর ভাইপো বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়

বাউল প্রসঙ্গ যখন উঠলই তখন বলি, বীরভূম অঞ্চলে বাউলদের বাস। শান্তিনিকেতন বোলপুর সংলগ্ন অঞ্চলে প্রচুর বাউল দেখা যায়। সোনাঝুড়ি হাটে গেলে আপনার চোখে পড়বেই জগন্নাথ দাস বাউল সহ একাধিক নাম না জানা বাউলদের। এদের অনেকেই দেশ, বিদেশে নিয়মিত অনুষ্ঠান করলেও সোনাঝুড়ি হাটে এসে গান গেয়ে মাধুকরিটা করা রুটিংমাফিক কাজ। আসলে বাউলের ধর্মইতো ওটা। অর্থের জন্য গান গেও না। আনন্দের জন্য গাও। আর শ্রোতা তাই শুনে মনে খুশি হয়ে যে অর্থ তাঁকে দেবেন সেটাই হল তার মাধুকরি। কিন্তু আজ কী সব বাউল এই পথে হাঁটেন। জানি না। বিখ্যাত হওয়ার পর অনেকেই তাঁদের নিজেদের সান্মানিক বেঁধে দিয়েছেন। কিন্তু বীরভূমের পথে, ঘাটে আজও এই বাউলদের দেখা মেলে। যাঁদের হাতে থাকে একতারা বা দোতারা। যাঁদের কন্ঠে থাকে লালন সাঁই বা রাধারমনের পদ। আর মুখে থাকে অনাবিল একটা হাসি।

এই বাঁককে কেন্দ্র করেই তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছিলেন হাঁসুলী বাঁকের উপকথা

যাইহোক ফিরে আসি আবার লাভপুরের পথে। টোটো ছুটছে তারাশঙ্করের বাড়ির পথে। মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির ঠিক সামনে। তাঁর বর্ণনার সেই নাটমন্দির আজ পাকা হয়েছে। বাড়ির সামনে পঞ্চমুখী শিবমন্দির। সেই বাড়ির আজ দু’শো বছরের বেশী বয়স। মাটির দোতালা বাড়ি। এই বাড়িতেই বেড়ে উঠেছেন ছোট্ট তারাশঙ্কর। তার কৈশরের ভূমি হয়েছে এই অঞ্চল। তারাশঙ্করের বিয়েও হয়েছে এই বাড়িতেই। বাড়ির সামনেই সরু পথ। সেই সরু পথ দিয়ে ভিতরে ঢুকে আসতে হয়। বর্তমানে এই বাড়িতে বসবাস করেন তাঁরই ভাইপো বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়। আমাদের দেখে বেড়িয়ে এলেন। খুলে দেওয়া হল তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাটির দোতালা বাড়িটি। এরপর গড়গড় করে কাকার কথা বলে গেলেন তিনি, ‘এই বাড়ি সম্প্রতি হেরিটেজ ঘোষনা করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এখনও তেমনটাই রাখা রয়েছে বাড়িটি। যেমন ছিল তারাশঙ্করের আমলে। ওঁর ঘরগুলোতে ওঁরই কিছু ছবি, মানপত্র রাখা আছে। বাড়িটার বয়সওতো কম নয়। দেখতে দেখতে প্রায় দুশো বছর হয়ে গেল।’ প্রবীন ভদ্রলোক আমাদের ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাতে লাগলেন। বোঝায়ই গেল কালেভদ্রে তারাশঙ্করের পাঠকের পা পড়ে এই বাড়িতে। তবে যাঁরাই আসেন, তাঁদেরকেই এভাবেই আপ্যায়ন করেন উনি। সঙ্গে যোগ করেন, ‘তারাশঙ্কর যা দেখেছেন, তাই লিখেছেন। তাই ওঁর লেখা প্রত্যেকটা চরিত্রই যেন বাস্তবের মাটি থেকে উঠে আসা।’ ঘরের দেওয়ালে লক্ষ্য করছিলাম সাহিত্যিকের বিভিন্ন উপন্যাসের কোটেশন উল্লেখ করা আছে। আপনি যদি গ্রীষ্মের দাবদাহতে এই মাটির ঘরে ঢোকেন তাহলে একটা প্রশস্তি অনুভব করবেন তা হলফ করে বলতে পারি। বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কিছু সময় কাটিয়ে ওঁনার পরামর্শেই পাশেই ধাত্রীদেবতার পাশ দিয়ে চললাম হাসুলীবাঁকের দিকে। ধাত্রীদেবতার নামে উনি একটি উপন্যাস লিখেছিলেন। আজ ওঁনার সংগ্রহশালার নামও ধাত্রীদেবতা। আপনারা এই সংগ্রহশালাটাও দেখতে পারেন।

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির অন্দরমহলে

এবার আমাদের টোটো ছুটল হাঁসুলীবাঁকের দিকে। লাভপুর সংলগ্নই এই হাঁসুলীবাঁক। আকাশের দিকে চেয়ে দেখি মেঘাচ্ছন্ন। একটু পরেই বৃষ্টি নামবে ঝমঝমিয়ে। টোটো এগিয়ে চলল সেই পথ ধরে। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি থেকে টোটোয় মিনিট কুড়ির পথ। কিন্তু ভুলক্রমেও হাঁটতে যাবেন না। হাঁটতে গেলে অনেকটাই দূর। টোটো এসে পড়ল একটা ধূধূ প্রান্তরে। সেই প্রান্তরের কিছুটা দূরেই দেখলাম একটি নদী বাঁক। এই সেই হাঁসুলী বাঁক! কানে ভেসে আসছে সেই করালী, পাখিদের কথা। চোখের সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়া মানুষগুলোকে মিলিয়ে নিচ্ছি উপন্যাসের চরিত্রের সঙ্গে। এরমাঝেই দূর থেকে দেখি এক বছর সত্তরউর্দ্ধ বৃদ্ধা একটা লাঠি হাতে হাঁটতে হাঁটতে আমাদের দিকেই আসছেন। মাথায় কালো ছাতা। কিছুটা কাছে আসতেই জিজ্ঞাসা করলাম, ‘ও ঠাকুমা বলি যাও কোথায়?’ সঙ্গে সঙ্গে উত্তর এল, ‘গরুটা খুঁজতে যাইগো ছেলে।‘ বয়সের ভারে শরীরে চামড়া কুঁচকে ঝুলছে তাঁর। হাতের লাঠি শক্ত করে ধরে অবলম্বন করে তবুও এগিয়ে চলছেন বৃদ্ধা। ক্লান্তি নেই একচুল।

এই বয়সে আমরা শহরের মানুষরা বাড়ির বাইরে বেড়িয়ে এভাবে হন্যে হয়ে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে গৃহপালিতকে খুঁজতে পারব কিনা সন্দেহ! এই বৃদ্ধা নারী আমাকে যেন পাত্তা না দিয়েই গরুর জন্য ছুটে গেল ওই বাঁকের দিকে। লেখার প্রথমেই আমি বলেছি একানকার মানুষদের সহ্যশক্তি অনেক বেশি। এই বৃদ্ধা আমাকে সেই কথারই যেন প্রমান দিয়ে গেলেন। টোটো থেকে নেমে হাঁটতে থাকলাম হাঁসুলী বাঁকের দিকে। কানে আসতে লাগল কুলকুল করে বয়ে যাওয়া নদীস্রোতের শব্দ। সেই শব্দের সঙ্গে একটা হাওয়ার শব্দ মিশে একটা অদ্ভুত শব্দ তৈরি হচ্ছে। যা বড়ই মধুর। এর মধ্যে আকাশের মুখ ভার হওয়ায় হাঁটতেও মন্দ লাগছে না।

তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের বাড়ির কাছেই ফুল্লরা সতীপীঠ

হাঁসুলী বাঁক। তারাশঙ্করের বর্ণনা অনুযায়ী আদিবাসী মেয়েদের গহনা হাঁসুলীর মতো দেখতে এই কোপাই নদীর বাঁক। সত্যি বলেছেন তিনি। আদিবাসী মেয়েদের গলায় থাকে এই হাঁসুলী। এই হাঁসুলী বাঁকের পাশেই একটি ইটভাটাও আছে। হাঁটতে হাঁটতে চোখে পড়ল নাম না জানা কত জঙ্গলি ফুল। এরই মাঝে দূর থেকে ট্রেনের বাঁশি মনে পড়াল সামনেই রেলব্রিজ। এই রেললাইনের কথা উল্লেখ রয়েছে উপন্যাসে। কল্পনা করতে লাগলাম পার্শ্ববর্তী বাঁশবাদী গ্রামকে। যে গ্রামকে কেন্দ্র করেই তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় গড়ে তুলেছিলেন তাঁর কালজয়ী উপন্যাস হাঁসুলী বাঁকের উপকথা। সামনে দিয়ে যাওয়া কৃষ্ণকায় মানুষটার সঙ্গে মিল খোঁজার চেষ্টা করলাম উপন্যাসের চরিত্র করালীর। একদম যেন বইয়ের পাতা থেকেই উঠে এসেছে এই মানুষগুলো। আজও কোনও পরিবর্তন নেই। হাঁসুলী বাঁকের উপকথা উপন্যাসটি প্রকাশ হয়েছিল সেই ১৯৪৬ সালে। দেখতে দেখতে আজ প্রায় ৭৫ বছরের বেশি সময় অতিক্রান্ত। বোলপুর থেকে এই হাঁসুলী বাঁক ২২ কিলোমিটারের একটু বেশী পথ। কোনও এখ মেঘলা দিনে হাঁসুলী বাঁকের সামনে দাঁড়ালে আপনার মনে হবে স্বর্গ মনে হয় এটাই। চাইলে ঘণ্টা খানেক চুপ করে বাঁকের চড়ে বসুন। শনশন হাওয়া আর কুলকুল জলের শব্দে সৃষ্টি হওয়া নতুন সুরের সঙ্গে ভেসে যান।

ফুল্লরা মন্দির

এই হাঁসুলী বাঁকের পাশেই রয়েছে বাজিকরদের শীদ্ধল গ্রাম। দুর্গা পুজোর সময় যদি হাঁসুলী বাঁক দেখতে আসেন, তাহলে অবশ্যই চলে যান পাশের এই শীদ্ধল গ্রামে। এখন আর কেউ একে শীদ্ধল গ্রাম বলে না। নাম হয়েছে শীতলগ্রাম। আমারা একাধিকবার এই অঞ্চলে এসেছি। গতবার পুজোর সময় পরিকল্পনা করেই শীতলগ্রামে গিয়েছিলাম। এবার বলি কেন যাবেন শীতলগ্রামে? বাজিকর শ্রেনীর বসবাস এই গ্রামে। শোনাযায় এই বাজিকর সম্প্রদায়কে উড়িষ্যার থেকে গোয়েন্দগিরির জন্য এখানে এনেছিলেন জমিদাররা। বর্তমানে এরা বহুরূপী সেজে দিনযাপন করেন। সেই বহুরূপীদের গ্রামের দুর্গাপুজো বড়ই অদ্ভুত। এখানকার পুজো করতে ব্রাহ্মণ লাগে না। নেই কোনও মন্ত্রও। বাজিকররা নিষ্ঠাভরে নিজেরাই পুজো করেন। কথিত আছে সন্ধিপুজোর সময় দেবীর সামনে রাখা সিঁদুরে পায়ের ছাপ দেখতে পাওয়া যায় মা দুর্গার। বহু বহু বছর ধরে চলে আসা এই রেওয়াজ দেখতে আজও এই গ্রামের পুজো দেখতে হাজার হাজার মানুষ ভিড় করেন শীতলগ্রামে। পুজোর সময় অবশ্য ওখানে গেলে বহুরূপীদের সাজ আপনি দেখতে পাবেন না। পুজোর সময় গায়ে রং মেখে বহুরূপী সাজে সেজে ওঠেন না এখানকার বাসিন্দারা। সেই সময় দেবী বনব্দনাতেই ব্যস্ত থাকেন ওরা। একই সঙ্গে এই গ্রামের মহিলারা হাবু গান গেয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। এই শীতল গ্রামেরর বাজিকরদের পুজোর ঠিক পাশেই আরও একটি পুজো মন্ডপ দেখতে পাবেন, সেটি অবশ্য বাগদিদের পুজো। বহুরূপী একটি প্রাচীন লোকশিল্প। এই শিল্পের ধারাকে বহু কষ্ট করে এই শীতল গ্রামের বাজিকররা বাঁচিয়ে রেখেছেন।

ফুল্লরা সতীপাঠের পঞ্চমুন্ডির আসন। একসময় তন্ত্রসাধনার পীঠস্থান বলা হত বীরভূমকে

এই হল তারাশঙ্করের বীরভূমের কিছু খন্ডচিত্র। আপনারা যদি চান এই স্থানগুলো ঘুরে আসতে পারেন। হয়ত হাঁসুলী বাঁকের চড়ে দাঁড়িয়ে আপনিও মুখোমুখি হয়ে যেতে পারেন করালীর। সন্ধ্যে নামলে কত্তাবাবার বাহনদের ডাক আপনিও শুনতে পারেন। কিংবা পাশ দিয়ে সাইকেল চালিয়ে হুশ করে চলে যাওয়া যুবকটির সঙ্গে মিল খুঁজে পেতে পারেন কালাচাঁদ ওরফে কৃষ্ণেন্দুর।

বাজিকরদের গ্রামের দুর্গাপুজো
বোলপুরের সোনাঝুড়ি হাটে জগন্নাথ দাস বাউল এভাবেই মাধুকরি করেন রোজ
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *