হার্চাগুচ্ছ
স্প্যানিশ কবিতার প্রাচীনতম নমুনা
তর্জমা: রাজু আলাউদ্দিন
 
ইয়েহুদা হালেবি (সৌজন্য: Wikipedia)

বাংলা ভাষার প্রাচীনতম কবিতা চর্যাপদের মতোই স্প্যানিশ হার্চার আবির্ভাব সেই দশম একাদশ শতকে। কালের এই সাযুজ্য ছাড়াও আরও একটি মিল হচ্ছে, এই দুই প্রাচীন কবিতাই আবিষ্কৃত হয়েছে বিদেশের মাটিতে: চর্যাপদ নেপালে আর হার্চা মিশরের কায়রোতে, অর্থাৎ দুটোই এশিয়াতে। আরও একটি সাজুয্য এই যে উভয় কবিতাই আবিষ্কৃত হয় বিশ শতকের প্রথমার্ধে।

চর্যাপদকে একদিকে অসমীয়া, অন্যদিকে ওড়িয়ারা নিজেদের বলে যে দাবী করে, তার কারণ বাংলার পাশাপাশি প্রায় কাছাকাছি সময়ে এই দুইটি ভাষার উদ্ভব এবং উভয়ের মধ্যেই আছে অভিন্নার্থক বহু শব্দ। একইভাবে এই হার্চার ভাষাতেও আছে আরবি, স্প্যানিশ এবং রোমান্স ভাষার মিশ্রণ। এই কারণে স্প্যানিশ ভাষার এই প্রাচীন নমুনা হার্চায় রয়েছে প্রচুর আরবি ও রোমান্স শব্দের উপস্থিতি। তবে এসব সত্ত্বেও গবেষকদের বিচারে হার্চা স্প্যানিশ কবিতার আদিতম নমুনা। এক অর্থে গোটা ইউরোপেই হার্চা হচ্ছে প্রাচীনতম লিরিক, যেমনটা গোটা এশিয়াতে চর্যাপদ প্রাচীতম গীতিকবিতা।

চর্যাপদ তান্ত্রিকদের সাধনার ফলস হলেও, হার্চা তা নয়। হার্চা রচিত হয়েছে তৎকালীন বাদশা, আমির ও বিশিষ্ট জ্ঞাণী ব্যক্তিদের সৃষ্টিশীল হাতে। এসব কবিতার প্রধান বিষয় প্রেম ও বিরহ। উপমা উৎপ্রেক্ষায় সহজ সরল ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে প্রেমের আকুতি। আর প্রায়শই তা দু চার পংক্তির পরিসরে। তবে ১২৪৩ সালে সংকলিত ইবন সাঈদ সংকলিত এবং এমিলিও গার্সিয়া গোমেস কর্তৃক আবিষ্কৃত রাইযাত আল-মুবাররিজিন ওয়া-ঘাইয়াত আল মুবাইয়িজিন (Rayat al-Mubarrizin wa-ghayat al-mumayyizin) নামক প্রাচীন পাণ্ডুলিপিতে কবিতাগুলো অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ। আমি বেছে নিয়েছি একেবারে প্রাথমিক যুগের কবিতাগুলো।

আরবদের দ্বারা স্পেনের শাসনামলে সেখানকার আরব কবিরা মুয়াসাসাহাস (Muwashashas) নামের যে কবিতা রচনা করতেন তার শেষ স্তবককে বলা হলো হার্চা। এই হার্চার আদলে তৎকালীন স্পেনের মুসলমান, ইহুদি ও খৃষ্টানরা প্রচুর হার্চা রচনা করেছেন, যদিও তার সামান্যই কালের প্রহার এড়িয়ে টিকে ছিল। টিকে যাওয়া সেই হার্চার কিছু নমুনা স্প্যানিশ থেকে এখানে অক্ষম অনুবাদে হাজির করা হলো। প্রতিটি কবিতার শুরুতে কবির নাম ও সময়কাল উল্লেখ করা হলো।

ইউসেফ আল-কাতিব (সময়কাল: ১০৪২)
এত প্রেম, এত ভালোবাসা
ওগো প্রিয়তম, এত প্রেম
উজ্জ্বল দুই আঁখি ক্ষয়ে গেছে
বেদনা অথৈ।

মোসে বিন এজরা (সময়কাল: ১০৬০-১১৪০)
বিকায় সে প্রেম তাদেরকে কিস্তিতে
যারা করে তার তারিফ পঞ্চমুখে।

ইয়েহুদা হালেবি (সময়কাল: ১০৭৫-১১৪০)

কবিতা গুচ্ছ


বার্তাবাহক যখন এনেছে সুসংবাদ
গুয়া’লাহারায় যেন বা সে এক রশ্মিপাত।

ছোট বোন, তোরা বলতো আমাকে
কী করে সইবো যাতনা মোর
প্রেমিক বিহনে কী করে বাঁচবো
কোথায় খুঁজবো প্রাণভোমর?

তুমি অনুমান করতে যেহেতু পার,
কর তবে আজ সত্যকে অনুমান,
কখন আসবে বন্ধু আমার
বলতে পার, তুমি?

ওগো প্রভু, দেখ, হৃদয় আমার
আমাকে যাচ্ছে ছেড়ে
ফিরে কি আসবে কোনদিন আর ?
প্রেমিকের তরে হৃদযে আমার দুঃসহ যন্ত্রনা,
অসুস্থ সে,কখন উঠবে সেড়ে?

তাকে ছাড়া আমি একাকী এখনও, বড়দিন এলো প্রায়,
হৃদয় আমার তার তরে মরে অথৈ যন্ত্রনায়।

যেন তুমি শিশু অন্য কারোর
ঘুমাও না তাই আমার বক্ষে আর ।

আবু বকর মামাদ ইবনে রুহাইম (সময়কাল:১১২১)
কী করি অথবা
কী হবে আমার, বল প্রিয়তম?
যেও না আমাকে ছেড়ে।

ইউসেফ বিন সাদিক (সময়কাল: ১১৪৯)
কী করবো, মাগো
প্রেমিক আমার দুয়ারে।

আবু মুহাম্মাদ আব্দ আল্লাহ ইবন হারুন আল-আসবাহি আল-লারিদি (সময়কাল ১২০০)
মাগো, আমি এই প্রত্যুশে ঘুমাবো না,
আবুল কাসিম আসবে যে তার প্রভাতী চেহারা নিয়ে।

তদ্রোস আবু-আল-আফিয়া (সময়কাল: ১২৪৭-১৩০৩)
ওগো সুন্দর প্রভাত তুমি
কোত্থেকে তুমি আস?
জানি তুমি ভালোবাস অন্যকে
আমাকে বাস না ভালো।

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Copyright © 2023 অপারবাংলা