aparbangla-editorial-edition-14

সম্পাদকীয়


বইপত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে সম্প্রতি বেশ উদ্বিগ্ন আলোচনা যাচ্ছে। ই-বুক, ই-ম্যাগাজিন কি আগামীতে গিলে খাবে পুরো প্রিন্ট মিডিয়াকে? ঠিক যেমন স্মার্ট ফোনের গহ্বরে তলিয়ে গেছে দীর্ঘদিন ধরে রাজ্যপাট চালানো বেশ কয়েকটি প্রযুক্তি?

ছোট ছোট ফ্ল্যাট, দশ ফুট বাই দশ ফুট ঘর, বই রাখার স্থান সংকুলান। ইচ্ছে না থাকলেও তিল তিল করে সংগ্রহ করে রাখা পছন্দের ম্যাগাজিনের কপিগুলো তুলে দিতে হয় ফেরিওয়ালার হাতে। বইয়ের সেল্ফকে প্রস্থে বাড়াতে না পেরে দৈর্ঘ্যে করতে হয় ছাদস্পর্শী, আর মইয়ে চড়ে বই পাড়ার জিমন্যাস্টিক দেখানোর সাহস কি আর সকলের থাকে! এজন্যই ই-বুক এর রমরমা। বই রইল, কিন্তু মই রইল না। বই রইল,তবু উই ধরল না। ব্যস্ত জীবনের পড়ুয়াদের জন্য এ কি কম সুখের কথা!

ব্যাগে করে বইতে হয় না, এক ক্লিকে হাজার বই হাজির। মেইনটেন্স নেই, সময় পরিশ্রম দুই-ই বাঁচে।

তবে কি একদিন সত্যিই হারিয়ে যাবে এত বছরের এত ঐশ্বর্য?

ঐশ্বর্য্যই বটে। যার আছে এই সম্পদ সে-ই জানে। রি-সেল ভ্যালু নেই জেনেও বই কেনা এবং জমানোর আকাঙ্খা কিছুতেই ছাড়তে পারে না বইপোকারা। আর এদের জন্যই বেঁচে আছে একটা ইন্ড্রাস্টি, রুজিরুটি জড়িয়ে আছে বহু মানুষের।

টিকে থাকা আর টিকিয়ে রাখার জন্যই বিবর্তনের পথে হাঁটতে হয়, মেনে নিতে হয় পরিবর্তনকে। কম্পিউটার ব্যবহারের শুরুতে চারপাশে ‘গেল’ ‘গেল’ একটা রব উঠেছিল, মনে হয়েছিল কর্মহীন হয়ে মনুষ্যপ্রজাতি বোধহয় কেবলই মক্ষিকা মারবে। কিন্তু পঞ্চাশ বছর পরেও তেমন কিছু হল না, বরং নতুন নতুন কর্ম সম্ভাবনা তৈরি হল।

বইপত্র যদি চেহারা বদলে আসে, তাকে মেনে নিতে ক্ষতি কি! নতুন বইয়ের গন্ধ শোঁকা, হাত দিয়ে পাতা ওলটানোর সুখ কিংবা মাথার নিচে রেখে ঘুমিয়ে পড়ার সুখ হয়ত হারিয়ে যাবে, কিন্তু বই তো বই-ই থাকবে, থাকবে তার এক আকাশ আহ্বান। লেখক, সম্পাদক, প্রকাশকরাও তেমনই থাকবেন যেমনটা আছেন এখন।

কাব্য,সাহিত্য সৃষ্টি, একই ভাবে বেঁচে থাকবে যেমন ছিল সেই শিলালিপি বা হাতে লেখার পুঁথির সময় থেকে।

অতএব মাভৈ, হাসিমুখে আমরা মেনে নেব এই রূপান্তর।

অপারবাংলা ওয়েবজিন ডিজিটাল প্রযুক্তিকে সম্বল করলেও প্রিন্টেড বই এর অপরিহার্যতার কথা সবসময় বলে এসেছে। এই দুই ধারা একে ওপরের পরিপূরুক। অদূর ভবিষ্যতে আশা রাখছি, আপনারা অপারবাংলা পত্রিকার নতুন বইয়ের গন্ধ উপভোগ করবেন প্রিন্টেড মিডিয়াতে।

এবারে আসা যাক নতুন সংখ্যা নিয়ে কিছু কথা। আমরা সবসময় চেষ্টা করি দুই বাংলা আর প্রবাস থেকে বিশিষ্ট লেখকদের সংকলন। এবারেও আশা করছি অপারবাংলা সেই দায়বদ্ধতা মেটাতে পেরেছে। গল্প বিভাগে পাঁচজন করে প্রথিতযশা লেখক লিখেছেন ভারত ও বাংলাদেশ থেকে। সদ্য বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার প্রাপ্ত বিমল গুহ নিজের জীবনের আত্মকথা নিয়ে কলম ধরেছেন অপারবাংলাতে। লেখক বিমল গুহর দীর্ঘ সাহিত্য জীবন নিয়ে এই লেখা বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে।

বাংলার নক্ষত্রপতন যেন আমাদের এখন দৈনন্দিন রুটিন হয়ে গেছে। তরুণ মজুমদার তার নতুন সংযোজন। বিনোদন বিভাগে, তাঁর “দাদার কীর্তি” ছবি নিয়ে আবার কিছু আলোচনা করেছেন অপারবাংলা পরিবার থেকে স্বাতী চট্টোপাধ্যায় ভৌমিক। অনুবাদ বিভাগে বাংলাদেশের বিশিষ্ট অনুবাদক রাজু আলাউদ্দিন লিখেছেন স্প্যানিশ হার্চা নিয়ে। স্প্যানিশ হার্চা হলো বাংলা ভাষার প্রাচীনতম কবিতা চর্যাপদের মতো। অপারবাংলা পাঠকদের বিপুল উৎসাহকে সম্মান জানিয়ে আমরা আবার শুরু করলাম বিনোদন বিভাগে প্রিয়ব্রত দত্তর স্মৃতির ষ্টুডিও পাড়ার ষষ্ঠ পর্ব। এই বিভাগটি নিয়মিত চলবে লেখকের দীর্ঘ সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা নিয়ে, যা সবসময় পর্দার পিছনেই থাকে। নিয়মিত বিভাগ গুলো এবারেও আপনাদের নিরাশ করবে না।

জুলাই সংখ্যা উপভোগ করুন সম্পূর্ণ নিখরচায় এবং বিজ্ঞাপন ছাড়া। এরপরেই আসছে শারদীয়া সংখ্যা। কাজ চলছে পুরোদমে।

সুস্থ থাকুন!


শুভ নাথ
সম্পাদক
অপারবাংলা সাহিত্য পত্রিকা

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

2 thoughts on “aparbangla-editorial-edition-14

  1. সুন্দর পত্রিকা l লেখা পাঠাতে হবে কিভাবে জানাবেন l

  2. লেখা পাঠাতে ইচ্ছুক। শারদীয় সংখ্যার লেখা জমা দেবার কি সময় সীমা পেরিয়ে গেছে?
    নমস্কার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *