micro-story-notun-jama

নতুন জামা
প্রতীক কুমার মুখার্জি


আট বাই আটের খুপরি ঘরটায়, তক্তপোশের উপরে রাখা রঙচটা, আধভেজা কাপড়চোপড়ের ডাঁই। বস্তির সংকীর্ণ গলিতে রোদের হিসেবী আনাগোণা৷ পলেস্তারাহীন দেওয়ালে ঝোলা তেলচিটে হলদে আলোটা গুমরোতে থাকা ঘরটাকে মলিনতর করে তুলেছে।
জামাকাপড়গুলো উঠিয়ে এনে, তেলনুনমাখা ছাতুর দলাটুকু ব্যাজারমুখে গিলছিল পারুল। তখনই তাকে চমকে দিয়ে, দরজা থেকে সটান তার কোলে আছড়ে পড়ল চিকচিকি মোড়া একটা মোড়ক। চার বাড়ির হেঁশেল ঠেলে বাড়ি ফিরেছে মা! ক্ষয়াটে লাল হাওয়াই চপ্পলজোড়া ধুতে ধুতে, পারুলের প্রতি বিষোদগার, “শিবরাত্রিতে ধেইধেই নাচবে মেয়ে! নিজে ফিরতে পারেননি, হারুকে দিয়ে জামা পাঠানো হয়েছে!”
নবদ্বীপের বড়ালঘাট বস্তির অধিকাংশ বাসিন্দার মতই, দয়াল ঘোষের দুধের ব্যবসা। হারুমামারা লোকালের ভেন্ডারে চাপিয়ে দুধ পৌছে দেয় কলকাতায়, পারুলের বাবা দয়াল সাইকেলে বাড়ি বাড়ি বিলি করে বেড়ায়৷ স্বামী স্ত্রীতে মিলে কোনমতে সংসারের জোয়ালটুকু বহন করে চলেছে৷ বাপসোহাগী পারুল কদিন ধরেই একটা লাল লেসের ফ্রকের আবদার ধরেছিল – শিবরাত্রিতে পরবে বলে৷ আব্দারের অবুঝপনা মায়ের বিরক্তিসাধন করলেও, দয়াল মেয়েকে আশ্বাস দিয়েছিল।
প্যাকেটটা ছিঁড়ে জামাটা সবে খুলেছে পারুল, এমন সময়ে গলির মধ্যে একটা বিকট চিৎকারে মা শুদ্ধু অনেক লোক দুড়দাড়িয়ে ছুটল নগেনমুদির দোকানে, “কলকাতায় ব্রীজ পড়েছে! টিভিতে দেখাচ্ছে!” সেদিকে মন নেই ছয় বছরের পারুলের। নতুন সম্পত্তি নিয়ে সে তার নিজের জগতে – খেয়ালও করল না, সারা সন্ধ্যেয় মা ঘরে ফেরেনি।
বিধ্বস্ত, আলুথালু পারুলের মাকে বস্তির মহিলারা যখন ঘরে এনে তুলল, পারুল জামাটা আঁকড়ে অঘোরে ঘুমোচ্ছে। সে জানে না, বাবার মোবাইল থেকে হারুমামার কাছে ফোন এসেছিল। ব্রীজ দুর্ঘটনার বলির মরদেহ সনাক্তকরণের জন্য সেই পুলিশী তলবে সাড়া দিতে, হারুমামারা কলকাতা রওনা হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই। তার জানা নেই, টিভিতে বারবার একটাই ভিডিও ঘুরেফিরে আসছে – নীল জামা, দুধের ক্যানসহ এক সাইকেল আরোহীর উপর ব্রীজটা তাসের ঘরের মত ধ্বসে পড়ছে!
পরের দিন, খবরকাগজের প্রথম পাতার ছবিটা দেখে মানুষ শিউরে ওঠে – লোহালক্কড় ও কংক্রীটের ধ্বংসস্তূপের নিচে বেরিয়ে আছে একটা রক্তমাখা হাতের অংশ। সেটাতে উল্কি করা একটা শব্দ – ‘পারুলমা’!
আজ শিবরাত্রি! ছোট্ট পারুল নতুন জামা পরে নাচছে! তাকে রেবাপিসীর কাছে রেখে, মাকে নিয়ে হারুমামা কেন যে আবার কলকাতা গেল!
বাবুই ফিরে এলে, ওরা বাড়ি ঢুকবে কি করে?

—- * —-


এই গল্পের চিন্তাধারা সম্পূর্ণ কল্পনাপ্রসূত। কোন জীবিত অথবা মৃত ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কোনরূপ কর্মকাণ্ডের সাথে যদি এই গল্পের কোন ঘটনার মিল থেকে থাকে, তা সম্পূর্ণ কাকতালীয় ও অনিচ্ছাকৃত।

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *