micro-story-saaj-bodol

সাজবদল
অদিতি ঘোষদস্তিদার


“আরে আরে এই বুড়িটা সেটের মধ্যে কী করে ঢুকে এল? অ্যাই অ্যাই! বেরিয়ে যাও এখান থেকে।”
সিকিউরিটি গার্ড ছেলেটি প্রায় তেড়ে এল বৃদ্ধা মহিলাটির দিকে।

প্রখ্যাত পরিচালক সুদর্শন রায়চৌধুরীর নতুন সিনেমার শুটিং স্পট গঙ্গার ধারে।
দ্বৈত ভূমিকায় অভিনয় করছে মলি মিত্র। সুদর্শনেরই নতুন আবিষ্কার মলি। প্রথম ছবিতে নেমেই মলি জিতে নিয়েছে আমজনতার সঙ্গে সঙ্গে পরিচালকটির মনও।
সুদর্শন অবশ্য বিবাহিত, অত্যন্ত সুন্দরী তার স্ত্রী মোহিনী। গুণীও।
তবে মোহিনী কিন্তু পর্দায় নায়িকা হয়নি কোনোদিন। সে বিখ্যাত মেকআপ শিল্পী। অসাধারণ প্রতিভা তার। লোকে বলে মোহিনীর মেকআপে যাদু আছে।

মেকআপ করার ফাঁকেই স্টুডিওতে সুদর্শনের সঙ্গে আলাপ মোহিনীর। তখন সুদর্শন ছোটোখাটো অভিনয়ের কাজ করত। স্বপ্ন ছিল পরিচালক হবার। আলাপ হবার পর সুদর্শন দেখেছিল চলচ্চিত্র জগৎ সম্পর্কে মোহিনীর অগাধ জ্ঞান, স্বচ্ছ ধারণা। অভিনয়ক্ষমতাও অসাধারণ। পয়সাওলা বাপের মেয়ে। তীব্র আকাঙ্খা ছবি পরিচালনার। কিন্তু মোহিনী শারীরিকভাবে দুর্বল। ওর হাঁটুর নিচ থেকে পা দুটি সরু। একা এই বিশাল কাজ করা সম্ভব নয়। তাই সিনেমা পাড়ায় পড়ে আছে উপযুক্ত সহযোগী পাবার অপেক্ষায়।
এই রত্নটিকে হাতছাড়া করল না সুদর্শন।
দুজনে মিলে শুরু করল ছবি তৈরির কাজ। কাগজে কলমে প্রায় সব বিভাগেই পরিকল্পনা মোটামুটি মোহিনীর, বাস্তবায়িত করে সুদর্শন। তবে সিনেমাতে পরিচালকের নাম নেয় না মোহিনী। মেকআপ শিল্পী নামেই থাকে।
প্রথম ছবির প্রোডিউসারও মোহিনীর বাবার চেনাশোনা একজন ছিলেন। সেই ছবি বক্স অফিসে বিপুল সাফল্য পাবার পর বড় বড় শিল্পপতিরাও এখন এগিয়ে আসছেন।
পরপর পাঁচটা ছবি সুপারহিট। বলিউডের অভিনেতারা পর্যন্ত এখন সুদর্শনের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। বছর দুয়েক আগে ছবিতে সুদর্শন নায়িকায় নতুন মুখের সন্ধান করেছিল। তখনই মলি আসে।
প্রথম প্রথম সব কিছু ভালোই চলছিল। কিন্তু গত ছবিতে সুদর্শন একেবারেই মোহিনীর সঙ্গে আলোচনা না করে মলিকে একটা গুরুত্বপূর্ণ রোল দেয়।
ছবিটি প্রচুর প্রশংসা পেলেও মলির চরিত্রাভিনয় প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ে।
তাই এবার মোহিনী অনেকবার বারণ করেছিল মলিকে এই দ্বৈত চরিত্রে না নিতে।
কিন্তু সুদর্শন কথা কানে তো নেইনি বরং হুমকি দিয়েছে ডিভোর্সের।
মোহিনী বেশ বুঝছে তিল তিল করে গড়ে ওঠা স্বপ্ন এবার শেষের পথে।

“অ্যাই, তুমি বুঝতে পারছ না, আমার তো এখন অভিনয় এখানে, আমি মলি ম্যাডাম!”

“ইয়ার্কির জায়গা পাও না! মলি ম্যাডামের গলা আমি চিনি না!”
বাক বিতণ্ডায় লোক জড় হয়ে গেছে ততক্ষণ। খবর পেয়ে সুদর্শন এগিয়ে এল।
আরে! ঠিক এইরকম মেকআপের আইডিয়াই তো মোহিনীকে স্কেচ করে বুঝিয়ে দিয়েছিল সে! শাড়িটাও এনে দিয়েছিল।
কিন্তু এ মহিলা তো মলি নয়! মোহিনীর মেকআপ নিখুঁত হয়, কিন্তু এ তো সত্যিই একটা বুড়ি।

“বিশ্বাস কর আমি মলি, তোমার মলি সুদর্শন!” কর্কশ গলায় বুড়ি বলে ওঠে।
সুদর্শন ছুটল মেকআপ রুমে! একী! মাটিতে পড়ে আছে মোহিনী। মাথা ফেটে রক্তে ভেসে যাচ্ছে!
মলি কোত্থাও নেই!
থানা পুলিশ হল! সবার মুখে মুখে ফিরল এ নিশ্চয়ই কোন বড় গ্যাঙের কাজ!
মলিকে কিন্তু আর পাওয়া গেল না।

সুদর্শনের নতুন ছবি খুব শীঘ্র রিলিজ হবে।
সুদর্শন আবার মোহিনী বলতে অজ্ঞান। এই ছবিতে যুগ্ম পরিচালক মোহিনী আর সুদর্শন।

জেলের গারদে বসে সেই বুড়ি কিন্তু এখনও শুধু বলে যায় “আমি মলি!”
খুব শিগগিরই মানসিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে তাকে।

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

3 thoughts on “micro-story-saaj-bodol

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *