short-story-asukh

অসুখ
ভগীরথ মিশ্র




অন্ধকারটা ভালো লাগছে৷

বড় নিরাপদ আশ্রয়, কখনও কখনও, এই অন্ধকারে। ভীত কিংবা উলঙ্গ মানুষ স্বচ্ছন্দে নিজেকে লুকিয়ে ফেলতে পারে নিকষ অন্ধকারের মধ্যে৷

বেডরুমে আলো জ্বলছে৷ দীর্ঘ ট্রেন জার্নিতে ক্লান্ত বুবুন এই মুহূর্তে বুঝি ঘুমিয়ে কাদা হয়ে গিয়েছে নরম বিছানায়৷ তৃণা বোধকরি রকিং-চেয়ারে পিঠ এলিয়ে কোনও এক শক্ত ডিজাইন তুলছে উলের কাঁটায়৷

ব্যালকনির অন্ধকার পরিসরে আমি চুপটি করে বসে আছি৷

ঠিক বসে নেই, হাতে পায়ে, কনুইতে, পিঠে, জানুতে অবিরাম হাত বোলাচ্ছি৷

আমাদের পার্ক সার্কাস এলাকায় মশার দৌরাত্ম্যটা বেশি৷ অন্ধকারে মশাদের উল্লাস আরও বেড়ে যায়৷ মানুষকে অন্ধকারে পেলে ওরা আকণ্ঠ তৃষ্ণায় মৃগয়া শুরু করে৷ আমার খালি গায়ে ঝাঁকে ঝাঁকে মশা বসেছে৷ তারা হুল ফুটিয়ে আমার শরীরে অসংখ্য সুড়ঙ্গ তৈরির কাজে লিপ্ত৷

রাতের ব্যালকনি পৃথিবীর অন্যতম রহস্যময় স্থান৷ মনে হয় নিজের মধ্যে নিজে বসে আছি৷ মনে হয় মায়ের জরায়ুর মধ্যে কুণ্ডলি পাকিয়ে শুয়ে রয়েছি৷ মনে হয়…৷

রাতের অন্ধকার ব্যালকনি মশাদের কাছে স্বর্গরাজ্য হলেও ওই নিয়ে আমার কোনও সমস্যা ছিল না৷ কারণ, আমি জানি, মশারা যতই ঝাঁকে ঝাঁকে হুল ফোটাক আমার শরীরের যে কোনও অংশে, আমি তা তিলমাত্র বুঝতে পারব না৷ ইদানিং সত্যি সত্যি বুঝতে পারি নে তা৷

অথচ, আগে তো বুঝতাম এটা৷ আমার শৈশবে, কৈশোরে, প্রাক্-যৌবনে…৷ তখন তো একটা ইনজেক্‌শন ফুটলেই ব্যথা করত খুব৷ কিন্তু বেশ কিছুদিন আমার শরীরের চামড়ায় এই চেঞ্জটা এসেছে৷

ব্যাপারটা সর্বপ্রথম অনুভব করলাম গত বছরের তেইশে ফেব্রুয়ারি৷

ডালহাউসি পাড়ার একটি বিখ্যাত বহুজাতিক বেসরকারি ফার্মে সপ্তম কিংবা অষ্টম স্থানাধিকারী আমি, বেশ কড়া এক্সিকিউটিভ হিসেবে পরিচিত৷ আমার সর্বক্ষণের চিলনজর এড়িয়ে ফার্মের কোনও কর্মচারি ডিসিপ্লিনের ফাঁসটিকে তিলমাত্র ঢিলে করবার সুযোগ পায় না কখনোই৷ নিয়মের বাইরে একচুল বাড়তি সুবিধে নিয়ে ফেলতে পারে না কেউই৷ খোদ এম-ডি সাহেব যে সে জন্য আমাকে বড়ই নেকনজরে দেখেন, তা আমি জানি৷ যে কোনও দিন আমি তার পুরস্কার পেয়ে যেতে পারি৷ তো, সেই অফিসের ডেসপ্যাচ-ক্লার্ক দিবাকর দত্তর যদি চার-চারটি মেয়ে থাকে, একটিরও যদি বিয়ে না হয়, তবে তার বড় মেয়ের পাকা দেখার দিনে, এম-ডি সাহেব অফিস ইন্সপেক্ট করবেন জেনেও ওকে ছুটি দিতে হবে, স্রেফ একটিমাত্র কারণে যে, তার বড় মেয়ের বয়েস তিরিশ ছাড়িয়ে গেছে এবং এরপর আর তার বিয়েই হবে না। এমন হাস্যকর অনুনয় শুনে আমি যে কী করব ভেবে পাইনি ওইদিন৷ কারণ, একে তো আমি অফিসে ডিসিপ্লিনের ঊর্ধ্বে কোনও কিছুকেই স্থান দিইনে, তার ওপর আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, এই বাঙালি জাতটা ছুটি পেলে আর কিছুই চায় না৷

কাজেই স্ট্রেইট বলে দিলাম, ‘নো৷’

খুব স্পষ্ট, ঋজু উচ্চারণ ছিল আমার, তাও লোকটা টেবিলের উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে সমানে নাকে কাঁদতে লাগল৷ তাই দেখে আমার পিত্তি জ্বলে যাবার উপক্রম৷ লোকটাকে কী বলে বিদেয় করা সমীচীন হবে বুঝে পাচ্ছিলাম না৷ একে তো লোকটা যারপরনাই ভীতু, বিনয়ী, কাজেকর্মে একশোভাগ পরিশ্রমী, আর, ছুটিছাটা নেয় না বললেই চলে, তার ওপর আমার চেয়ে না-হোক বিশ-পঁচিশ বছরের বড় হবে৷

‘দ্যাটস্‌ ইয়ো প্রোব্লেম মি. ডাটা, কোম্পানি ক্যান’ট শেয়ার ইয়োর পারসোন্যাল ফিলিং৷ মোর ওভার, ডিসিপ্লিন ইজ ফার্স্ট প্রায়োরিটি টু দ্য অ্যাডমিনিস্ট্রেশন৷ সরি… আই ক্যান্ট স্যাংসন ইয়োর লিভ ফর দ্যাট ডে’ গোছের মিষ্টি কথায় কিছু বলে-টলে ভাগিয়ে দেব? নাকি খোদ এম-ডি সাহেবের অফিস-ইনস্পেক্শনের দিনে এমন বেয়াড়া বায়না ধরবার জন্য লোকটাকে আগাপাস্তলা ফায়ার করব? ভেবে পাচ্ছিলাম না প্রথমটায়৷ শেষ অবধি, ‘যে-মানুষ যে-ভাষা বোঝে, তার সঙ্গে সেই ভাষাতেই কথা বলা উচিত’, অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রেনিং নেবার সময়ে পাওয়া এই প্রাথমিক পাঠটাকে মান্যতা দিয়ে, ওইদিন লেফ্ট-এন্ড-রাইট ফায়ার করেছিলাম লোকটাকে ৷

ফলে, তেইশে ফেব্রুয়ারি, সেটা ছিল ছুটির দিন, আচমকা আমার পার্ক সার্কাসের সাজানো ফ্ল্যাটে এল ছলছল চোখে দিবাকর দত্ত ৷ এবং বসবার ঘরে, চারপাশটা একবার দেখে নিয়ে ঝুপ করে জড়িয়ে ধরল আমার ডান পা-খানা৷

‘দয়া করুন স্যার৷ কন্যাদায় বড় দায়৷’

প্রাথমিক হক্‌চকানিটা কেটে যেতেই আমি ঝট করে পা-টা সরিয়ে নিই৷ আর, ঠিক তখনই আবিষ্কার করি, পায়ের যে অঞ্চলটা জাপটে ধরেছিল দিবাকর, সেই অঞ্চলে তিলমাত্র সাড় নেই৷ তাই দেখে খুব তৃপ্তি পেয়েছিলাম সেদিন৷ বুঝেছিলাম, খাস সাহেবদের থেকে নেওয়া ম্যানেজমেন্ট ট্রেনিংটা তিলমাত্র বৃথা যায়নি৷ ওদের দেওয়া অনুভূতিহীনতার পাঠগুলো পুরোদমে কাজ করে চলেছে আমার মধ্যে৷ কিনা, অধস্তনদের এমনতরো সিলি আচরণে ঝানু অ্যাডমিনিস্ট্রেটরদের মনের কোনও দুর্বল জায়গা তো নয়ই, এমনকী শরীরের কোনও প্রত্যঙ্গেও তিলমাত্র সেন্‌সেশন হবে না৷

সেদিন ফ্ল্যাট থেকে প্রায় তাড়িয়েই দিয়েছিলাম দিবাকরকে৷ কিন্তু তার পর থেকে প্রশাসনিক তৃপ্তির বদলে একজাতের আতঙ্ক আমাকে গ্রাস করতে থাকে তিলতিল৷ আতঙ্কিত ভাবখানা প্রকট হতে থাকে দিন-দিন৷ কিনা, একটা মানুষ জাপটে ধরল আমার পা, আমি জানতেই পারলুম না?

অতঃপর, কেউ কারোর পা জড়িয়ে ধরলে, অনুভূতিটা উভয়ত কেমন হয়, ওই নিয়ে মনের মধ্যে গবেষণা জুড়ে দিই আমি৷

যে অন্যের পা’টি আঁকড়ে ধরে, তার মানসিক অনুভূতির কথা ঠিক বলতে পারিনে, তবে পায়ের অধিকারীটির নির্ঘাত এক ধরনের সুখানুভূতি হয়৷ কারণ সঙ্গে সঙ্গে পায়ের স্নায়ুমণ্ডলী সেই উত্তমর্ণতার খবরটি মগজ মারফৎ পাঠিয়ে দেয় অতৃপ্ত অহং-এর কাছে৷ এবং তাতে করে পায়ের মালিকটির নির্ঘাত বিপুল সুখানুভূতি ঘটে এবং যৎপরোনাস্তি নীলাভ স্বেদ ঝরে৷

কিন্তু ওইদিন, গত বছরের তেইশে ফেব্রুয়ারি তারিখে, আমার ক্ষেত্রে তেমন কিছুই ঘটল না কেন?

সেদিন সত্যি সত্যিই আমার পা-খানা জাপটে ধরেছিল তো দিবাকর? ওর আঙুলের ত্বকের সঙ্গে আমার পায়ের ত্বকের সংযোগ ঘটেছিল তো সত্যি সত্যি?

কথাটা ভাবতে ভাবতে ততক্ষণে আমার মধ্যে মৃদু কাঁপুনি শুরু হয়েছে৷ একটা সেমিনারের টুকরো টুকরো অংশ যেন ক্রমাগত বেজে চলেছে মগজের মধ্যে৷ ভেসে উঠেছে ডা. দে মুন্সীর ভরাট গলা, ‘ভয়টা ওই রোগকে নয়, ভয়টা চারপাশের মানুষজনকে নিয়ে, যারা রোগটা সেরে গেলেও কিছুতেই বিশ্বাস করতে চায় না, সেরেছে৷ এবং নানা প্রক্রিয়ায় ঘৃণা করতে থাকে ভূতপূর্ব রোগীকে৷ আজীবনকাল… প্রজন্ম ধরে৷ বাট্‌, অ্যাজ আ-ডক্টর, আমি বলব, প্রাইমারি স্টেজে ধরা পড়লে এ রোগ সেরে যায়৷ এই রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলি হল, শরীরের কোনও কোনও জায়গায়, প্রধানত আনকেয়ার্ড-ফর অংশগুলিতে ফ্যাকাসে স্পট পড়বে। জায়গাগুলো অসাড় হয়ে থাকবে, এবং ওই অসাড়তা ক্রমশ শরীরের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়বে৷ ক্রমশ কানের লতি ফুলতে থাকবে, নাকের চূড়া ভোঁতা হবে, হাতে-পায়ে রস জমবে, জ্বর আসবে মাঝে মাঝেই৷ আসলে, কুষ্ঠরোগ নিয়ে মানুষের আতঙ্কের মূল কারণ হল, সরাসরি সামনে এসে থাবা তুলে দাড়ায় না৷ সে আসে অতি সন্তর্পণে৷ নিঃশব্দে৷ শরীরের একেবারে অবহেলিত, অনালোকিত অংশে বাসা বাঁধে৷ প্রাথমিক স্তরে তার আগমনবার্তা তাই টেরই পায় না মানুষ৷’

আমি ডান পা-খানা ওপরে তুলি৷ গোড়ালি থেকে হাঁটু অবধি পুরো এলাকায় হাত বুলিয়ে অসাড় জায়গাটা খুঁটিয়ে পরীক্ষা করি, কোনও ফ্যাকাসে ছোপ রয়েছে কিনা৷

বিপন্ন মানুষের মানসিক অবস্থা সম্পর্কে আমার তেমন কোনও পূর্ব-ধারণা নেই৷ ভীষণ কোনও কৌতূহলও নেই৷ আটলাণ্টিকের মাঝখানে জাহাজখানা ডুবছে, থইথই জল আকাশের দিকে লক্ষ ফণা তুলে নাচছে, কিংবা দাউদাউ করে মাথার ওপর বাড়িখানা পুড়ছে, বাড়ির সমস্ত দরজা বাইরে থেকে বন্ধ, ভেতরে শিশুপুত্রকে কোলে নিয়ে সদ্য-প্রসূতি মা পাগলিনীর মতো বন্ধ দরজায় ঘা মারছে অবিরাম, তেমন কোনও বিপন্ন পরিস্থিতি আমার সামনে কখনো ঘটেনি৷ গৃহদাহের ঘটনা একটা ঘটেছিল বটে, তবে সেও আমার পরোক্ষ-দর্শন৷ ঘটেছিল একরাতে, আমাদের গাঁয়ে৷ আগুন লেগেছিল, গভীর রাতে শেখ জামালের কোঠা বাড়িতে৷ সারারাত ধরে পুড়েছিল বাড়িখানা৷

আমি তখন গাঁয়ের বাড়িতে ছিলাম৷ মাঝরাতে আর্তনাদ উঠল। আকাশে আগুনের লেলিহান শিখা দেখলুম দোতলার জানালা দিয়ে৷ সারা গ্রাম ঝেঁটিয়ে দৌড়াচ্ছিল আগুন নেভাতে৷ একবার মনে হয়েছিল যাই৷ পরমুহূর্তে মনে হল, আমি আর গিয়ে কী করব? শহরে থেকে থেকে আমার তো সেই আগেকার দামাল অভ্যেসগুলো আর নেই৷ তাছাড়া, সামনে আমার পরীক্ষা৷

কথাগুলো নিয়ে ভাবতে ভাবতে সহসা আমার মনে পড়ে গেল বছরটাক আগের আর এক সন্ধের কথা৷ আমাদের ফ্ল্যাটের উল্টোদিকেই একটা ওষুধের দোকান৷ পাড়ার এক্কেবারে শেষের বাড়ির ছেলেটা, প্রবাল না কী যেন নাম, একটা ওষুধ কিনে ফিরছিল বাড়ির দিকে৷ এমনি সময়ে জনা চার-পাঁচ ছোকরা, ‘এই তো রে, মাল তো এখানে’ বলেই ঘিরে ধরল ওকে৷ ছেলেটার হাতে ওষুধের শিশি, চোখে-মুখে ভয়, আতঙ্ক৷

ওরা বলল, ‘চল্ বে, কবরডাঙার ক্লাবে৷ বাতচিৎ আছে৷’

ছেলেটা মিন্‌মিনে গলায় বলল, ‘বাবার ভীষণ বাড়াবাড়ি, ডাক্তার বসে রয়েছে ঘরে, ওষুধটা দিয়ে আসি৷’

‘ওসব কথা ঢের শুনেছি৷ চল্‌, চল্‌, নেপালদা তোর জন্য বসে রয়েছে৷’ ছোকরাগুলো ওকে ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে যায় কবরডাঙার দিকে৷

তারপর… একটা বছর কেটে গেল, ছেলেটা ফিরেই আসেনি৷

সেদিন অন্ধকার ব্যালকনিতে বসে নিঃশব্দে দেখছিলুম দৃশ্যখানা৷ ছেলেটাকে নিয়ে ওরা এক সময় মিলিয়ে গেল মোড়ের মাথায়৷ ব্যালকনির ধারে গিয়ে দাঁড়াতে পারতুম৷ ছেলেগুলোর বয়েস সতেরো-আঠারোর বেশি নয়৷ একটু ধমকধামকও দিতে পারতুম৷ নিদেন প্রবালের বাড়িতে ফোন করে খবরটা অন্তত দেওয়া যেত৷ কিন্তু আমি বসেই রইলুম৷ আজকের দিনে প্রতিটি ব্যাপারে হামলে পড়াটা এক ধরনের বোকামো৷ কে জানে ছেলেটাকে নিয়ে ওরা কী করবে! তেমন কিছু ঘটলে আমি প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে ওদের টার্গেট হয়ে যাব৷ তারপর একদিন বাগে পেলেই ওরা আমাকে নিঃশব্দে তুলে নিয়ে যাবে ওদের কবরডাঙার ক্লাবে, তৃণা টেরও পাবে না৷

সেদিন ঝুঁকি নিতে না চাইলেও ছবিটা তো এখনও ভাসে৷ বিপন্ন মানুষের নিজের হাতে আঁকা ছবি৷ আটলাণ্টিকের মধ্যিখানে ডুবন্ত জাহাজ, জামাল শেখের স্ত্রী-পুত্র, কিংবা প্রবাল নামে ছেলেটার মুখ…৷

তবে এসব আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভুলে যেতে পারি, এটাই বাঁচোয়া৷




বর্ধন সাহেবের বাংলোয় আমার জোর তলব৷

মাঝে মাঝেই আসে৷ সাহেবের নয়, মেমসাহেবের তলব৷

অফিসের ছুটির পর গেলুম৷ বিশাল লাউঞ্জের মাঝখানে ভারী ভারী সোফা-কোচ পাতা৷ পায়ের তলায় পুরু কার্পেট৷

চা-বিস্কিট দিয়ে গেল৷ বেশ দামি বিস্কিট৷ আমরা বাড়িতে এমনটা খাইনে৷

এমন সময় বসের বছর-পাঁচেকের ছেলেটি নাচতে নাচতে এসে দাঁড়াল৷ বেশ মোটাসোটা আর ভীষণ ফর্সা৷ দেখলেই, প্রতিবারেই, আমার বাৎসল্যরস বেড়ে যায়৷ আদর করতে ইচ্ছে করে৷

বাচ্চাটা বলে ওঠে, ‘বাসু-আংকল্‌, আমরা কখন শপিং-এ যাব?’

বর্ধনসাহেব গেছেন গল্‌ফ-ক্লাবে খেলতে৷ মেমসাহেব সাজগোজ করছেন, আমাকে নিয়ে শপিং-এ বেরোবেন৷

মাঝে মাঝেই এমনটা হয়৷ সেদিন রাত দশটার আগে বাড়ি ফিরতে পারি নে৷ পার্ক-সার্কাসের তিন-কামরার দু’হাজারি ফ্ল্যাটে বুবুনকে নিয়ে একলাটি থাকে তৃণা, বিমর্ষ হয়, নিঃসঙ্গ, ভয় পায়, রুষ্ট হয়৷ দেরি হওয়ার কারণটা লুকোতে চাইনে তৃ্ণার কাছে৷ তৃণা বিদ্ধ হয়, ক্ষুব্ধ অভিমানে ফুঁসে ওঠে, কথা বন্ধ করে দেয় সে রাতে৷ ওকে আমি বোঝাতে পারিনে যে এটা দরকার৷ আসলে, বাঙালি মেয়েগুলো বড়ই অবুঝ৷ এদিকে ভীষণ অ্যামবিশাস, আবার বাড়াবাড়ি রকমের ইমোশন্যাল৷ এমন করলে চলে?

উপস্থিত বস-এর বাচ্চাটার দিকে হেসে বলি, ‘যাব, মাষ্টার রনি, মাম্ তৈরি হলেই যাব৷ এই নাও, বিস্কিট খাও৷’

ভীষণ নাক কুঁচকে মাথা দোলায় রনি, ‘এ বিস্কিট আমি খাইনে৷ এ বিস্কিট তো জিম খায়৷’

আমি দু’আঙুলের ডগায় বিস্কিটখানা ধরেছিলুম৷ তখনই টের পাই, দুটো আঙুল দিয়ে বিস্কিটখানা ধরে রয়েছি বটে, কিন্তু আঙুলের সঙ্গে বিস্কিটের কোনও সংযোগ ঘটেছে বলে মনে হচ্ছে না৷ কোনও অনুভূতিই পাচ্ছিনে৷ মনে হচ্ছে, আমার দু’আঙুলের ফাঁকে কোনও বস্তুই নেই৷

কী করে এটা হল? কবে হল? আমি থরথর করে কাঁপতে থাকি৷ ওই দুটো আঙুলে কলম চেপে ধরে আমি তো রোজ লেখালেখি করি৷ তখন তো খেয়াল হয়নি ব্যাপারটা৷ আসলে, লেখার সময় আঙুল দিয়ে কলমটাকে বাগিয়ে ধরা হয় বটে, কিন্তু তখন আসল কাজ মগজের৷ আঙুলের অনুভূতি-টুতির কথা তখন মনেই আসে না৷

তৃ্ণাকে এসব কথা বলা যায় না, কাউকেই বলা যায় না৷ ওরা সকলেই আমাকে স্বাস্থ্যবান নীরোগ বলেই জানে৷ এককালে আমি খুব ভালো স্পোর্টসম্যান ছিলুম৷ অনেক শীল্ড-কাপ-মেডেল এখনও আমাদের পুতুল সাজানোর ক্যাবিনেটে শোভা পায়৷ ছাত্রজীবনে রোজ ব্যায়াম করেছি, ডাম্বেল ভেঁজেছি৷ তখন আমার শরীরের প্রতিটি পেশী, শিরা-উপশিরা, সতেজ ও মজবুত ছিল৷ আমার বন্ধুরা এসব জানে৷ তৃণাও শুনেছে এসব গল্প৷ ওরা আমাকে অন্য ধাতের মানুষ বলেই জানে৷ দেহে-মনে এক নিটোল সুস্থ মানুষ৷ সেই কারণেই শরীরের অসাড় জায়গাগুলো নিয়ে আমার ব্যক্তিগত আতঙ্কগুলো ওদের জানানো চলে না৷ রণক্ষেত্রে একক সৈনিকের মতো দশদিকের আক্রমণ একলাকেই সামাল দিতে হয়৷ এই নিদারুণ ব্যূহের মধ্যে অন্য কাউকে, বিশেষ করে তৃণাকে, নিতে চাইনে আমি৷ ও এসবের বাইরেই থাক৷




তৃণার সাড়াশব্দ পাচ্ছিনে৷ ঘুমিয়ে পড়ল নাকি? উলের ডিজাইনটা নিখুঁত হল তো? উঠে দাঁড়ালুম৷ বসবার ঘরে গিয়ে র‍্যাকের ওপর সিগারেটের প্যাকেটটা নিতে গিয়েই হাত ঠেকল ফাইলটার গায়ে৷ নিরুপম বিশ্বাসের বিরুদ্ধে তদন্তের ফাইল৷ হলুদ রঙের ফাইলখানায় হাত ছুঁইয়ে আমি দু’দণ্ড স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি৷ পিঠে কে যেন মৃদু চাপড়ায়৷ চাপড়ানিটা বড় ভালো লাগে৷ নিরুপম বিশ্বাসের মুখখানা স্মৃতির পর্দায় ভেসে ওঠে৷

নিরুপম আমার থেকে বছর-দুয়েকের ছোটই হবে৷ ঋজু শরীর, চোখে-মুখে প্রত্যয়৷ এক কলেজেই আমি ছিলুম দু’ক্লাস উঁচুতে৷ আমার কলেজ জীবনের সেই তেজ দেখে সে আমার ভক্ত হয়ে উঠেছিল৷

সেটা টের পেলুম সাতাত্তরের একুশে জুন৷ ও সুপারভাইজার হিসেবে আমার কাছে জয়েন করতে এসেই চিনে ফেলল আমায়৷ গদগদ গলায় বলল, ‘আপনাকে কি ভোলা যায়? আপনিই তো হোস্টেলের রেশনের চিনি ব্ল্যাকে বেচে দেবার জন্য সুপারকে বারো ঘণ্টা…৷’

নিরুপমের সেদিনের কথাগুলো মোটেই খোসামুদি ছিল না৷ কারণ, নিরুপম বিশ্বাসরা এ যুগেও সেই বিরল জাতের মানুষ, যারা কোনও কিছুর জন্যই নিজেদের বিক্রি করে না৷

সেই তেজই ওর কাল হয়েছে৷ ওর ব্যাচের সব সুপারভাইজারই দু’ধাপ উঠে গিয়েছে৷ ও যেখানে ছিল, সেখানেই রয়ে গেছে৷ আশ্চর্যের বিষয় হল, সেখান থেকেই ও আমাকে এখনও ভীষণ শ্রদ্ধা করে৷

নিরুপম যে একটা বড়সড় বিপদে পড়বে, এটা জানতুম৷ আগে বুঝতুম না, এখন বুঝি, মানুষকে কোনও না কোনও একটা সময়ে এসে একটু-আধটু অ্যাডজাস্ট করতেই হয়৷ মানুষের বিবর্তনের ইতিহাসও সেই কথাই বলে৷ নিরুপমকে এসব বোঝানোর চেষ্টাও করিনি কোনোদিন৷ এই সমাজে, সংসারে তার সঙ্গে বর্তমানে আমার নিদারুণ ফারাক৷ বোঝালেও সে বুঝত না, আমি জানি৷

বর্ধন সাহেব সাব-অর্ডিনেটদের কাউকে টেলিফোন করলে, কথা শেষ করেই আচমকা রেখে দেন৷ অপরপক্ষ চমকে ওঠে৷ ক্ষুব্ধ, অপমানিত বোধ করে৷ কিন্তু কিছুই করবার নেই, বর্ধন সাহেবের ফোন করবার ধরনটাই এমন৷ নিরুপম নাকি তেমন অবস্থায় পড়ে ফের ফোন করেছিল সাহেবকে, ‘লাইনটা কেটে গিয়েছিল স্যার৷ অপারেটর বলল, আপনি নাকি কেটে দিয়েছেন৷ আমি বললাম, তা কী করে হয়? কথাই শেষ হয়নি৷ তাছাড়া আমাদের সাহেব পাক্কা আট বছর বিলেতে ছিলেন, তিনি ওরকম করতেই পারেন না৷ তিনি এটিকেট জানেন৷’

হপ্তাটাক বাদে বর্ধন সাহেবের ঘরে আমার তলব পড়েছিল৷ নিরুপমের নামে দুর্নীতির একগাদা অভিযোগ৷ আমাকেই তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে হবে৷

তদন্তের রিপোর্টটা কেমন হবে, আমি ততক্ষণে আন্দাজ করে ফেলেছি৷ চলে আসার আগে আমার পিঠে একটা আহ্লাদী চাপড় মারেন বর্ধন সাহেব, ‘য়্যু আর দ্য রাইট ম্যান ফর্ দিস জব৷’

গেল-মাসে আমার মাসতুতো ভাই এসেছিল৷ এখানকার কলেজে ভর্তি হতে চায়৷ মেসোর কাছে আমি অনেক বিষয়ে ঋণী৷ তিনি সম্প্রতি মারা গেছেন৷ ভয় হল, ভর্তি হতে পারলে, আমার কোয়ার্টারেই থাকতে চাইবে নিশ্চয়ই৷ মাসি ইনিয়ে বিনিয়ে চিঠি লিখবেন৷ বড় শহরে থাকবার এই এক জ্বালা৷ আত্মীয় পরিজন সবাই মুখিয়ে থাকে৷ তৃণা শোনা মাত্রই গম্ভীর হয়ে গিয়েছিল৷

সারাদিন একটা শীতল বাতাবরণ বজায় রেখে মাসতুতো ভাইকে বলে দিয়েছি, ‘ফর্ম ফিল-আপ করে যাও৷ নাম উঠলে জানাব৷’

অফিস বেরোনোর মুখে তৃণা শুকনো মুখে বলল, ‘ও এখানে থেকে পড়বে নাকি?’

বলি, ‘দূর, দূর, ও যা নম্বর পেয়েছে, কলকাতার কোনও কলেজেই চান্স পাবে না৷’

আমাদের একমাত্র ছেলে বুবুন৷ সবাই বলল, ‘মিশনে দাও৷ পড়াশোনাটা ভালো হবে, ক্যারেক্টারও তৈরি হবে৷ মিশনের ছেলেদের কি ক্যারেক্টার ভালো হয়? জানিনে৷ মিশনের ছেলেগুলো তাদের ভালো ক্যারেক্টার নিয়ে কোথায় যায়, সে খোঁজও রাখিনে৷ তবুও সবাইয়ের পীড়াপীড়িতে আর তৃণার জেদে বুবুনকে পুরুলিয়ার মিশনে ভর্তি করে দিয়েছি৷ সে ওখানে ভালোই আছে৷ পড়ে, খেলে, দু’বেলা প্রার্থনা করে, স্বামীজীদের কাছে ত্যাগ শেখে, আমি মাসে মাসে টাকা পাঠিয়েই খালাস৷

নিরুপমের তদন্তের রিপোর্টখানা লিখতে লিখতে বেশ রাত হয়েছিল সেদিন৷ সবদিক থেকে বেশ বেধেছেঁদেই লিখতে হল৷ নিরুপম যাতে এই ফাঁস কেটে বেরোতে না পারে তেমনভাবেই লিখেছিলাম রিপোর্টটা৷

ও ঘরে তৃণা শুয়ে শুয়ে অঘোরে ঘুমোচ্ছে৷ আমি বাথরুমে গেলুম৷ খুব একটা তেষ্টা নেই, তাও জল খেলুম৷ তারপর শোবার ঘরে গেলুম৷ অকারণে আয়নার সামনে দাড়ালুম৷ সারা মুখের মধ্যে আমার সবচেয়ে গর্ব করবার বস্তুটি হল নাক৷ অমন খাড়াই ধারাল নাক সচরাচর বিরল৷ বন্ধুরা চিরকালই বলত, আমার ব্যক্তিত্বের বারোআনাই নাকি কেন্দ্রীভূত রয়েছে ওই নাকে৷ তৃণাও স্বীকার করে, এমন তীক্ষ্ন নাকের অধিকারী কোনও পুরুষকে যে কোনও মেয়ের ভালো লাগবে৷ ধারাল নাকের মানুষেরা নাকি বুদ্ধিমান, স্বাধীনচেতা হয়৷ তারা পৃথিবীতে নাকি মাথা উঁচু করে চলতে ভালোবাসে৷

সারা মুখে ক্রিম ঘষতে ঘষতে নাকের কাছটিতে এসে আচমকা থেমে যায় হাত৷ নাকটাকে তো মোটেই ধারাল লাগছে না৷ চারপাশে মাংস জমেছে, চুড়োটাকেও কেমন ভোঁতা ভোঁতা লাগছে৷ আমি ভুল দেখছিনে তো! আমি কি পাগল হয়ে যাচ্ছি! আমার শরীরে কি সত্যি সত্যি…!

আমি ডুকরে কেঁদে উঠি৷ প্রাণপণে মনে করবার চেষ্টা করি আমার ধারাল নাক ভোঁতা হয়ে যাওয়া, শরীরের স্থানে স্থানে অসাড়তা, ঠিক কবে থেকে শুরু হয়েছে? তেইশে ফেব্রুয়ারি? প্রবালের মৃত্যুর দিনে? জামালের ঘর পোড়ার রাতে, যেদিন মাসতুতো ভাইকে বিদেয় করে দিলুম, যেদিন নিরুপমের বিরুদ্ধে তদন্ত-রিপোর্টটা লিখলুম? নাকি তারও আগে, অনেক অনেক আগে?

বুবুনের স্কুলের ছুটি হয়েছে৷ আজই ফিরল সে৷ আমরা দু’জনে ওকে রিসিভ করতে হাওড়া স্টেশনে গিয়েছিলুম৷ তখনও ট্রেন আসতে দেরি আছে৷ প্ল্যাটফর্মের কলে মুখ-হাত ধুয়ে নিই৷ তৃণা আর আমি পাশাপাশি স্টলে কফি খাই৷ ইতস্তত পায়চারি করি৷

বুবুন নামল বন্ধুদের সঙ্গে৷ ছুটে এসে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করল, তারপর জড়িয়ে ধরল আমাকে৷ ওর মাথাটা ঠেকল আমার বুকের মাঝখানে৷ সেই মুহূর্তে টের পেলুম, আমার শরীরের নিচের দিকটা, একেবারে বুক অবধি অসাড়৷ অথচ এমন একদিন ছিল, যখন কোনো কল্যাণীয় পায়ে হাত ছোঁয়ালেই সেই সংবাদ কোনও এক রহস্যময় পথ বেয়ে সরাসরি বুকে পৌঁছে যেত৷ অথচ, সেদিন, ওই মুহূর্তে, আমার শরীরের অর্ধেক জুড়ে লেপটে রয়েছে আত্মজর শরীর, কিন্তু আমার মনে হচ্ছে, যা আঁকড়ে রয়েছে আমার শরীর, তা বুবুনের ছায়ামাত্র৷ ছায়ার সঙ্গে ছায়ার মিলনে কোনও অনুভূতি জাগে না৷

কোথায় যেন ঝুরঝুর করে মাটি খসে খসে পড়ছে৷ টুপটাপ শব্দে অবিরাম জল পড়ছে কোথাও৷ কুট্‌কুট্‌ করে কিছু কাটছে ইঁদুর জাতীয় কোনও প্রাণী৷ দূরে যেন একপাল কুকুর ডেকে চলেছে অবিরাম৷ অন্ধকার ব্যালকনির দেওয়ালে একটা টিক্‌টিকি সম্মোহনী দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে একটা পোকার দিকে৷ পোকাটা স্থির…৷ পাশের বাড়ির পাঁচিলে একজোড়া বেড়াল কর্কশ গলায় ঝগড়া বাধিয়েছে৷

পাশের ঘরে, এই মুহূর্তে ঘুমিয়ে রয়েছে তৃণা৷ আমি নিকষ অন্ধকার ব্যালকনিতে রাত জাগছি৷ রাত বাড়ছে৷ গাঢ় হচ্ছে৷ উল্টোদিকের ফুটপাতে একটা কালো রঙের ষাঁড় শুয়ে শুয়ে অলস-চোখে জাবর কেটে চলেছে৷ এই মাঝরাতেও রাস্তার কলে সর্বাঙ্গ উদোম করে চান করছে এক ভিখিরি…৷

দেখতে দেখতে আমার অবগাহন-তৃষ্ণা প্রবল থেকে প্রবলতর হয়৷ দৃশ্যখানা ধীরে ধীরে সংক্রামিত হতে থাকে আমার মধ্যে৷ আমি কি চান করতে যাব এখন? শীতল জলের সংস্পর্শে এলে নাকি ক্লান্ত দেহকোষগুলি সজীব সতেজ হয়ে ওঠে৷ সর্বাঙ্গ ডুবিয়ে অবগাহন স্নান করতে পারলেই কি আবার সাড় ফিরে আসবে আমার শরীরের নষ্ট প্রত্যঙ্গগুলিতে?

ও ঘরে গিয়ে নিরুপমের ফাইলটা নিয়ে ফিরে এলুম ব্যালকনিতে৷ আলো জ্বালিয়ে আবার নিরুপমের ফাইলখানা খুলে দেখতে লাগলুম৷ রিপোর্টখানাকে আবার নতুন করে লিখলুম৷ বেশ বাঁধুনি দিয়ে লিখতে গিয়ে অনেকখানি সময় লাগল৷ নিরুপমটা এ যাত্রা বেঁচে যাবে৷ মাসতুতো ভাইকে একখানা চিঠি লিখলুম৷ তারপর… গভীর রাত অবধি এই ব্যালকনিতেই বসে রয়েছি৷




আমার দীর্ঘকালের বিশ্বাস, মশার মতো অকৃতজ্ঞ প্রাণী দুনিয়ায় দুটি নেই৷ যার রক্তে প্রাণ ধারণ করে, তাকেই হুলের জ্বালায় অস্থির করে তোলে৷ কিন্তু আজ, এই মুহূর্তে, মনে হচ্ছে, আমার এই ধারণা ঠিক নয়৷ এই মুহূর্তে মশাগুলো মহানন্দে হুল ফোঁটাচ্ছে আমার সর্বাঙ্গে৷ আমি চমকে চমকে শিউরে শিউরে উঠছি৷ খুশির জোয়ারে ভাসছি যেন৷ মশককুলের প্রতি এক ধরনের গাঢ় কৃতজ্ঞতায় দ্রব হচ্ছি৷ আহা, হুল ফোটালে কী আশ্চর্য যন্ত্রণাময় অনুভূতি! আহা! আমি কায়মনোবাক্যে কামনা করছি, অন্ধকার ব্যালকনিতে ঝাঁকে ঝাঁকে মশা আমার সারা শরীর জুড়ে বসুক, হুল ফোটাক, রক্ত খাক্‌, আমার যন্ত্রণা উত্তরোত্তর বাড়ুক৷ আমি যেন ওদের সামনে আমার অনাবৃত শরীরটিকে নৈবেদ্যের মতো সাজিয়ে বসে আছি৷ হুলের দংশনজনিত যন্ত্রণা তো কেবল যন্ত্রণাই নয়, সর্বাঙ্গে সাড় ফিরে আসার অভিজ্ঞানও সেটা৷

রাত আরও গভীর হলে আমি ওই রাস্তার ভিখিরিটার মতো উদোম হয়ে স্নান করব আজ৷

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *