short-story-lal-capsul

লাল ক্যাপসুল
কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়


ডক্টর পৃথা সিনহা মুখ তুলে একবার আমার দিকে চাইলেন। ডাক্তার ম্যাডামের দৃষ্টিটা আমার কীরকম শূন্য মনে হল। হয়তো আমার বিষয়টা ছেড়ে অন্য কিছু ভাবছেন। শহরের নামকরা ডাক্তার। যেমন নাম তেমন ‘ফিজ’। সেই টাকা নিয়ে উনি সময় দিয়েছেন। তারপর এরকম অপেশাদার হন কীভাবে? যথাযথ মূল্য নিয়ে আমাকে উল্টোদিকে বসিয়ে উনি অন্য কিছু ভাবছেন।

ডাক্তার ম্যাডামের সম্বিত ফেরাতে গলাটা অল্প খাঁকরালাম। ম্যাডাম মাথাটা নামিয়ে আমার রিপোর্টগুলো আবার দেখতে আরম্ভ করলেন। কাঁচাপাকা লম্বা চিকচিকে চুল। এককালে নিশ্চয়ই খুবই সুন্দরী ছিলেন। এখন প্রৌঢ় বয়সেও যথেষ্ট রূপ সচেতন। যত্ন করে পরিচর্যা করা চেহারায় চাকচিক্য আছে। এবং মহিলা বলেই বোধহয় ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় সজাগ। মাথা নামিয়ে আমার কাগজপত্তরগুলো দেখতে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনার সঙ্গে কেউ আসেনি?’

‘কেউ মানে?’

‘মানে বাড়ির লোক।’

আমি চুপ করে থাকলাম। আশ্চর্য! প্রথমবার তো বলেছিলাম সব কথা। নিজের সই করা প্রেসক্রিপশনে লেখা আছে আমার কেস হিস্ট্রি।

আমার উত্তর না পেয়ে ম্যাডাম আবার মুখটা তুললেন, ‘কেউ আসেনি না?’

‘আপনি সেটা খুব ভালো করেই জানেন। কেউ এলে কি আপনার সুবিধা হত, নাকি…’

কথাটা অসমাপ্ত রেখে আমি ম্যাডামের চোখের দিকে তাকিয়ে তির্যক হাসলাম। ম্যাডাম বোধহয় বুঝতে পারছিলেন না কীভাবে প্রসঙ্গের অবতারনা করবেন। গত একমাসে আমার শরীরের অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে। আরও অন্য যে ডাক্তারদের আমি দেখাচ্ছি, তাদের প্রেসক্রিপশন রিপোর্ট সব কিছু আমি এনেছি। সে সবই ম্যাডামের টেবিলে। আমাকে একা কিভাবে উনি বলবেন, সেই কাজটাই আমি সহজ করে দিলাম, ‘পৃথিবীতে সবার কি বাড়ির লোক থাকে? এই কথাটা আপনাকে আগেরবারও বলেছিলাম। আপনি আমাকে অনেক প্রশ্ন করে খুঁটিনাটি জেনেছিলেন। ভুলে গিয়েছেন হয়তো।’

শ্লেষ মাখানো উত্তরটা খানিকটা হেঁয়ালির মতো। নামজাদা ডাক্তার নিশ্চয়ই আশা করেন না ওঁর সঙ্গে কোনও রোগী এরকম হেঁয়ালি করবে। বিশেষ করে আমার মতো মারণ রোগ বসানো শরীর নিয়ে। উনি কী ভাবছেন? আমি ওঁকে ভগবান মনে করছি, হাতজোড় করে থর থর করে কাঁপতে কাঁপতে কাতর আর্তি জানব, ‘প্লিজ আমাকে বাঁচান। যত টাকা লাগে দেব। শুধু আমাকে বাঁচান…’

ম্যাডাম বললেন, ‘কী আশ্চর্য? বাড়ির লোক না থাকুক, বন্ধুবান্ধব পরিচিত কাউকে নিয়ে আসবেন তো! এই অবস্থায় একা একা ঘোরাঘুরি করছেন।’

‘আহা, কোথা থেকে আনব? যদি কেউ না থাকে।’

ম্যাডাম চুপ করে গেলেন। আসলে কিছু কথা স্বাভাবিক গলায় বলা যায় না। পরিস্থিতি বুঝে গলা এবং পরিবেশ দুটোকেই গম্ভীর করে তুলতে হয়। নামি ডাক্তারের চেম্বারে অবশ্য পরিবেশ গম্ভীরই থাকে। আমি শুধু সেই পরিবেশটা হালকা করার দায়িত্ব নিলাম, ‘দেখুন ডক্টর ম্যাডাম নতুন করে আপনার কাছে আমার কিছু জানার নেই। আমার কী হয়েছে আমি জানি। আমি জানি আমি আর বেশিদিন বাঁচব না। এটাই একমাত্র সত্যি।’

‘না এভাবে আমি বলতে পারি না। অস্বীকার করছি না, আপনার অবস্থাটা বেশ জটিল। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞান…’

ম্যাডামকে থামিয়ে বললাম, ‘সোজা কথায় যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আশ, এটাই আপনি বলতে চাইছেন তো?’

ম্যাডাম অবাক চোখে আমার দিকে তাকালেন। এই যে আমি বলছি, নতুন করে ওঁর কাছে আমার কিছু জানার নেই, সেই আমি শরীরের এই অবস্থা নিয়ে পাক্কা আড়াই ঘণ্টা চেম্বারের বাইরে অপেক্ষা করেছি। ব্যস্ত নামি ডাক্তার নিজে এসেছেন সোয়া এক ঘণ্টা দেরিতে এবং এই দেরি হওয়া নিয়ে অপেক্ষমান রোগীদের আমি কোনও অভিযোগ শুনিনি। বড় ডাক্তার মানে অপেক্ষা করতেই হবে, এটা মেনে নেওয়াই দস্তুর। তারপরে প্রথম রোগী চেম্বারে ঢোকার সময় থেকে হিসাব করে দেখেছি উনি একজন রোগীর পেছনে গড়ে বারো মিনিট করে সময় দেন। সুতরাং যতক্ষণ চেম্বারে ভেতর থাকেন, বৃথা সময় নষ্ট করেন না। আমিও ওঁর মূল্যবান সময় নষ্ট করতে চাই না। আমি এসেছি একটা বিশেষ প্রয়োজনে। আর সময় নষ্ট না করে এবার সেটা বলা উচিত। তবে সামান্য ভূমিকা দিয়ে বলতে হবে।

‘দেখুন যতদিন আমি সুস্থ ছিলাম, আমি খুব ভিতু ভিতু প্রকৃতির ছিলাম। আমার নিজের ব্যক্তিত্ব বলে কিছু ছিল না। কিন্তু এই মারণ রোগটা আমাকে সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছে। বিশেষত গত একমাসে আমি একটা নতুন ব্যক্তিত্ব পেয়েছি। আগে আমার ভেতরে ফুটতে থাকা কথাগুলো কিছুতেই মুখে বলতে পারতাম না। এখন জীবনের এক্সপায়ারি ডেটের আন্দাজ পেয়ে গিয়েছি। তাই খোলাখুলিই বরং কথা বলা যাক। আপনিও বলুন, আমিও বলব।’

ম্যাডাম কী বুঝলেন জানি না। তবে বলতে আরম্ভ করলেন, ‘বেশ, খোলাখুলিই বলছি। সব রিপোর্ট দেখে যা বুঝছি, আপনার চিকিৎসা ঠিকমতোই হচ্ছে। কিন্তু রোগটা ক্রমশ ছড়িয়ে আয়ত্তের বাইরে চলে যাচ্ছে। যাঁরা আপনাকে দেখছেন, যথেষ্ট সিনিয়র অঙ্কোলজিস্ট। ওগুলো ফলো করুন। আমি যে ওষুধগুলো গতবারে প্রেসক্রাইব করেছিলাম, একটু বদলে দিচ্ছি।’

ম্যাডাম খসখস করে মনোযোগ দিয়ে প্রেসক্রিপশন লিখতে থাকলেন।

‘ওষুধ বদলে দিচ্ছেন কেন?’

ম্যাডাম এবার স্পষ্টত বিরক্ত হলেন, ‘আপনি আমাকে কনসাল্ট করতে এসেছেন। অন্য যে ওষুধগুলো চলছে তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমি অ্যাডভাইস দিচ্ছি যাতে আপনার কষ্টটা একটু কম হয়। এরপর আপনি আমার প্রেসক্রিপশন ফলো করবেন কিনা, আপনার সিদ্ধান্ত।’

‘বেশ। কতগুলো ওষুধ লিখলেন জানতে পারি কি?’

প্রেসক্রিপশন লেখা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ম্যাডাম কোনও উত্তর দিলেন না। সই করে প্রেসক্রিপশনটা বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, ‘বাইরে রিসেপসনিস্টকে দেখান। ও ওষুধগুলো সব বুঝিয়ে দেবে।’

প্রেসক্রিপশনের ওপর চোখ বুলিয়ে বললাম, ‘ছাব্বিশ। কিন্তু হওয়া উচিত সাতাশ। আর আপনি নেক্সট রিভিউ ডেটটাও কিছু লেখেননি।’

‘মানে?’

‘আপনি তিনটে ওষুধ লিখেছেন। গতবারও তিনটেই লিখেছিলেন। অর্থাৎ অন্য ডাক্তারদের যা ওষুধ খাই, তার সঙ্গে আপনার ওষুধ যোগ করলে সংখ্যাটা হচ্ছে ছাব্বিশ। কিন্তু আমি সাতাশটা ওষুধ খাই।’

‘এত ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কী বলতে চাইছেন আপনি? বাইরে কিন্তু অনেক রোগী অপেক্ষা করছেন।’

‘আপনি শহরের অন্যতম ব্যস্ত ডাক্তার। কত কত রোগী দেখছেন রোজ। অত কি মনে রাখা সম্ভব? বিশেষত যে ওষুধ প্রেসক্রিপশনে লেখা নেই।’

ম্যাডাম কড়া চোখে আমার দিকে তাকালেন। আমিও ম্যাডামের চোখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললাম, ‘দেখছেন তো, প্রমাণ দিতে পারছি কিনা যে গত একমাসে আমার ব্যক্তিত্ব বদলে গিয়েছে। আপনার চোখের দিকে চোখ রেখে কথা বলতে পারছি। সত্যি কথা বলতে আপনার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকাটা বেশ উপভোগ করছি। সুন্দর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে, প্রেমে পড়তে কার না ইচ্ছে করে বলুন।’

‘বেরিয়ে যান। আই সে গেট আউট রাইট নাও। আমাকে ফারদার স্টেপস নিতে বাধ্য করবেন না।’

ঘড়ি দেখলাম। ঠান্ডা মাথায় ধীরেসুস্থে বলতে আরম্ভ করলাম, ‘পুরো ফিজ নিয়ে আপনি গড়ে বারো মিনিট প্রত্যেক রোগিকে সময় দেন। আমি সাড়ে ন‘মিনিট আপনার চেম্বারে রয়েছি। সুতরাং ধরে নিতেই পারি আরও আড়াই মিনিট ন্যায্য সময় আমার পাওনা আছে। কথা দিচ্ছি আর দু‘মিনিটের বেশি সময় আমি নেব না। এই দু‘মিনিটে আপনাকে একটা ছোট্ট গল্প শোনাব। আপনি আমাকে গতবার আপনার ড্রয়ার থেকে একটা শিশি দিয়েছিলেন। তার মধ্যে তিরিশটা লাল ক্যাপসুল ছিল। শিশির গায়ে ওষুধের কোনও নাম লেখা ছিল না। বলেছিলেন, ওষুধ কোম্পানি আপনাকে ফ্রি স্যাম্পেল দিয়ে গিয়েছে। আমি কোনও প্রশ্ন করিনি। একমাস আগে তখন তো আমার সেই ভিতু ভিতু ব্যক্তিত্ব। প্রশ্ন করতে পারিনি কেন ওই ওষুধের নাম প্রেসক্রিপশনে লেখা নেই? শুধু আপনার নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে মেনে গিয়েছি। রোজ রাত্রি ন‘টায় নিয়ম করে একটা করে লাল ক্যাপসুল খেতাম।’

ম্যাডাম টেবিলের ওপর রাখা জলের গ্লাসটা তুলে ঢক ঢক করে জল খেতে লাগলেন। আমি সময় দিলাম। তারপর আবার বলতে শুরু করলাম, ‘ওই লাল ক্যাপসুলটা খাওয়ার পর থেকে একটা অদ্ভুত ব্যাপার হত জানেন। তার পরের এক ঘণ্টা আমার স্মৃতি থেকে সম্পূর্ণ মুছে যেত। কী করেছি তার এক ফোঁটাও কিছু মনে নেই। তবে এক ঘণ্টা পরে যখন চেতনা ফিরত বুঝতে পারতাম আমার মন খুব ভালো হয়ে উঠেছে। দিন দিন আমি অস্থির হয়ে উঠতাম, কখন রাত্রি ন‘টা বাজবে, আমি লাল ক্যাপসুলটা খাব। একেবারে নেশা। তারপর হটাৎ একদিন একটা জিনিস আবিষ্কার করলাম। আমার মোবাইলে কল লগে আবিষ্কার করলাম ওই সময়ে আমার কাছে একটা ফোন আসে। যে ফোন করে সে আমার সঙ্গে পঁয়তাল্লিশ থেকে পঞ্চাশ মিনিট কথা বলে। কে সে? আমি বহুবার তাকে কলব্যাক করেছি। প্রত্যেকবার সুইচ অফ পেয়েছি। ট্রুকলার দিয়ে তার পরিচয় জানার চেষ্টা করেছি, পাইনি। ভীষণ জানতে ইচ্ছে করে সে আমার সঙ্গে কী কথা বলে। তারপর একদিন লাল ক্যাপসুলটা মনের মধ্যে নেশার সব ডাককে উপেক্ষা করে খেলাম না।’

ঘড়ি দেখলাম, ‘স্যরি। আড়াই মিনিট হয়ে গিয়েছে। আমার সময় শেষ। চলি।’

‘দাঁড়ান। আপনার সময় শেষ কখন হবে সেটা আমি বলব।’

‘আপনি তো আমাকে বেরিয়ে যেতে বলেছেন অনেকক্ষণ আগে।’

‘অত্যন্ত ধূর্ত মানুষ আপনি। বাকিটা বলুন। সেদিন কী হল?’

হেসে বললাম, ‘এইবার আপনি বেশ সহজ করে সোজা কথাটা বললেন।’ তারপর কনুই দুটো টেবিলে রেখে একটু ঝুঁকে বললাম, ‘তার আগে বলুন তো আর ঠিক কতদিন বাঁচব? আমার শুধু ওই ক’টা দিনের জন্য লাল ক্যাপসুল নিতে আসা। তার একটাও বেশি নয়। কথা দিচ্ছি প্রত্যেকদিন খাব। আমাকে যে ডাক্তারবাবুরা দেখছেন তার মধ্যে সিনিয়র মোস্ট হচ্ছেন ডক্টর নাগরাজন। ওঁর হিসেব অনুযায়ী তিন মাস। আপনি আমাকে আর নেক্সট রিভিউ ডেট দেননি। তার মানে আপনি জানেন নেক্সট রিভিউ করার তারিখ পর্যন্ত আমি বাঁচব না। তাই আমার এক্সপায়ারি ডেটটা হিসেব করে আপনি ততদিনের লাল ক্যাপসুল দিয়ে দিন। ব্যাস, আমি চলে যাব।’

ছটফট করে উঠলেন ম্যাডাম, ‘আমি জ্যোতিষী নই।’

আমি আমার দশটা আঙুল দেখিয়ে বললাম, ‘আমিও জ্যোতিষে বিশ্বাস করিনা। দেখুন আমার আঙুলে একটাও পাথর নেই।’

‘উফ। আপনি ল্যাজে খেলাচ্ছেন। বলুন সেদিন কী শুনেছিলেন যেদিন ওষুধটা খাননি?’

লম্বা শ্বাস নিয়ে বললাম, ‘আমার কেমন যেন মনে হচ্ছে আপনি শঙ্কিত হচ্ছেন, ভয় পাচ্ছেন। তাই আপনার মুখের কাঠিন্যের খোলসগুলো খসে পড়ছে। সত্যি কথা বলব ম্যাডাম, তাতে আপনাকে আরও সুন্দরী মনে হচ্ছে। প্রেমে পড়ার বাসনাটা তীব্র হচ্ছে। যদি বাঁচার আশা থাকত তাহলে… নাহ এখন আর ক’দিনের জন্য নতুন করে পিছুটান করব না। দিন লাল ক্যাপসুলগুলো দিয়ে দিন।’

আমি হাত পাতলাম। ম্যাডাম যেন নিজের চেয়ারে একটু গুটিয়ে গেলেন, ‘কোন লাল ক্যাপসুলের কথা বলছেন বলুন তো?’

‘যে লাল ক্যাপসুল না খাওয়াতে সেদিন ফোনে কী শুনেছিলাম জানতে উতলা হয়ে আপনি আমাকে তাড়িয়ে দেওয়ার পর বারো মিনিট অতিক্রান্ত করে আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করে এখনও আমার সঙ্গে কথা বলে যাচ্ছেন। আমাকে ভয় পাচ্ছেন? ভয়ের কী আছে ম্যাডাম? আগেরবার যখন এসেছিলাম তখনই তো আপনি আমাকে নির্ভুল নির্বাচন করেছিলেন। এমন একজন লোক, যার সাত কুলে কেউ নেই, যে টার্মিনাল পেশেন্ট সে ব্যাপারটা বুঝে ফেললে কতদূর আর হইচই করবে। যে পরের দিনটায় বেঁচে থাকার জন্য দিনে ছাব্বিশটা ওষুধ খায়, তার কোন সাইড এফেক্টটা প্রমাণ করা যাবে? ড্রাগ ট্রায়াল করার জন্য আদর্শ মানুষ। সবচেয়ে বড় কথা সেই ওষুধের নাম প্রেসক্রিপশনে নেই। আপনি যে নিজে হাতে আমাকে দিয়েছেন, তারও কোনও প্রমাণ নেই। রইল পড়ে বাকি এক। যেদিন আমি ওষুধটা খাইনি, সেদিন কী শুনেছিলাম। আপনার দুশ্চিন্তার এবার অবসান ঘটাই। যা যা শুনেছিলাম সেগুলো ভুলে গিয়েছি। সত্যি ভুলে গিয়েছি। কারণ কথাগুলো মনে রাখার জন্য উনি আমাকে বলেননি। আমার শুধু একটা ব্যাপারেই কৌতূহল ছিল। ওই এক ঘণ্টার স্মৃতি মুছে গেলেও কী এমন শুনতাম যে মন ভাল হওয়ার রেশটা তারপরেও বহুক্ষণ থাকত। সেই উত্তরটা সেদিন পেয়ে গিয়েছি। একজন সফল ক্ষমতাবান ব্যস্ত বিশিষ্ট ডাক্তার আমার মত সাত কুলে কেউ না থাকা নগণ্য মৃত্যু পথযাত্রীর চেয়েও একা, অসহায়। তাঁর দুঃখ, অভিমান, হতাশার কথাগুলো শোনার জন্য এই পৃথিবীতে কেউ নেই। আমি যে তার বুকের ভেতর গুমরোতে থাকা শব্দের বোঝাটা হালকা করতে পারছি এই স্বাভিমানটুকুই আমার মনটা ভালো করে দেয়। সেই রেশ থেকে যায় তারপরেও বহু ঘণ্টা।’

ম্যাডাম নিচু হয়ে ড্রয়ারটা খুলে একটা কাচের বোতল বার করে আনলেন। তারমধ্যে ভর্তি লাল ক্যাপসুল। শিশিটা প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে নিয়ে হাত জোড় করে বললাম, ‘চলি। ভালো থাকবেন। এই পৃথিবীটা খুব সুন্দর জায়গা।’

ফিসফিস করে সুন্দরী ডাক্তার ম্যাডাম বলে উঠলেন, ‘ফোনটা কখনও বন্ধ রাখবেন না। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি আপনি রোগমুক্ত হয়ে উঠুন।’



এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *