binodan-dynosore-flop

ডাইনোসর ফ্লপ
ফিল্ম রিভিউ
অদিতি বসুরায়


মোদ্দা ব্যাপারটা হল শাসন। এবং ক্ষমতা। অর্থাৎ রাজত্ব করা। জগতের দণ্ডমুণ্ডের নিয়ন্ত্রক হবে সাদা চামড়ার লোক, এই হল ব্যাপার। নয়-এগারোর পর থেকেই, হলিউডের মশালা ছবির নির্মাতারা বিখ্যাত যা যা ছবি বানিয়েছেন সব কিছুতেই মোটামুটি একই ফর্মুলা অনুসরণ করা হয়েছে। যে সব পাওয়ার গেম তারা দেখিয়েছেন, সেখানে তাই অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সাদারা রাজ করেছে। ভালো কাজের তারাই প্রভু। অন্ধকার দুনিয়ায় ছড়ি ঘোরাতেও তাদের জুড়ি নেই। এই খেলায় লেজুড়ের মতো থাকে মধ্যপ্রাচ্যের বেচাকেনার বাজার। এবং কিছু প্রায় গুরুত্বহীন কালো মানুষ! এও আদতে এক সূক্ষ এবং শক্তিশালী রাজনীতি। দুনিয়ার শিশুদের মাথায় ছোট থেকেই ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে, ক্ষমতার পিরামিডের উচ্চাসনে কারা থাকে! এবং ‘মধ্যপ্রাচ্য’-র চোনা না দিয়ে হালের হলিউডি ছবি সম্পূর্ণ হয় না। ‘জুরাসিক ওয়ার্ল্ড ডোমিনিয়ন’ এই চেনা ছকেই এগিয়েছে। সেখানে দুষ্টু লোকও শ্বেতাঙ্গ, ভালো মানুষও সাদা চামড়ার লোক এবং মাঝে মধ্যপ্রাচ্যের কালো বাজার ও চেরা-চোখের সুন্দরী ভিলেন। ও হ্যাঁ, সেই সঙ্গে পালে পালে ডাইনোসর। ছোট, বড়, মাঝারি, লম্বা, বেঁটে – সব সাইজেরই ডাইনোসর, পরিচালক হাজির করেছেন পর্দায়। তবে জুরাসিক ওয়ার্ল্ড দেখতে বসলে, ডাইনোসর দেখার মানসিক প্রস্তুতি আমাদের থাকেই। কিন্তু সেই ডাইনোসর ঘোড়ার সঙ্গে ৫০০০ মাইল রেসে নেমেছে দেখলে, হাসি চেপে রাখা যে মুশকিল!

প্রায় ত্রিশ বছর আগে, স্টিভেন স্পিলবার্গ যে জুরাসিক পার্কের দরজা সিনেমা-প্রেমীদের সামনে উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন, সেই জুরাসিক পার্কের চাবি অনেক আগেই হারিয়ে গেছে যে, সে আমরা পূর্ববর্তী ছবিগুলো থেকেই বুঝে নিয়েছি। তা বলে, ডাইনোসর, জেনেটিক ফ্যাক্টর, মানুষ, খাদ্য- শৃঙ্খল ইত্যাদি একত্রিত করে যে এমন অখাদ্য ছবি দেখতে হবে, কল্পনাতেও ভাবতে পারিনি। একেবারে গোড়া থেকে সেই যে জগঝম্পের রোলার কোস্টারে, দর্শককে তুলে দিলেন পরিচালক, একেবারে শেষে এসেও তার হাত থেকে নিস্তার মেলেনি। এক লাইনের একটি গল্প নিয়ে আড়াই ঘন্টার লম্বা সফর ‘সুহানি’ তো নয়ই, বরং বলা যেতে পারে, কানে তালা ধরানো এবং অশেষ বিরক্তিকর। জুরাসিক ওয়ার্ল্ড নামের কারণেই পরিচালক সম্ভবত অযুত-নিযুত সংখ্যক ডাইনোসরের আমদানি করেছেন ছবিতে। এবং তারা সারা ছবি-জুড়েই ক্রমাগত অনির্দিষ্টভাবে ছুটে বেড়িয়েছে, দিশাহীন চিত্রনাট্যের মতোই। লরা ডার্ন, জেফ গোল্ডব্লুম, স্যাম নীলকে দেখে যেটুকু নস্ট্যালজিয়া ও ভালো লাগার বাষ্প আসে, খুবই দ্রুত তা কেটেও যায়! পরিচালক কলিন ট্রেভারো এই ছবিতে গল্প বলার অবকাশ বিশেষ রাখেননি; লম্বা রেসের দৃশ্যগুলি দেখে কেবল হাই ওঠে। ডেরেক কনোলির লেখা কাহিনী অকারণে দীর্ঘায়িত করে, পরিচালক যে ছবিটি নির্মাণ করেছেন, মূল ও প্রথম জুরাসিক পার্ক ছবিটির একশো মাইলের মধ্যেও আসে না, শুধু চমকে যেতে হয়, ছবির প্রডিউসার হিসেবে স্টিভেন স্পিলবার্গের নাম দেখে।

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *